পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২৭-[১৪] আবূ তামীমাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি সফওয়ান ও তাঁর সঙ্গীদের নিকট উপস্থিত হই, তখন জুনদুব (রাঃ) তাদেরকে কিছু উপদেশ দিলেন। তখন তারা জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বিশেষ কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, যে লোক নিজের ’আমলের কথা লোকদেরকে শুনায়, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন (লোক সম্মুখে) তাকে লাঞ্ছিত করবেন, আর যে ব্যক্তি কষ্টের পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের দিন কষ্টে পতিত করবেন। তারা বললেন, আপনি আমাদেরকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, সর্বপ্রথম মানুষের যে বস্তু নষ্ট হয় তা হলো তা পেট। অতএব যথাসম্ভব সে যেন শুধু হালাল খায় এবং এর উপরই অটল থাকে। আর যার সামর্থ্য হয় যে, তার ও জান্নাতের মধ্যে এক চুল্লু প্রবাহিত রক্ত আড়াল না করুক, তবে সে যেন তাই করে। (বুখারী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
عَن أبي تَمِيمَة قَالَ: شَهِدْتُ صَفْوَانَ وَأَصْحَابَهُ وَجُنْدَبٌ يُوصِيهِمْ فَقَالُوا: هَلْ سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا؟ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ سَمَّعَ إِنَّ أَوَّلَ مَا يُنْتِنُ مِنَ الْإِنْسَانِ بَطْنُهُ فَمن اسْتَطَاعَ أَن لَا يَأْكُل إِلا طيبا فَلْيَفْعَلْ وَمَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يَحُولَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجَنَّةِ مِلْءُ كَفٍّ مِنْ دَمٍ أَهَرَاقَهُ فَلْيفْعَل. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (7152) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসের আলোচনায় বলা হয়েছে যে, (مَنْ شَاقَّ شَقَّ اللّٰهُ عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَا مَةِ) যে ব্যক্তি কঠোরতা আরোপ করবে তথা সে নিজের সাধ্যের বাইরে কষ্ট করে অধিক ‘আমলের চেষ্টা করবে অথবা অন্যকে তার সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপিয়ে দিবে আল্লাহ তা'আলাও কিয়ামত দিবসে তার ওপর কঠোরতা আরোপ করবেন।
(قَالُوا: أَوْصِنَا) সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে উপদেশ দিন। অথবা সনদে উল্লেখিত সফওয়ান এবং তার সঙ্গীগণ জুনদুব (রাঃ)-কে বলেছিলেন, আমাদেরকে আরো উপদেশ দিন।
(فَقَالَ: إِنَّ أَوَّلَ مَا يُنْتِنُ مِنَ الْإِنْسَانِ بَطْنُهُ) অতঃপর তিনি বললেন, দুনিয়াতে সর্বপ্রথম মানুষের শরীরের যে অঙ্গটি নষ্ট হবে বা দুর্গন্ধ ছড়াবে তা হলো মানুষের পেট। কেননা তা নষ্টের স্থান। অথবা, মৃত্যুর পর কবরে সর্বপ্রথম পেট ফেটে দুর্গন্ধ ছড়াবে।
(فَمن اسْتَطَاعَ أَن لَا يَأْكُل إِلا طيبا) যে ব্যক্তি পবিত্র খাদ্যদ্রব্য তথা হালাল খেতে সক্ষম সে যেন তাই করে অর্থাৎ সাধ্যানুযায়ী হালাল খায়। মনের খাহেশ মিটানোর জন্য অবৈধভাবে বেশি উপার্জন না করে বৈধ পন্থায় হালাল খাদ্য কম খাওয়ার চেষ্টা করে।
(وَمَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يَحُولَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجَنَّةِ) আর যে ব্যক্তি প্রথম পর্যায়ে জান্নাতে প্রবেশকারী সফল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রতিবন্ধকতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম, সে যেন এক মুঠো রক্ত প্রবাহিত করে জান্নাত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে না দেয়। অর্থাৎ সাধ্যানুযায়ী সামান্য পরিমাণ অবৈধ কাজে জড়িত না হয়। যদি একমুঠো রক্ত প্রবাহিত করার কারণে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে যে বেশি পরিমাণে করবে তার কি অবস্থা হবে? (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ১৩/৭১৫২)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২৮-[১৫] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মসজিদের দিকে বের হয়ে মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে নবী (সা.)-এর কবরের নিকট দেখে বললেন, কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, আমাকে এমন একটি জিনিস কাঁদাচ্ছে যা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি- ’রিয়া’-এর সামান্য পরিমাণও শিরক। আর যে লোক আল্লাহর বন্ধুদের সাথে শত্রুতার মনোভাব রাখে, সে যেন আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো। বস্তুত আল্লাহ তা’আলা পুণ্যবান, আল্লাহভীরু, লোকচক্ষু হতে আত্মগোপনকারীদেরকে পছন্দ করেন। তারা হলো এমন সব ব্যক্তি যারা লোকচক্ষু হতে অনুপস্থিত থাকলে কেউ তাদের খোঁজ নেয় না এবং তাদের সম্মুখে উপস্থিত হলেও কেউ তাদেরকে (মজলিসে) আহ্বান করে না। আর তাদেরকে নিজেদের নিকট বসায় না। (অথচ) তাদের হৃদয় হলো হিদায়াতের মশাল। তারা প্রত্যেক অন্ধকারাচ্ছন্ন জীর্ণশীর্ণ কুটির হতে বের হয়। (ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বী’র শুআবূল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَن عمر بن الْخطاب أَنَّهُ خَرَجَ يَوْمًا إِلَى مَسْجِدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدَ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ قَاعِدًا عِنْدَ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِي فَقَالَ: مَا يُبْكِيكَ؟ قَالَ: يُبْكِينِي شَيْءٌ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ يَسِيرَ الرِّيَاءِ شِرْكٌ وَمَنْ عَادَى لِلَّهِ وَلِيًّا فَقَدْ بَارَزَ اللَّهَ بِالْمُحَارَبَةِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْأَبْرَارَ الْأَتْقِيَاءَ الْأَخْفِيَاءَ الَّذِينَ إِذَا غَابُوا لَمْ يُتَفَقَّدُوا وَإِنْ حَضَرُوا لَمْ يُدْعَوْا وَلَمْ يُقَرَّبُوا قُلُوبُهُمْ مَصَابِيحُ الْهُدَى يَخْرُجُونَ مِنْ كُلِّ غَبْرَاءَ مُظْلِمَةٍ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ ابن ماجہ (3989) و البیھقی فی شعب الایمان (6812) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (مَا يُبْكِيكَ؟) কিসের কারণে তুমি কাঁদছ? রসূলের সাক্ষাতের আশায় নাকি কোন বিপদে পড়ে কাঁদছ? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এ থেকে শুনা একটি হাদীসের কারণে আমি কাঁদছি যা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি।
(إِنَّ يَسِيرَ الرِّيَاءِ شِرْكٌ) সামান্য পরিমাণ রিয়া হলেই শিরক। আর তা অন্ধকার রাত্রিতে কালো পাথরের উপর কালো পিপিলিকার পদচারণার আওয়াজ থেকেও সূক্ষ্ম। খুব কম শক্তিশালী লোকই তা থেকে দূরে থাকতে পারে। তাহলে দুর্বলের অবস্থা কি হতে পারে? আর এ কারণেই আমি কাঁদছি। অন্য আরেকটি কারণ হলো আল্লাহর ওয়ালীদেরকে কষ্ট দেয়। কেননা তাদের অধিকাংশই অপ্রকাশ্য থাকেন। মানুষ তাদেরকে কথায় ও কাজে কষ্ট দিয়ে থাকে। হাদীসের পরবর্তী অংশ এ কথার প্রমাণ বহন করে।
(مَنْ عَادَى لِلَّهِ وَلِيًّا فَقَدْ بَارَزَ اللَّهَ بِالْمُحَارَبَةِ) যারা কথায় বা কাজে আল্লাহর কোন ওয়ালীকে রাগান্বিত করবে স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, এটা গুরুতর অপরাধ।
(إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْأَبْرَارَ الْأَتْقِيَاءَ) নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা নিজে সৎকাজ সম্পাদনকারী ও আল্লাহর সৃষ্টজীবের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশকারী বান্দাদেরকে ভালোবাসেন। যারা সকল প্রকার শিরক ও পাপাচার থেকে বেঁচে থাকে এবং মানুষের সাথে মেলামেশায় দৃষ্টির অগোচরে থাকে। অধিকাংশ মানুষের চোখের আড়ালে বসবাস করে। তারা এতই অপরিচিত যে, তারা সমাজে অনুপস্থিত থাকলে তাদেরকে খোঁজা হয় না। তারা উপস্থিত থাকলেও তাদেরকে খাওয়ার টেবিলে বসার জন্য দা'ওয়াত দেয়া হয় না এবং তাদেরকে কাছেও ডাকা হয় না।
(قُلُوبُهُمْ مَصَابِيحُ الْهُدَى) তাদের অন্তরগুলো হিদায়াতের আলোকবর্তিকা। তারাই হলো হিদায়াতের প্রতীক। তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা সকলের উচিত।
(يَخْرُجُونَ مِنْ كُلِّ غَبْرَاءَ مُظْلِمَةٍ) তাদের আবির্ভাব প্রত্যেক অন্ধকারাচ্ছন্ন ধূলামলিন বাসস্থানে। অর্থাৎ তাদের বাসস্থানগুলো খুবই নগণ্য হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপকরণের অভাবে ঘরগুলো ধুলামলিন হবে এবং বাতির অভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ইবনু মাজাহ ৩/৩৯৮৯)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২৯-[১৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কোন বান্দা যখন প্রকাশ্যে সালাত আদায় করে তখন উত্তমভাবে আদায় করে এবং যখন নির্জনে সালাত আদায় করে তখনও অনুরূপ উত্তমভাবেই আদায় করে। এমন বান্দা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, সে-ই আমার প্রকৃত বান্দা। (ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا صَلَّى فِي الْعَلَانِيَةِ فَأَحْسَنَ وَصَلَّى فِي السِّرِّ فَأَحْسَنَ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: هَذَا عَبْدِي حَقًّا . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابن ماجہ (4200) * بقیۃ مدلس و عنعن وقال ابو حاتم :’’ ھذا حدیث منکر ، یشبہ ان یکون من حدیث عباد بن کثیر ‘‘ ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা : (إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا صَلَّى فِي الْعَلَانِيَةِ فَأَحْسَنَ) বান্দা যখন প্রকাশ্যে সালাত আদায় করার সময় সকল প্রকার শর্ত, ওয়াজিবাত, সুন্নাত ও মুস্তাহাব কাজগুলো উত্তমরূপে আদায় করে, এমনিভাবে সমস্ত ‘ইবাদতেই প্রকাশ্যে সুন্দর করে আদায় করে।
আবার মানুষের দৃষ্টির অগোচরে ‘ইবাদত করলেও সুন্দর করে ইবাদত করে, তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন, (هَذَا عَبْدِي حَقًّا) আমার এ বান্দা সত্যিই একনিষ্ঠ। তার সমস্ত কার্যকলাপ নিফাক থেকে মুক্ত। সম্ভবত এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) সুন্নাত ও নফল সালাত বাড়ীতে আদায় করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩৩০-[১৭] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: শেষকালে এমন কতক সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে যারা দৃশ্যত হবে বন্ধু, পক্ষান্তেরে গোপনে হবে শত্রু। তখন জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! তা কিভাবে হবে? তিনি (সা.) বললেন, তাদের কেউ কারো কাছ থেকে স্বার্থের বশীভূত এবং একে অন্যের পক্ষ থেকে ভীত হওয়ার কারণে।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ أَقْوَامٌ إِخْوَانُ الْعَلَانِيَةِ أَعْدَاءُ السَّرِيرَةِ» . فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَكُونُ ذَلِكَ. قَالَ: «ذَلِكَ بِرَغْبَةِ بَعْضِهِمْ إِلَى بَعْضٍ وَرَهْبَةِ بَعْضِهِمْ من بعض»
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 235 ح 22405) * فیہ ابوبکر بن ابی مریم الغسانی : ضعیف مختلط ، رواہ عن حبیب بن عبید عن معاذ بہ و حبیب بن عبید الرحبی لم یدرک سیدنا معاذ بن جبل رضی اللہ عنہ فالسند منقطع ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ أَقْوَامٌ) শেষ যামানায় এমন অনেক দলের আবির্ভাব হবে যারা প্রকাশ্যে ভ্রাতৃত্ব সুলভ আচরণ করবে কিন্তু গোপনে শত্রুতা পোষণ করবে।
(فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَكُونُ ذَلِكَ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জিজ্ঞেস করা হলো, তার কারণ কি? তিনি (সা.) উত্তরে বললেন, প্রত্যেক দল অপর দলের প্রতি লোভ করার কারণে এবং একদল অপর দলকে ভয় করার কারণে।
মুলত এটা আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা বা আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করার উদ্দেশে নয়। বরং তাদের ভ্রান্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই এমন করবে। কখনো কোন সম্প্রদায়ের প্রতি নিজেদের স্বার্থে ভালোবাসা প্রকাশ করবে আবার কখনো অন্য সম্প্রদায়কে ঘৃণা করবে।
অতএব মানুষের সাথে এমন ভালোবাসা এবং শত্রুতার কোন মূল্য নেই। কেননা এসব নিজেদের প্রসিদ্ধির জন্যই করবে, আল্লাহ ওয়াস্তে নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩৩১-[১৮] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, যে লোক মানুষকে দেখানোর জন্য সালাত আদায় করে, সে শিরক করল। যে দেখানোর নিয়্যাতে সিয়াম রাখল সে শিরক করল, আর যে দেখানোর জন্য দান করল সেও শিরক করল। আর যে দেখানোর জন্য সদা-দান করল সেও শিরক করল। [উপরিউক্ত হাদীস দু’টি ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন]
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «من صَلَّى يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ وَمَنْ صَامَ يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ وَمَنْ تَصَدَّقَ يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ» رَوَاهُمَا أَحْمد
اسنادہ حسن ، رواہ احمد (4 / 126 ح 17270)
ব্যাখ্যা : (من صَلَّى يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ) যারা মানুষকে দেখানোর জন্য সালাত আদায় করবে, তারা ছোট শিরকে লিপ্ত হবে। এমনিভাবে যারা মানুষকে দেখানোর জন্য সাওম পালন করবে তারাও শিরক করবে। এখান থেকে জানা যাচ্ছে যে, সিয়ামের ক্ষেত্রেও রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও কেউ এটাকে অস্বীকার করে। কেননা সিয়াম নিয়্যাতের উপর নির্ভর করে। আর এখানে রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে বলা যায় এক্ষেত্রে রিয়া পাওয়া সম্ভব শারীকানা ভিত্তিতে। যেমন- কেউ সওম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি খ্যাতি অর্জনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে বা অন্য উদ্দেশে জড়িত হলে। এমনিভাবে লোক দেখানো উদ্দেশে দান করলে সেও শিরক করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩৩২-[১৯] উক্ত রাবী [শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদিন তিনি কাঁদছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, ঐ কথাটি আমাকে কাঁদাচ্ছে যা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি। এখন তার স্মৃতি আমাকে কাঁদাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে আমি বলতে শুনেছি, আমি আমার উম্মতের ওপর প্রচ্ছন্ন শিরক ও গোপন প্রবৃত্তির আশঙ্কা করছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার পরে আপনার উম্মাত কি শিরকে জড়াবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, জড়াবে। অবশ্য তারা সূর্য, চন্দ্রের উপাসনা করবে না, পাথর এবং মূর্তির পূজা করবে না, কিন্তু নিজেদের ’আমলসমূহ মানুষকে দেখানোর নিয়্যাতে করবে। আর গোপন প্রবৃত্তি হলো- যেমন তাদের কেউ সিয়ামবস্থায় সকাল করল, এরপর তার সম্মুখে প্রবৃত্তির কোন আগ্রহ উপস্থিত হলে সে সিয়াম পরিহার করে দেয়। (আহমাদ ও বায়হাকী’র শুআবূল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنْهُ أَنَّهُ بَكَى فَقِيلَ لَهُ: مَا يُبْكِيكَ؟ قَالَ: شَيْءٌ سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فَذَكَرْتُهُ فَأَبْكَانِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: «أَتَخوَّفُ على أمتِي الشِّرْكِ وَالشَّهْوَةِ الْخَفِيَّةِ» قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتُشْرِكُ أُمَّتُكَ مِنْ بَعْدِكَ؟ قَالَ: «نَعَمْ أَمَا إِنَّهُمْ لَا يَعْبُدُونَ شَمْسًا وَلَا قَمَرًا وَلَا حَجَرًا وَلَا وَثَنًا وَلَكِنْ يُرَاؤُونَ بِأَعْمَالِهِمْ. وَالشَّهْوَةُ الْخَفِيَّةُ أَنْ يُصْبِحَ أَحَدُهُمْ صَائِمًا فَتَعْرِضَ لَهُ شَهْوَةٌ مِنْ شَهَوَاتِهِ فَيَتْرُكَ صَوْمَهُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (6830 ، نسخۃ محققۃ : 6411) [و احمد (4 / 123 ۔ 124)] * فیہ عبد الواحد بن زید البصری ضعیف متروک کما فی الجرح و التعدیل (6 / 20)و للحدیث طریق آخر عند ابن ماجہ (4205) و سندہ ضعیف و للحدیث شواھد ضعیفۃ و الاحادیث الصحیحۃ تخالفہ فی عبادۃ الاوثان ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (أَتَخوَّفُ على أمتِي الشِّرْكِ) আমি আমার উম্মতের ওপর সবচেয়ে বেশি ভয় করছি লুক্কায়িত বা গোপন শিরকের যেমনটি কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, (أَخْوَفُ مَاأَخَافُ عَلٰى أُمَّتِي الْإِشْرَاكُ بِاللّٰهِ) আমি আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয় করছি তারা আল্লাহর সাথে শিরক করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(وَالشَّهْوَةُ الْخَفِيَّةُ) গোপন প্রবৃত্তি। হাদীসের শেষাংশে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, (أَنْ يُصْبِحَ أَحَدُهُمْ صَائِمًا فَتَعْرِضَ لَهُ شَهْوَةٌ مِنْ شَهَوَاتِهِ فَيَتْرُكَ صَوْمَهُ) অর্থাৎ কোন ব্যক্তি সাওমের নিয়্যাত করবে, অতঃপর তার নিকট খাওয়া, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি কামনা-বাসনা জাগ্রত হলে, ফলে সে সওমকে ভেঙ্গে ফেলবে। আর এর মাধ্যমে সে হারামে লিপ্ত হবে। যেহেতু সে বিনা প্রয়োজনে আল্লাহর আনুগত্য পরিহার করে মনের প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ইবনু মাজাহ শরাহ ৩/৪২০৫)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩৩৩-[২০] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা মাসীহ-দাজ্জাল সম্পর্কে একে অপরের মাঝে আলোচনা করছিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে এসে বললেন, সাবধান! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যাপারে অবগত করব না যা আমার নিকট তোমাদের জন্য মাসীহ-দাজ্জাল হতেও অধিক ভয়ানক? আমরা বললাম, হ্যা, বলুন, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাঃ) বললেন, তা হলো গোপনীয় শিরক অর্থাৎ কোন ব্যক্তি সালাতে দাঁড়িয়ে এজন্য সালাতকে দীর্ঘায়িত করে যে, তার সালাত কোন ব্যক্তি দর্শন করছে। (ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ فَقَالَ: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِي مِنَ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ؟» فَقُلْنَا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «الشِّرْكُ الْخَفِيُّ أَنْ يَقُومَ الرَّجُلُ فَيُصَلِّيَ فَيَزِيدَ صَلَاتَهُ لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ رجلٍ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
حسن ، رواہ ابن ماجہ (4204) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা : (أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِي) আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব না বা শিখিয়ে দিব না যা আমার নিকট তথা আমার শারী'আতে তোমাদের জন্য অধিক ভয়ের কারণ হবে দাজ্জালের ফিতনার চাইতেও। কেননা দাজ্জালের প্রকাশের সময় ও তার ফিতনাহ্ নির্ধারিত এবং তোমাদের জন্য তা থেকে হিফাযাত থাকা সম্ভব।
(فَقُلْنَا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ) আমরা বললাম, হ্যা! হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, (الشِّرْكُ الْخَفِيُّ) লুক্কায়িত শিরক। আর তা হলো কোন ব্যক্তি সালাতের কোন রুকন লম্বা করবে অথবা সালাতের ধরণ পরিবর্তন করবে অথবা সংখ্যাকে বাড়িয়ে দিবে এ কারণে যে, লোকে তার সালাত দর্শন করছে। আল্লাহ যে তাকে দেখছে সেটাকে সে মনেই করবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩৩৪-[২১] মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: আমি তোমাদের জন্য যে ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা বেশি আশঙ্কা করছি তা হলো ছোট শিরক। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসূল! ছোট শিরক কি? তিনি (সা.) বললেন, লোক দেখানো ’আমল। (আহমাদ)
আর ইমাম বায়হাক্কী (রহিমাহুল্লাহ) শুআবূল ঈমানে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, বান্দাদের ’আমালের বিনিময়ের দিন আল্লাহ তা’আলা ঐ সমস্ত লোকেদেরকে বলবেন, যাও তোমরা সেই সমস্ত লোকদের কাছে, যাদেরকে দেখিয়ে দুনিয়াতে ’আমল করেছিলে আর লক্ষ্য করো তাদের নিকট থেকে কোন বিনিময় বা কোন কল্যাণ পাও কি না?
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَن مَحْمُود بن لبيد أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ» قالول: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ؟ قَالَ: «الرِّيَاءُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ. وَزَادَ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» : يَقُولُ اللَّهُ لَهُمْ يَوْمَ يُجَازِي الْعِبَادَ بِأَعْمَالِهِمْ: اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاؤُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً وَخَيْرًا؟
اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 428 ح 24036) و البیھقی فی شعب الایمان (6831 ، نسخۃ محققۃ : 6412) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ) নিশ্চয় আমি তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় করছি শিরকে আসগরের। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন : শিরকে আসগর কি? তিনি (সা.) উত্তর দিলেন: রিয়া বা লোক দেখানো ‘আমল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩৩৫-[২২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যদি কোন ব্যক্তি এমন কঠিন পাথরের অভ্যন্তরে বসে ’আমল করে- যার কোন দরজা বা জানালা নেই, এক সময় তার সেই ’আমল মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বেই, চাই তা (ভালো বা মন্দ) যে কোন ধরনের ’আমলেই হোক বা কেন?
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ أَنَّ رَجُلًا عَمِلَ عَمَلًا فِي صَخْرَةٍ لَا بَابَ لَهَا وَلَا كَوَّةَ خَرَجَ عَمَلُهُ إِلَى النَّاسِ كَائِنا مَا كَانَ»
اسنادہ حسن ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (6940 ، نسخۃ محققۃ : 6541) [و احمد (3 / 28) و الحاکم 4 / 314 ح 7877) و ابن حبان (الاحسان : 5649 / 5678) و ابن وھب صرح بالسماع عندہ] و اصلہ عند ابن ماجہ (4167)
ব্যাখ্যা : (لَوْ أَنَّ رَجُلًا عَمِلَ عَمَلًا فِي صَخْرَةٍ) যদি কোন ব্যক্তি একটি কঠিন পাথরের মাঝে অথবা কোন পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে ‘ইবাদত করে সেখানে কোন দরজা নেই জানালাও নেই।
(خَرَجَ عَمَلُهُ إِلَى النَّاسِ كَائِنا مَا كَانَ) উক্ত ‘আমল মানুষের মাঝে প্রকাশ পাবেই। যে ধরনের ‘আমলই হোক না কেন? কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, (من كَانَ) অর্থাৎ ‘আমলকারী তা প্রকাশ করতে চাক বা না চাক তা প্রকাশ হবেই। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা বলেন,
(وَ اللّٰهُ مُخۡرِجٌ مَّا کُنۡتُمۡ تَکۡتُمُوۡنَ) “তোমরা যা কর আল্লাহ তা'আলা তার প্রকাশকারী”- (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২:৭২)। (ইবনু মাজাহ শরাহ ৪২০৫, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩৩৬-[২৩] ’উসমান ইবনু ’আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তির কোন ভালো বা মন্দ স্বভাব গোপনীয়ভাবে থাকে, আল্লাহ তা’আলা তা কোন চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করে দেন। তা দ্বারা তার পরিচয় উন্মোচিত হয়ে পড়ে।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَن عُثْمَان بن عَفَّان قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَتْ لَهُ سَرِيرَةٌ صَالِحَةً أَوْ سَيِّئَةً أَظْهَرَ اللَّهُ مِنْهَا رِدَاءً يُعْرَفُ بِهِ»
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (6942 ، نسخۃ محققۃ : 6543) * فیہ حفص بن سلیمان : متروک ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (مَنْ كَانَتْ لَهُ سَرِيرَةٌ صَالِحَةً) যার মনের ভিতর গোপন অভিপ্রায় লুকায়িত রয়েছে, তা ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক। আল্লাহ তা'আলা উভয়ের মাঝে এমন একটি আলামত প্রকাশ করে দিবেন যার দ্বারা তার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩৩৭-[২৪] ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আমি (আমার) এ উম্মাতের প্রতি ঐ সকল মুনাফিকদের জন্য শঙ্কিত, যারা একদিকে উপদেশ ও কল্যাণমূলক কথা বলবে, অপরদিকে অন্যায় ও অত্যাচারের বহিঃপ্রকাশ করবে। (উপরিউক্ত হাদীস তিনটি ইমাম বায়হাক্বী’র শুআবূল ঈমান উল্লেখ করেছেন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَن عمر بن الْخَطَّابِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى هَذِهِ الْأُمَّةِ كُلَّ مُنَافِقٍ يَتَكَلَّمُ بِالْحِكْمَةِ وَيَعْمَلُ بِالْجَوْرِ» رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَةَ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
حسن ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (1777 ، نسخۃ محققۃ : 1641) [و احمد (1 / 22 ح 143 و سندہ حسن)]
ব্যাখ্যা : (إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى هَذِهِ الْأُمَّةِ) আমি এই উম্মাতের ওপর ঐ সকল মুনাফিকদের অনিষ্টতার আশংকা করছি। যারা শারী'আতের কথা বলবে এবং উত্তম উপদেশ দিবে কিন্তু বাস্তবে তারা অন্যায় ও যুলম করবে এবং সরল সঠিক পথ থেকে দূরে থাকবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩৩৮-[২৫] মুহাজির ইবনু হাবীব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি বিদ্বান ব্যক্তির প্রতিটি কথা গ্রহণ করি না, বরং আমি তার নিয়্যাত ও আগ্রহকে কবুল করি। অতএব যদি তার নিয়্যাত ও আগ্রহ আমার আনুগত্যের অনুকূলে হয়, তাহলে তার নিরবতাকে আমি আমার প্রশংসা এবং তার জন্য তাকে স্থিরতা ও ধৈর্যশীলতার অন্তর্ভুক্ত করি, যদিও মুখের বাক্য দ্বারা সে কিছুই উচ্চারণ না করে থাকে। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَن المهاجرِ بنِ حبيبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: إِنِّي لَسْتُ كُلَّ كلامِ الْحَكِيم أتقبَّلُ وَلَكِنِّي أَتَقَبَّلُ هَمَّهُ وَهَوَاهُ فَإِنْ كَانَ هَمُّهُ وَهَوَاهُ فِي طَاعَتِي جَعَلْتُ صَمْتَهُ حَمْدًا لِي وَوَقَارًا وإِنْ لمْ يتكلَّمْ رَوَاهُ الدَّارمِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 79 ح 258) * فیہ صدقۃ بن عبداللہ بن مھاجر بن حبیب : مجھول ، و المھاجر لیس صحابیًا و لعلہ المھاصر بن حبیب کما فی النسخۃ المحققۃ فالسند مع ضعفہ مرسل ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (الَ اللَّهُ تَعَالَى: إِنِّي لَسْتُ كُلَّ كلامِ الْحَكِيم أتقبَّلُ) আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি ‘আলিমের প্রত্যেক কথা ও মুখের নড়াচড়ার দিকে তাকাই না বরং তার অবস্থা অন্তরের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য করি। আর এ অর্থেই আল্লাহ বলেন,
(وَلَكِنِّي أَتَقَبَّلُ هَمَّهُ وَهَوَاهُ) কিন্তু আমি তার ভালো কাজের নিয়্যাতকে অন্তরে কল্পনা করার সাথে সাথেই গ্রহণ করি। আর যদি গ্রহণ করি নিয়্যাতের সাথেই গ্রহণ করি যদিও তার আগ্রহ তা বিলম্বে বাস্তবায়ন হয়।
(فَإِنْ كَانَ هَمُّهُ وَهَوَاهُ فِي طَاعَتِي) যদি তার নিয়্যাত ও উদ্দিষ্ট ইচ্ছা আমার আনুগত্যমূলক কাজে হয় তাহলে তার চুপ থাকাকেও আমি আমার ওপর প্রশংসা হিসেবে ধরে নেই এবং ধরে নেই প্রশান্তি ও মজবুত ‘ইলম হিসেবে যদিও সে প্রশংসামূলক কথা না বলে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)