পরিচ্ছেদঃ একই সাথে আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশা রাখার বিবরণ
জ্ঞাতব্য যে, সুস্থ অবস্থায় বান্দার উচিত হল, অন্তরে আল্লাহর আযাবের ভয় এবং তাঁর রহমতের আশা রাখা। এ ক্ষেত্রে ভয় ও আশা উভয়ই সমান হবে। পক্ষান্তরে অসুস্থ অবস্থায় নিছকভাবে আশা রাখা উচিত। কুরআন ও সুন্নাহ এবং অন্যান্য স্পষ্ট উক্তিতে এ কথার ভূরি ভূরি প্রমাণ বর্তমান। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَلاَ يَأمَنُ مَكْرَ الله إِلاَّ القَوْمُ الخَاسِرونَ
অর্থাৎ, তারা কি আল্লাহর চক্রান্তের ভয় রাখে না? বস্তুতঃ ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই আল্লাহর চক্রান্ত হতে নিরাপদ বোধ করে না। (সূরা আ’রাফ ৯৯ আয়াত) তিনি আরো বলেন,
إِنَّهُ لاَ يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللهِ إِلاَّ القَوْمُ الكافِرُونَ
অর্থাৎ, অবিশ্বাসী সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয় না। (সূরা ইউসুফ ৮৭ আয়াত) অন্য জায়গায় তিনি বলেন,
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ
অর্থাৎ, সেদিন কতকগুলো মুখমণ্ডল সাদা (উজ্জ্বল) হবে এবং কতকগুলো মুখমণ্ডল কালো হবে। (আলে ইমরান ১০৬ আয়াত) তিনি আরো বলেন,
إنَّ رَبَكَ لَسَرِيعُ العِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَحِيمٌ
অর্থাৎ, আর তোমার প্রতিপালক তো শাস্তিদানে সত্বর এবং তিনি চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুও। (সূরা আ’রাফ ১৬৭ আয়াত) তিনি আরো বলেন,
إنَّ الأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ وَإِنَّ الفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٍ
অর্থাৎ, পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে এবং পাপাচারীরা থাকবে (জাহীম) জাহান্নামে। (সূরা ইনফিত্বার ১৩-১৪ আয়াত) তিনি আরো বলেন,
ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ وَأمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأمُّهُ هَاوِيَةٌ
অর্থাৎ, তখন যার (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, সে তো সন্তোষময় জীবনে (সুখে) থাকবে। কিন্তু যার পাল্লা হাল্কা হবে, তার স্থান হবে হাবিয়াহ। (সূরা ক্বারিয়াহ ৬-৯ আয়াত)
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। আশা ও ভয় রাখার কথা কুরআন মাজীদের কোন কোন স্থানে মাত্র একটি আয়াতে, কোন স্থানে দু’টি আয়াতে এবং কোন স্থানে তিন বা ততোধিক আয়াতে একত্রে বিবৃত হয়েছে।
(৪৭৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি মু’মিন জানত যে, আল্লাহর নিকট কী শাস্তি রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাতের আশা করত না। আর যদি কাফের জানত যে, আল্লাহর নিকট কী করুণা রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না।
وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ لَوْ يَعْلَمُ الْمُؤمِنُ مَا عَندَ الله مِنَ العُقُوبَةِ مَا طَمِعَ بِجَنَّتِهِ أَحَدٌ وَلَوْ يَعْلَمُ الكَافِرُ مَا عَندَ الله مِنَ الرَّحْمَةِ مَا قَنَطَ مِنْ جَنَّتِهِ أحَدٌ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ একই সাথে আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশা রাখার বিবরণ
(৪৭৬) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন জানাযা খাটে রাখা হয় এবং লোকেরা অথবা পুরুষরা কাঁধে বহন করতে শুরু করে, তখন সে নেককার হলে বলতে থাকে, আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আর বদকার হলে সে বলতে থাকে, হায় ধ্বংস আমার! তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? মানুষ ছাড়া সবাই তার শব্দ শুনতে পায়। মানুষ তা শুনলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলত। (বা মারা যেত।)
وَعَنْ أَبيْ سَعِيدٍ الخُدرِيِّ أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا وُضِعَتِ الجنازةُ واحْتَمَلَهَا النَّاسُ أَوِ الرِّجَالُ عَلَى أعَناقِهِمْ فَإنْ كَانَتْ صَالِحَةً قَالَتْ: قَدِّمُونِي قَدِّمُونِي وَإنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ قَالَتْ: يَا وَيْلَهَا! أَيْنَ تَذْهَبُونَ بِهَا؟ يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلاَّ الإنْسانُ وَلَوْ سَمِعَهُ صَعِقَ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ একই সাথে আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশা রাখার বিবরণ
(৪৭৭) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাত তোমাদের কারো জুতোর ফিতার চাইতেও বেশী নিকটবর্তী, আর জাহান্নামও তদ্রূপ।
وَعَن ابنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الجَنَّةُ أقْرَبُ إِلى أحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ وَالنَّارُ مِثْلُ ذلك رواه البخاري