পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
অর্থাৎ, তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে। (সূরা বাইয়িনাহ ৫ আয়াত) তিনি আরো বলেছেন,
لاَ تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالمَنِّ وَالأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসিগণ! দানের কথা প্রচার করে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে নষ্ট করে দিয়ো না; ঐ লোকের মত যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে। (সূরা বাকারাহ ২৬৪ আয়াত) তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُواْ إِلَى الصَّلاَةِ قَامُواْ كُسَالَى يُرَآؤُونَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُونَ اللّهَ إِلاَّ قَلِيلاً
অর্থাৎ, নিশ্চয় মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়। বস্তুতঃ তিনিও তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন এবং যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে নিছক লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে। (সূরা নিসা ১৪২)
(১৭১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, আমি সমস্ত অংশীদারদের চাইতে অংশীদারি (শির্ক) থেকে অধিক অমুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তার অংশীদারি (শির্ক) সহ বর্জন করি। (অর্থাৎ তার আমলই নষ্ট করে দিই।)
وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ الله ﷺ يَقُولُ قَالَ الله تَعَالَى : أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَن الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৭২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, আমি সকল অংশীদার অপেক্ষা অধিক শির্ক (অংশীদারী) হতে বেপরোয়া। অতএব যে ব্যক্তি আমার জন্য কোন এমন আমল করবে, যাতে সে আমি ভিন্ন অন্য কাউকে অংশী করবে, আমি তার থেকে সম্পর্কহীন। আর সে আমল তার জন্য হবে যাকে সে শরীক করেছে।
وعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : أَنَا خَيْرُ الشُّرَكَاءِ مَنْ عَمِلَ لِي عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ غَيْرِي فَأَنَا بَرِىءٌ مِنْهُ وَهُوَ لِلَّذِي أَشْرَكَ
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৭৩) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন। তখন আমরা কানা দাজ্জাল নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে এমন জিনিসের কথা বলে দেব না কি, যা আমার নিকট তোমাদের জন্য কানা দাজ্জাল অপেক্ষাও অধিক ভয়ানক? আমরা বললাম, অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, গুপ্ত শির্ক; আর তা এই যে, এক ব্যক্তি নামায পড়তে দাঁড়ায়। অতঃপর অন্য কেউ তার নামায পড়া লক্ষ্য করছে দেখে সে তার নামাযকে আরো অধিক সুন্দর করে পড়ে।
عَنْ أَبيْ سَعِيدٍ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ فَقَالَ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عَندِي مِنْ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ؟ قَالَ قُلْنَا بَلَى فَقَالَ الشِّرْكُ الْخَفِيُّ أَنْ يَقُومَ الرَّجُلُ يُصَلِّي فَيُزَيِّنُ صَلَاتَهُ لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ رَجُلٍ
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৭৪) মাহমূদ বিন লাবীদ (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা স্বগৃহ হতে) বের হয়ে বললেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমরা গুপ্ত শির্ক হতে সাবধান হও। সকলে বলল, হে আল্লাহর রসূল! গুপ্ত শির্ক কী? তিনি বললেন, মানুষ নামায পড়তে দাঁড়িয়ে তার নামাযকে চেষ্টার সাথে সুশোভিত করে (সুন্দর করে পড়ে); এই কারণে যে, লোকেরা তার প্রতি দৃক্পাত করে দেখে তাই। এটাই (লোকেদের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে নামায পড়া) হল গুপ্ত শির্ক।
وعَن مَحْمُودِ بْنِ لَيِيدٍ قَالَ: خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَيُّهَا النَّاسُ إِيَّاكُمْ وَشِرْكَ السَّرَائِرِ قَالُوْا : يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا شِرْكُ السَّرَائِرِ ؟ قَالَ يَقُومُ الرَّجُلُ فَيُصَلِّي فَيُزَيِّنُ صَلاَتَهُ جَاهِدًا لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ النَّاسِ إِلَيْهِ فَذَلِكَ شِرْكُ السَّرَائِرِ
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৭৫) মাহমূদ বিন লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের উপর আমার সবচেয়ে অধিক যে জিনিসের ভয় হয় তা হল ছোট শির্ক। সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ছোট শির্ক কী জিনিস? উত্তরে তিনি বললেন, রিয়া (লোকপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যে আমল)। আল্লাহ আযযা অজাল্ল যখন (কিয়ামতে) লোকেদের আমলসমূহের বদলা দান করবেন তখন সকলের উদ্দেশ্যে বলবেন, তোমরা তাদের নিকট যাও, যাদেরকে প্রদর্শন করে দুনিয়াতে তোমরা আমল করেছিলে। অতঃপর দেখ, তাদের নিকট কোন প্রতিদান পাও কি না!
وعَن مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ قَالُوْا وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ الرِّيَاءُ يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عَندَهُمْ جَزَاءً
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৭৬) আবূ মূসা আশআরী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল! এই শির্ক থেকে বাঁচো। যেহেতু তা পিঁপড়ের চলন অপেক্ষা গুপ্ত।
وعَنْ أَبيْ مُوسَى الْأَشْعَرِيُّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا هَذَا الشِّرْكَ فَإِنَّهُ أَخْفَى مِنْ دَبِيبِ النَّمْلِ
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৭৭) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকেদের পূর্বে যে ব্যক্তির প্রথম বিচার হবে সে হচ্ছে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সুতরাং সে তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ঐ নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করে এসেছ? সে বলবে আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য জিহাদ করেছি এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে বলে, অমুক একজন বীর পুরুষ। সুতরাং তা-ই বলা হয়েছে। অতঃপর (ফিরিশতাদেরকে) আদেশ করা হবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয় হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে ইলম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে (পৃথিবীতে প্রদত্ত) তাঁর সকল নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, এই সকল নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করে এসেছ? সে বলবে, ’আমি ইলম শিখেছি, অপরকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টিলাভের জন্য কুরআন পাঠ করেছি। আল্লাহ বলবেন, মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে ইলম শিখেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে আলেম বলে এবং এই উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছ, যাতে লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে। আর (দুনিয়াতে) তা বলা হয়েছে। অতঃপর (ফিরিশতাদেরকে) নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার রুযীকে আল্লাহ প্রশস্ত করেছিলেন এবং সকল প্রকার ধন-দৌলত যাকে প্রদান করেছিলেন। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া সমস্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, তুমি ঐ সকল নেয়ামতের বিনিময়ে কী আমল করে এসেছ? সে বলবে, যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও সে সকল রাস্তার মধ্যে কোনটিতেও তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খরচ করতে ছাড়িনি। তখন আল্লাহ বলবেন, মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এ জন্যই দান করেছিলে; যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। আর তা বলা হয়েছে। অতঃপর (ফিরিশতাবর্গকে) হুকুম করা হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
وَعَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ الله ﷺ يَقُولُ إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَومَ القِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ : قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ : كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لأَنْ يُقَالَ : جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ العِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ القُرآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ : تَعَلَّمْتُ العِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأتُ فِيكَ القُرآنَ قَالَ : كَذَبْتَ وَلكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ لِيُقَالَ : عَالِمٌ وَقَرَأتَ القُرْآنَ لِيُقَالَ : هُوَ قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ المَالِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلاَّ أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ : كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ : جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ في النَّارِ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৭৮) ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, কিছু লোক তাঁর নিকট নিবেদন করল যে, আমরা আমাদের শাসকদের নিকট যাই এবং তাদেরকে ঐ সব কথা বলি, যার বিপরীত বলি তাদের নিকট থেকে বাইরে আসার পর। (সে সম্বন্ধে আপনার অভিমত কী?) ইবনে উমার (রাঃ) উত্তর দিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় এরূপ আচরণকে আমরা ’মুনাফিক্বী’ আচরণ বলে গণ্য করতাম।
وَ عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : قَالَ أُنَاسٌ لِابْنِ عُمَرَ إِنَّا نَدْخُلُ عَلَى سُلْطَانِنَا فَنَقُولُ لَهُمْ خِلَافَ مَا نَتَكَلَّمُ إِذَا خَرَجْنَا مِنْ عَندِهِمْ قَالَ كُنَّا نَعُدُّهَا نِفَاقًا رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৭৯) জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সুফয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শোনাবে, আল্লাহ তা শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি দেখাবে, আল্লাহ তা দেখিয়ে দিবেন।
** যে ব্যক্তি শোনাবে’ অর্থাৎ, যে তার আমলকে মানুষের সামনে প্রদর্শনের জন্য প্রকাশ করবে। আল্লাহ তা শুনিয়ে দিবেন অর্থাৎ, কিয়ামতের দিনে (সৃষ্টির সামনে সে কথা জানিয়ে) তাকে লাঞ্ছিত করবেন। যে ব্যক্তি দেখাবে অর্থাৎ, যে ব্যক্তি মানুষের সামনে স্বকৃত নেক আমল প্রকাশ করবে যাতে সে তাদের নিকট সম্মানার্হ হয়। ’আল্লাহ তা দেখিয়ে দিবেন’ অর্থাৎ, সৃষ্টির সম্মুখে তার গুপ্ত উদ্দেশ্যের কথা ব্যক্ত (করে অপমানিত) করবেন।
وَعَن جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ سُفيَان قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللهُ بِهِ متفق عَلَيْهِ ورواه مسلم أَيْضاً من رواية ابن عباس رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৮০) আব্দুল্লাহ বিন আমর্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, যে ব্যক্তি লোককে শুনাবার জন্য (সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে) আমল করবে আল্লাহ তার সেই (বদ নিয়তের) কথা সারা সৃষ্টির সামনে (কিয়ামতে) প্রকাশ করে তাকে ছোট ও লাঞ্ছিত করবেন।
عَن عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ سَمَّعَ النَّاسَ بِعَمَلِهِ سَمَّعَ اللهُ بِهِ سَامِعَ خَلْقِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَحَقَّرَهُ وَصَغَّرَهُ
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৮১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে বিদ্যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা যদি একমাত্র সামান্য পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিক্ষা করে, তাহলে সে কিয়ামতের দিনে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।
وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ تَعَلَّمَ عِلْماً مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ - لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضاً مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الجَنَّةِ يَوْمَ القِيَامَةِ يَعَني : رِيحَهَا رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيحٍ
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৮২) উবাই বিন কা’ব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এই উম্মতকে স্বাচ্ছন্দ্য, সমুন্নতি, দ্বীন সহ সুউচ্চ মর্যাদা, দেশসমূহে তাদের ক্ষমতা বিস্তার এবং বিজয়ের সুসংবাদ দাও। কিন্তু যে ব্যক্তি পার্থিব কোন স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে পরকালের কর্ম করবে তার জন্য পরকালে প্রাপ্য কোন অংশ নেই।
عَنْ أَبيْ بْنِ كَعْبٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ ((بَشِّرْ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِالسَّنَاءِ وَالتَّمْكِينِ فِي الْبِلَادِ وَالنَّصْرِ وَالرِّفْعَةِ فِي الدِّينِ وَمَنْ عَمِلَ مِنْهُمْ بِعَمَلِ الْآخِرَةِ لِلدُّنْيَا فَلَيْسَ لَهُ فِي الْآخِرَةِ نَصِيبٌ
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৮৩) ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় মহান আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃতি এবং যার উপর তাকে নিরুপায় করা হয়, তার (পাপ) কে মার্জনা করেন।
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الله عَزَّ وَجَلَّ وَضَعَ عَن أُمّتِي الخطأ والنِّسيان وما استُكرِهُوا عليهِ
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৮৪) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের তখন কী অবস্থা হবে, যখন ফিতনা তোমাদেরকে আচ্ছাদিত করে নেবে? যাতে বড় বৃদ্ধ হবে এবং ছোট প্রতিপালিত (হয়ে বড়) হবে। মানুষ যাকে সুন্নাহ জ্ঞান করবে। যখন তা (ফিতনা বা বিদআত) অপসারিত করা হবে তখন লোকেরা বলবে, সুন্নাত অপসারিত হল। একজন জিজ্ঞাসা করল, হে আবু আব্দুর রহমান! এরূপ কখন হবে? তিনি বললেন, যখন তোমাদের ক্বারীর সংখ্যা অধিক হবে এবং ফকীহ (অভিজ্ঞ আলেমদের) সংখ্যা কম হবে, তোমাদের নেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং আমানতদারের সংখ্যা কমে যাবে ও আখেরাতের কর্ম দ্বারা দুনিয়ার সম্পদ অন্বেষণ করা হবে।
وعَن عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عَنه قَالَ : كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا لَبِسَتْكُمْ فِتْنَةٌ يَهْرَمُ فِيهَا الْكَبِيرُ وَيَرْبُو فِيهَا الصَّغِيرُ وَيَتَّخَذُهَا النَّاسُ سُنَّةً فَإِذَا غُيِّرَتْ يَوْمًا قَالُوْا : غُيِّرَتْ السُّنَّةُ قِيلَ : وَمَتَى ذَلِكَ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ : إِذَا ذَهَبَتْ عُلَمَاؤُكُمْ وَكَثُرَتْ جُهَلَاؤُكُمْ وَكَثُرَتْ قُرَّاؤُكُمْ وَقَلَّتْ فُقَهَاؤُكُمْ وَكَثُرَتْ أُمَرَاؤُكُمْ وَقَلَّتْ أُمَنَاؤُكُمْ وَتُفُقِّهَ لِغَيْرِ الدِّينِ وَالْتُمِسَتْ الدُّنْيَا بِعَمَلِ الْآخِرَةِ
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৮৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমর বিন উক্বাইশের জাহেলী যুগের সুদের বকেয়া ছিল। সে তা পরিশোধ না নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে অসম্মত হল। ইতিমধ্যে উহুদের যুদ্ধ এসে উপস্থিত হল। (মদীনায় এসে) সে বলল, ’আমার চাচার গোষ্ঠির লোকেরা কোথায়?’ লোকেরা বলল, ’তারা উহুদে আছে।’ বলল, ’অমুক কোথায়?’ বলা হল, ’উহুদে আছে।’ বলল, ’অমুক কোথায়?’ বলা হল ’উহুদে আছে।’ সুতরাং সে তার বর্ম পরে ও অস্ত্র ধারণ করে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে তাদের দিকে অগ্রসর হল। সেখানে যখন তারা তাকে দেখল, তখন বলল, ’সাবধান হে আমর! তুমি আর অগ্রসর হবে না।’ সে বলল, ’আমি ঈমান এনেছি।’
সুতরাং সে যুদ্ধে শামিল হল এবং জখম হল। অতঃপর সেই বিক্ষত অবস্থায় তাকে তার পরিজনের কাছে বহন করে আনা হল। সা’দ বিন মুআয এসে তার বোনকে বললেন, ’ওকে জিজ্ঞাসা কর, তোমার গোত্রের পক্ষ-পাতিত্ব করতে গিয়ে এবং তাদের ক্রোধে ক্রোধান্বিত হয়ে কি (যুদ্ধ করেছে), নাকি আল্লাহর জন্য ক্রোধান্বিত হয়ে (যুদ্ধ করেছে)?’ উত্তরে সে বলল, ’বরং আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য ক্রোধান্বিত হয়ে (যুদ্ধ করেছি)। অতঃপর সে মারা গেলে জান্নাত প্রবেশ করল। অথচ সে এক ওয়াক্তের নামাযও পড়েনি!
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ عَمْرَو بْنَ أُقَيْشٍ كَانَ لَهُ رِبًا فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَكَرِهَ أَنْ يُسْلِمَ حَتَّى يَأْخُذَهُ فَجَاءَ يَوْمَ أُحُدٍ فَقَالَ : أَيْنَ بَنُو عَمِّى قَالُوْا : بِأُحُدٍ قَالَ : أَيْنَ فُلاَنٌ قَالُوْا : بِأُحُدٍ قَالَ : أَيْنَ فُلاَنٌ قَالُوْا : بِأُحُدٍ فَلَبِسَ لأْمَتَهُ وَرَكِبَ فَرَسَهُ ثُمَّ تَوَجَّهَ قِبَلَهُمْ فَلَمَّا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ قَالُوْا : إِلَيْكَ عَنا يَا عَمْرُو قَالَ : إِنِّى قَدْ آمَنْتُ فَقَاتَلَ حَتَّى جُرِحَ فَحُمِلَ إِلَى أَهْلِهِ جَرِيحًا فَجَاءَهُ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ فَقَالَ لأُخْتِهِ : سَلِيهِ حَمِيَّةً لِقَوْمِكَ أَوْ غَضَبًا لَهُمْ أَمْ غَضَبًا لِلهِ فَقَالَ : بَلْ غَضَبًا لِلهِ وَلِرَسُولِهِ فَمَاتَ فَدَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَا صَلَّى لِلهِ صَلاَةً
পরিচ্ছেদঃ ‘রিয়া’ (লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
(১৮৬) আবূ যার্র (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল; বলুন, যে মানুষ সৎকাজ করে, আর লোকে তার প্রশংসা করে থাকে (তাহলে এরূপ কাজ কি রিয়া বলে গণ্য হবে?) তিনি বললেন, এটা মু’মিনের সত্বর সুসংবাদ।
-
(মুসলিম ৬৮৯১)
وَعَنْ أَبيْ ذَرٍّ قَالَ : قِيلَ لِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ : أرَأيْتَ الرَّجُلَ الَّذِي يَعْمَلُ العَمَلَ مِنَ الخَيْرِ وَيَحْمَدُهُ النَّاسُ عَلَيْهِ ؟ قَالَ تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى المُؤْمِنِ رواه مسلم