পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৪-[৬৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাত্রির বেলায় কুরায়শগণ মক্কায় পরামর্শ করল যে, সকাল হতেই তারা নবী (সা.)-কে রশি দ্বারা শক্ত করে বেঁধে ফেলবে। আবার কেউ বলল, বরং তাকে হত্যা করে ফেল। অন্য আরেকজন বলল, বরং তাকে দেশ হতে তাড়িয়ে দাও। আর এদিকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সা.) -কে কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে দেন। অতঃপর আলী (রাঃ) নবী (সা.) -এর বিছানায় সেই রাত্রি যাপন করলেন এবং নবী (সা.) মক্কাহ্ হয়ে পর্বতের গুহায় গিয়ে আত্মগোপন করলেন, কিন্তু নবী (সা.) এ স্বীয় বিছানায় শুয়ে আছেন ধারণা করে সারাটি রাত্র মুশরিকরা ’আলী (রাঃ) -কে পাহারা দিতে থাকল। ভোর হতেই তারা নবী (সা.) -এর হুজরার উপর আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হলো। যখন তারা নবী (সা.)-এর স্থানে ’আলী (রাঃ)-কে দেখতে পেল, তখন (বুঝতে পারল যে,) তাদের ষড়যন্ত্র আল্লাহ তা’আলা প্রতিহত করে দিয়েছেন। অতঃপর তারা ’আলী (রাঃ) -কে প্রশ্ন করল, তোমার এই বন্ধু [নবী (সা.)] কোথায়? ’আলী (রাঃ) বললেন, আমি জানি না। তখন তারা নবী (সা.) -এর পদচিহ্ন অনুসরণ করে তার খোঁজে বের হয়ে পড়ল, কিন্তু উক্ত পর্বতের কাছে পৌঁছার পর পদচিহ্ন তাদের জন্য হজবরল ও সংশয়পূর্ণ হয়ে গেল। তবু তারা পাহাড়ের উপর উঠল এবং গুহার মুখে গিয়ে পৌছল। তারা দেখতে পেল, মাকড়সা গুহার দ্বারপথে জাল বুনে রেখেছে, তা দেখে তারা বলাবলি করল, যদি সে (মুহাম্মাদ) এ গুহার মাঝে প্রবেশ করত, তাহলে গুহার দ্বারে মাকড়সার জাল থাকত না। তারপর নবী (সা.) এ তিন রাত্র-দিবস তার ভিতরে অবস্থান করলেন। (আহমাদ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن ابْن عبَّاس قَالَ تَشَاوَرَتْ قُرَيْشٌ لَيْلَةً بِمَكَّةَ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِذَا أَصْبَحَ فَأَثْبِتُوهُ بِالْوِثَاقِ يُرِيدُونَ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلِ اقْتُلُوهُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ أَخْرِجُوهُ فَأطلع الله عز وَجل نَبِيَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ذَلِكَ فَبَاتَ عَليّ عَلَى فِرَاشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ وَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى لَحِقَ بِالْغَارِ وَبَاتَ الْمُشْرِكُونَ يَحْرُسُونَ عَلِيًّا يَحْسَبُونَهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصْبحُوا ثَارُوا إِلَيْهِ فَلَمَّا رَأَوْا عَلِيًّا رَدَّ اللَّهُ مَكْرَهُمْ فَقَالُوا أَيْنَ صَاحِبُكَ هَذَا قَالَ لَا أَدْرِي فَاقْتَصُّوا أَثَرَهُ فَلَمَّا بَلَغُوا الْجَبَلَ اخْتَلَطَ عَلَيْهِمْ فَصَعِدُوا فِي الْجَبَلَ فَمَرُّوا بِالْغَارِ فَرَأَوْا عَلَى بَابِهِ نَسْجَ الْعَنْكَبُوتِ فَقَالُوا لَوْ دَخَلَ هَاهُنَا لَمْ يَكُنْ نَسْجُ الْعَنْكَبُوتِ عَلَى بَابِهِ فَمَكَثَ فِيهِ ثَلَاثَ لَيَال. رَوَاهُ أَحْمد
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (1 / 348 ح 3251) * فیہ عثمان الجزری بن عمرو بن ساج : فیہ ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: কুরায়শ নেতারা নবী (সা.) -এর বিরূদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দারুণ নাদওয়া-তে পরামর্শ সভায় মিলিত হয়েছিল। কথিত আছে যে, শয়তানও শায়খ নাজদীর আকৃতি ধারণ করে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল এবং সে-ই নবী (সা.)-কে হত্যা করার পরামর্শ দেয়। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, (وَ اِذۡ یَمۡکُرُ بِکَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لِیُثۡبِتُوۡکَ اَوۡ یَقۡتُلُوۡکَ اَوۡ یُخۡرِجُوۡکَ) “আর সেই ঘটনাও স্মরণ যখন কাফিররা আপনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করল যে, তারা আপনাকে বন্দি করে রাখবে অথবা আপনাকে নিহত করে রাখবে অথবা আপনাকে দেশান্তর করে দিবে”- (সূরা আল আনফাল ৮: ৩০)। হাদীসে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত আছে।
(فَرَأَوْا عَلَى بَابِهِ نَسْجَ الْعَنْكَبُوتِ) অর্থাৎ তারা যখন গুহার মধ্যে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করল তখন তারা তার মুখে মাকড়সার বাসা দেখতে পেল। এটা দেখে তারা মন্তব্য করল যে, তারা যদি এখানে থাকত তবে এর দরজায় মাকড়সা জাল বাধলো কিভাবে? বলা হয়ে থাকে যে, যখন নবী (সা.) গুহার ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন আল্লাহ দুটি কবুতরকে পাঠিয়ে দেন। তারা তার নিচে ডিম পাড়ে। আর মাকড়সা সেখানে জাল তৈরি করে। বর্ণিত আছে, যে গর্তের উপরে উঠল, তারা যদি নিচের দিকে তাকাত তবে তাদেরকে দেখে ফেলত। এ দেখে আবূ বাকর (রাঃ) ভয় পেয়ে যান। তখন নবী (সা.) বলেন, হে আবূ বাকর! দু’জনের ব্যাপারে তোমার ধারণা কি, তৃতীয় জন হিসেবে তো আল্লাহ আছেন। আল্লাহ গুহা থেকে তাদের চোখকে অন্ধ করে দেন। ফলে তারা গুহার চারপাশে ঘুরতে লাগল কিন্তু তারা তাদেরকে দেখতে পেল না। অবশেষে তারা সেখান থেকে চলে গেল। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৮ম খণ্ড, হা. ৩০৬৪, মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৫-[৬৮] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার বিজয় হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে (ভাজা) বকরি হাদিয়্যাহূস্বরূপ পেশ করা হলো তাতে বিষ ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলেন, এখানে যত ইয়াহুদী আছে, সকলকে আমার সামনে একত্রিত কর। তারা সকলে একত্রিত হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি তোমাদেরকে এক ব্যাপারে প্রশ্ন করব, তোমরা কি আমাকে এ ব্যাপারে সত্য উত্তর দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা তোমাদের পিতা কে? তারা বলল, অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ; বরং তোমাদের পিতা তো অমুক। তখন তারা বলল, আপনি সত্যই বলেছেন এবং সঠিক বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) আবার বললেন, আমি তোমাদেরকে আরো একটি বিষয়ে যদি প্রশ্ন করি, সে বিষয়েও তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! কেননা যদি আমরা আপনাকে মিথ্যা কথা বলি, তাহলে আপনি তো জানতেই পারবেন যেমনটি জানতে পেরেছেন আমাদের পিতার বিষয়ে।
এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, জাহান্নামী কারা? উত্তরে তারা বলল, আমরা স্বল্প সময়ের জন্য জাহান্নামে যাব। অতঃপর আপনারা তাতে আমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, দূর হও! তোমরাই সেখানে থাকবে। আল্লাহর শপথ! আমরা কখনো জাহান্নামে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হব না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে আরো একটি কথা প্রশ্ন করি, তাহলে তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বল দেখি! তোমরা কি এ বকরির মাংসে বিষ মিশিয়েছিলে? তারা (নির্দ্বিধায়) বলল, হ্যাঁ। নবী (সা.) প্রশ্ন করলেন, কিসে তোমাদেরকে এমন করতে উদ্বুদ্ধ করল? উত্তরে তারা বলল, আপনি যদি মিথ্যাবাদী হন, তাহলে আমরা আপনা হতে রেহাই পাব। আর আপনি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন, তাহলে বিষ আপনার কোনই ক্ষতি করবে না। (বুখারী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن أبي هُرَيْرَة أَنه قَالَ لَمَّا فُتِحَتْ خَيْبَرُ أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةٌ فِيهَا سُمٌّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْمَعُوا لي من كَانَ هَا هُنَا من الْيَهُود فَجمعُوا لَهُ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي سَائِلُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَهَلْ أَنْتُمْ صادقي عَنهُ فَقَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَبُوكُمْ قَالُوا فلَان فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَذبْتُمْ بل أبوكم فلَان فَقَالُوا صدقت وبررت قَالَ: «هَلْ أَنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنْهُ» قَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ وَإِنْ كَذَبْنَاكَ عَرَفْتَ كَمَا عَرَفْتَهُ فِي أَبِينَا قَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَهْلُ النَّارِ قَالُوا نَكُونُ فِيهَا يَسِيرًا ثمَّ تخلفوننا فِيهَا فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْسَئُوا فِيهَا وَاللَّهِ لَا نَخْلُفُكُمْ فِيهَا أبدا ثمَّ قَالَ لَهُم فَهَلْ أَنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنهُ قَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ قَالَ: «هَلْ جَعَلْتُمْ فِي هَذِه الشَّاة سما» . قَالُوا نعم فَقَالَ مَا حملكم على ذَلِك فَقَالُوا أردنَا إِن كنت كذابا نستريح مِنْك وَإِن كنت نَبيا لم يَضرك. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3169) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ) “হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম!" রাসূল (সা.) -কে সম্মোধন করার ইয়াহূদীদের একটি বিশেষ পদ্ধতি ছিল এটি। ঐ সকল হতভাগারা রাসূল (সা.) -কে মুহাম্মাদ নামে সম্বোধন করত না। কেননা এ বরকতময় নাম তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ও উল্লেখিত ছিল। মুহাম্মাদ (সা.) যে সত্য নবী তার একটা সুস্পষ্ট প্রমাণ ছিল। অতএব পক্ষপাত ও শক্রতার ভিত্তিতে তাদের মনঃপুত হত না যে, তারা তাদের মুখে ঐ নামের প্রকাশ করবে, যা স্বয়ং তাদের আসমানী কিতাবসমূহের দৃষ্টিতে শেষ যামানার নবীর সত্যতার নিদর্শন ছিল। (মাযাহিরে হাক ৭ম খণ্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
(ثمَّ تخلفوننا فِيهَا) অর্থ- “অতঃপর আপনারা তাতে আমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকবেন।” অর্থাৎ ইয়াহুদীরা মুসলিমদেরকে বলত যে, জান্নাতের আসল অধিকারী হচ্ছি আমরাই। যদি আমরা আমাদের কোন মন্দ ‘মলের কারণে জাহান্নামে যাই, তবে সেখানে অল্প কিছু দিনের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। যখন আমরা সেই শাস্তির সীমা শেষ করে সেখান থেকে বের হব তখন আমাদের স্থলাভিষিক্ত করে মুসলিমদেরকে সেখানে ফেলা হবে। যেখানে তোমরা মুসলিমরা সর্বদা বসবাস করবে। তাদের কথার প্রতি ইঙ্গিত করে আল কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে -
(قَالُوۡا لَنۡ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ) “তারা বলে (ইয়াহূদীরা) আমাদেরকে শুধুমাত্র কয়েকদিন জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে”- (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ২৪, সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ৮০)।
এটা যেন ঐ সকল ইয়াহুদীদের ‘আক্বীদাহ্ বিশাস ছিল যা বাস্তবিক অর্থে ভ্রান্তবিশ্বাস ও উদ্ভট ধারণা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা তাদের বিশ্বাস অনুসারে যে কথাকে তারা শুদ্ধ মনে করত এবং রাসূল (সা.) -এর প্রশ্নের যে উত্তর তাদের কাছে সঠিক ছিল তারা তা বর্ণনা করেছিল।
(لم يَضرك) “তাহলে এ বিষ আপনার কোনই ক্ষতি করবে না।” অর্থাৎ ইয়াহুদীদের উক্ত জবাবের উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আমরা তো কেবল পরীক্ষামূলক বকরিতে বিষ মিশিয়ে ছিলাম যে, যদি আপনি আপনার নুবুওয়্যাতের দাবীতে মিথ্যাবাদী হন তবে এ বিষ মিশ্রিত বকরির গোশত খেয়ে ধ্বংস হয়ে যাবেন। আর তখন আমরা আপনার থেকে পরিত্রাণ পাব। আর যদি আপনি আপনার দাবীতে সত্যবাদী হন তবে এ বিষ আপনাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তখন আমরা আপনাকে নবী হিসেবে মেনে নিব। এটা ইয়াহুদীদের বক্তব্য ছিল। আর তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক তার ধারণা এভাবে পাওয়া যায় যে, যখন বিষ নবী (সা.) - এর ওপর কোনভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হলো না, তখন তারা তাদের কথা অনুসারে রাসূল (সা.) -এর নবী হওয়া সত্য সাব্যস্ত হলো, কিন্তু তারা তার উপর ঈমান তো আনেইনি এবং ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুতা থেকেও ফিরে আসেনি। (মাযাহিরে হাক ৭ম খণ্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৬-[৬৯] ’আমর ইবনু আখত্বাব আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে ফজরের সালাত আদায় করিয়ে মিম্বারে উঠে আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন, এমনকি ভাষণে সিলসিলা একটানা যুহরের সময় অবধি চলতে থাকল। অতঃপর মিম্বার হতে তিনি নেমে যুহরের সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষ করে আবার মিম্বারে উঠে ভাষণ দিলেন, এমনকি ’আসরের সময় হয়ে গেল। তখন মিম্বার হতে নেমে আসরের সালাত আদায় করালেন। আসরের সালাত শেষ করে আবার মিম্বারে উঠে সূর্যাস্ত অবধি ভাষণ দিলেন। ভাষণে তিনি সেই সমস্ত বিষয়গুলো আমাদেরকে জানালেন, কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের মধ্যে সেই লোকই সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী যে সেদিন কথাগুলো বেশি বেশি স্মরণ রেখেছে। (মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن عَمْرو بن أخطَب الْأنْصَارِيّ قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا الْفجْر وَصعد الْمِنْبَرِ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ فَنَزَلَ فَصَلَّى ثمَّ صعِد الْمِنْبَر فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ فَأَخْبَرَنَا بِمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَأَعْلَمُنَا أحفظنا. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (25 / 2892)، (7267) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাসীসটির বর্ণনাকারী ‘আমর ইবনু আখত্বাব আল আনসারী (রাঃ) তাঁর উপনাম আবূ যায়দ। আর তিনি এ উপনামেই প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি রাসূল (সা.) -এর সাথে সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং তাঁর সৌন্দর্যের জন্য দু'আ করেন। কথিত আছে যে, তিনি ১০০ বছরের বেশি জীবিত ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তার চেহারা খুব তরতাজা ছিল আর তার মাথা ও দাড়ির মাত্র কয়েকটি চুল সাদা হয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
হাদীসে আলোচিত দিন আল্লাহর রাসূল (সা.) যুহর ও ‘আসর সালাতের বিরতি ছাড়া সমস্ত সময় ওয়ায ও নসীহাতের মধ্যে অতিবাহিত করেছেন। আর উক্ত দীর্ঘ সময় ওয়ায ও নাসীহাত চলাকালীন তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য সকল বিষয়াবলীর প্রতি ইঙ্গিত করেন। এটা নবী (সা.) -এর বড় একটি মু'জিযা ছিল। তিনি কিয়ামতের এত আগে সংঘটিতব্য সকল বিষয়ের কথা এত পূর্বে জানিয়ে দিয়েছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৭-[৭০] মা’ন ইবনু আবদুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, আমি মাসরূককে প্রশ্ন করলাম, জিনেরা যে রাত্রে মনোনিবেশ সহকারে কুরআন মাজীদ শুনেছিল, এ সংবাদটি নবী (সা.) -কে কে দিয়েছিল? তিনি বললেন, তোমরা পিতা অর্থাৎ ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ আমাকে বলেছেন যে, তাকে [নবী (সা.) -কে] একটি গাছ তাদের উপস্থিতির কথা জানিয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ مَعْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ سَمِعْتُ أَبِي قَالَ: سَأَلْتُ مَسْرُوقًا: مَنْ آذَنَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجِنِّ لَيْلَةَ اسْتَمَعُوا الْقُرْآنَ؟ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُوكَ يَعْنِي عَبْدَ اللَّهِ ابْن مَسْعُودٍ أَنَّهُ قَالَ: آذَنَتْ بِهِمْ شَجَرَةٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3859) و مسلم (153 / 450)، (1011) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (آذَنَتْ بِهِمْ شَجَرَةٌ) “একটি গাছ তাদের উপস্থিতির কথা তাঁকে [নবী (সা.)-কে] জানিয়েছিল। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা জড় বস্তুর মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা মর্তবা দান করেন। এর দলীল -
মহান আল্লাহ বলেন: (وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَهۡبِطُ مِنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ) “আর তাদের মধ্য থেকে কত্থক আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়”- (সূরা আল বাক্বারাহ ২: ৭৪)। তিনি অন্যত্র বলেন- (.... وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِهٖ وَ لٰکِنۡ لَّا تَفۡقَهُوۡنَ تَسۡبِیۡحَهُمۡ...)“...আর প্রত্যেকটা জিনিসই তার (আল্লাহর) প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করে, কিন্তু তোমরা তাদের তাসবীহ বোঝ না...”- (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭: ৪৪)। আর নবী (সা.) -এর বাণী, (عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنِّي لأَعْرِفُ حَجَرًا بِمَكَّةَ كَانَ يُسَلِّمُ عَلَىَّ قَبْلَ أَنْ أُبْعَثَ إِنِّي لأَعْرِفُهُ الآنَ) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় আমি এখন মক্কার সেই পাথরকে চিনি যে আমি নবী হওয়ার আগেই আমাকে সালাম করত। [সহীহ: মুসলিম ২-(২২৭৭)]
আর সেই দুই গাছের ঘটনা যারা নবী (সা.) -এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার কাছে এসেছিল।
আবার খেজুর গাছের কাণ্ডের ক্রন্দনের সেই বিখ্যাত ঘটনা। আবার মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাপড় নিয়ে পাথরের পালানোর সময়ের ঘটনা। (শারহুন নাবাবী হা, ৪৫০)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৮-[৭১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা মক্কাহ্ এবং মদীনার মাঝামাঝি স্থানে ’উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম, তখন আমরা নতুন চাঁদ দেখতে চেষ্টা করি। আমি ছিলাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন লোক। অতএব আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আর আমি ব্যতীত অন্য কেউই চাঁদ দেখতে পেয়েছে বলে দাবি করেনি। আমি ’উমার (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি চাঁদ দেখছেন না? কিন্তু তিনি তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ’উমার (রাঃ) বললেন, শীঘ্রই আমি আমার বিছানায় শুয়ে শুয়ে তা দেখব। অতঃপর ’উমার (রাঃ) বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে লাগলেন এবং বললেন, যুদ্ধের একদিন আগে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে ঐ সমস্ত স্থানগুলো দেখিয়ে দিলেন, যে যে স্থানে কাফিরদের লাশ পড়ে থাকবে। তিনি বললেন, ইনশা-আল্ল-হ আগামীকাল এ জায়গা অমুক (কাফির)-এর লাশ পড়বে। ইনশাআল্ল-হ আগামীকাল এ স্থানে অমুকের লাশ পড়বে। উমার (রাঃ) বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি তাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন; যে সকল স্থান রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দিষ্ট করেছিলেন, ঐ স্থান হতে একটুখানিও এদিক-সেদিক সরে পড়েনি।
(বর্ণনাকারী বলেন,) অতঃপর লাশগুলোকে একটি (অনাবাদ) কূপের মাঝে একটির উপর অপরটিকে নিক্ষেপ করা হলো এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) কূপটির কাছে এসে বললেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তোমরা কি তা ঠিক ঠিক পেয়েছ? তবে আমার আল্লাহ আমাকে যা ওয়াদা দিয়েছেন, আমি অবশ্য তা ঠিক ঠিকভাবে পেয়েছি। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কিভাবে এমন দেহসমূহের সাথে কথা বলছেন, যাদের মধ্যে কোন প্রাণ নেই। তিনি বললেন, আমি তাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা তাদের চেয়ে বেশি শুনছ না, অবশ্য তারা আমার কথার কোন উত্তর দিতে সক্ষম নয়। (মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كُنَّا مَعَ عُمَرَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَتَرَاءَيْنَا الْهِلَالَ وَكُنْتُ رَجُلًا حَدِيدَ الْبَصَرِ فَرَأَيْتُهُ وَلَيْسَ أَحَدٌ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَآهُ غَيْرِي قَالَ فجعلتُ أقولُ لعُمر أما ترَاهُ فَجعل لَا يَرَاهُ قَالَ يَقُولُ عُمَرُ سَأَرَاهُ وَأَنَا مُسْتَلْقٍ عَلَى فِرَاشِي ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا عَنْ أَهْلِ بدر فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُرِينَا مَصَارِعَ أَهْلِ بَدْرٍ بِالْأَمْسِ يَقُولُ هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ غَدًا إِنْ شَاءَ الله قَالَ فَقَالَ عمر فوالذي بَعثه بِالْحَقِّ مَا أخطئوا الْحُدُود الَّتِي حد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ فَجُعِلُوا فِي بِئْرٍ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ فَانْطَلَقَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْتَهَى إِلَيْهِمْ فَقَالَ يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ هَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ حَقًّا فَإِنِّي قَدْ وَجَدْتُ مَا وَعَدَني الله حَقًا قَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تُكَلِّمُ أَجْسَادًا لَا أَرْوَاحَ فِيهَا قَالَ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ أَن يَردُّوا عليَّ شَيْئا . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (76 / 2873)، (7222) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (سَأَرَاهُ وَأَنَا مُسْتَلْقٍ عَلَى فِرَاشِي) “আমি অচিরেই আমার বিছানায় শুয়ে তা দেখব।” এ বাক্য দ্বারা মূলত ‘উমার (রাঃ) উক্ত চাঁদ দেখার জন্য অধিক চেষ্টা করার বিষয়টিকে অপ্রয়োজনীয় হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল এই যে, যে সকল লোক নিজ চোখে চাঁদ দেখেছে তাদের সাক্ষ্যের উপর বর্ণনা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। অথবা আমাকে স্বচক্ষে নতুন চাঁদ দেখতেই হবে। তাই কিছুদিন পর অথবা আগামী দিন যখন চাঁদ বড় ও উজ্জ্বল হয়ে যাবে এবং সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে তখন দেখে নেব। এখন যেহেতু চাঁদ দেখা যাচ্ছে না তখন তাকে দেখার জন্য অধিক চেষ্টা করার কোন দরকার নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক)
(مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ أَن يَردُّوا عليَّ شَيْئا) “আমি তাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা তাদের চেয়ে অধিক শুনছ না, অবশ্য তারা আমার কথার কোন জবাব দিতে সক্ষম নয়।” এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, মৃত ব্যক্তি জীবিতদের কথা শুনতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, সকল মৃত ব্যক্তি কী জীবিত ব্যক্তিদের কথা শুনতে পায়? উত্তর- এ মাস্আলাটি নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। তবে সঠিক কথা হলো- এ বিষয়ে সৌদী ফাতাওয়া বোর্ড “আল লাজনাহ্ আদ্ দায়িমাহ্ লিল বুহূস আল ‘ইলমিয়্যাহ্ ওয়াল ইফতা”-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশ্নকারী বলেন, আমি “আল হাউয়ী লিল ফাতাওয়া” ইমাম সুয়ূত্বী-এর লেখা কিতাবে পড়েছি যে, মৃত ব্যক্তি জীবিত মানুষের কথা শুনতে পায়, তাদের প্রশংসা ও তাদের কথা-বার্তা বুঝতে পারে, অনুরূপভাবে যারা তাদেরকে দেখতে যায় তারা তাদেরকে চিনতে পারে, আর মৃতরা ঘোরাঘুরি করতে পারে, এটা কি ঠিক? আর তিনি কতিপয় হাদীস ও আসারের উপর নির্ভর করেছেন। (আল হাউয়ী লিল ফাতাওয়া ২/১৬৯, ১৭০, ১৭১)।
উত্তর- মূল কথা হলো মৃত ব্যক্তি জীবিতদের কথা শুনতে পায় না, তবে যেসব জায়গায় শোনার কথা উল্লেখ আছে তা ব্যতীত। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সা.)কে সম্বোধন করে বলেছেন,
(فَاِنَّکَ لَا تُسۡمِعُ الۡمَوۡتٰی) “আর তুমি মৃত ব্যক্তিকে শোনাতে পারবে না”- (সূরা আর রূম ৩০ : ৫২)। তিনি অন্যত্র বলেন- (وَ مَاۤ اَنۡتَ بِمُسۡمِعٍ مَّنۡ فِی الۡقُبُوۡرِ) “তুমি কবরবাসীকে শোনাতে পারবে না”- (সূরাহ আল ফাত্বির ৩৫ : ২২)। “আল লাজনাহ্ আদ্ দায়িমাহ লিল বুহুস আল ইলমিয়্যাহ্ ওয়াল ইফতা" ফাতাওয়া নং ৯২১৬।
‘আল্লামাহ্ আলুসী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীর “রূহুল মা'আনী”৬/৪৫৫-তে বলেন: এ বিষয়ে সূক্ষ্ম গবেষণার পরে সত্য কথা হলো মৃত ব্যক্তি একেবারেই শুনতে পায় না, তবে নবী (সা.) থেকে শোনার ব্যাপারে যা উল্লেখ হয়েছে সে জায়গাগুলো ছাড়া। এ মতটি পোষণ করেছেন অনেক বিদ্বান, যেমনটি বলেছেন হাফিয ইবনু রজব আল হাম্বলী। (গুগল পেজ, আল আলুকা আশ শারঈয়াহ, তারিখ ২৭/৩/২০১৪ ইং, প্রশ্নঃ --- )
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৯-[৭২] যায়দ ইবনু আরকাম-এর কন্যা উনায়সাহ্ (রাঃ) তাঁর পিতা যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, একবার যায়দ রোগাগ্রস্ত হয়ে পড়লে নবী (সা.) তাঁকে দেখাশুনা করতে আসলেন। তিনি (সা.) বললেন, এ রোগে তোমার অবস্থা কি হবে? যখন আমার মৃত্যুর পরও তুমি বেঁচে থাকবে এবং সে সময় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলবে? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কাছে এর প্রতিদানের আশা করে ধৈর্যধারণ করব। নবী (সা.) বললেন, তবে তো তুমি বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উনায়সাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সা.) - এর মৃত্যুর পর তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। আবার কিছুদিন পর আল্লাহ তা’আলা তাঁকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। এরপর তিনি ইন্তিকাল করেন।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ أُنَيْسَةَ بِنْتِ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ عَنْ أَبِيهَا إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى زَيْدٍ يَعُودُهُ مِنْ مَرَضٍ كَانَ بِهِ قَالَ: «لَيْسَ عَلَيْكَ مِنْ مَرَضِكَ بَأْسٌ وَلَكِنْ كَيْفَ لَكَ إِذَا عُمِّرْتَ بَعْدِي فَعَمِيتَ؟» قَالَ: أَحْتَسِبُ وَأَصْبِرُ. قَالَ: «إِذًا تَدْخُلِ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَاب» . قَالَ: فَعَمِيَ بَعْدَ مَا مَاتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم ثمَّ ردَّ اللَّهُ بَصَره ثمَّ مَاتَ
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 479) * فیہ ’’ نباتۃ عن حمادۃ عن انیسۃ بنت زید بن ارقم ‘‘ وھن مجھولات و من دونھن ینظر فیہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) -এর উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। যে অসুখে রাসূল (সা.) এ যায়দ (রাঃ)-কে দেখতে গিয়েছিলেন তা থেকে তিনি সুস্থ হয়ে যান। তারপর রাসূল (সা.) -এর মৃত্যুর পর তার দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। তবে রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ)-এর সামনে তাঁর দৃষ্টিশক্তি পুনরায় ফিরে আসার কথা উল্লেখ করেননি; তার কারণ হয়তো রাসূল (সা.) -এর এ আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, দৃষ্টিশক্তি না থাকা অবস্থায় যায়দ ইবনু আরকম (রাঃ) ধৈর্যধারণ করে বেশি বেশি দুঃখকষ্ট সহ্য করবেন, যার ফলে তিনি অধিক প্রতিদান ও সাওয়াব লাভ করবেন। যদি তিনি পূর্ব থেকেই এ কথা জানতেন যে, তাঁর দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ার পর পুনরায় ফিরে আসবে তবে তিনি এত অধিক পরিমাণে দুঃখ ও কষ্ট ভোগ করতেন না
এবং তিনি পূর্ণ ধৈর্যধারণের ঐ মর্যাদাও অর্জন করতে পারতেন না যার কারণে তিনি আল্লাহ তা'আলার সাহায্য-সহযোগিতা অর্জন করেছেন। (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৭০ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪০-[৭৩] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে লোক আমার ওপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়। রাসূল (সা.) -এর এই বাণী এ প্রসঙ্গে ছিল যে, একদিন তিনি এক লোককে পাঠালেন, সে সেখানে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পক্ষ হতে মিথ্যা কথা বলল। তা জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার ওপর বদূদু’আ করলেন। এরপর তাকে এমতাবস্থায় পাওয়া যায় যে, তার পেট ফাটা এবং মাটি তাকে গ্রহণ করেনি। [হাদীস দুটি ইমাম বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) “দালায়িলুন্ নুবুওয়্যাহ্” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন]
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من تَقول عَليّ مالم أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ» . وَذَلِكَ أَنَّهُ بَعَثَ رَجُلًا فَكَذَبَ عَلَيْهِ فَدَعَا عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدَ مَيِّتًا وَقد انشقَّ بَطْنه وَلم تقبله الأَرْض. رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيّ فِي دَلَائِل النُّبُوَّة
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 245) * فیہ الوازع بن نافع العقیلی : متروک ، وقولہ :’’ من تقول علی مالم اقل فلیتبوا مقعدہ من النار ‘‘ صحیح متواتر من طرق أخری ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: হাদীসের শেষ বাক্যটি এ কথার নিদর্শন যে, ঐ ব্যক্তি চিরদিনের জন্য জাহান্নামী সাব্যস্ত হলো। এ হিসেবে এই বর্ণনা ঐ বক্তব্যের সহায়ক যার সারকথা হলো, ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূল (সা.) -এর দিকে কোন মিথ্যা কথা সম্পর্কিতকারী অর্থাৎ জাল হাদীস রচয়িতা কাফির হয়ে যায়। (মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪১-[৭৪] জাবির (রাঃ) বলেন, একদিন এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে খাদ্য চাইল। তিনি (সা.) তাকে অর্ধ ওয়াসাক পরিমাণ যব দিলেন। তা হতে সে লোক, তার স্ত্রী ও তাদের মেহমান সর্বদা খেতে থাকে। অবশেষে একদিন সে উক্ত যুবগুলো মেপে দেখল। ফলে তা নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে ঘটনাটি জানাল। তখন নবী (সা.) বললেন, তুমি যদি তা না মাপতে, তাহলে তোমরা তা হতে সর্বদা খেতে পারতে এবং (আমার দেয়া) যবগুলো আগের মতো থেকে যেত। (মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن جابرٍ أنَّ رسولَ الله جَاءَهُ رَجُلٌ يَسْتَطْعِمُهُ فَأَطْعَمَهُ شَطْرَ وَسَقِ شَعِيرٍ فَمَا زَالَ الرَّجُلُ يَأْكُلُ مِنْهُ وَامْرَأَتُهُ وَضَيْفُهُمَا حَتَّى كَالَهُ فَفَنِيَ فَأَتَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «لَوْ لَمْ تَكِلْهُ لَأَكَلْتُمْ مِنْهُ ولقام لكم» رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (9 / 2281)، (5946) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে বরকতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কোন মানুষ আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজ করতে থাকলে তাতে বরকত দেয়া হয়। বিশেষ করে আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর দেয়া কোন জিনিসে যে বরকত হত তা এই হাদীসটি থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়। এ ব্যাপারে কিছু হাদীস লক্ষ্য করা যেতে পারে- সহীহ: বুখারী ৬৪৫১, ২১২৮, ১৪৩৩, সহীহ: মুসলিম ১০২৯, ১৮৫৬, ৬৮২, ২০৫৬, মুসনাদ আহমাদ ২৩৮৫৯। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪২-[৭৫] ’আসিম ইবনু কুলায়ব (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা হতে, তিনি (কুলায়ব) জনৈক আনসারী লোক হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে এক লোকের জানাযায় গেলাম। পরে আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরের কাছে উপস্থিত হয়ে কবর খননকারীকে নির্দেশ দিয়ে বলছেন, (এর কবরকে) পায়ের দিকে ও মাথার দিকে আরো প্রশস্ত কর। অতঃপর তিনি (সা.) দাফন কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসলে মৃত লোকের (বিধবা) স্ত্রীর পক্ষ হতে এক লোক এসে নবী (সা.) -কে খাদ্যের দাওয়াত দিল। রাসূল (সা.) দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে আমরাও খেতে গেলাম। তাঁর সামনে খাদ্য আনা হলে তিনি তাতে হাত রাখলেন, অতঃপর লোকেরাও হাত বাড়িয়ে খেতে শুরু করল। এ সময় আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি মাংসের একটি গ্রাসকে মুখের ভিতরে রেখে নাড়াচাড়া করছেন। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, এমন একটি বকরির মাংস বলে আমি একে অনুভব করছি, যা তার মালিকের অনুমতি ছাড়াই আনা হয়েছে। তখন মহিলাটি [রাসূল (সা.) -এর সন্দেহ জানতে পেরে] একজন লোক পাঠিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! বকরি ক্রয় করার জন্য আমি এক লোককে নাকী বাজারে পাঠিয়েছিলাম। তা এমন একটি স্থান, যেখানে ভেড়া, বকরি ও দুম্বা ইত্যাদি বিক্রয় হয়; কিন্তু সেখানে কোন ভেড়া-বকরি পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমার একজন প্রতিবেশীর কাছে পাঠালাম। সে নিজের জন্য একটি বকরি ক্রয় করেছিল। আমি এই বলে লোকটিকে পাঠিয়েছিলাম, সে যে দামে বকরিটি ক্রয় করেছে, ঠিক সেই দামেই বকরিটি যেন আমার জন্য পাঠিয়ে দেয়, কিন্তু সে ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমি তার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালাম। তখন তার স্ত্রী আমার জন্য বকরিটি পাঠিয়ে দিয়েছে (এটা সেই বকরিরই মাংস)। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, এ খাদ্যগুলো বন্দিদেরকে খাইয়ে দাও। (আবূ দাউদ ও বায়হাক্বী’র “দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্")
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْقَبْرِ يُوصِي الْحَافِرَ يَقُولُ: «أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ» فَلَمَّا رَجَعَ اسْتَقْبَلَهُ دَاعِيَ امْرَأَتِهِ فَأَجَابَ وَنَحْنُ مَعَه وَجِيء بِالطَّعَامِ فَوَضَعَ يَدَهُ ثُمَّ وَضَعَ الْقَوْمُ فَأَكَلُوا فَنَظَرْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يلوك لقْمَة فِي فَمه ثُمَّ قَالَ أَجِدُ لَحْمَ شَاةٍ أُخِذَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ أَهْلِهَا فَأَرْسَلَتِ الْمَرْأَةُ تَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَى النَّقِيعِ وَهُوَ مَوْضِعٌ يُبَاعُ فِيهِ الْغَنَمُ لِيُشْتَرَى لِي شَاةٌ فَلَمْ تُوجَدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى جَارٍ لِي قَدِ اشْتَرَى شَاة أَن أرسل إِلَيّ بهَا بِثَمَنِهَا فَلَمْ يُوجَدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى امْرَأَتِهِ فَأَرْسَلَتْ إِلَيَّ بِهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَطْعِمِي هَذَا الطَّعَامَ الْأَسْرَى» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ والْبَيْهَقِيُّ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ
اسنادہ صحیح ، رواہ ابوداؤد (3332) [و عنہ] و البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 310) * قولہ ’’ داعی امراتہ ‘‘ خطا من الناسخ اوغیرہ ، و الصواب :’’ داعی امراۃ ‘‘ کما فی سنن ابی داود وغیرہ ولو صح فمعناہ ’’ ای امراۃ الحافر ‘‘ و لا یدل ھذا اللفظ الی ما ذھب الیہ البریلویۃ و من و افقھم بان المراد منہ ’’ داعی امراۃ المیت ‘‘ و لم یاتو بای دلیل علی تحریفھم ھذا ! ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (فَأَكَلُوا) অর্থ- তারা খেল, মিরকাতের ভাষ্যকার মুল্লা আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মৃতকে উপলক্ষ করে প্রস্তুতকৃত খাবারের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের যে সকল মতামত রয়েছে বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ হাদীস তার বিপরীত। যেমন “আল বাযযারিয়্যাহ্” কিতাবে লেখা আছে, মৃতের উত্তরাধিকারীদের পক্ষ থেকে প্রথম দিন তথা মৃত্যুর দিন অথবা তৃতীয় দিন অথবা সপ্তম দিন খানা খাওয়ানো মাকরূহ। তদ্রুপ “আল খুলাসাহ” গ্রন্থে উল্লেখ আছে, তৃতীয় দিন খানার ব্যবস্থা করা এবং মানুষকে উক্ত খাবারের দিকে আহ্বান করা বৈধ নয়।
‘আল্লামাহ যায়লা'ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনদিন পর্যন্ত শোক পালনের জন্য বসে থাকাতে কোন ক্ষতি নেই। তবে শর্ত হলো নিষিদ্ধ কোন বিষয় যেন সংঘটিত না হয়, যেমন- খাবার প্রস্তুত করা এবং দা'ওয়াত ও যিয়াফাতের ব্যবস্থা করা।
ইবনু হুমাম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের জন্য যিয়াফাতের ব্যবস্থা করা মাকরূহ। আর সকল ফক্বীহ তার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন যে, যিয়াফাত খুশির ক্ষেত্রে বৈধ, শোকের ক্ষেত্রে বৈধ নয়। তিনি আরো বলেন, মৃত্যের জন্য যে খাবার খাওয়ানো হয় তা বিদআতে সায়্যিআহ্। ইমাম আহমাদ ও ইমাম ইবনু হিব্বান (রহিমাহুল্লাহ) সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন-
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَنْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ قَالَ: كُنَّا نَعُدُّ الِا جْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنَ النِّيَا حَةِ.
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) বলেন, দাফনের পর মৃতের ঘরে লোকজন একত্রিত হওয়া এবং মৃতের আত্মীয়স্বজনের পক্ষ থেকে খাবার পরিবেশনকে আমরা মৃতের জন্য বিলাপের অন্তর্ভুক্ত করতাম। (মুসনাদ আহমাদ ৬৯০৫)। (যা শরী'আতে কঠোরভাবে নিষেধ)।
কাযী খান (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বিপদের দিন যিয়াফাত খাওয়ানো মাকরূহ। কেননা তা হলো দুঃখের দিন। অতএব ঐ দিনে এমন কাজ করা উচিত নয় যাতে আনন্দ প্রকাশ পায়। তবে যদি ফকীরদের খাবার ব্যবস্থা করা হয় তবে তা ভালো। মৃত্যুর পরে তিন দিন খাদ্য খাওয়ানোর ওয়াসিয়াত করা হলে তা বাত্বিল হবে। এটিই সঠিক মত।
(أَرْسَلْتُ إِلَى النَّقِيعِ) নাকী’ লেখা হয় নূন দিয়ে। আর এটা এমন একটা জায়গা যেখানে ছাগল বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ- এ বাক্যটি মূলত বাক্যের অংশ নয়; বরং কোন বর্ণনাকারী নাক্বী'-এর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বর্ণনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আল মুকদ্দিমাহ্ গ্রন্থে এসেছে আন নাক্বী হলো মদীনার পূর্ব দিকের একটি জায়গার নাম। আত্ তাহযীব গ্রন্থে এসেছে, নাকী মদীনাহ্ হতে ‘আক্বীক উপত্যকার দিকে প্রায় বিশ মাইল দূরত্বে অবস্থিত একটি জায়গার নাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
(أَطْعِمِي هَذَا الطَّعَامَ الْأَسْرَى) “তুমি এ খাদ্যগুলো বন্দীদেরকে খাইয়ে দাও।” কারণ তারা ফকীর বা দরিদ্র লোক। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা ছিল কাফির। খাদ্য হালাল হওয়ার জন্য যখন ছাগলের মালিককে পাওয়া যায়নি, আর সে খাবার নষ্টের ভয়ও ছিল, তাই সে খাদ্য তাদেরকে খাওয়ানোর দরকার হয়ে পড়েছিল। ফলে তিনি তাদেরকে খাওয়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর এটি নষ্ট করার কারণে তার উপর ছাগলের মূল্য দেয়া জরূরী ছিল। তাই এ খাবার খাওয়ানো তার থেকে সদাকাহ হলো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৪৩-[৭৬] হিযাম ইবনু হিশাম তাঁর পিতার মাধ্যমে, তিনি তাঁর দাদা উম্মু মা’বাদ-এর ভাই হুবায়শ ইবনু খালিদ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কাহ্ হতে বহিস্কৃত হলেন, তখন তিনি মদীনার দিকে হিজরত করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আযাদকৃত দাস ’আমির ইবনু ফুহায়রাহ্ এবং পথপ্রদর্শক ’আবদুল্লাহ আল লায়সী। পথ অতিক্রমকালে তাঁরা উম্মু মা’বাদ (রাঃ) হতে মাংস এবং খেজুর ক্রয় করতে চাইলেন, কিন্তু তার কাছে এর কিছুই পাননি। মূলত সে সময় লোকেরা অনাহার ও দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত ছিল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁবুর এক পার্শ্বের একটি বকরি দেখতে পেলেন। তিনি প্রশ্ন কররেন, হে উম্মু মা’বাদ! এ বকরিটির কি হয়েছে? সে বলল, এটা এতই দুর্বল যে, দলের বকরিগুলোর সাথে যাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। তিনি (সা.) প্রশ্ন করলেন, এতে কি দুধ আছে? উম্মু মা’বাদ (রাঃ) বলল, সে নিজেই বিপদগ্রস্তা; অতএব দুধ দেবে কিভাবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি কি আমাকে এ অনুমতি দেবে যে, আমি তার দুধ দোহন করি? উম্মু মা’বাদ (রাঃ) আগ্রহের সাথে বলল, আমার পিতামাতা আপনার ওপর উৎসর্গ হোক! আপনি যদি তার স্তনে দুধ দেখতে পান, তাহলে তা দোহন করুন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বকরিটিকে কাছে আনলেন, তারপর বকরিটির স্তনে হাত বুলালেন এবং বিসমিল্লা-হ পড়ে উম্মু মা’বাদ-এর জন্য তার বকরির বিষয়ে (বরকতের) দুআ করলেন। তখন বকরিটি দোহনের জন্য নিজের রান দুটি প্রশস্ত করে রাসূল (সা.) -এর সামনে দাঁড়িয়ে জাবর কাটতে লাগল। এদিকে দুধ দোহনের জন্য নবী (সা.) - এত বড় একটি পাত্র চাইলেন, যা দ্বারা একদল লোক তুষ্টির সাথে পান করতে পারে। প্রবাহিত ঢলের মতো তিনি তাতে দুধ দোহন করলেন, এমনকি তার উপর ফেনাও জমে গেল। অতঃপর তিনি উম্মু মা’বাদ-কে পান করতে দিলেন। সে তুষ্ট হয়ে পান করল। পরে তিনি (সা.) সাথিদেরকে পান করালেন, তারাও পরিতৃপ্তি লাভ করলেন এবং সকলের শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে পান করলেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই রাসূলুল্লাহ (সা.) - দ্বিতীয়বার দোহন করলেন, এমনকি সেই পাত্রটি এবারও দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি সেই দুধ উম্মু মা’বাদ-এর কাছে রেখে দিলেন। (যেন তার স্বামীও নবী (সা.) -এর মু’জিযাকে প্রত্যক্ষ করতে পারে) এবং উম্মু মা’বাদ-এর তরফ হতে ইসলামের বায়’আত গ্রহণ করে তাঁরা সামনের দিকে যাত্রা করলেন।
(শারহুস সুন্নাহ; আর ইবনু আবদুল বার ইস্তী’আব গ্রন্থে এবং ইবনু জাওযী আল-ওয়াফা কিতাবে বর্ণনা করেছেন এবং অত্র হাদীসটির মধ্যে আরো কিছু ঘটনা রয়েছে)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)
وَقد يرقى إِلَى الْحسن بِتَعَدُّد طرقه) وَعَن حَازِم بْنِ هِشَامٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ حُبَيْشِ بن خَالِد - وَهُوَ أَخُو أمِّ مَعْبَد - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أُخْرِجَ مِنْ مَكَّةَ خَرَجَ مُهَاجِرًا إِلَى الْمَدِينَةِ هُوَ وَأَبُو بَكْرٍ وَمَوْلَى أَبِي بَكْرٍ عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ وَدَلِيلُهُمَا عَبْدُ اللَّهِ اللَّيْثِي مَرُّوا عَلَى خَيْمَتَيْ أُمِّ مَعْبَدٍ فَسَأَلُوهَا لَحْمًا وَتَمْرًا لِيَشْتَرُوا مِنْهَا فَلَمْ يُصِيبُوا عِنْدَهَا شَيْئًا من ذَلِك وَكَانَ الْقَوْمُ مُرْمِلِينَ مُسْنِتِينَ فَنَظَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَاةٍ فِي كِسْرِ الْخَيْمَةِ فَقَالَ: «مَا هَذِهِ الشَّاةُ يَا أُمَّ معبد؟» قَالَتْ: شَاةٌ خَلَّفَهَا الْجَهْدُ عَنِ الْغَنَمِ. قَالَ: «هَلْ بِهَا مِنْ لَبَنٍ؟» قَالَتْ: هِيَ أَجْهَدُ مِنْ ذَلِكَ. قَالَ: «أَتَأْذَنِينَ لِي أَنْ أَحْلِبَهَا؟» قَالَتْ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي إِنْ رَأَيْتَ بِهَا حَلباً فاحلبها. فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَسَحَ بِيَدِهِ ضَرْعَهَا وَسَمَّى اللَّهَ تَعَالَى وَدَعَا لَهَا فِي شَاتِهَا فتفاجت عَلَيْهِ وَردت وَاجْتَرَّتْ فَدَعَا بِإِنَاءٍ يُرْبِضُ الرَّهْطَ فَحَلَبَ فِيهِ ثجَّاً حَتَّى علاهُ الْبَهَاءُ ثُمَّ سَقَاهَا حَتَّى رَوِيَتْ وَسَقَى أَصْحَابَهُ حَتَّى رَوُوا ثُمَّ شَرِبَ آخِرَهُمْ ثُمَّ حَلَبَ فِيهِ ثَانِيًا بَعْدَ بَدْءٍ حَتَّى مَلَأَ الْإِنَاءَ ثُمَّ غَادَرَهُ عِنْدَهَا وَبَايَعَهَا وَارْتَحَلُوا عَنْهَا. رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ» وَابْنُ عَبْدِ الْبَرِّ فِي «الِاسْتِيعَابِ» وَابْنُ الْجَوْزِيِّ فِي كِتَابِ «الْوَفَاءِ» وَفِي الحَدِيث قصَّةٌ
حسن ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 261 ح 3704) و ابن عبدالبر فی الاستیعاب (4 / 495 ۔ 498 مع الاصابۃ) [و صححہ الحاکم (3 / 9 ، 10 و وافقہ الذھبی] * و للحدیث شواھد
ব্যাখ্যা: উম্মু মা'বাদ এক-এর আসল নাম ‘আতিকাহ্ বিনতু খালিদ আল খুযাইয়্যাহ্। রাসূল (সা.) হিজরতকালীন সময়ে তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে কথিত আছে, তিনি মদীনায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(وَفِي الحَدِيث قصَّةٌ) “অত্র হাদীসের মধ্যে আরো কিছু ঘটনা আছে। আর তা হলো, আর যখন রাসূল (সা.) উম্মু মা'বাদ -এর তাবু অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হলেন এবং উম্মু মা'বাদ (রাঃ) তাঁর স্বামী আবূ মা'বাদ (রাঃ)-কে সম্পূর্ণ ঘটনা অত্যধিক সুন্দর বাচনভঙ্গিতে রাসূল (সা.) -এর মর্যাদা ও গুণাগুণসহ বর্ণনা করে বলেন, এক মহান বরকতপূর্ণ ব্যক্তি আমাদের তাঁবুতে এসেছিলেন এবং এ দুধ তাঁর আগমনেরই নিদর্শন। আবূ মা'বাদ (রাঃ) এসব শুনে বলেন, নিশ্চয় ঐ মহান ব্যক্তি কুরায়শ বংশীয় তিনিই যার অনেক গুণাবলির কথা আমি মক্কায় শুনেছি। যদি আমি যেতে সক্ষম হই তাহলে আল্লাহর শপথ! আমি ঐ মহান ব্যক্তির দরবারে উপস্থিত হওয়ার এবং সঙ্গত্ব লাভের ইচ্ছা পোষণ করেছি।
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূল (সা.) যখন হিজরতের জন্য আবূ বাকর (রাঃ) -কে সাথে নিয়ে মদীনার পথে রওয়ানা হন এবং মক্কাবাসীরা রাসূল (সা.) -এর গতিবিধি ও গন্তব্যস্থল সম্পর্কে অবগত হতে বিফল হয় তখন এক মুসলিম জিন্ আবূ কুবায়স পাহাড়ে আরোহণ করে সেখানে উচ্চৈঃস্বরে কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল আর মক্কাবাসীরা বিস্ময়ের সাথে তা শ্রবণ করল। সে আওয়াজ তাদের কানে পরিষ্কারভাবে আসছিল কিন্তু উক্ত আওয়াজ যেদিক থেকে আসছিল সেদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। উক্ত কবিতাগুলোর মধ্য হতে দু’টি কবিতা হলো এই –
جزي الله رب الناس خير جزائه * رفيقين حلا خيمتى أم معبد
هما نزلا بالهدى واهتديت به * فقد فازمن امسى رفيق محمد
অর্থাৎ সকল মানুষের রব আল্লাহ তা'আলা ঐ দুই সাথিকে উত্তম প্রতিদান দান করেছেন যারা উম্মু মা'বাদ-এর তাবুতে অবতরণ করেছেন। তাঁরা দুজন হিদায়াতের আলোকরশ্মি নিয়ে অবতরণ করেছেন আর উম্মু মা'বাদ সেই হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছেন। ঐ সকল ব্যক্তিরাই সফলকাম হয়েছেন যাঁরা মুহাম্মাদ (সা.) -এর সাথি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)