পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৫৬-[৮] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আমার প্রভু আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাদের ওপর ’আযাবও হবে না। আবার উক্ত প্রত্যেক হাজারের সাথে সত্তর হাজার এবং আমার প্রভুর তিন অঞ্জলি ভর্তি লোকও জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (باب الحساب و القصاص و المیزان)
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «وَعَدَنِي رَبِّي أَنْ يُدْخِلَ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعِينَ أَلْفًا لَا حِسَابَ عَلَيْهِمْ وَلَا عَذَابَ مَعَ كُلِّ أَلْفٍ سَبْعُونَ أَلْفًا وَثَلَاثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِ رَبِّي» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 268 ح 22659) و الترمذی (2437 وقال : حسن غریب) و ابن ماجہ (4286) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (لَا حِسَابَ عَلَيْهِمْ) অর্থ হিসাব-নিকাশে তাদেরকে খুঁটিনাটি প্রশ্ন করা হবে না। (وَلَا عَذَابَ) এর অর্থ দু'টি হতে পারে। (এক) তাদেরকে প্রথমে শাস্তি দেয়া হবে না। (দুই) তারা যে শাস্তির জন্য ধার্য হয়েছে সে শাস্তি হবে না।
(سَبْعُونَ أَلْفًا) কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর দ্বারা দু'টি উদ্দেশ্য হতে পারে। হয়তবা নির্দিষ্ট সংখ্যা অথবা অধিক পরিমাণে বুঝানো। (حَشَيَات) শব্দকে (رَنِّيْ) এর সাথে (إضَافَة) করাতে আধিক্য বেশি বুঝানো হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
(ثَلَاثُ حَثَيَاتٍ) حاء ও (ياء) বর্ণে যবর সহকারে যা (حَثْيَة) এর বহুবচন। মানুষ তার দুই হাত দ্বারা পরিমাপ ছাড়া বিনা হিসাবে দান করলে তাকে (الْحَثْيَة) অথবা (الْحَثْوَة) বলে।
ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: অবশ্যই আল্লাহ আমাকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ইয়াযীদ ইবনু আখনাস বলেন, আল্লাহর কসম! আপনার সে উম্মাতের দৃষ্টান্ত যেমন মাছির মাঝে লালচে সুন্দর মাছির মতো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার সাথে সত্তর হাজারের ওয়াদা করেছেন। আবার প্রত্যেক হাজারের সাথে সত্তর হাজার এবং আমার জন্য আরো তিন অঞ্জলি বেশি করেছেন। (তুহফাতুল আহওয়ালী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৪৩৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৫৭-[৯] হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন মানবমণ্ডলীকে তিনবার আল্লাহ তা’আলার কাছে উপস্থিত করা হবে। প্রথম দু’বার কথোপকথন ও ওযর-আপত্তির জন্য আর তৃতীয়বার ’আমলনামা উড়ে প্রত্যেকের হাতে পৌছবে এবং তা কেউ ডান হাতে গ্রহণ করবে আর কেউ বাম হাতে। (আহমাদ ও তিরমিযী)
ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে কোন হাদীস শুনেছেন বলে প্রমাণ নেই, কাজেই এ হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (باب الحساب و القصاص و المیزان)
وَعَن الحسنِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُعْرَضُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَلَاثَ عَرَضَاتٍ: فَأَمَّا عَرْضَتَانِ فَجِدَالٌ وَمَعَاذِيرُ وَأَمَّا الْعَرْضَةُ الثَّالِثَةُ فَعِنْدَ ذَلِكَ تَطِيرُ الصُّحُفُ فِي الْأَيْدِي فَآخِذٌ بِيَمِينِهِ وَآخِذٌ بِشِمَالِهِ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ لَا يَصِحُّ هَذَا الْحَدِيثُ مِنْ قِبَلِ أَنَّ الْحَسَنَ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ أبي هُرَيْرَة
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (لم اجدہ من ھدیث ابی ھریرۃ عندہ ، انما رواہ من حدیث ابی موسی ، انظر الحدیث الآتی : 5558) و الترمذی (2425) * الحسن البصری مدلس عنعن ولم یسمع من ابی ھریرۃ رضی اللہ عنہ فی القول الراجح ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (يُعْرَضُ النَّاسُ) আল্লাহর সামনে পেশ করা হবে। (ثَلَاثَ عَرَضَاتٍ) কেউ বলেন, এর অর্থ তিনবার। প্রথমবার তারা আত্মরক্ষার জন্য বলবে, নবীরা আমাদের কাছে প্রচার করেনি। আর তারা আল্লাহর সাথে ঝগড়া করবে। দ্বিতীয়বার তারা অজুহাত পেশ করে স্বীকার করবে এই বলে যে, এসব আমি না জেনে ভুলে ‘আমল করেছি বা অনুরূপ বলবে। তৃতীয়বারে প্রমাণপঞ্জিসহ হাতেনাতে ধরা পড়ে যাবে। অর্থাৎ প্রত্যেকেই তার ‘আমলনামা ডান অথবা বাম হাতে ধারণ করবে।
(فَآخِذٌ بِيَمِينِهِ وَآخِذٌ بِشِمَالِهِ) এখানে (فاء) ব্যাখ্যামূলক। অর্থাৎ তাদের যে ডান হাতে গ্রহণ করবে সে সৌভাগ্যবান। আর যে বাম হাত গ্রহণ করবে, সে দুর্ভাগা। (তুহফাতুন আহওয়াযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৪২৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৫৮-[১০] আর কেউ কেউ এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) এ হাদীসটি আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (باب الحساب و القصاص و المیزان)
وَقَدْ رَوَاهُ بَعْضُهُمْ عَنِ الْحَسَنِ عَنْ أَبِي مُوسَى
اسنادہ ضعیف ، [رواہ ابن ماجہ (4277) و احمد (4 / 414 ح 19953)] * الحسن البصری مدلس و عنعن ، انظر الحدیث السابق (5557) ۔
(ضَعِيف)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৫৯-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন এমন এক লোককে (মুক্তি দেয়া হবে এভাবে যে, তাকে) জনসম্মুখে উপস্থিত করা হবে যার ’আমলনামা খোলা হবে নিরানব্বই ভলিউমে এবং প্রতিটি ভলিউম বিস্তীর্ণ হবে দৃষ্টির সীমা অবধি। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আচ্ছা বল দেখি, তুমি এর কোন একটিকে অস্বীকার করতে পারবে? অথবা আমার লেখক মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কি তোমার প্রতি অবিচার করেছে? সে বলবে না; হে আমার প্রভু!
আল্লাহ তা’আলা প্রশ্ন করবেন, তবে কি তোমার পক্ষ হতে কোন ওযর পেশ করার আছে? সে বলবে, না; হে আমার রব! তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হ্যাঁ, তোমার একটি পুণ্য আমার নিকট আছে। তুমি নিশ্চিত জেনে রাখ, আজ তোমার প্রতি কোন যুলম বা অবিচার করা হবে না। এরপর এক টুকরা কাগজ বের করা হবে, যাতে রয়েছে- (أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল"।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন, তোমার ’আমালের ওযন দেখার জন্য উপস্থিত হও। তখন সে বলবে, হে প্রভু! ঐ সমস্ত বিরাট বিরাট রেজিস্ট্রারের মোকাবিলায় এই এক টুকরা কাগজের মূল্যই বা কি আছে?
তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার ওপর কোন অবিচার করা হবে না। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর ঐ সকল রেজিস্ট্রারগুলো পাল্লার এক পালিতে এবং এ কাগজের টুকরাখানি আরেক পালিতে রাখা হবে। তখন দফতরগুলোর পালি হালকা হয়ে উপরে উঠে যাবে এবং কাগজের টুকরার পালি ভারী হয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে থাকবে। মোটকথা, আল্লাহর নামের সাথে অন্য কোন জিনিস ওযন হতে পারবে না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (باب الحساب و القصاص و المیزان)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ سيخلِّصُ رجلا من أُمّتي على رُؤُوس الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلًّا كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلَ مَدِّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَقُولُ: أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا؟ أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الحافظون؟ فَيَقُول: لَا يارب فَيَقُول: أَفَلَك عذر؟ قَالَ لَا يارب فَيَقُولُ بَلَى. إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً وَإِنَّهُ لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ فَتُخْرَجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فَيَقُولُ احْضُرْ وَزْنَكَ. فَيَقُولُ: يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ قَالَ: فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كِفَّةٍ وَالْبِطَاقَةُ فِي كِفَّةٍ فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ الله شَيْء . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2639 وقال : حسن غریب) و ابن ماجہ (4300) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللَّهَ سيخلِّصُ) অর্থাৎ বের করবেন বা বাছাই করবেন সমস্ত সৃষ্টির সামনে এক ব্যক্তিকে এবং তাকে মুক্তি দিবেন। (تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلًّا) আর তাদের ‘আমলনামার খাতা হবে নিরানব্বই ভলিউম, অর্থাৎ বড় খাতা। প্রত্যেক খাতার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে মানুষের দৃষ্টি সীমার সমপরিমাণ। (كتبة) যা (كَاتِب) এর বহুবচন। এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো (الْكِرَامُ الْكَاتِبُونَ) (সম্মানিত ফেরেশতাগণ)।
(فَتُخْرَجُ بِطَاقَةٌ) الْبِطَاقَة হলো ছোট্ট টুকরা, আর কোন কোন অভিধানে বলা হয়েছে, (كتبة) এর ওযনে (بِطَاقَه) অর্থ কাপড়ের ছোট টুকরা যাতে তার মূল্যমান লেখা থাকে।
(أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ) মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা হতে পারে তার প্রথম উচ্চারিত কালিমাহ। অথবা অন্য সময়েরও হতে পারে যা তৎক্ষণাৎ গ্রহণযোগ্য ছিল।
(احْضُرْ وَزْنَكَ) অর্থাৎ তোমার আমালের ওযনের সময় তোমার এ ছোট্ট টুকরা নিরানব্বই খাতার সাথে ওযন করা হবে তখন তুমি হাযির থাকবে। যাতে তোমার ওপর যুলমহীনতা এবং অনুগ্রহের বাস্তবতা প্রকাশিত হয়।
(مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ) এখানে (اسْمَ الْإِشَارَة) তুচ্ছতার অর্থে প্রয়োগ হয়েছে। যেন সে এতগুলো খাতার সঙ্গে তুচ্ছ এ টুকরাকে ওযন করা মেনে নিতে পারছে না। সে কারণে পুনরায় বলা হলো, তুমি এটাকে তুচ্ছ ভেব না। কারণ এটা মহান আল্লাহর নিকটে অনেক বড়। (شَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ) অর্থাৎ টুকরাটি ভারী হয়ে গেল।
কেউ যদি প্রশ্ন করে, ‘আমলগুলো তো আকৃতিহীন বস্তু? যা ওযন করা সম্ভব নয়। কায়িক বস্তুকে পরিমাপ করা যায়। এর উত্তরে বলা যায় 'আমলনামা বা খাতাকে মাপা হবে যাতে আমলগুলো লিপিবদ্ধ থাকবে। এটা অবস্থাভেদে বিভিন্ন রকম হয়। অথবা আল্লাহ তাআলা কথা ও কাজসমূহকে কায়াসম্পন্ন বানাবেন, অতঃপর তা পরিমাপ করবেন। আকৃতিবিহীন বস্তুর ওযন নিয়ে প্রশ্ন উঠানো আজকাল অনর্থক, কেননা আধুনিক অনেক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অনেক কায়া বা আকৃতিবিহীন বস্তুর ওযন সম্পন্ন হচ্ছে। যেমন শরীরের তাপমাত্রা, হৃদকম্পন, রক্তের চলাচল গতি ইত্যাদি পরিমাপের নির্ভুল পরিমাপ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। মহান আল্লাহর নিকট কায়া ও আকৃতিবিহীন ‘আমল মাপা কি কোন ব্যাপার হলো? এতে গুনাহের চাইতে ‘ইবাদত ভারী হওয়ার কারণে ভালো ‘আমল ভারী হবে এবং মন্দ ‘আমল হালকা হয়ে উপরে উঠে যাবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খণ্ড, হা. ২৬৩৯; মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, ৩৯৫ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৬০-[১২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কেঁদে ফেললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) - প্রশ্ন করলেন, কিসে তোমাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] বললেন, জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করে কাঁদছি। (আচ্ছা বলুন তো!) কিয়ামতের দিন আপনি আপনার পরিবার-পরিজনকে স্মরণ করবেন কি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, (হে ’আয়িশাহ্!) জেনে রাখ, তিনটি জায়গা এমন হবে, যেখানে কেউ কাউকে স্মরণ করবে না। একটি মীযানের কাছে যতক্ষণ না সে জেনে নিবে যে, তার ’আমলের পাল্লা ভারী হয়েছে নাকি হালকা। দ্বিতীয়টি ’আমলনামা পাওয়ার সময়, যখন তাকে বলা হবে, আরে অমুক! এই নাও তোমার আমলনামা এবং তা পড়ে দেখ। যে পর্যন্ত না সে জেনে নিবে যে, তা তাকে ডান হাতে দেয়া হচ্ছে নাকি পিছন থেকে বাম হাতে? আর তৃতীয় হলো ’পুলসিরাত পার হওয়ার সময়, যখন তা জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (باب الحساب و القصاص و المیزان)
وَعَن عائشةَ أَنَّهَا ذَكَرَتِ النَّارَ فَبَكَتْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا يُبْكِيكِ؟» . قَالَتْ: ذَكَرْتُ النَّارَ فَبَكَيْتُ فَهَلْ تَذْكُرُونَ أَهْلِيكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَمَّا فِي ثَلَاثَةِ مَوَاطِنَ فَلَا يَذْكُرُ أَحَدٌ أَحَدًا: عِنْدَ الْمِيزَانِ حَتَّى يَعْلَمَ: أَيَخِفُّ مِيزَانُهُ أَمْ يَثْقُلُ؟ وَعِنْدَ الْكِتَابِ حِينَ يُقَالُ (هاؤم اقرؤوا كِتَابيه) حَتَّى يَعْلَمَ: أَيْنَ يَقَعُ كِتَابُهُ أَفِي يَمِينِهِ أم فِي شِمَاله؟ أم مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ؟ وَعِنْدَ الصِّرَاطِ: إِذَا وُضِعَ بينَ ظَهْري جَهَنَّم . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4755) * الحسن البصری مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (فَهَلْ تَذْكُرُونَ... فَلَا يَذْكُرُ أَحَدٌ أَحَدًا) অর্থাৎ আপনি কী আপনার পরিবারদেরকে কিয়ামতের দিন স্মরণ করবেন? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিন স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ করবে না। এর অর্থ হলো, বিশেষভাবে কেউ কাউকে স্মরণ করবে না। কিন্তু (الشَّفَاعَةُ الْعُظْمَى) (বড় শাফা'আত) সবার জন্য আম। কিয়ামতের দিন দাড়িপাল্লা কায়িম করে খাতাগুলোকে পরিমাপ করা হবে যাতে বান্দাদের ‘আমলসমূহ লিপিবদ্ধ থাকবে। যার দুটি পাল্লা থাকবে, একটি নেকীর জন্য অপরটি গুনাহর। প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে তার পাল্লা হালকা হচ্ছে না ভারী। এর প্রকাশ্য অর্থ থেকে বুঝা যায়, এটা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। এর বাইরে নবী-রাসূলগণও নন।
(هَاؤُم) অর্থ গ্রহণ কর। নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলে হাক্বদের অভিমত হলো, অবশ্যই এটা বিস্তৃত পুল যা জাহান্নামের পৃষ্ঠের উপরে অবস্থিত, সব মানুষকে সেটা অতিক্রম করতে হবে। অতঃপর মুমিনরা তাদের ‘আমল ও মর্যাদা অনুযায়ী রেহাই পাবে আর অন্যরা তথায় পতিত হবে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ)