পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০১৯-[১] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: লোকেদের মধ্যে নিজস্ব সম্পদ ও সাহচর্য দ্বারা আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছেন আবূ বকর (রাঃ) আর বুখারীতে (أَبُو بَكْرٍ) -এর স্থলে (أَبَا بَكْ) রয়েছে। যদি আমি কাউকে বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বকর-কেই বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, কিন্তু তাঁর সাথে ইসলামী ভ্রাতত্ব ও (দীনী) মুহাব্বাত রয়েছে। (অতঃপর তিনি ঘোষণা দিলেন,) মসজিদে আবূ বকর-এর দরজা ব্যতীত আর কোন দরজা যেন অবশিষ্ট না থাকে। অপর এক রিওয়ায়াতে আছে- [নবী (সা.) বলেছেন] যদি আমি আমার রব্ ব্যতীত আর কাউকে বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে আবূ বকর-কেই আমি বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ مِنْ أَمَنِّ النَّاسِ عَلَيَّ فِي صُحْبَتِهِ وَمَالِهِ أَبُو بَكْرٍ - وَعِنْدَ الْبُخَارِيِّ أَبَا بَكْرٍ - وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلًا وَلَكِنْ أُخُوَّةُ الْإِسْلَامِ وَمَوَدَّتُهُ لَا تُبْقَيَنَّ فِي الْمَسْجِدِ خَوْخَةٌ إِلَّا خَوْخَةَ أَبِي بَكْرٍ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «لَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا غَيْرَ رَبِّي لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلًا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3904 و الروایۃ الثانیۃ : 3654) و مسلم (2 / 2382)، (6170) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (لَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا) এ প্রসঙ্গে কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, খলীল বলা হয় সেই প্রিয় ব্যক্তিকে যার উপর বিভিন্ন কাজে প্রয়োজনের তাগিদে নির্ভরশীল হতে হয়। এখানে (خَلِيلًا) শব্দের উৎস বা মূল হলো (الخلة) যার অর্থ হলো হাজত বা প্রয়োজন। অতএব এর ভাবার্থ হলো এই, যদি আমি সৃষ্টজীবের মধ্য হতে কাউকে বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে বিভিন্ন প্রয়োজনে তার কাছে যেতাম এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে তার উপর নির্ভরশীল হতাম।
(لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلً) তাহলে আমি আবূ বাকরকেই বিশেষ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম। যেহেতু সার্বিক অবস্থায় এবং সকল কাজে আল্লাহর উপরই নির্ভরশীল হতে হয় এবং তার দিকেই ফিরে যেতে হয় তাই সৃষ্টিজীবের কাউকে আমি খলীল হিসেবে গ্রহণ করিনি।
উল্লেখ্য যে, ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে খলীলুল্লাহ বলা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি আল্লাহর খলীল বা বন্ধু। এখানে (خَلِيلًا) শব্দটি (الخصلة) বা চরিত্র অর্থে এসেছে। কারণ ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে বিশেষভাবে উত্তম চরিত্র দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
ইবরাহীম আলায়হিস সালাম আল্লাহর খলীল হওয়ার ব্যাপারে আরো কিছু মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। কেউ বলেছেন, এর কারণ হলো তিনি আল্লাহর জন্যই মানুষকে ভালোবাসতেন এবং তার জন্যই মানুষের সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। আবার কেউ বলেছেন, তাঁকে উত্তম চরিত্র আর উন্নত গুণাবলি দিয়ে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। অতএব ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর ওপর আল্লাহর বন্ধুত্বের অর্থ হলো আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন এবং পরবর্তী সকল জাতির জন্য ইমাম বা পথপ্রদর্শক বানিয়েছেন।
ইবনু ফুরাক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, (الخلة) বা খলীলের অর্থ হলো, আড়াল বা অদৃশ্যতার সাথে থেকেও আল্লাহর জন্য স্বচ্ছ ভালোবাসা প্রদর্শন করা। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা. ৬০১৯)
(خَوْخَةٌ إِلَّا خَوْخَةَ أَبِي بَكْ) শব্দের অর্থ হলো ঘরের ভেতর আলো প্রবেশের জন্য দেয়ালের উপরে ছাদ বরাবর ছোট জানালা বিশেষ। যাকে আমরা ভেন্টিলেটর বলি। কেউ কেউ বলেছেন, একঘর থেকে অন্য ঘরে বা একরুম থেকে অন্যরুমে চলাচলের জন্য ছোট দরজা।
‘আল্লামাহ্ তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তাঁর সর্বশেষ খুত্ববায় আবূ বাকর (রাঃ) সম্পর্কে এ কথা বলেছিলেন। অতএব এখান থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, আবূ বাকর (রাঃ)-ই হবেন রসূলের পরে মুসলিমদের খলীফাহ্। কোন কোন মুহাদ্দিস (خَوْخَةٌ) এর উদ্দেশ্য ধরেছেন আবূ বাকর (রাঃ)-এর কন্যা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে। কারণ রাসূল (সা.) তাঁর সকল স্ত্রীর ঘরের দরজা বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন শুধু ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে আদেশ করেননি।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা, ৬০১৯)