পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩১৮-[৫] আবূ সাঈদ ইবনু আবূ ফাযালাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন যখন মানুষদেরকে সমবেত করবেন, যেদিন সম্পর্কে সন্দেহের কোন সুযোগ নেই। সেদিন কোন এক ঘোষণাকারী ঘোষণা দেবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোন ’আমল করতে অন্য কাউকেও অংশীদার বানিয়েছে, সে যেন আল্লাহ ছাড়া ঐ ব্যক্তির থেকেই তার প্রতিদান অন্বেষণ করে। কেননা আল্লাহ তা’আলা অংশীদার অংশীবাদ হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। (আহমাদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
عَن أبي سعدِ بن أبي فَضَالَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا جَمَعَ اللَّهُ النَّاسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِيَوْمٍ لَا رَيْبَ فِيهِ نَادَى مُنَادٍ: مَنْ كانَ أشركَ فِي عملٍ عملَه للَّهِ أحدا فَلْيَطْلُبْ ثَوَابَهُ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ . رَوَاهُ أَحْمَدُ
حسن ، رواہ احمد (3 / 466 ح 15932) [و الترمذی (3154) و ابن ماجہ (4203)] ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা : (إِذَا جَمَعَ اللَّهُ النَّاسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ..) আল্লাহ তা'আলা যখন সমস্ত মানুষকে প্রতিদান দেয়ার জন্য হাশরের মাঠে জমা করবেন, যেদিনের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত একজন মালাক (ফেরেশতা) ঘোষণা করবেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য করণীয় কোন কাজে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করেছে সে যেন গায়রুল্লাহর নিকট থেকে এর সাওয়াব নেয়, কেননা আল্লাহ তা'আলা অংশীদারের অংশীদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। অর্থাৎ তিনি শিরকযুক্ত ‘আমল কবুল করেন না।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩১৯-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছেন, যে লোক মানুষের কাছে নিজের ’আমলের কথা শুনায়, আল্লাহ তা’আলা তার মন্দ উদ্দেশ্যে কৃত ’আমলকে মানুষের কানে পৌছিয়ে দেবেন এবং তাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন। (বায়হাক্বী’র শুআবূল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَن عبد الله بن عَمْرو أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ سَمَّعَ النَّاسَ بِعَمَلِهِ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ أَسَامِعَ خَلْقِهِ وَحَقَّرَهُ وَصَغَّرَهُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
صحیح ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (6822 ، نسخۃ محققۃ : 6403) [و احمد (2 / 162 ، 212 ، 223)] * قلت : فیہ رجل یقال لہ ابو یزید وھو خیثمۃ بن عبد الرحمن کما فی حلیۃ الاولیاء (4 / 123) و مجمع الزوائد (10 / 222) فالحدیث صحیح و الحمد للہ ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (مَنْ سَمَّعَ النَّاسَ بِعَمَلِهِ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ) যারা মানুষকে দেখানোর জন্য কোন নেক ‘আমল প্রকাশ্যে করবে আল্লাহ তা'আলা তার উক্ত ‘আমলকে মানুষের নিকট প্রকাশ করে দিবেন এবং পার্থিব জীবনে মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ করাবেন। অথবা, আল্লাহ তা'আলা প্রতিদান স্বরূপ তার গোপনীয় দোষ-ক্রটিকে মানুষের নিকট প্রকাশ করে দিবেন এবং তাকে লাঞ্ছিত করবেন, তুচ্ছ করবেন, ছোট করে দিবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/৩১৫৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২০-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: যে লোক (স্বীয় ’আমলে) পরকালে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়্যাত রাখে, আল্লাহ তার হৃদয়কে (মানুষ হতে) অমুখাপেক্ষী করে দেন এবং তার অগোছালো কাজ-কর্মগুলো তিনি গুছিয়ে দেন এবং দুনিয়াবী সম্পদ তার কাছে লাঞ্ছিত হয়ে আসে। অপরদিকে যে ব্যক্তি দুনিয়া লাভের নিয়্যাত রাখে, আল্লাহ তা’আলা নিঃস্বতাকে তার চক্ষুর সম্মুখে করে দেন। (অর্থাৎ সে সর্বদা অভাব-অনটনকেই দেখতে পায়), তার কাজকর্ম হজবরল হয়ে যায়। অথচ সে ইহকালীন সম্পদের কেবল ততটুকুই পায় যতটুকু তার জন্য ধার্য রয়েছে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَتْ نِيَّتُهُ طَلَبَ الْآخِرَةِ جَعَلَ اللَّهُ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَجَمَعَ لَهُ شَمْلَهُ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ وَمَنْ كَانَتْ نِيَّتُهُ طَلَبَ الدُّنْيَا جَعَلَ اللَّهُ الْفَقْرَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَشَتَّتَ عَلَيْهِ أَمْرَهُ وَلَا يَأْتِيهِ مِنْهَا إِلاَّ مَا كُتِبَ لَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَرَوَاهُ أَحْمد
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2465 وقال : حسن غریب) و احمد (5 / 183 ح 21925) و للحدیث الآتی یغنی عنہ) * یزید بن ابان الرقاشی زاھد ضعیف ۔
ব্যাখ্যা : (كَانَتْ نِيَّتُهُ طَلَبَ الْآخِرَةِ) যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম শিক্ষা করবে এবং তদানুযায়ী ‘আমল করবে।
(جَعَلَ اللَّهُ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ) আল্লাহ তা'আলা অল্পতেই তার অন্তরে পরিতৃপ্তি দান করবেন, ফলে সে অধিক পাওয়ার জন্য কষ্ট করবে না।
(وَجَمَعَ لَهُ شَمْلَهُ) তার বিক্ষিপ্ত বিষয়গুলোকে এমনভাবে অর্জন করা সহজ করে দিবেন যা সে কল্পনাই করতে পারবে না।
(وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ) এবং দুনিয়াতে তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত রয়েছে তা না চাইতেই তার কাছে চলে আসবে, এর জন্য অধিক পরিমাণ পরিশ্রমের দরকার হবে না।
(وَمَنْ كَانَتْ نِيَّتُهُ طَلَبَ الدُّنْيَا) আর যার উদ্দেশ্য হবে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করা। আল্লাহ তা'আলা দরিদ্রতাকে তার চোখের সামনে উপস্থাপন করবেন তথা চোখের সামনে মানুষের প্রতি তার অভাব তৈরি করে দিবেন।
(وَشَتَّتَ عَلَيْهِ أَمْرَهُ) এবং তার সুসজ্জিত বিষয়গুলোকে এলোমেলো করে দিবেন। সে অনেক চেষ্টা করেও অধিক কিছু লাভ করতে পারবে না। কেবল ততটুকুই সে পাবে যা তার ভাগ্যে নির্ধারিত রয়েছে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬/২৪৬৫, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২১-[৮] আর আহমাদ ও দারিমী হাদীসটি ’আবান’-এর মাধ্যমে যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَالدَّارِمِيُّ عَنْ أَبَانٍ عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ
صحیح ، رواہ الدارمی (1 / 75 ح 235) * ابان ھو ابن عثمان و سندہ صحیح ، و انظر سنن ابی داود (3660) و الترمذی (2656) وغیرھما ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২২-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি একদিন আমার ঘরে সলাত আদায় করছিলাম, এমন সময় হঠাৎ এক লোক আমার নিকট আসলো। সে আমাকে এ (নেক) অবস্থায় দেখেছেন, এটা আমার মনে আনন্দ জাগল। (আমার খুশি হওয়াটা কি রিয়াকারী?) তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন, হে আবূ হুরায়রাহ্! তোমার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে, একটি হলো গোপনীয়তা, আর দ্বিতীয়টি হলো ’ইবাদত প্রকাশ হয়ে পড়ার। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ بَيْنَا أَنَا فِي بَيْتِي فِي مُصَلَّايَ إِذْ دَخَلَ عَلَيَّ رَجُلٌ فَأَعْجَبَنِي الْحَالُ الَّتِي رَآنِي عَلَيْهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَحِمَكَ اللَّهُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ لَكَ أَجْرَانِ: أَجْرُ السِّرِّ وَأَجْرُ الْعَلَانِيَةِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2384) [و ابن ماجہ (4226)] * حبیب بن ابی ثابت مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (بَيْنَا أَنَا فِي بَيْتِي فِي مُصَلَّايَ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, একদিন আমি বাড়ীতে আমার সলাতের চাদরে বসে আছি, এমন সময় আমার কাছে এক ব্যক্তি প্রবেশ করে আমাকে দেখে ফেলে। আমাকে এ অবস্থায় দেখার কারণে আমি খুবই খুশি হই। আমার এ কাজটি কি রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে? এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?
(فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَحِمَكَ اللَّهُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ) রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তরে বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ্! আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। এতে তোমার দ্বিগুণ সাওয়াব অর্জিত হয়েছে। গোপনে একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করার কারণে এবং প্রকাশ্যে ‘আমল দ্বারা অন্যরা তোমার অনুসরণ করার কারণে অথবা আনুগত্যমূলক কাজ করে তোমার আনন্দ লাভ করা ও তা মানুষের শিক্ষার জন্য প্রকাশ পাওয়ার কারণে। অথবা যে তার ‘আমল দেখেছে সেও উক্ত ‘আমল করবে এবং তাতে তার সমপরিমাণ সাওয়াব অর্জিত হবে এ কারণে। আর এ অর্থেই রসূল (সা.) বলেছেন,
(مَنْ سَنَّ سُنَّةً حَسَنَةً حَسَنَةً كَانَ لَهٗ مِشْلُ أَجْرِ كُلِّ مَنْ يَعْمَلُ بِهَا) অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি কোন উত্তম কাজ চালু করবে তার জন্য উক্ত ভালো কাজের প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের সমপরিমাণ প্রতিদান যারা তার প্রতি আমল করবে।” (মুসলিম ৪/২০৫৯, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬/২৩৮৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২৩-[১০] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: শেষ যামানায় এমন কিছু সংখ্যক লোকের আগমন ঘটবে যারা দীনের দ্বারা দুনিয়া অর্জন করবে। (দীনদারী প্রকাশ করে মানুষকে ধোকায় ফেলবে) মানুষের দৃষ্টিতে বিনয়ভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে মেষ-দুম্বার চামড়া পরিধান করবে, তাদের মুখের ভাষা হবে চিনি তুলনা মিষ্টি। পক্ষান্তরে তাদের অন্তর হবে বাঘের মতো (হিংস্র)। আল্লাহ তাআলা এ জাতীয় লোকদের ব্যাপারে বলেন, এরা কি আমাকে ধোঁকা দিতে চায়, নাকি আমার ওপরে ধৃষ্টতা পোষণ করছে? (জেনে রাখ!) আমি আমার শপথ করে বলছি, আমি তাদের ওপর তাদের মধ্য থেকে এমন বিপদ পাঠাবো যাতে তাদের বিচক্ষণ বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণও দিশেহারা হয়ে পড়বে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَخْرُجُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ رِجَالٌ يَخْتِلُونَ الدُّنْيَا بِالدِّينِ يَلْبَسُونَ لِلنَّاسِ جُلُودَ الضَّأْنِ مِنَ اللِّينِ أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ السُّكَّرِ وَقُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الذِّئَابِ يَقُولُ اللَّهُ: «أَبِي يَغْتَرُّونَ أَمْ عليَّ يجترؤون؟ فَبِي حَلَفْتُ لَأَبْعَثَنَّ عَلَى أُولَئِكَ مِنْهُمْ فِتْنَةً تدع الْحَلِيم فيهم حيران» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ الترمذی (2404) * فیہ یحیی بن عبیداللہ متروک و افحش الحاکم فرماہ بالوضع ، قلت : روایۃ المتروک مثل روایۃ الکذاب ، لا یستشھد بہ ولا یعتبر ابدًا ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (يَخْتِلُونَ الدُّنْيَا بِالدِّينِ) পরকালীন ‘আমালের বিনিময়ে দুনিয়া উপার্জন করবে। অর্থাৎ দুনিয়াবাসীকে পরকালীন ‘আমল দেখিয়ে ধোঁকা দিবে।
(يَلْبَسُونَ لِلنَّاسِ جُلُودَ الضَّأْنِ مِنَ اللِّينِ) তারা মানুষকে দুনিয়াবিমুখ পরকাল সন্ধানী হিসেবে বিশ্বাস করানোর জন্য ভেড়ার চামড়া বা পশমী পোশাক পরিধান করবে। তারা মানুষের সাথে নম্রতা কোমলা প্রদর্শন, মিসকীন ভাব ও সংযমী প্রদর্শন করবে। মূলত এর মাধ্যমে তারা মানুষের কাছে তোষামোদ প্রিয় ও বিনয়ী ভাব দেখিয়ে তাদের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করে মুরিদ বানানো এবং তাদের ‘আক্বীদাকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করবে।
(أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ السُّكَّرِ) তাদের মুখের ভাষা মধুর চিনির চেয়ে মিষ্টি হবে এবং তাদের অন্তর হবে দুনিয়ার মানসম্মান ও সম্পত্তির প্রতি হিংস্র প্রাণীর চেয়েও ভয়ানক। অর্থাৎ তাদের অন্তর দুনিয়ার গৌরব ও সম্পদের লোভে অতি তিক্ত হবে, আর মুত্তাকীদের সাথে শত্রুতা ও ঘৃণা প্রদর্শন করবে এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় পশুসুলভ আচরণ করবে।
(يَقُولُ اللَّهُ: «أَبِي يَغْتَرُّونَ) আল্লাহ তা'আলা বলবেন, আমার সহনশীলতা ও অবকাশের দরুন তারা কি আমার সাথে প্রতারণা করছে? এখানে প্রতারণার অর্থ হলো : আল্লাহকে ভয় না করার দরুন নিজেকে ক্ষতি করা, তাওবাকে উপেক্ষা করা, গুনাহ ও প্রবৃত্তির অনুসরণে লেগে থাকা।
(أَمْ عليَّ يجترؤون؟) নাকি মানুষকে ভালো কাজ প্রদর্শন করে ধোঁকা দিয়ে আমার সাথে দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছে?
(فَبِي حَلَفْتُ) আমার মর্যাদা ও ‘ইযযতের কসম করে বলছি, আমি অবশ্যই উক্ত গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে একে অপরের ওপর ক্ষমতা দিয়ে ফিতনায় ফেলব।
(تدع الْحَلِيم فيهم حيران) বিচক্ষণ ‘আলিমগণ পর্যন্ত দিশেহারায় পড়ে, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬/২৪০৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২৪-[১১] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: মহান কল্যাণময় আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, আমি এমন কতক মাখলুক সৃষ্টি করেছি যাদের মুখের বাণী চিনি অপেক্ষা সুমিষ্টি। আর তাদের হৃদয় সবর (তেতো ফল) অপেক্ষা তিক্ত। আমি আমার শপথ করে বলছি, আমি তাদের ওপর এমন বিপর্যয় অবতীর্ণ করব যে, তাদের জ্ঞানী-গুণী লোকেরাও দিশেহারা হয়ে পড়বে। তারা কি আমাকে ধোঁকা দিতে চাচ্ছে নাকি আমার সাথে ধৃষ্টতা পোষণ করছে? ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: لَقَدْ خَلَقْتُ خَلْقًا أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ السُّكَّرِ وَقُلُوبُهُمْ أَمَرُّ مِنَ الصَّبْرِ فَبِي حَلَفْتُ لَأُتِيحَنَّهُمْ فِتْنَةً تَدَعُ الْحَلِيمَ فِيهِمْ حَيْرَانَ فَبِي يغترّون أم عليَّ يجترؤونَ؟ رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ: هَذَا حديثٌ غَرِيب
اسنادہ ضعیف ۔ رواہ الترمذی (2405) * حمزۃ بن ابی محمد : ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: لَقَدْ خَلَقْتُ خَلْقًا) আল্লাহ তা'আলা বলেন, অবশ্যই আমি এমন একদল মানুষকে সৃষ্টি করেছি যাদের ভাষা চিনির চেয়ে মিষ্টি এবং তাদের অন্তর হকপন্থীদের প্রতি তিক্ত গাছের রসের চেয়ে আরো তিক্ত হবে।
(فَبِي حَلَفْتُ لَأُتِيحَنَّهُمْ فِتْنَةً) আমার ‘ইযযতের কসম করে বলছি তাদের ভিতর এমন ফিতনাহ্ ছড়িয়ে দিব যে, বিচক্ষণ ‘আলিম পর্যন্ত তা নিয়ে পেরেশান থাকবে।
(فَبِي يغترّون أم عليَّ يجترؤونَ؟) তারা কি আমার সাথে প্রতারণা করছে নাকি দুঃসাহসিকতা প্রদর্শন করছে? (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২৫-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: প্রতিটি কাজের মধ্যে একটা স্পৃহা থাকে। আমার প্রতি চেতনায় দুর্বলতাও রয়েছে। অতএব যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার কাজের মধ্যে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে এবং (সীমালঙ্ঘন বা হ্রাস না করে) মধ্যমপন্থার কাছাকাছি থেকে কাজ করে, তবে তোমরা তার সম্পর্কে আকাক্ষিত হতে পার। আর যদি তার প্রতি অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করা হয় তবে তোমরা তাকে হিসেবে ধরো না। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ شِرَّةٌ وَلِكُلِّ شِرَّةٍ فَتْرَةٌ فَإِنْ صَاحِبُهَا سَدَّدَ وَقَارَبَ فَارْجُوهُ وَإِنْ أُشِيرَ إِلَيْهِ بِالْأَصَابِعِ فَلَا تعدوه» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
حسن ، رواہ الترمذی (2452 وقال : حسن صحیح غریب) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ شِرَّةٌ) নিশ্চয় প্রত্যেক কাজের প্রতি একটি লোভ, আগ্রহ ও কর্মতৎপরতা রয়েছে।
(وَلِكُلِّ شِرَّةٍ فَتْرَةٌ) আর প্রত্যেক কর্মতৎপরতার পিছনে দুর্বলতা রয়েছে। অর্থাৎ কোন বান্দা যদি “ইবাদত করার প্রতি সাধ্যাতিরিক্ত মনোনিবেশ করে তাহলে এক পর্যায়ে এসে সে দুর্বল হয়ে পড়বে ও তার কাজে শিথিলতা দেখা দিবে।
(إِنْ صَاحِبُهَا سَدَّدَ وَقَارَبَ فَارْجُوهُ) যদি কল্যাণের প্রতি উদ্যোক্তা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে এবং তার কাজকে বন্ধ না করে সাধারণভাবে চালিয়ে যায় তাহলে তার ব্যাপারে সফলতার আশা প্রকাশ কর।
(وَإِنْ أُشِيرَ إِلَيْهِ بِالْأَصَابِعِ فَلَا تعدوه) আর যদি সে প্রসিদ্ধতা অর্জনের জন্য অতিরিক্ত ‘আমালের প্রতি মনোনিবেশ করে তাহলে তাকে কোন সৎ ও একনিষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত মনে করো না। কেননা সে লোক দেখানোর জন্য তার সমস্ত সময়কে ‘ইবাদতে কাটিয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২৪৫৩, মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা
৫৩২৬-[১৩] আনাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: কোন ব্যক্তি খারাপ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, দীনদারী বা ইহকালীন উচ্চ সম্মানের ব্যাপারে তার প্রতি অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়। তবে সে এটার আওতায় পড়বে না যাকে আল্লাহ রক্ষা করেছেন। (বায়হাকী’র শুআবূল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الرِّيَاء والسمعة)
وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «بِحَسب امريءٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يُشَارَ إِلَيْهِ بِالْأَصَابِعِ فِي دِينٍ أَوْ دُنْيَا إِلَّا مَنْ عَصَمَهُ اللَّهُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (6978 ، نسخۃ محققۃ : 6580) * کلثوم بن محمد بن ابی سدرۃ الحلبی ضعیف علی الراجح و عطاء بن ابی مسلم الخراسانی عن ابی ھریرۃ : مرسل ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (بِحَسب امريءٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يُشَارَ إِلَيْهِ بِالْأَصَابِعِ) কোন ব্যক্তি মন্দ হওয়ার এতটুকুই যথেষ্ট যে, পার্থিব অথবা পরকালীন দীনদারী কাজের প্রসিদ্ধির জন্য তার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা হয়। কেননা ব্যক্তি যখন কোন একটি স্বভাবের জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করে তখন তার মধ্যে আত্মগৌরবের অহঙ্কার, লৌকিকতা, নেক আমলের প্রশংসা ইত্যাদি লুক্কায়িত মন্দ গুণাবলি থেকে খুব কমই নিরাপদে থাকতে পারে।
(إِلَّا مَنْ عَصَمَهُ اللَّهُ) তবে আল্লাহ তা'আলা যাকে তাকওয়ার স্থানে হিফাযাত করেন সেই কেবল উক্ত মন্দ গুণ থেকে বাঁচতে পারে। আর এজন্যই অনেক সুফী মতবাদ অবলম্বী দীনী ‘ইবাদত গোপন করে প্রবৃত্তির হীন মানসিকতা প্রকাশ করার নীতি অবলম্বন করে থাকে। হাসান বসরী (রহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল লোকে তো আপনার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে থাকে। উত্তরে তিনি বলেন, নবী (সা.) হাদীস দ্বারা তাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যারা দীনের ক্ষেত্রে বিদ্আতী এবং দুনিয়ার ক্ষেত্রে পাপাচারী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)