৫৯৩৮

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯৩৮-[৭১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা মক্কাহ্ এবং মদীনার মাঝামাঝি স্থানে ’উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম, তখন আমরা নতুন চাঁদ দেখতে চেষ্টা করি। আমি ছিলাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন লোক। অতএব আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আর আমি ব্যতীত অন্য কেউই চাঁদ দেখতে পেয়েছে বলে দাবি করেনি। আমি ’উমার (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি চাঁদ দেখছেন না? কিন্তু তিনি তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ’উমার (রাঃ) বললেন, শীঘ্রই আমি আমার বিছানায় শুয়ে শুয়ে তা দেখব। অতঃপর ’উমার (রাঃ) বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে লাগলেন এবং বললেন, যুদ্ধের একদিন আগে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে ঐ সমস্ত স্থানগুলো দেখিয়ে দিলেন, যে যে স্থানে কাফিরদের লাশ পড়ে থাকবে। তিনি বললেন, ইনশা-আল্ল-হ আগামীকাল এ জায়গা অমুক (কাফির)-এর লাশ পড়বে। ইনশাআল্ল-হ আগামীকাল এ স্থানে অমুকের লাশ পড়বে। উমার (রাঃ) বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি তাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন; যে সকল স্থান রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দিষ্ট করেছিলেন, ঐ স্থান হতে একটুখানিও এদিক-সেদিক সরে পড়েনি।
(বর্ণনাকারী বলেন,) অতঃপর লাশগুলোকে একটি (অনাবাদ) কূপের মাঝে একটির উপর অপরটিকে নিক্ষেপ করা হলো এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) কূপটির কাছে এসে বললেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তোমরা কি তা ঠিক ঠিক পেয়েছ? তবে আমার আল্লাহ আমাকে যা ওয়াদা দিয়েছেন, আমি অবশ্য তা ঠিক ঠিকভাবে পেয়েছি। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কিভাবে এমন দেহসমূহের সাথে কথা বলছেন, যাদের মধ্যে কোন প্রাণ নেই। তিনি বললেন, আমি তাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা তাদের চেয়ে বেশি শুনছ না, অবশ্য তারা আমার কথার কোন উত্তর দিতে সক্ষম নয়। (মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كُنَّا مَعَ عُمَرَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَتَرَاءَيْنَا الْهِلَالَ وَكُنْتُ رَجُلًا حَدِيدَ الْبَصَرِ فَرَأَيْتُهُ وَلَيْسَ أَحَدٌ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَآهُ غَيْرِي قَالَ فجعلتُ أقولُ لعُمر أما ترَاهُ فَجعل لَا يَرَاهُ قَالَ يَقُولُ عُمَرُ سَأَرَاهُ وَأَنَا مُسْتَلْقٍ عَلَى فِرَاشِي ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا عَنْ أَهْلِ بدر فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُرِينَا مَصَارِعَ أَهْلِ بَدْرٍ بِالْأَمْسِ يَقُولُ هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ غَدًا إِنْ شَاءَ الله قَالَ فَقَالَ عمر فوالذي بَعثه بِالْحَقِّ مَا أخطئوا الْحُدُود الَّتِي حد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ فَجُعِلُوا فِي بِئْرٍ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ فَانْطَلَقَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْتَهَى إِلَيْهِمْ فَقَالَ يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ هَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ حَقًّا فَإِنِّي قَدْ وَجَدْتُ مَا وَعَدَني الله حَقًا قَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تُكَلِّمُ أَجْسَادًا لَا أَرْوَاحَ فِيهَا قَالَ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ أَن يَردُّوا عليَّ شَيْئا . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (76 / 2873)، (7222) ۔
(صَحِيح)

وعن انس قال كنا مع عمر بين مكة والمدينة فتراءينا الهلال وكنت رجلا حديد البصر فرايته وليس احد يزعم انه راه غيري قال فجعلت اقول لعمر اما تراه فجعل لا يراه قال يقول عمر ساراه وانا مستلق على فراشي ثم انشا يحدثنا عن اهل بدر فقال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يرينا مصارع اهل بدر بالامس يقول هذا مصرع فلان غدا ان شاء الله قال فقال عمر فوالذي بعثه بالحق ما اخطىوا الحدود التي حد رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فجعلوا في بىر بعضهم على بعض فانطلق رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى انتهى اليهم فقال يا فلان بن فلان ويا فلان بن فلان هل وجدتم ما وعدكم الله ورسوله حقا فاني قد وجدت ما وعدني الله حقا قال عمر يا رسول الله كيف تكلم اجسادا لا ارواح فيها قال ما انتم باسمع لما اقول منهم غير انهم لا يستطيعون ان يردوا علي شيىا . رواه مسلم رواہ مسلم (76 / 2873)، (7222) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (سَأَرَاهُ وَأَنَا مُسْتَلْقٍ عَلَى فِرَاشِي) “আমি অচিরেই আমার বিছানায় শুয়ে তা দেখব।” এ বাক্য দ্বারা মূলত ‘উমার (রাঃ) উক্ত চাঁদ দেখার জন্য অধিক চেষ্টা করার বিষয়টিকে অপ্রয়োজনীয় হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল এই যে, যে সকল লোক নিজ চোখে চাঁদ দেখেছে তাদের সাক্ষ্যের উপর বর্ণনা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। অথবা আমাকে স্বচক্ষে নতুন চাঁদ দেখতেই হবে। তাই কিছুদিন পর অথবা আগামী দিন যখন চাঁদ বড় ও উজ্জ্বল হয়ে যাবে এবং সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে তখন দেখে নেব। এখন যেহেতু চাঁদ দেখা যাচ্ছে না তখন তাকে দেখার জন্য অধিক চেষ্টা করার কোন দরকার নেই।  (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক)
(مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ أَن يَردُّوا عليَّ شَيْئا) “আমি তাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা তাদের চেয়ে অধিক শুনছ না, অবশ্য তারা আমার কথার কোন জবাব দিতে সক্ষম নয়।” এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, মৃত ব্যক্তি জীবিতদের কথা শুনতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, সকল মৃত ব্যক্তি কী জীবিত ব্যক্তিদের কথা শুনতে পায়? উত্তর- এ মাস্আলাটি নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। তবে সঠিক কথা হলো- এ বিষয়ে সৌদী ফাতাওয়া বোর্ড “আল লাজনাহ্ আদ্ দায়িমাহ্ লিল বুহূস আল ‘ইলমিয়্যাহ্ ওয়াল ইফতা”-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশ্নকারী বলেন, আমি “আল হাউয়ী লিল ফাতাওয়া” ইমাম সুয়ূত্বী-এর লেখা কিতাবে পড়েছি যে, মৃত ব্যক্তি জীবিত মানুষের কথা শুনতে পায়, তাদের প্রশংসা ও তাদের কথা-বার্তা বুঝতে পারে, অনুরূপভাবে যারা তাদেরকে দেখতে যায় তারা তাদেরকে চিনতে পারে, আর মৃতরা ঘোরাঘুরি করতে পারে, এটা কি ঠিক? আর তিনি কতিপয় হাদীস ও আসারের উপর নির্ভর করেছেন। (আল হাউয়ী লিল ফাতাওয়া ২/১৬৯, ১৭০, ১৭১)।
উত্তর- মূল কথা হলো মৃত ব্যক্তি জীবিতদের কথা শুনতে পায় না, তবে যেসব জায়গায় শোনার কথা উল্লেখ আছে তা ব্যতীত। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সা.)কে সম্বোধন করে বলেছেন,
(فَاِنَّکَ لَا تُسۡمِعُ الۡمَوۡتٰی) “আর তুমি মৃত ব্যক্তিকে শোনাতে পারবে না”- (সূরা আর রূম ৩০ : ৫২)। তিনি অন্যত্র বলেন- (وَ مَاۤ اَنۡتَ بِمُسۡمِعٍ مَّنۡ فِی الۡقُبُوۡرِ) “তুমি কবরবাসীকে শোনাতে পারবে না”- (সূরাহ আল ফাত্বির ৩৫ : ২২)। “আল লাজনাহ্ আদ্ দায়িমাহ লিল বুহুস আল ইলমিয়্যাহ্ ওয়াল ইফতা" ফাতাওয়া নং ৯২১৬।
‘আল্লামাহ্ আলুসী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীর “রূহুল মা'আনী”৬/৪৫৫-তে বলেন: এ বিষয়ে সূক্ষ্ম গবেষণার পরে সত্য কথা হলো মৃত ব্যক্তি একেবারেই শুনতে পায় না, তবে নবী (সা.) থেকে শোনার ব্যাপারে যা উল্লেখ হয়েছে সে জায়গাগুলো ছাড়া। এ মতটি পোষণ করেছেন অনেক বিদ্বান, যেমনটি বলেছেন হাফিয ইবনু রজব আল হাম্বলী। (গুগল পেজ, আল আলুকা আশ শারঈয়াহ, তারিখ ২৭/৩/২০১৪ ইং, প্রশ্নঃ --- )


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)