পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা
৬১৯০-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন, সারা বিশ্বের মহিলাদের মধ্য হতে এই চারজন মহিলার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়াই তোমার জন্য যথেষ্ট। তাঁরা হলেন মারইয়াম বিনতু ’ইমরান, খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ, ফাতিমাহ্ বিনতু মুহাম্মাদ এবং ফি’আওনের পত্নী আসিয়াহ্। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «حَسْبُكَ مِنْ نِسَاءِ الْعَالَمِينَ مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَخَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَفَاطِمَةُ بِنْتُ محمَّد وآسية امْرَأَة فِرْعَوْن» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
صحیح ، رواہ الترمذی (3878 وقال : حسن صحیح غریب) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, এ হাদীস হয়তো ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) পরিপূর্ণতা অর্জন করা ও বর্তমান অবস্থায় পৌঁছার পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এজন্য সবাইকে একই সাথে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) নিকায়াহ গ্রন্থে বলেন, আমরা এটা বিশ্বাস করি যে, নারীদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হলেন মারইয়াম এবং ফাতিমাহ আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন খাদীজাহ্ এবং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)। তাদের মর্যাদার বিষয় বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তৃতীয় একটি মত হলো তাদের কাউকে কারো ওপর প্রাধান্য না দিয়ে নিরবতা অবলম্বন করা। কেননা এই অকাট্য কোন দলীল পাওয়া যায় না। হাকিম তার মুস্তাদরাকে ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে এ বিষয়ে হাদীস উল্লেখ করেন। তা হলো জান্নাতে নারীদের সর্দারণী হলেন চারজন- ১) মারইয়াম, ২) ফাতিমাহ, ৩) খাদীজাহ্ ও ৪) আসিয়াহ্। (মিরাতুল মাফাতীহ)
তুহফাতুল আহওয়াযীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইবনু তায়মিয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: খাদীজাহ্ এবং আয়িশাহ এ এদের মর্যাদা কাছাকাছি পর্যায়ের।
ইবনুল কাইয়ুম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাদের মাঝে যদি আমল ও প্রতিদানের ব্যাপারে শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনা করা হয় তাহলে এটা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, কেননা এ বিষয়ে মানুষ অবগত হতে পারে না। কিন্তু যদি ইলমের দিক দিয়ে বিবেচনা করা হয় তাহলে অবশ্যই আয়িশাহ (রাঃ) উত্তম। আর যদি সর্দারণী হওয়ার বিবেচনা করা হয় তাহলে এক্ষেত্রে ফাতিমাহ্ (রাঃ) হলেন উত্তম। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৯ম খণ্ড, ৩৬৫ পৃ., হা. ৩৮৯০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা
৬১৯১-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন জিবরীল (আঃ) তাঁর (আয়িশাহ্ রাঃ এর) আকৃতির একটি জিনিসের উপর সবুজ বর্ণের রেশমি কাপড়ে পেঁচিয়ে এনে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বললেন, ইনি ইহকালের ও পরকালের আপনার স্ত্রী হবেন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)
وَعَن عَائِشَة أَن جِبْرِيل جَاءَ بِصُورَتِهَا فِي خِرْقَةِ حَرِيرٍ خَضْرَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «هَذِهِ زَوْجَتُكَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (3880 وقال : حسن غریب) ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা
৬১৯২-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এর স্ত্রী সফিয়্যাহ্-এর কাছে এ কথাটি পৌছেছে যে, হাফসাহ (রাঃ) তাঁকে ইয়াহুদী কন্যা বলেছেন। এ কথা শুনে সফিয়্যাহ কাঁদতে লাগলেন। এমন সময় নবী (সা.) তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন, তিনি কাঁদছেন। প্রশ্ন করলেন কি কারণে তুমি কাঁদছ? সফিয়্যাহ্ (রাঃ) বললেন, হাফসাহ আমাকে ইয়াহুদী কন্যা বলেছে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি তো এক নবীর কন্যা, আরেক নবী তোমার চাচা এবং তুমি আরেক নবীর স্ত্রী। অতএব হাফসা কোন কথায় তোমার ওপর গর্ব করতে পারে? অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, হে হাফসা! আল্লাহকে ভয় কর। (তিরমিযী ও নাসায়ী)
اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: بَلَغَ صَفِيَّةَ أَنَّ حَفْصَةَ قَالَتْ: بِنْتُ يَهُودِيٍّ فَبَكَتْ فَدَخَلَ عَلَيْهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ تَبْكِي فَقَالَ: «مَا يُبْكِيكِ؟» فَقَالَتْ: قَالَتْ لِي حَفْصَةُ: إِنِّي ابْنَةُ يَهُودِيٍّ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِنَّك ابْنة نَبِيٍّ وَإِنَّ عَمَّكِ لَنَبِيٌّ وَإِنَّكِ لَتَحْتَ نَبِيٍّ فَفِيمَ تَفْخَرُ عَلَيْكِ؟» ثُمَّ قَالَ: «اتَّقِي اللَّهَ يَا حَفْصَة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (3894 وقال : حسن صحیح غریب) و النسائی فی الکبری (8919) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-কে শিখিয়ে দিলেন যে, তুমি হলে একজন নবীর মেয়ে। তার পূর্ব পুরুষ ইসহাক অথবা হারূন (আঃ)-এর দিকে সম্পৃক্ত করে এটি রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন।
তিনি তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন যে, তোমার চাচাও একজন নবী। আর তিনি হলেন ইসমাঈল অথবা মূসা (আঃ)। তিনি তাকে এটিও স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, বর্তমানে তুমি একজন নবীর স্ত্রী হিসেবে আছ। অতএব তোমার মর্যাদা কোনভাবেই কম নয়।
এখানে সফিয়্যাহ (রাঃ)-এর তিনটি মর্যাদার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্য থেকে প্রথম ও শেষটি হাফসার মাঝে আছে। কিন্তু দ্বিতীয়টি শুধু সফিয়্যার মাঝে আছে যা হাফসার মাঝে নেই। এটি হলো সফিয়্যার অতিরিক্ত মর্যাদার বিষয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) হাফসাহ্ (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে হাফসাহ্! তুমি আল্লাহকে ভয় করো এবং এ জাতীয় জাহিলী যুগের কথাবার্তা ছেড়ে দাও। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা
৬১৯৩-[১০] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। মক্কা বিজয়ের পর একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ফাতিমাহকে নিজের কাছে নিয়ে চুপে চুপে কিছু কথা বললেন। তা শুনে ফাতিমাহ্ কেঁদে দিলেন। অতঃপর তিনি আবার তার সাথে কথা বললেন, এবার ফাতিমাহ্ হেসে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মৃত্যুর পর আমি ফাতিমাকে (ঐ দিন) কাঁদার ও হাসার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, শীঘ্রই তিনি মৃত্যুবরণ করবেন, এটা শুনে আমি কেঁদেছি। তারপর তিনি (সা.) আমাকে বললেন, আমি মারইয়াম বিনতু ’ইমরান ছাড়া জান্নাতী সমস্ত নারীদের সরদার হব। এটা শুনে আমি হেসেছি। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعَا فَاطِمَةَ عَامَ الْفَتْحِ فَنَاجَاهَا فَبَكَتْ ثُمَّ حَدَّثَهَا فَضَحِكَتْ فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلْتُهَا عَنْ بُكَائِهَا وَضَحِكِهَا. قَالَتْ: أَخْبَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ يَمُوتُ فَبَكَيْتُ ثُمَّ أَخْبَرَنِي أَنِّي سَيِّدَةُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ إِلَّا مَرْيَمَ بِنْتَ عِمْرَانَ فَضَحِكْتُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3873) ۔
(إِسْنَاده جيد)
ব্যাখ্যা: মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীসের ঘটনাটি বর্ণনা করার ক্ষেত্রে কিছুটা সংশয় ঘটেছে। কেননা সিরাত বিশারদগণের কাছে এই ঘটনাটি মক্কা বিজয়ের বছর ঘটেছে বলে প্রমাণিত নয়। বরং তারা বলেন যে, এ ঘটনাটি ঘটেছে বিদায় হজ্জের বছর অথবা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মুমূর্ষ অবস্থায়।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর একটি হাদীসে পূর্বেই বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় তিনি ফাতিমাকে তার হাসা ও কাঁদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু তখন তিনি তাকে উত্তর দেননি। তারপর আবার যখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো তখন তিনি এভাবে তার উত্তর দিলেন। যা উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর এই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। অন্য হাদীসে রয়েছে যে, ফাতিমাহ্ (রাঃ) -এর হাসার কারণ হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এখন তাকে বলেছিলেন, আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম তোমার সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, হ্যাঁ, এটিও হতে পারে। আর এতে পূর্ববর্তী বিষয়ের সাথেও কোন বৈপরীত্য নেই। হতে পারে দুটি বিষয় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে জানিয়েছেন।
তুহফাতুল আহওয়াযীতে বলা হয়েছে, এ হাদীসে মারইয়াম বিনতু ‘ইমরান-কে বাদ দেয়ার কয়েকটি কারণ হতে পারে। সেগুলো হলো-
- তাকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে যে, মর্যাদার ক্ষেত্রে তারা উভয়ে সমান।
- ফাতিমার মর্যাদার চেয়ে মারইয়াম বিনতু “ইমরান-এর মর্যাদা বেশি।
লুম'আহ্ গ্রন্থে রয়েছে যে, এ হাদীসটি সম্ভবত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এ বিষয়টি জানানোর পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, ফাতিমাহ (রাঃ) হলেন বিশ্বের নারীদের ওপর সবচেয়ে মর্যাদাবান। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ১ম খণ্ড, ৩৭৭ পৃ., হা, ৩৯০৫)