পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৯০-[২৬] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: জাহান্নামে জাহান্নামীদের দেহ হবে প্রকাণ্ড ও বিরাট বিরাট। এমনকি তাদের কানের লতি হতে ঘাড় পর্যন্ত দূরত্ব হবে সাতশত বছরের দূরত্ব, গায়ের চামড়া হবে সত্তর গজ মোটা এবং এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের মতো।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَعْظُمُ أَهْلُ النَّارِ فِي النَّارِ حَتَّى إِنَّ بَيْنَ شَحْمَةِ أُذُنِ أَحَدِهِمْ إِلَى عَاتِقِهِ مَسِيرَةَ سبعمائةِ عامٍ وإِنَّ غِلَظَ جلدِه سَبْعُونَ ذراعان وَإِن ضرسه مثل أحد»
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (2 / 26 ح 4800) * فیہ ابو یحیی : لین الحدیث و انظر النھایۃ بتحقیقی (1076) لمزید التحقیق ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (يَعْظُمُ أَهْلُ النَّارِ) জাহান্নামীদের শরীর অনেক বড় করে দেয়া হবে যাতে তারা তাদের শাস্তি ভালো করে আস্বাদন করতে পারে। তবে তাদেরকে জাহান্নামের ভিতরে বড় করে দেয়া হবে কিন্তু হাশরের ময়দানে তাদেরকে একদম ছোট ছোট করে একত্রিত করা হবে, যেমন পূর্বেও এর আলোচনা গেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৯১-[২৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু জাযই (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জাহান্নামের মধ্যে খুরাসানী উটের মতো বিরাট বিরাট সাপ আছে, সেই সাপের একটি একবার দংশন করলে তার বিষ ও ব্যথার ক্রিয়া চল্লিশ বছর পর্যন্ত অনুভব করবে। আর জাহান্নামের মাঝে এমন সব কিছু আছে, যা পালান বাঁধা খচ্চরের মতো। এর একটি একবার দংশন করলে তার বিষ বেদনার ক্রিয়াও চল্লিশ বছর পর্যন্ত অনুভব করবে। (হাদীস দু’টি আহমাদ রিওয়ায়াত করেছেন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ جَزْءٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فِي النَّارِ حَيَّاتٍ كَأَمْثَالِ الْبُخْتِ تَلْسَعُ إِحْدَاهُنَّ اللَّسْعَةَ فَيَجِدُ حَمْوَتَهَا أَرْبَعِينَ خَرِيفًا وَإِنَّ فِي النَّارِ عَقَارِبَ كَأَمْثَالِ الْبِغَالِ الْمُؤْكَفَةِ تَلْسَعُ إِحْدَاهُنَّ اللَّسْعَةَ فَيَجِدُ حَمْوَتَهَا أَرْبَعِينَ خَرِيفًا» . رَوَاهُمَا أَحْمد
حسن ، رواہ احمد (4 / 191 ح 17864) [و صححہ ابن حبان (7471 نسخۃ محققۃ) و الحاکم (4 / 593) و وافقہ الذھبی و سندہ حسن]
ব্যাখ্যা: (الْبُخْتِ) খোরাসানী উটকে (بُخْت) বলা হয়। সেই সাপগুলো এত বড় বড় হবে যে, খোরাসানী উটের মতো দেখা যাবে।
(الْبِغَالِ الْمُؤْكَفَةِ) এটা বহুবচন, একবচন হলো (بِغْلَةٌ) অর্থ খচ্চর। আর এখানে (بِغَال) অর্থ হলো সিটওয়ালা বা গদিবিশিষ্ট, অর্থাৎ জাহান্নামের বিচ্ছুগুলোর শরীর এতটাই বড় হবে যে, তাদের পিঠের উপর বসা যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৯২-[২৮] হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন সূর্য ও চাঁদকে দুটি পনীরের আকৃতি বানিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন হাসান (রহিমাহুল্লাহ) প্রশ্ন করলেন, তাদের অপরাধ কী? উত্তরে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে এ সম্পর্কে যা কিছু শুনেছি, তাই বর্ণনা করলাম (এর অধিক কিছু আমি জানি না)। এ কথা শুনার পর হাসান (রহিমাহুল্লাহ) নীরব হয়ে গেলেন। (বায়হাক্বী কিতাবুল বা’সি ওয়ান্ নুশূর)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَن الحسنِ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ثَوْرَانِ مُكَوَّرَانِ فِي النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . فَقَالَ الْحَسَنُ: وَمَا ذَنْبُهُمَا؟ فَقَالَ: أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَكَتَ الْحَسَنُ. رَوَاهُ البيهقيُّ فِي «كتاب الْبَعْث والنشور»
صحیح ، رواہ البیھقی فی البعث و النشور (ذکرہ السیوطی فی اللآلی المصنوعۃ 1 / 82) ولہ شاھد عند الطحاوی فی مشکل الآثار (1 / 66 ۔ 67) و سندہ صحیح] ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (ثَوْرَانِ مُكَوَّرَانِ فِي النَّارِ) ثَوْرَانِ অর্থ হলো চন্দ্র ও সূর্য প্রত্যেককেই নিক্ষেপ করা হবে তার আপন কক্ষপথ থেকে জাহান্নামের মধ্যে ভাঁজ করে আলোকহীন অবস্থায়। এটা করা হবে জাহান্নামীদের শাস্তি বাড়ানোর জন্য, কেননা ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা.) বলেন যে, সূর্য ও চন্দ্রের চেহারা আরশের নিচে আর তার পিটটা হলো দুনিয়ার দিকে, হাদীসটি দায়লামী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর কিতাব মুসনাদুন ফিরদাওসে উল্লেখ করেছেন। অতএব স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যদি সূর্য ও চন্দ্রের মুখটা দুনিয়ার দিকে করা হত তাহলে দুনিয়াবাসীরা তার তাপ সহ্য করতে পারত না। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, এই দুটোকে ভাঁজ করা হবে এবং একত্রিত করা হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
(فَقَالَ الْحَسَنُ: وَمَا ذَنْبُهُمَا؟) অর্থাৎ হাসান (রহিমাহুল্লাহ) তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, উত্তরে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বললেন যে, রাসূল (সা.) থেকে আমি হাদীস বর্ণনা করেছি। এখানে কোন যুক্তি খাটানো যাবে না। অতএব তিনি চুপ হয়ে গেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৯৩-[২৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: হতভাগ্য ছাড়া কোন লোক জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! হতভাগ্য কে? তিনি (সা.) বললেন, যে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আনুগত্য করে না এবং তাঁর অবাধ্যতার কাজ পরিত্যাগ করে না। (ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَدْخُلُ النَّارَ إِلَّا شَقِيٌّ» . قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنِ الشَّقِيُّ؟ قَالَ: «مَنْ لَمْ يَعْمَلْ لِلَّهِ بِطَاعَةٍ وَلم يتركْ لَهُ مَعْصِيّة» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابن ماجہ (4298) * ابن لھیعۃ مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা: (مَنْ لَمْ يَعْمَلْ لِلَّهِ) যে একমাত্র আল্লাহর জন্য কোন ‘ইবাদাত করে না এবং কোন গুনাহ ছাড়ে না সেই হলো দুর্ভাগা। এ বিষয়ে কুরআনে ইঙ্গিত করা হয়েছে,
وَ اَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ وَ نَهَی النَّفۡسَ عَنِ الۡهَوٰی ﴿ۙ۴۰﴾ فَاِنَّ الۡجَنَّۃَ هِیَ الۡمَاۡوٰی ﴿ؕ۴۱﴾ “আর যে ব্যক্তি তার রবের অবস্থানকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকে তারই ঠিকানা হলো জান্নাত।” (সূরা আন্ না-যি'আত ৭৯ : ৪০-৪১) অনুরূপ অন্য আয়াতে আসছে,
لَا یَصۡلٰىهَاۤ اِلَّا الۡاَشۡقَی ﴿ۙ۱۵﴾ الَّذِیۡ کَذَّبَ وَ تَوَلّٰی ﴿ؕ۱۶﴾ অর্থাৎ “জাহান্নামে একমাত্র দুর্ভাগাই ঢুকবে যে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং সত্য পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।” (সূরা আল লায়ল ৯২: ১৫-১৬) অতএব এই দুর্ভাগা ব্যক্তি কাফির এবং ফাসিক গুনাহগার মু'মিন যে কেউ হতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)