পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - অধ্যায় [রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন প্রকার আর্থিক ওয়াসিয়্যাত করেননি- মর্মে আলোচনা]
৫৯৭৩-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর পর দীনার-দিরহাম, বকরি-উট কিছুই রেখে যাননি। আর কোন কিছুর ওয়াসিয়্যাতও করেননি। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب)
عَن عَائِشَةَ قَالَتْ: مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا وَلَا شَاةً وَلَا بَعِيرًا وَلَا أَوْصَى بِشَيْءٍ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (18 / 1635)، (4229) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (وَلَا أَوْصَى بِشَيْءٍ) “আর রাসূল (সা.) এ কোন কিছুর ওয়াসিয়্যাত করেননি।” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাসূল (সা.) আর্থিক কোন জিনিসের ওয়াসিয়্যাত করেননি। কেননা রাসূল (সা.) তার মৃত্যুর সময় কোন সম্পদ রেখে যাননি তাহলে তিনি কিভাবে ওয়াসিয়্যাত করে যাবেন? তবে বানূ নাযীর ও ফাদাক ভূমির বিষয়টি তিনি তাঁর জীবদ্দশায়ই বিবিদের বাৎসরিক খরচ বাদে যা উদ্বৃত্ত থাকত তা মুসলিমদের জন্য সদাকাহ্ করে দিয়েছিলেন।
এ স্থলে ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন, অন্য একটি রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, যখন লোকেরা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর সম্মুখে এ বিষয়টি উল্লেখ করল যে, রাসূল (সা.) ‘আলী (রাঃ)-কে তাঁর ওয়ারিস নির্ধারিত করেছেন, তখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আশ্চর্য হয়ে বললেন, রাসূল (সা.) কখন ওয়াসিয়্যাত করলেন? আমি তো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তথা রূহ কবয করা পর্যন্ত রাসূল (সা.) -এর নিকটেই উপস্থিত ছিলাম। যদি রাসূল (সা.) ‘আলী (রাঃ)-এর জন্য কোন ওয়াসিয়্যাত করতেন এবং তাঁকে স্বীয় ওয়ারিস তথা স্বীয় ধন-সম্পদের ওয়ারিস অথবা রক্ষক বানাতেন তাহলে তা আমার থেকে বেশি কেউ জানত না। যে সকল লোকে এ জাতীয় কথা বলে তারা ভুল বলে- রাসূল (সা.) ও কাউকে ওয়ারিস নিযুক্ত করেননি।
অতএব হাদীসের ভাষ্য “আর কোন কিছুর ওয়াসিয়্যাতও করেননি।”- এর আলোচ্য বিষয় হলো আর্থিক ওয়াসিয়্যাত। যার অর্থ হলো- রাসূল (সা.) স্বীয় ধন-সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের ওয়াসিয়্যাত করেননি এবং এক-তৃতীয়াংশের অধিক বা কমেরও ওয়াসিয়্যাত করেননি। কেননা রাসূল (সা.)-এর নিকট এমন কোন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল না যার তিনি ওয়াসিয়্যাত করবেন। তদ্রুপ তিনি (সা.) আলী (রাঃ)-এর জন্য কোন ওয়াসিয়্যাত করেননি এবং অন্য কারো জন্যও কোন ওয়াসিয়্যাত করেননি যেমনটি শী'আরা ভ্রান্ত করে। আর যে সকল সহীহ হাদীসে কিতাবুল্লাহ সম্পর্কে ওয়াসিয়্যাত করা বা বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধিদের সাথে উত্তম ব্যবহার ও মেহমানদারীর ওয়াসিয়্যাত করার কথা উল্লেখ রয়েছে তা অন্য বিষয়বস্তু, যা হাদীসে উল্লেখিত ভাষ্য “আর কোন কিছুর ওয়াসিয়্যাতও করেননি দ্বারা উদ্দেশ্য নয়।
কতক ঐতিহাসিকগণ যে লিখেছেন- রাসূল (সা.) -এর নিকট বহু সংখ্যক উট ছিল ও দশটি উষ্ট্রীও ছিল এবং সেগুলোকে মদীনার নিকটবর্তী স্থানে রাখা হত, যেখান থেকে উষ্ট্রীর দুধ প্রতিদিন লোকেরা নিয়ে আসত। উপরন্তু রাসূল (সা.) -এর নিকট সাতটি বকরিও ছিল যেগুলোর দুধ রাসূল (সা.) পান করতেন। তো এ বর্ণনা প্রথমত ঐ জাতীয় নয় যে, উল্লেখিত হাদীসের সাথে তার বিরোধ হবে, দ্বিতীয়ত এ বর্ণনাকে সহীহ মেনে নেয়া হলে তখন এর উত্তরে বলা হবে যে, এ সকল উট ইত্যাদি সদাকার মাল ছিল এবং তা হতে যে দুধ আমদানি হত তা সুফফাবাসী ও অন্যান্য দরিদ্র-অসহায় শ্রেণির লোকেরা পান করত। (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ২২১ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - অধ্যায় [রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন প্রকার আর্থিক ওয়াসিয়্যাত করেননি- মর্মে আলোচনা]
৫৯৭৪-[২] জুওয়াইরিয়াহ্ (রাঃ)-এর ভাই ’আমর ইবনুল হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর সময় দীনার-দিরহাম, দাস-দাসী এবং অন্য কিছুই রেখে যাননি। শুধুমাত্র একটি সাদা খচ্চর ও তাঁর যুদ্ধাস্ত্র আর কিছু জমিন এবং এগুলো সাদাকা্ হিসেবে রেখে যান। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب)
عَن عَمْرو بن الْحَارِث أخي جوَيْرِية قَالَ: مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ مَوْتِهِ دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا وَلَا عَبْدًا وَلَا أَمَةً وَلَا شَيْئًا إِلَّا بَغْلَتَهُ الْبَيْضَاءَ وَسِلَاحَهُ وَأَرْضًا جَعَلَهَا صَدَقَةً. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (2739) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ مَوْتِهِ دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا وَلَا عَبْدًا وَلَا أَمَةً) “রাসূল (সা.) তাঁর মৃত্যুর সময় কোন দীনার-দিরহাম ও কোন দাস-দাসী রেখে যাননি।” অর্থাৎ রাসূল (সা.) মৃত্যুর সময় তার কোন দাসদাসী ছিল না যারা দাস-দাসী হিসেবে তাঁর মালিকানায় থেকে তার সেবা করত। এখান থেকে বুঝা যায় যে, যে সব হাদীসে রাসূল (সা.) -এর দাস-দাসী ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে তারা হয়তো তার জীবদ্দশায় মারা গিয়েছিল অথবা নবী (সা.) তাদেরকে স্বাধীন করে দিয়েছিলেন।
“তার যুদ্ধাস্ত্র ছিল” অর্থৎ যেসব যুদ্ধাস্ত্র তার ব্যবহারে থাকত। যেমন, তরবারি, বর্শা, বর্ম, শিরস্ত্রাণ ইত্যাদি। এখানে এ জিনিসগুলোকে শুধুমাত্র উল্লেখ করা হয়েছে এছাড়াও অন্য কিছু জিনিস তিনি (সা.) রেখে গিয়েছিলেন যা অন্যস্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ- কাপড়-চোপড়, বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, তিনি (সা.) যে কাপড় ও অন্যান্য কিছু জিনিস ছেড়ে গেছেন তা অন্য জায়গায় উল্লেখ আছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
“তিনি এগুলো সদাকাহ্ হিসেবে রেখে যান।” এ ব্যাপারে ব্যাখ্যাকার লিখেছেন যে, জা'আলাহা- এর যমীর বা সর্বনাম পূর্বের সকল বস্তু তথা খচ্চর, যুদ্ধাস্ত্র ও জমিন- এর দিকে ফিরেছে, যদিও বাহ্যিকভাবে এটা বুঝে আসে যে, জা'আলাহা- এর যমীর শুধুমাত্র জমিনের দিকে ফিরেছে। ইবনু হাজার আল আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন- “এগুলোকে তিনি সদাকাহ্ হিসেবে রেখে যান। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রাসূল (সা.) জমিনের লাভ সদাকাহ করেছিলেন অর্থাৎ এখানে সদাকাহ্ শব্দটা ওয়াকফ-এর হুকুমে। অন্য কথায় এভাবে বলা যায় যে, রাসূল (সা.) উক্ত জমিনকে তা অবশিষ্ট ও বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত তাঁর জীবদ্দশায় সদাকায়ে জারিয়াহ্ করে দিয়েছিলেন। এভাবে উক্ত জমিন যতদিন বিদ্যমান থাকবে তার সদাকার সাওয়াব রাসূল (সা.) পেতে থাকবেন। অতএব এ কথা এ বিষয়ের বিরোধী নয় যে, অবশিষ্ট যে কয়টি বস্তু রসূলের নিকট ছিল তা রাসূল (সা.)-এর মৃত্যুর সাথে সাথে সদাকাহ্ হয়ে গেছে।
‘আল্লামাহ্ কিরমানী (রহিমাহুল্লাহ) সহীহুল বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন, হাদীসে জমির যে উল্লেখ রয়েছে তা দ্বারা ওয়াদীয়ে কুরার অর্ধেক জমি, খায়বারের জমির পঞ্চম অংশ এবং বানূ নাযীর-এর জায়গা জমির ঐ অংশ উদ্দেশ্য যা রাসূল (সা.) নিজের জন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন। আর জা'আলাহা-এর জমির উল্লেখিত বস্তুদ্বয় তথা খচ্চর, যুদ্ধাস্ত্র ও জমিরে দিকে ফিরেছে শুধুমাত্র জমিরে দিকে ফিরেনি। আর এ কথা রাসূল (সা.) এর কথার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, “আমরা নবীরা মীরাস রেখে যাই না, তাই যা কিছু রেখে যান তা সদাকাহ্ হয়ে যায়।” (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ২২২ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - অধ্যায় [রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন প্রকার আর্থিক ওয়াসিয়্যাত করেননি- মর্মে আলোচনা]
৫৯৭৫-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার ওয়ারিসগণ দীনার ভাগ-বণ্টন করবে না। আমি যা রেখে যাব, স্ত্রীদের খোরপোশ এবং আমার কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দেয়ার পর তা (মুসলিমদের জন্য) সাদাকা্। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَقْتَسِمُ وَرَثَتِي دِينَارًا مَا تَرَكْتُ بَعْدَ نَفَقَةِ نِسَائِي وَمُؤْنَةِ عَامِلِي فَهُوَ صَدَقَةٌ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (2776) و مسلم (55 / 1760)، (4583) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (لَا نُورَثُ مَاتَرَكْنَاهُ صَدَقَةٌ) অর্থাৎ আমরা নবীগণ কোন সম্পদের উত্তরাধিকারী করে যাই না। কারণ আমাদের সকল সম্পদ ফকীরদের। আর আমরা সবাই ফকীর। আর সুফীদের নিকট ফকীরের শর্ত হলো তারা কোন কিছুর মালিক নয়। হয়তো তার সম্পদ আমানাত, নতুবা ওয়াক্ফ, নতুবা সদাকাহ স্বরূপ তাঁর মরার পর। আর হাদীসের সারাংশ হলো- ফকীর-মিসকীনদের অবস্থানুযায়ী তাদের মাঝে সকল সম্পদ দিয়ে যাওয়া। যেমন অন্য হাদীসে এসেছে- রাসূল (সা.) -এর ছেড়ে যাওয়া সম্পদ কেবল মুসলিম মিসকীনদের মাঝে উত্তরাধিকার হিসেবে বণ্টিত হবে। কথিত আছে যে, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তার কোন উত্তরসূরী তার ছেড়ে যাওয়া অংশের জন্য আনন্দিত না হয়। তবে হাসান বসরী (রহিমাহুল্লাহ) সাধারণ মাসআলায় বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়টি কেবল আমাদের নবীর জন্য খাস। কারণ মহান আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, (یَّرِثُنِیۡ وَ یَرِثُ مِنۡ اٰلِ یَعۡقُوۡبَ) “যে আমার উত্তরাধিকারী হবে আর উত্তরাধিকারী হবে ইয়াকূব পরিবারের”- (সূরা মারইয়াম ১৯: ৬)। তিনি বলেন, এটা হলো সম্পদের উত্তরাধিকারী নুবুওয়্যাতের উত্তরাধিকারী নন। নতুবা তিনি বলতেন না- (وَ اِنِّیۡ خِفۡتُ الۡمَوَالِیَ مِنۡ وَّرَآءِیۡ) “আমার পরে আমার স্বগোত্রীয়রা (কী করবে) সে সম্পর্কে আমি আশঙ্কাবোধ করছি”- (সূরাহ্ মারইয়াম ১৯: ৫)। তবে জমহুর ‘উলামাগণ তার বিপরীত মত পোষণ করেছেন, কারণ নাসায়ীর বর্ণনায় এসেছে- (أنامعشر الأ نبياءلانورث) “নিশ্চয় আমরা নবীরা কোন উত্তরাধিকারী করে যাই না।” আয়াত থেকে উদ্দেশ্য হলো- নুবুওয়্যাতের উত্তরাধিকারী সম্পদের নয়। বাজী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলুস্ সুন্নাহ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, এ হুকুম সকল নবীর ক্ষেত্রে। ইবনু 'উলাইয়্যাহ্ বলেন, এ হুকুম কেবল আমাদের নবীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইমামিয়্যাহ্ বলেন, নিশ্চয় সকল নবী উত্তরাধিকারী করে যান এ কথা বলেছেন, সুয়ুত্বী (রহিমাহুল্লাহ)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - অধ্যায় [রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন প্রকার আর্থিক ওয়াসিয়্যাত করেননি- মর্মে আলোচনা]
৫৯৭৬-[8] আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমরা (নবী-রাসূলগণ) আমাদের পরিত্যক্ত ধন-সম্পদে কাউকেও ওয়ারিস রেখে যাই না; বরং যা কিছু রেখে যাই, তা (মুসলিমদের জন্য) সাদাকা্ (বা ওয়াকফ)। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب)
وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نُورَثُ مَا تَرَكْنَاهُ صَدَقَةٌ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6726) و مسلم (52 / 1759)، (4580) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: একটি বর্ণনায় এসেছে যে, আবূ বাকর (রাঃ)- এ হাদীস ঐ সময় বর্ণনা করেছিলেন, যখন ফাতিমাহ্ (রাঃ) -এর পক্ষ থেকে মীরাসের দাবির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি ফাতিমাহ্ (রাঃ)-কে বলেন, আমি রাসূল (সা.) -এর খলীফাহ্, আমি রাসূল (সা.) -এর পরিত্যক্ত সম্পদ ঐ খাতসমূহে ব্যয় করব যেখানে রাসূল (সা.) ব্যয় করতেন এবং এ ভিত্তিতেই আমি তোমার সহানুভূতি জ্ঞাপন সেভাবে করব যেভাবে রাসূল (সা.) সহানুভূতি করতেন। আলোচ্য হাদীসে স্বয়ং রাসূল (সা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমাদের নবীদের উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। এটাও বর্ণিত আছে যে, আবূ বাকর (রাঃ) প্রথম এ কথা শুধুমাত্র ফাতিমাহ্ (রাঃ) -কে বলেননি; বরং রাসূল (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণকেও বলেছিলেন, যারা মীরাস তথা উত্তরাধিকারের দাবি করেছিলেন। আর আবূ বাকর (রাঃ) এ ফায়সালা করেছিলেন যে, রাসূল (সা.) -এর আর্থিক উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। এ ফায়সালা তিনি একক সিদ্ধান্তে দেননি। বরং সকল বড় বড় সাহাবায়ে কিরামদের পরামর্শে দিয়েছিলেন যে, রাসূল (সা.)-এর উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কেননা আমরা নিজ কানে রাসূল (সা.) থেকে এ রকমই শুনেছি, তখন আবূ বাকর সিদ্দিক (রাঃ) এ ফায়সালা দিয়েছিলেন। (মাযাহিরে হাক্ শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ২২৩-২২৪ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - অধ্যায় [রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন প্রকার আর্থিক ওয়াসিয়্যাত করেননি- মর্মে আলোচনা]
৫৯৭৭-[৫] আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যে জাতির প্রতি স্বীয় অনুকম্পা প্রকাশ করতে চান, সে জাতির নবীকে তাদের পূর্বেই মৃত্যু দান করেন। আর সেই নবীকে তাদের জন্য অগ্রগামী ও পূর্বসুরি করেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ধ্বংস করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাদের নবীকে তাদের মধ্যে জীবিত রেখে সেই জাতিকে শাস্তি ও গজবে নিপতিত করেন। আর নবী তাদের ধ্বংস দেখে চক্ষুর শীতলতা লাভ করেন। যেহেতু তারা নবীকে মিথ্যুক আখ্যায়িত করেছে এবং তাঁর আদেশাবলী অগ্রাহ্য করেছে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب)
وَعَنْ أَبِي مُوسَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ إِذَا أَرَادَ رَحْمَةَ أُمَّةٍ مِنْ عِبَادِهِ قَبَضَ نَبِيَّهَا قَبْلَهَا فَجَعَلَهُ لَهَا فَرَطًا وَسَلَفًا بَيْنَ يَدَيْهَا وَإِذَا أَرَادَ هَلَكَةَ أُمَّةٍ عَذَّبَهَا وَنَبِيُّهَا حَيٌّ فَأَهْلَكَهَا وَهُوَ يَنْظُرُ فَأَقَرَّ عَيْنَيْهِ بِهَلَكَتِهَا حِينَ كذَّبُوه وعصَوْا أمره» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (24 / 2288)، (5965) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি থেকে গেল বুঝা গেল যে, মুসলিম জাতি এক ভাগ্যবান জাতি, কারণ তাদের নবী তাদের আগে মারা গেছেন। আর তাদের প্রতি আছে মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। তাদের নবী ছিলেন তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। আর তারাও ছিলেন তাদের নবীর প্রতি সন্তুষ্ট। আর যে জাতির প্রতি তাদের নবী অসন্তুষ্ট আর তাদের নবী তাদের আগে মারা গিয়েছিলেন তারা দুনিয়া ও আখিরাতে দুর্ভাগ্য ব্যক্তি। তাদের ইহকাল ও পরকাল বিনষ্ট হয়ে গেছে। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - অধ্যায় [রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন প্রকার আর্থিক ওয়াসিয়্যাত করেননি- মর্মে আলোচনা]
৫৯৭৮-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদ-এর প্রাণ! তোমাদের ওপর এমন এক সময় আসবে, যখন তোমাদের কেউই আমাকে দেখতে পাবে না। অতঃপর তার কাছে আমাকে দেখতে পাওয়া তার পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদসহ থাকার তুলনায় অধিক প্রিয়তর হবে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أَحَدِكُمْ يَوْمٌ وَلَا يَرَانِي ثُمَّ لَأَنْ يَرَانِي أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَهْلِهِ ومالهِ مَعَهم» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (142 / 2364)، (6129) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হয়তো রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এ ঘোষণার সম্পর্ক রাসূল (সা.) -কে তার জীবদ্দশায় দেখা এবং তার প্রতি ভালোবাসার সাথে যার উদ্দেশ্য হলো আমার সাহাবায়ি কিরামের আমার সাথে এতটুকু ভালোবাসা ও হৃদ্যতার সম্পর্ক রয়েছে যে, যদি তারা আমাকে একদিন না দেখে এবং আমার সঙ্গত্ব থেকে বঞ্চিত থাকে তাহলে তাদের আকাক্ষা ও অস্থিরতা আরো বেড়ে যায়, সে সময় তারা স্বীয় আত্মীয়স্বজন ও ধন-সম্পদকে দেখা ও তাদের নিকট থাকার চেয়ে আমার দর্শন ও আমার সঙ্গকে অধিক পছন্দ করবে। অথবা এই মূল্যবান ঘোষণার মূলত এ কথার ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে যে, আমার জন্য আমার উম্মতের ভালোবাসা শ্রদ্ধাবোধ আমার মৃত্যুর পর হ্রাস পাবে না; বরং মুসলিমরা স্বীয় আত্মীয়স্বজন ও ধনসম্পদের সাথে সম্পর্ক রাখার চেয়ে অনেক বেশি এটা আকাক্ষা করবে যে, যে কোনভাবে চাই স্বপ্নে হোক বা জাগ্রত অবস্থায় হোক আমার দর্শন লাভ করবে।
কথার পূর্বাপর দৃষ্টি দিলে এ অর্থই অধিক উপযোগী মনে হয়। অতএব এটাই ঐ অবস্থা যা ঐ সকল সৌন্দর্যপ্রিয়দের জীবনের পুঁজি হয়ে থাকে যারা রাসূল (সা.) -এর সত্তার সৌন্দর্য ও পূর্ণাঙ্গতার কল্পনায় বিভোর হয়ে থাকে। (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা)