পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ
৫৬৫৫-[১] জাবীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: শীঘ্রই তোমরা নিশ্চিত তোমাদের প্রভুকে স্বচক্ষে প্রকাশ্যে দেখতে পাবে। আর অপর এক বর্ণনাতে আছে- জারীর (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে বসাছিলাম। তিনি (সা.) পূর্ণিমার রাত্রে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা এই চাঁদকে দেখছ। তাঁর দর্শনে তোমরা কোনরূপ বাধাপ্রাপ্ত হবে না। অতএব তোমরা সাধ্যমত চেষ্টা করবে সূর্য উদয়ের পূর্বের সলাত সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগের সলাত সূর্যাস্তের আগে আদায় করতে যেন ব্যর্থ না হও। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন- (وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ غُرُوۡبِهَا) “সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে আপন প্রভুর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা কর”- (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০ : ১৩০)। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)
عَن جَرِيرِ بْنِ عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عِيَانًا» . وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَقَالَ: «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لَا تُضَامُونَ فِي رُؤْيَتِهِ فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَا تُغْلَبُوا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا» ثُمَّ قَرَأَ (وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبهَا) مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (554) و مسلم (211 / 632)، (1432) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عِيَانًا) হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের রবকে কোন ধরনের পর্দা বা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বচক্ষে দেখবে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের মাযহাব হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলাকে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দেখা সম্ভব, আর তা মু'মিনদের জন্য পরকালে হবে।
মুতাজিলা, খারিজী এবং মুরজিয়ারা বলেন, কোন সৃষ্টি আল্লাহকে দেখতে পাবে না আর আল্লাহ তা'আলাকে দেখা সম্পূর্ণ অসম্ভব। কেননা কুরআন হাদীস এবং সাহাবীদের ইজমা এবং তাদের পরবর্তী সালাফদের বক্তব্য এ ব্যাপারে দলীল হয়ে আছে। বিশজন সাহাবী রাসূল এ থেকে আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫৫১)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ
৫৬৫৬-[২] সুহায়ব (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলবেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও, যা আমি তোমাদেরকে অতিরিক্ত প্রদান করব। তারা বলবে, তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডলকে আলোকিত করনি? তুমি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাওনি। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা’আলা হিজাব বা পর্দা তুলে ফেলবেন, তখন তারা আল্লাহ তা’আলার দর্শন লাভ করবে। মূলত আল্লাহ তা’আলার দর্শন লাভ ও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকার তুলনায় বেশি প্রিয় কোন বস্তুই তাদেরকে প্রদান করা হয়নি। অতঃপর তিনি কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- “যারা উত্তম কাজ করেছে তার প্রতিদান ভালোই (অর্থাৎ জান্নাত তার উপর অতিরিক্ত)”- (সূরাহ্ ইউনুস ১০: ২৬)। তার উপর অতিরিক্ত হলো- তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান এবং তার উপর অতিরিক্ত অবদান (অর্থাৎ দীদারে এলাহী)। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)
وَعَن صُهَيْب عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: «فَيُرْفَعُ الْحِجَابُ فَيَنْظُرُونَ إِلَى وَجْهِ اللَّهِ فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ» ثُمَّ تَلَا (لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَة) رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (298 ، 297 / 181)، (449) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (فَيُرْفَعُ الْحِجَابُ) অর্থাৎ পর্দা উঠিয়ে নেয়া হবে। মূলত আল্লাহ তা'আলা পর্দাবৃত হওয়া থেকে মুক্ত এবং পবিত্র, তাহলে পর্দা উঠিয়ে নেয়ার মর্মার্থ হচ্ছে, মানুষের চক্ষু থেকে পর্দা উঠিয়ে নেয়া হবে তখন তারা আল্লাহ তা'আলার চেহারার দিকে তাকাবে। আর কুরআনে বর্ণিত, (لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوا الۡحُسۡنٰی وَ زِیَادَۃٌ ؕ…) “যারা কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ...”- (সূরাহ্ ইউনুস ১০ : ২৬)। এ আয়াতে (زِیَادَۃٌ) এর ব্যাখ্যায় অধিকাংশ মুফাসসিরগন বলেছেন, তা হচ্ছে আল্লাহ তা'আলাকে দেখা। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ২৫৫২)