পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
মহান আল্লাহ বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর। (সূরা আলে ইমরান ১০২ আয়াত)
উক্ত আয়াতে যথার্থভাবে ভয় করার ব্যাখ্যা রয়েছে এই আয়াতে; তিনি বলেন,
فَاتَّقُوا الله مَا اسْتَطَعْتُمْ
অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬) তিনি আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيداً
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসীগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। (সূরা আহযাব ৭০)
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجاً وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لا يَحْتَسِبُ
অর্থাৎ, আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ করে দিবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন। (সূরা ত্বালাক্ব ২-৩ আয়াত) তিনি আরো বলেন,
إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَاناً وَيُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيم
অর্থাৎ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যকারী শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল। (সূরা আনফাল ২৯ আয়াত)
(আল্লাহভীতি, সংযমশীলতা ও তাক্বওয়া-পরহেযগারীর গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য হাদীসসমূহ নিম্নরূপ)
(১৮৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল যে, হে আল্লাহর রসূল! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে আল্লাহ-ভীরু। অতঃপর তাঁরা (সাহাবীরা) বললেন, এ ব্যাপারে আমরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি না। তিনি বললেন, তাহলে ইউসুফ (সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি), যিনি স্বয়ং আল্লাহর নবী, তাঁর পিতা নবী, পিতামহও নবী এবং প্রপিতামহও নবী ও আল্লাহর বন্ধু। তাঁরা বললেন, এটাও আমাদের প্রশ্ন নয়। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা কি আমাকে আরবের বংশাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? (তবে শোনো!) তাদের মধ্যে যারা জাহেলী যুগে ভাল, তারা ইসলামেও ভাল; যদি দ্বীনী জ্ঞান রাখে।
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قِيلَ: يَا رَسُولَ الله مَنْ أكرمُ النَّاس؟ قَالَ أَتْقَاهُمْ فَقَالُوْا: لَيْسَ عَن هَذَا نَسألُكَ قَالَ فَيُوسُفُ نَبِيُّ اللهِ ابنُ نَبِيِّ اللهِ ابنِ نَبيِّ اللهِ ابنِ خليلِ اللهِ قَالُوْا : لَيْسَ عَن هَذَا نسألُكَ قَالَ فَعَن مَعَادِنِ العَرَبِ تَسْأَلُوني؟ خِيَارُهُمْ في الجَاهِليَّةِ خِيَارُهُمْ في الإِسْلامِ إِذَا فَقُهُوا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৮৮) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় দুনিয়া মধুর ও সবুজ (সুন্দর আকর্ষণীয়)। আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এর প্রতিনিধি নিয়োজিত করে দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ করছ? অতএব তোমরা (যদি সফলকাম হতে চাও তাহলে) দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচ এবং নারীর (ফিতনা থেকে) বাঁচ। কারণ, বানী ঈসরাইলের সর্বপ্রথম ফিতনা নারীকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল।
عَنْ أَبيْ سَعِيدٍ الخُدْرِي عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرةٌ وإنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرَ كَيفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاء فإنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إسرائيلَ كَانَتْ في النِّسَاءِ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৮৯) ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ করতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা অত্তুক্বা, অলআফা-ফা অলগিনা। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সৎপথ, সংযমশীলতা, চারিত্রিক পবিত্রতা ও অভাবশূন্যতা প্রার্থনা করছি।
عَنْ ابنِ مَسْعُوْدٍ أنَّ النَّبيّ ﷺ كَانَ يَقُولُ اَللّٰهُمَّ إنِّي أَسألُكَ الهُدَى وَالتُّقَى وَالعَفَافَ وَالغِنَى
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯০) আবূ ত্বারীফ আদী ইবনে হাতেম ত্বাই (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (এ কথা) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের উপর কসম খাবে অতঃপর তার চেয়ে বেশী আল্লাহ-ভীতির বিষয় দেখবে, তার উচিত আল্লাহ-ভীতির বিষয় গ্রহণ করা।
عَنْ أَبيْ طَرِيفٍ عَدِيِّ بنِ حَاتِمٍ الطَّائيِّ قَالَ : سَمِعْتُ رسولَ الله ﷺ يَقُوْلُ مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ ثُمَّ رَأَى أتْقَى للهِ مِنْهَا فَليَأتِ التَّقْوَى رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯১) আবূ উমামাহ সুদাই বিন আজলান বাহেলী (রাঃ) বলেন যে, আমি বিদায় হজ্জের অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভাষণ দিতে শুনেছি, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্তের (ফরয) নামায পড়, তোমাদের রমযান মাসের রোযা রাখ, তোমাদের মালের যাকাত আদায় কর এবং তোমাদের নেতা ও শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য কর (যদি তাদের আদেশ শরীয়ত বিরোধী না হয়), তাহলে তোমরা তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ أَبيْ أُمَامَةَ صُدَيّ بنِ عَجْلَانَ البَاهِلِيِّ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله ﷺ يَخْطُبُ في حجةِ الودَاعِ فَقَالَ اتَّقُوا الله وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا أُمَرَاءَكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن صحيح
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯২) সা’দ বিন আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন হল পরহেযগারী।
عَنْ سَعْدٍ بْنِ أَبِيْ وَقَّاص قاَلَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَيْرُ دِينِكُمْ الوَرَعُ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯৩) মুআয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী মুত্তাক্বীনগণ; তারা যেই হোক, যেখানেই থাক।
عَن مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُونَ مَنْ كَانُوا وَحَيْثُ كَانُواِِِِ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯৪) উক্ত সাহাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার পরিবারের লোক মনে করে, ওরা আমার বেশি ঘনিষ্ঠতম। অথচ আমার বেশি ঘনিষ্ঠ হল পরহেযগার লোকেরা, তারা যেই হোক, যেখানেই থাক।
وعَنه قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ إِنَّ أَهْلَ بَيْتِي هَؤُلاءِ يَرَوْنَ أَنَّهُمْ أَوْلَى النَّاسِ وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِنَّ أَوْلِيَائِيَ مِنْكُمُ الْمُتَّقُونَ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯৫) জাবের বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী হজ্জের ভাষণে বলেছেন, হে লোক সকল! শোনো, তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। শোনো, আরবীর উপর অনারবীর এবং অনারবীর উপর আরবীর, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে তো কেবল ’তাক্বওয়ার’ কারণেই।
عَنْ جَابِرٍ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَلَا إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ وَلَا لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلَّا بِالتَّقْوَى