পরিচ্ছেদঃ মুরাক্বাবাহ্ (আল্লাহর ধ্যান)
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ
অর্থাৎ, যিনি তোমাকে দেখেন; যখন তুমি দণ্ডায়মান হও (নামাযে) এবং তোমাকে দেখেন সিজদাকারীদের সাথে উঠতে-বসতে। (সূরা শুআরা ২১৮-২১৯ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُم
অর্থাৎ, তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন। (সূরা হাদীদ ৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
إِنَّ اللهَ لا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلا فِي السَّمَاءِ
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে দ্যুলোক-ভূলোকের কোন কিছুই গোপন নেই। (সূরা আলে ইমরান ৫)
তিনি আরো বলেন,
إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ
অর্থাৎ, নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সময়ের প্রতীক্ষায় থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। (সূরা ফাজর ১৪ আয়াত)
তাঁর অমোঘ বাণী,
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ
অর্থাৎ, চক্ষুর চোরা চাহনি ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত। (সূরা মু’মিন ১৯)
এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। উক্ত মর্মবোধক হাদীসসমূহঃ
(২২৯) উমার ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন যে, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে বসে ছিলাম। হঠাৎ একটি লোক আমাদের কাছে এল। তার পরনে ধবধবে সাদা কাপড় এবং তার চুল কুচকুচে কাল ছিল। (বাহ্যতঃ) সফরের কোন চিহ্ন তার উপর দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনছিল না।
শেষ পর্যন্ত সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসল; তার দুই হাঁটু তাঁর (নবীর) হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে দিল এবং তার হাতের দুই করতলকে নিজ জানুর উপরে রেখে বলল, ’হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন।’ সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হল এই যে, তুমি সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই, আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানের রোযা রাখবে এবং কা’বা ঘরের হজ্জ্ব করবে; যদি সেখানে যাবার সঙ্গতি রাখ। সে বলল, ’আপনি ঠিকই বলেছেন।’ আমরা তার কথায় আশ্চর্য হলাম যে, সে জিজ্ঞাসাও করছে এবং ঠিক বলে সমর্থনও করছে!
সে (আবার) বলল, ’আপনি আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।’ তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রসূলসমূহ, পরকাল এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। সে বলল, ’আপনি যথার্থ বলেছেন।’ সে (তৃতীয়) প্রশ্ন করল যে, ’আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন! তিনি বললেন, ইহসান হল এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে; যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে তিনি কিন্তু তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। সে (পুনরায়) বলল, ’আপনি আমাকে কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বলুন (সেদিন কবে সংঘটিত হবে?)’ তিনি বললেন, এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত (ব্যক্তি) জিজ্ঞাসকের চেয়ে বেশী অবহিত নয়। (অর্থাৎ কিয়ামতের নির্দিষ্ট দিন আমাদের দু’জনেরই অজানা)।
সে বলল, ’(তাহলে) আপনি ওর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে আমাকে বলে দিন।’ তিনি বললেন, (ওর কিছু নিদর্শন হল এই যে,) কৃতদাসী তার মনিবকে প্রসব করবে (অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী এত বেশী হবে যে, যুদ্ধ বন্দিনী ক্রীতদাসী তার মনিবের কন্যা প্রসব করবে)। আর তুমি নগ্নপদ, বস্ত্রহীন ও দরিদ্র ছাগলের রাখালদেরকে অট্টালিকা নির্মাণের কাজে পরস্পর গর্ব করতে দেখবে। অতঃপর সে (আগন্তুক প্রশ্নকারী) চলে গেল।
(উমার (রাঃ) বলেন,) ’আমি অনেকক্ষণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে থাকলাম।’ পুনরায় তিনি বললেন হে উমার! তুমি কি জান যে, প্রশ্নকারী কে ছিল? আমি বললাম, ’আল্লাহ ও তাঁর রসূল বেশী জানেন।’ তিনি বললেন, ইনি জিবরীল ছিলেন, তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিখানোর জন্য এসেছিলেন।
عَن عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ قَالَ : بَيْنَما نَحْنُ جُلُوسٌ عَندَ رَسُول الله ﷺ ذَاتَ يَومٍ إذْ طَلَعَ عَلَينا رَجُلٌ شَديدُ بَياضِ الثِّيابِ شَديدُ سَوَادِ الشَّعْرِ لا يُرَى عَلَيهِ أثَرُ السَّفَرِ وَلا يَعْرِفُهُ مِنَّا أحَدٌ حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبيّ ﷺ فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيهِ إِلَى رُكْبتَيهِ وَوَضعَ كَفَّيهِ عَلَى فَخِذَيهِ وَقالَ : يَا مُحَمَّدُ أخْبرني عَن الإسلامِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الإسلامُ : أنْ تَشْهدَ أنْ لا إلهَ إلاَّ الله وأنَّ مُحمَّداً رسولُ الله وتُقيمَ الصَّلاةَ وَتُؤتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ البَيتَ إن اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبيلاً قَالَ : صَدَقْتَ فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقهُ قَالَ : فَأَخْبرنِي عَن الإِيمَانِ قَالَ أنْ تُؤمِنَ باللهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبهِ وَرُسُلِهِ وَاليَوْمِ الآخِر وتُؤْمِنَ بالقَدَرِ خَيرِهِ وَشَرِّهِ قَالَ : صَدقت قَالَ : فأَخْبرني عَن الإحْسَانِ قَالَ أنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأنَّكَ تَرَاهُ فإنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فإنَّهُ يَرَاكَ قَالَ : فَأَخْبِرني عَن السَّاعَةِ قَالَ مَا المَسْؤُولُ عَنهَا بأعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ قَالَ : فأخبِرني عَن أمَاراتِهَا قَالَ أنْ تَلِدَ الأَمَةُ رَبَّتَهَا وأنْ تَرَى الحُفَاةَ العُرَاةَ العَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ في البُنْيَانِ ثُمَّ انْطَلقَ فَلَبِثْتُ مَلِيّاً ثُمَّ قَالَ يَا عُمَرُ أَتَدْري مَنِ السَّائِلُ ؟ قُلْتُ : اللهُ ورسُولُهُ أعْلَمُ قَالَ فإنَّهُ جِبْريلُ أَتَاكُمْ يعْلِّمُكُمْ أمْرَ دِينكُمْ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ মুরাক্বাবাহ্ (আল্লাহর ধ্যান)
(২৩০) আবূ যার্র জুন্দুব বিন জুনাদাহ (রাঃ) ও মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং পাপের পরে পুণ্য কর, যা পাপকে মুছে ফেলবে। আর মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর।
عَنْ أَبيْ ذَرٍّ جُنْدُبِ بنِ جُنادَةَ وأبي عَبدِ الرحمانِ مُعاذِ بنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا عَن رَّسُولِ الله ﷺ قَالَ اتَّقِ الله حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبعِ السَّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن
পরিচ্ছেদঃ মুরাক্বাবাহ্ (আল্লাহর ধ্যান)
(২৩১) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি একদা (সওয়ারীর উপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে (বসে) ছিলাম। তিনি বললেন, ওহে কিশোর! আমি তোমাকে কয়েকটি (গুরুত্বপূর্ণ) কথা শিক্ষা দেব (তুমি সেগুলো স্মরণ রেখো)। তুমি আল্লাহর (বিধানসমূহের) রক্ষণাবেক্ষণ কর (তাহলে) আল্লাহও তোমার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। তুমি আল্লাহর (অধিকারসমূহ) স্মরণ রাখো, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে। যখন তুমি চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন তুমি সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর।
আর এ কথা জেনে রাখ যে, যদি সমস্ত উম্মত তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ (ভাগ্যলিপি) শুকিয়ে গেছে। (তিরমিযী ২৫১৬)
তিরমিযী ব্যতীত অন্যদের বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহর (অধিকারসমূহের) খিয়াল রাখ, তাহলে তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে। সুখের সময় আল্লাহকে চেনো, তবে তিনি দুঃখ ও কষ্টের সময় তোমাকে চিনবেন। আর জেনে রাখ যে, তোমার ব্যাপারে যা ভুলে যাওয়া হয়েছে (অর্থাৎ যে সুখ-দুঃখ তোমার ভাগ্যে নেই), তা তোমার নিকট পৌঁছবে না। আর যা তোমার নিকট পৌঁছবে, তাতে ভুল হবে না। আর জেনে রাখ যে, বিজয় বা সাহায্য আছে ধৈর্যের সাথে, মুক্তির উপায় আছে কষ্টের সাথে এবং কঠিনের সঙ্গে সহজ জড়িত আছে।
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : كُنتُ خَلفَ النَّبيّ ﷺ يَوماً فَقَالَ يَا غُلامُ إنِّي أعلّمُكَ كَلِمَاتٍ : احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَألْتَ فَاسأَلِ الله وإِذَا اسْتَعَنتَ فَاسْتَعَن باللهِ وَاعْلَمْ : أنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إلاَّ بِشَيءٍ قَدْ كَتَبهُ اللهُ لَكَ وَإِن اجتَمَعُوا عَلَى أنْ يَضُرُّوكَ بِشَيءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إلاَّ بِشَيءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحفُ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن صحيح
وفي رواية غيرِ الترمذي احْفَظِ الله تَجِدْهُ أَمَامَكَ تَعرَّفْ إِلَى اللهِ في الرَّخَاءِ يَعْرِفكَ في الشِّدَّةِ وَاعْلَمْ : أنَّ مَا أَخْطَأكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبكَ وَمَا أصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ وَاعْلَمْ : أنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ وَأَنَّ الفَرَجَ مَعَ الكَرْبِ وَأَنَّ مَعَ العُسْرِ يُسْراً
পরিচ্ছেদঃ মুরাক্বাবাহ্ (আল্লাহর ধ্যান)
(২৩২) আনাস (রাঃ) (তাঁর যুগের লোকদেরকে সম্বোধন করে) বলেছেন যে, ’তোমরা বহু এমন (পাপ) কাজ করছ, সেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও সুক্ষ (নগণ্য)। কিন্তু আমরা সেগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে বিনাশকারী মহাপাপ বলে গণ্য করতাম।
عَن أَنَسٍ قَالَ : إِنَّكُمْ لَتَعمَلُونَ أَعْمَالًا هِيَ أدَقُّ في أَعْيُنِكُمْ مِنَ الشَّعْرِ كُنَّا نَعُدُّهَا عَلَى عَهْدِ رَسُول الله ﷺ مِنَ المُوْبِقَاتِ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ মুরাক্বাবাহ্ (আল্লাহর ধ্যান)
(২৩৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা ঈর্ষান্বিত হন। আর আল্লাহ ঈর্ষান্বিত হন তখন, যখন কোন মানুষ এমন কাজ করে ফেলে, যা তিনি তার উপর হারাম করেছেন।
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إنَّ الله تَعَالَى يَغَارُ وَغَيرَةُ الله تَعَالَى أنْ يَأتِيَ المَرْءُ مَا حَرَّمَ الله عَلَيهِ متفق عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ মুরাক্বাবাহ্ (আল্লাহর ধ্যান)
(২৩৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, বানী ইস্রাঈলের মধ্যে তিন ব্যক্তি ছিল। একজন ধবল-কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত, দ্বিতীয়জন টেকো এবং তৃতীয়জন অন্ধ ছিল। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলেন। ফলে তিনি তাদের কাছে একজন ফিরিশতা পাঠালেন।
ফিরিশতা (প্রথমে) ধবল-কুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন, ’তোমার নিকট প্রিয়তম বস্তু কী?’ সে বলল, ’সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক। আর আমার নিকট থেকে এই রোগ দূরীভূত হোক—যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার দেহে হাত ফিরালেন, যার ফলে (আল্লাহর আদেশে) তার ঘৃণিত রোগ দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর রং দেওয়া হল। অতঃপর তিনি বললেন, ’তোমার নিকট প্রিয়তম ধন কী?’ সে বলল, ’উট অথবা গাভী।’ (এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ।) সুতরাং তাকে দশ মাসের গাভিন একটি উটনী দেওয়া হল। তারপর তিনি বললেন, ’আল্লাহ তোমাকে এতে বরকত (প্রাচুর্য) দান করুন।’
অতঃপর তিনি টেকোর কাছে এসে বললেন, ’তোমার নিকট প্রিয়তম জিনিস কী?’ সে বলল, ’সুন্দর কেশ এবং এই রোগ দূরীভূত হওয়া—যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার মাথায় হাত ফিরালেন, যার ফলে তার (সেই রোগ) দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর কেশ দান করা হল। (অতঃপর) তিনি বললেন, ’তোমার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় ধন কোনটি?’ সে বলল, ’গাভী।’ সুতরাং তাকে একটি গাভিন গাই দেওয়া হল এবং তিনি বললেন, ’আল্লাহ এতে তোমার জন্য বরকত দান করুন।’
অতঃপর তিনি অন্ধের কাছে এলেন এবং বললেন, ’তোমার নিকটে প্রিয়তম বস্তু কী?’ সে বলল, ’এই যে, আল্লাহ তা’আলা যেন আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন যার দ্বারা আমি লোকেদেরকে দেখতে পাই।’ সুতরাং তিনি তার চোখে হাত ফিরালেন। ফলে আল্লাহ তাকে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। ফিরিশতা বললেন, ’তুমি কোন্ ধন সবচেয়ে পছন্দ কর?’ সে বলল, ’ছাগল।’ সুতরাং তাকে একটি গাভিন ছাগল দেওয়া হল।
অতঃপর ঐ দু’জনের (কুষ্ঠরোগী ও টেকোর) পশু (উটনী ও গাভীর) পাল বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং এই অন্ধেরও ছাগলটিও বাচ্চা প্রসব করল। ফলে এর এক উপত্যকা ভরতি উট, এর এক উপত্যকা ভরতি গরু এবং এর এক উপত্যকা ভরতি ছাগল হয়ে গেল।
পুনরায় ফিরিশতা (পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর পূর্বের চেহারা ও আকৃতিতে) কুষ্ঠরোগীর কাছে এলেন এবং বললেন, ’আমি মিসকীন মানুষ, সফরে আমার সকল পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে স্বদেশে পৌঁছনোর জন্য আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার কোন উপায় নেই। সেজন্য আমি ঐ সত্তার নামে তোমার কাছে একটি উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক দান করেছেন; যার দ্বারা আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’ সে উত্তর দিল যে, ’(আমার দায়িত্বে আগে থেকেই) বহু অধিকার ও দাবি রয়েছে।’
(এ কথা শুনে) ফিরিশতা বললেন, ’তোমাকে আমার চেনা মনে হচ্ছে। তুমি কি কুষ্ঠরোগী ছিলে না, লোকেরা তোমাকে ঘৃণা করত? তুমি কি দরিদ্র ছিলে না, আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ধন প্রদান করেছেন?’ সে বলল, ’এ ধন তো আমি পিতা ও পিতামহ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।’ ফিরিশতা বললেন, ’যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’
অতঃপর তিনি তার পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে টেকোর কাছে এলেন এবং তাকেও সে কথা বললেন, যে কথা কুষ্ঠরোগীকে বলেছিলেন। আর টেকোও সেই জবাব দিল, যে জবাব কুষ্ঠরোগী দিয়েছিল। সে জন্য ফিরিশতা তাকেও বললেন যে, ’যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’
পুনরায় তিনি তাঁর পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে অন্ধের নিকট এসে বললেন যে, আমি একজন মিসকীন ও মুসাফির মানুষ, সফরের যাবতীয় পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে স্বদেশে পৌঁছনোর জন্য আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার আর কোন উপায় নেই। সুতরাং আমি তোমার নিকট সেই সত্তার নামে একটি ছাগল চাচ্ছি, যিনি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন; যার দ্বারা আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’
সে বলল, ’নিঃসন্দেহে আমি অন্ধ ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। (আর এই ছাগলও তাঁরই দান।) অতএব তুমি ছাগলের পাল থেকে যা ইচ্ছা নাও ও যা ইচ্ছা ছেড়ে দাও। আল্লাহর কসম! আজ তুমি আল্লাহ আযযা অজাল্লার জন্য যা নেবে, সে ব্যাপারে আমি তোমাকে কোন কষ্ট বা বাধা দেব না।’ এ কথা শুনে ফিরিশতা বললেন, ’তুমি তোমার মাল তোমার কাছে রাখ। নিঃসন্দেহে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হল (যাতে তুমি কৃতকার্য হলে)। ফলে আল্লাহ তা’আলা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তোমার সঙ্গীদ্বয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন।
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ أنَّه سَمِعَ النَّبيَّ ﷺ يقُولُ إنَّ ثَلاثَةً مِنْ بَني إِسْرَائِيلَ : أبْرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمَى أَرَادَ اللهُ أنْ يَبْتَليَهُمْ فَبَعَثَ إِليْهمْ مَلَكاً فَأَتَى الأَبْرَصَ فَقَالَ : أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إلَيْكَ؟ قَالَ : لَوْنٌ حَسنٌ وَجِلدٌ حَسَنٌ وَيَذْهبُ عَني الَّذِي قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنهُ قَذَرُهُ وَأُعْطِيَ لَوناً حَسنَاً فَقَالَ : فَأيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليكَ؟ قَالَ : الإِبلُ - أَوْ قالَ : البَقَرُ شكَّ الرَّاوي - فَأُعطِيَ نَاقَةً عُشَرَاءَ فَقَالَ : بَاركَ الله لَكَ فِيهَا فَأَتَى الأَقْرَعَ فَقَالَ: أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إلَيْكَ؟ قَالَ: شَعْرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَني هَذَا الَّذِي قَذِرَني النَّاسُ فَمَسَحَهُ فَذَهبَ عَنهُ وأُعْطِيَ شَعراً حَسَناً قالَ : فَأَيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليْكَ ؟ قَالَ : البَقَرُ فَأُعْطِيَ بَقَرَةً حَامِلاً وَقالَ : بَارَكَ الله لَكَ فِيهَا فَأَتَى الأَعْمَى فَقَالَ : أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ : أَنْ يَرُدَّ الله إِلَيَّ بَصَرِي فَأُبْصِرُ النَّاسَ فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللهُ إِلَيْهِ بَصَرهُ قَالَ: فَأَيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليْكَ ؟ قَالَ : الغَنَمُ فَأُعْطِيَ شَاةً وَالداً فَأَنْتَجَ هذَانِ وَوَلَّدَ هَذَا فَكانَ لِهذَا وَادٍ مِنَ الإِبلِ وَلِهذَا وَادٍ مِنَ البَقَرِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الغَنَمِ ثُمَّ إنَّهُ أَتَى الأَبْرَصَ في صُورَتِهِ وَهَيئَتِهِ فَقَالَ : رَجلٌ مِسْكينٌ قَدِ انقَطَعَتْ بِيَ الحِبَالُ في سَفَري فَلا بَلاغَ لِيَ اليَومَ إلاَّ باللهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذي أعْطَاكَ اللَّونَ الحَسَنَ والجِلْدَ الحَسَنَ وَالمَالَ بَعِيراً أَتَبَلَّغُ بِهِ في سَفَري فَقَالَ : الحُقُوقُ كثِيرةٌ فَقَالَ : كأنِّي اعْرِفُكَ أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ فَقِيراً فأعْطَاكَ اللهُ؟ فَقَالَ : إِنَّمَا وَرِثْتُ هَذَا المالَ كَابِراً عَن كَابِرٍ فَقَالَ : إنْ كُنْتَ كَاذِباً فَصَيَّرَكَ الله إِلَى مَا كُنْتَ وَأَتَى الأَقْرَعَ في صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذا وَرَدَّ عَلَيهِ مِثْلَ مَا رَدَّ هَذَا فَقَالَ : إنْ كُنْتَ كَاذِباً فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتَ وَأَتَى الأَعْمَى في صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ : رَجُلٌ مِسْكينٌ وابنُ سَبيلٍ انْقَطَعتْ بِيَ الحِبَالُ في سَفَرِي فَلا بَلاَغَ لِيَ اليَومَ إلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ أَسأَلُكَ بالَّذِي رَدَّ عَلَيْكَ بَصَركَ شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا في سَفري؟ فَقَالَ : قَدْ كُنْتُ أعمَى فَرَدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِي فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ فَوَاللهِ مَا أَجْهَدُكَ اليَومَ بِشَيءٍ أخَذْتَهُ للهِ - عَزَّ وَجَلَّ فَقَالَ : أمْسِكْ مالَكَ فِإنَّمَا ابْتُلِيتُمْ فَقَدْ رضي الله عَنك وَسَخِطَ عَلَى صَاحِبَيكَ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ মুরাক্বাবাহ্ (আল্লাহর ধ্যান)
(২৩৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য (অর্থাৎ তার উত্তম মুসলিম হওয়ার একটি চিহ্ন) হল অনর্থক (কথা ও কাজ) বর্জন করা।
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنْ حُسْنِ إسْلامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعَنيهِ حديث حسن