পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইয়ামান ও শাম (সিরিয়া) দেশের বর্ণনা এবং উওয়াইস করানী-এর আলোচনা
৬২৭২-[৭] আনাস (রাঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। নবী (সা.) ইয়ামান দেশের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দু’আ করলেন, “হে আল্লাহ! ইয়ামানবাসীদের অন্তর আমাদের দিকে ঘুরিয়ে দাও এবং আমাদের জন্য সা’ ও মুদের মধ্যে বরকত দাও।” (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب تَسْمِيَة من سمي من أهل الْبَدْر فِي «الْجَامِعِ لِلْبُخَارِيِّ» )
عَنْ أَنَسٍ عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَظَرَ قِبَلَ الْيَمَنِ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ أَقْبِلْ بِقُلُوبِهِمْ وَبَارِكْ لَنَا فِي صاعِنا ومُدِّنا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
حسن ، رواہ الترمذی (3934 وقال : حسن غریب) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (اللَّهُمَّ أَقْبِلْ) আসলে তিনি (সা.) এ দু'আ করেছেন এজন্য যে, মদীনাবাসীর খাদ্যদ্রব্য আমদানী হয় ইয়ামান থেকে। এজন্য পরে মদীনাবাসীর জন্য ইয়ামান থেকে আমদানীকৃত খাবারের মধ্যেও সা'-এ বরকতের দু'আ করেছেন।
(وَبَارِكْ لَنَا فِي صاعِنا ومُدِّنا) এ দুটো দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পরিমাপ করা যায় এমন খাদ্যদ্রব্য। এখানে পাত্রের এবং পাত্রস্থ বস্তুর কথা বলা হয়েছে।
তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দুই সীমানার মিলের কারণ হলো, মদীনাবাসীরা সর্বদা সংকটময় জীবনযাপন ও পাথয়ের আশ্রয় প্রার্থনায় থাকতে হয়। তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য থাকে না। অতএব যখন তিনি (সা.) দারুল হিজরতে ইয়ামানবাসীর মনোযোগ ঝুঁকে পড়ার জন্য দু'আ করলেন। আর তারা ছিল বিপুল সংখ্যক মানুষ। তখন তিনি (সা.) মদীনাবাসীর খাদ্যের বরকতের জন্য দু'আ করলেন। যাতে তথাকার অধিবাসীর এবং আগন্তুক ব্যক্তিদের স্বচ্ছলতা আসে। আগমনকারীদের কারণে স্থায়ী বাসিন্দারা বিরক্ত না হয় এবং মুহাজিরদের সেথায় অবস্থান করা কঠিন না হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৯৪৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইয়ামান ও শাম (সিরিয়া) দেশের বর্ণনা এবং উওয়াইস করানী-এর আলোচনা
৬২৭৩-[৮] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: শাম (সিরিয়া) দেশের জন্য মুবারকবাদ। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কি? তিনি বললেন, আল্লাহর (রহমাতের) মালায়িক’র (ফেরেশতাগণ) তার ওপর নিজেদের পাখা বিস্তৃত করে রেখেছেন। (আহমাদ ও তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب تَسْمِيَة من سمي من أهل الْبَدْر فِي «الْجَامِعِ لِلْبُخَارِيِّ» )
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طُوبَى لِلشَّامِ» قُلْنَا: لِأَيٍّ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «لِأَنَّ مَلَائِكَةَ الرَّحْمَنِ بَاسِطَةٌ أَجْنِحَتَهَا عَلَيْهَا» رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 184 ۔ 185 ح 21942) و الترمذی (3954 وقال : حسن غریب) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (لِأَنَّ مَلَائِكَةَ الرَّحْمَنِ) এখানে এ কথার ইঙ্গিতে মালাক (ফেরেশতা) থেকে উদ্দেশ্য হলো রহমাতের মালাক।
(اسِطَةٌ أَجْنِحَتَهَا عَلَيْهَا) অর্থাৎ শাম ভূখণ্ড ও তার অধিবাসীদেরকে কুফর থেকে রক্ষার জন্য মালায়িকা (ফেরেশতামণ্ডলী) তাদের ডানাকে বিছিয়ে দেন। যেমনটি কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন।
মানাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ মালায়িকাহ্ ক্ষতিকর ও ধ্বংসকারী বস্তুকে দূরীভূত করা ও বরকত নাযিল করার মাধ্যমে শামকে পরিবর্তন করে এবং বেষ্টন করে রাখে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৯৬৬)
মালাকের (ফেরেশতার) ডানাকে পাখির ডানার সাথে তুলনা করা ঠিক নয়। কারণ পাখির তিন চার ডানার ব্যতিক্রম হয় না।
বলা হয়, নবী (সা.) - দু’বার জিবরীল (আঃ)-এর দু'শত ডানা দেখেছেন। মোটকথা মালাকের ডানা প্রমাণিত, কিন্তু তার আকৃতি বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকা উচিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৯৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইয়ামান ও শাম (সিরিয়া) দেশের বর্ণনা এবং উওয়াইস করানী-এর আলোচনা
৬২৭৪-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: অদূর ভবিষ্যতে হাযরামাতের দিক হতে, অথবা বলেছেন, “হাযরামাওত’ হতে একটি আগুন বের হবে, তা মানুষদেরকে একত্রিত করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তখন আমাদেরকে আপনি কি নির্দেশ দেন? তিনি (সা.) বললেন, তোমরা তখন অবশ্যই সিরিয়ায় চলে যাবে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب تَسْمِيَة من سمي من أهل الْبَدْر فِي «الْجَامِعِ لِلْبُخَارِيِّ» )
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتَخْرُجُ نَارٌ مِنْ نَحْوِ حَضْرَمَوْتَ أَوْ مِنْ حَضْرَمَوْتَ تَحْشُرُ النَّاسَ» قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَا تَأْمُرنَا؟ قَالَ: «عَلَيْكُم بِالشَّام» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2217 وقال : حسن صحیح غریب) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (عَلَيْكُم بِالشَّام) অর্থাৎ শামের পথ এবং তার পথে যাওয়া দলের সাথে গ্রহণ কর। কারণ সে সময় শাম প্রকৃত আগুন বা রূপক আগুন সেখানে পৌঁছা থেকে নিরাপদ। যেহেতু রহমতের মালাক (ফেরেশতা) তাকে সংরক্ষণ করেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ২২১৭, জামিউল কুতুবি তিস্'আহ্ এ্যাপ)
তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো আগুন চোখে দেখা যাবে যা এর আসল অর্থ। অথবা এ আগুন থেকে উদ্দেশ্য হলো ফিতনাহ্। দু' হিসেবেই এর উদ্দেশ্য হলো যে, তা হবে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে। কারণ তারা বলেছিল, আমাদের কি নির্দেশ দিবেন? অর্থাৎ তারা তা থেকে বাঁচতে চেয়েছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইয়ামান ও শাম (সিরিয়া) দেশের বর্ণনা এবং উওয়াইস করানী-এর আলোচনা
৬২৭৫-[১০] আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে এক হিজরতের পর আরেকটি হিজরত সংঘটিত হবে। তখন উত্তম মানুষ তারাই হবে, যারা ঐ স্থানে হিজরত করবে, যে স্থানে (সিরিয়ায়) ইবরাহীম (আঃ) হিজরত করেছিলেন। অপর এক বর্ণনাতে আছে, এ ধরাপৃষ্ঠে তারাই সর্বোত্তম যারা ইবরাহীম (আঃ)-এর হিজরতের স্থানকে নিজেদের হিজরত স্থান বানাবে। এ সময় ধরাপৃষ্ঠে শুধুমাত্র খারাপ লোকেরাই অবশিষ্ট থাকবে। তাদেরকে তাদের দেশ বিতাড়িত করবে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে অপছন্দ করবেন। (অতঃপর) একটি আগুন তাদেরকে বানর ও শূকরের দলসহ হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। তারা যেখানে রাত্রিযাপন করবে, আগুনও সেখানে রাত্র কাটাবে এবং তারা যেখানে দ্বিপ্রহরে বিশ্রাম নিবে, আগুনও সেখানে বিশ্রাম নিবে। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب تَسْمِيَة من سمي من أهل الْبَدْر فِي «الْجَامِعِ لِلْبُخَارِيِّ» )
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّهَا سَتَكُونُ هِجْرَةٌ بَعْدَ هِجْرَةٍ فَخِيَارُ النَّاسِ إِلَى مُهَاجَرِ إِبْرَاهِيمَ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فَخِيَارُ أَهْلِ الْأَرْضِ أَلْزَمُهُمْ مُهَاجَرَ إِبْرَاهِيمَ وَيَبْقَى فِي الْأَرْضِ شِرَارُ أَهْلِهَا تَلْفِظُهُمْ أَرَضُوهُمْ تَقْذَرُهُمْ نَفْسُ الله تَحْشُرهُمْ النَّارُ مَعَ الْقِرَدَةِ وَالْخَنَازِيرِ تَبِيتُ مَعَهُمْ إِذَا بَاتُوا وَتَقِيلُ مَعَهُمْ إِذَا قَالُوا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
حسن ، رواہ ابوداؤد (2482)
ব্যাখ্যা: (هِجْرَةٌ بَعْدَ هِجْرَةٍ) খত্তাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দ্বিতীয় হিজরত থেকে উদ্দেশ্য হলো শামের হিজরত করা। শাম দেশে অবস্থান করার জন্য এখানে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এটা ইবরাহীম (আঃ)-এর হিজরতের স্থান।
(تَقْذَرُهُمْ نَفْسُ الله) খত্তাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর ব্যাখ্যা হলো, আল্লাহ তা'আলা তাদের সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হওয়া এবং তথায় অবস্থান করাকে অপছন্দ করেন। সে কারণে আল্লাহ তাদেরকে সে ক্ষমতা দেন না। এতে তারা মানুষ যা অপছন্দ করে এবং বিরত থাকে তা গ্রহণ না করার উপযুক্ত হয়ে যায় ও বাদ পড়ে যায়।
নিহায়ায় রয়েছে, যখন কোন বস্তুকে অপছন্দ করা হয় এবং তা থেকে বিরত থাকে তখন বলা হয় ()। ('আওনুল মা'বুদ - “জামিউল কিতাবিত্ তিস্'আহ” এ্যাপ, হা. ২৪৮২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইয়ামান ও শাম (সিরিয়া) দেশের বর্ণনা এবং উওয়াইস করানী-এর আলোচনা
৬২৭৬-[১১] ইবনু হাওয়ালাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: শীঘ্রই অবস্থা এমন হবে যে, তোমরা বিভিন্ন দলে আলাদা হয়ে পড়বে। একদল সিরিয়ায়, আরেক দল ইয়ামানে এবং আরেক দল ’ইরাকে হবে। ইবনু হাওয়ালাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি সে যুগ পাই, তখন আমি কোন দলের সাথে থাকব তা আপনি নির্বাচন করে দিন। তিনি (সা.) বললেন, তুমি সিরিয়াকে গ্রহণ করবে। কারণ সিরিয়া হলো আল্লাহর পছন্দনীয় জমিন। শেষ যামানায় আল্লাহ তা’আলা তাঁর ভালো ও পুণ্যবান লোকেদেরকে সেখানে সমবেত করবেন। যদি তোমরা সেখানে যেতে না চাও, তাহলে ইয়ামানে চলে যাবে। তোমাদের (গবাদিপশুকে) নিজেদের হাওয হতে পানি পান করাবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা আমার ওয়াসীলায় সিরিয়া এবং সিরিয়াবাসীর জন্য জিম্মাদার হয়ে গেছেন। (আহমাদ ও আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب تَسْمِيَة من سمي من أهل الْبَدْر فِي «الْجَامِعِ لِلْبُخَارِيِّ» )
عَن ابْنِ حَوَالَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «سيصير الْأَمر إِلَى أَنْ تَكُونُوا جُنُودًا مُجَنَّدَةً جُنْدٌ بِالشَّامِ وَجُنْدٌ بِالْيَمَنِ وَجُنْدٌ بِالْعِرَاقِ» . فَقَالَ ابْنُ حَوَالَةَ: خِرْ لِي يَا رَسُولَ اللَّهِ. إِنْ أَدْرَكْتُ ذَلِكَ. فَقَالَ: «عَلَيْك بِالشَّامِ فَإِنَّهَا خِيَرَةُ اللَّهِ مِنْ أَرْضِهِ يَجْتَبِي إِلَيْهَا خِيَرَتَهُ مِنْ عِبَادِهِ فَأَمَّا إِنْ أَبَيْتُمْ فَعَلَيْكُمْ بِيَمَنِكُمْ وَاسْقُوا مِنْ غُدَرِكُمْ فَإِنَّ اللَّهَ تَوَكَّلَ لِي بِالشَّامِ وَأَهْلِهِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد
حسن ، رواہ احمد (4 / 110 ح 17130) و ابوداؤد (2483) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখা: (سيصير الْأَمر) অর্থাৎ ইসলাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে অথবা ইসলামের যুদ্ধ ব্যাপক হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(تَوَكَّلَ لِي بِالشَّامِ وَأَهْلِهِ) শামবাসীর জন্য আমার কারণে দায়িত্ব নিবেন যে, সেখানে ফিতনাহ্ পৌছবে এবং ফিতনার দ্বারা তথাকার অধিবাসীকে ধ্বংস করবেন না। (আওনুল মা'বুদ - “জামিউল কিতাবিত্ তিস’আহ্” এ্যাপ, হা. ২৪৮৩)