পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪০-[৪] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ পবিত্র সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, নিম্নোক্ত দু’টো বিষয়ের মধ্যে একটি অবশ্যই হবে। হয় অবশ্যই তুমি সৎকাজের আদেশ দান করবে এবং মন্দকাজ হতে নিষেধ করবে; নতুবা অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর ’আযাব নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে; কিন্তু তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করা হবে না। (তিরমিযী)[1]
عَنْ حُذَيْفَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِنْ عِنْدِهِ ثُمَّ لَتَدْعُنَّهُ وَلَا يُسْتَجَاب لكم» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ) এখানে ইমাম আল জাযারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ الْمَعْرُوفِ হলো এমন এক পরিপূর্ণ অর্থ প্রদানকারী ইস্ম বা নাম যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য এবং নৈকট্য লাভের উপায় মানুষের সাথে সদাচরণসহ শারী‘আতের প্রত্যেকটি হালাল-হারাম বিধান যথাযথভাবে উপলব্ধি করা যায়। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২১৬৯)
(وَلَا يُسْتَجَاب لكم) হাদীসের এ অংশের উদ্দেশ্যমূলক অর্থ হচ্ছে, আমাদের পক্ষ থেকে সৎকাজের আদেশ বা মন্দ কাজের নিষেধ উভয়টি একত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর পক্ষ হতে ‘আযাব নেমে আসবে। তখন ঐ ‘আযাব থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করা হলে তা তখন আর কবুল করা হবে না।
অন্য আরেকটি হাদীসে এসেছে, قبل أن يدعوا এখানে ‘আবদুল বাক্বী‘ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এর অর্থ হলো মানুষকে সৎ কাজের আদেশ আর মন্দ কাজের নিষেধের মাধ্যমে হিদায়াতের দিকে আহবান করা হলে তারা এই আহবান মোটেই সাড়া দেবে না। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২১৬৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪১-[৫] ’উরস ইবনু ’আমীরাহ্ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ পৃথিবীর বুকে যখন কোন গুনাহ করা হয়, তখন যে ব্যক্তি সেটাকে মনে মনে খারাপ জানবে, সে ঐ স্থানে উপস্থিত থাকলে, তাকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় মনে করা হবে, যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত নেই। আর যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত নেই কিন্তু সেসব খারাপ কাজকে মনে মনে ভালোবাসে, সে ঐ ব্যক্তির মতোই হবে, যে সেখানে উপস্থিত আছে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن الْعرس بن عَمِيرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا عُمِلَتِ الْخَطِيئَةُ فِي الْأَرْضِ مَنْ شَهِدَهَا فَكَرِهَهَا كَانَ كَمَنْ غَابَ عَنْهَا وَمَنْ غَابَ عَنْهَا فَرَضِيَهَا كَانَ كَمَنْ شَهِدَهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪২-[৬] আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি সমবেত লোকেদের উদ্দেশে বলেন, হে জনগণ! তোমরা নিশ্চয় এ আয়াতটি পাঠ করেছ, (অর্থাৎ-) ’’হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ওপর এ কথা আবশ্যিক করে নাও, যে পথভ্রষ্ট হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা হিদায়াতের উপর স্থির থাকবে’’। এ সম্পর্কে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মানুষ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখে, সেটাকে পরিবর্তন করে না, অনতিবিলম্বেই আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর তাঁর ’আযাব নাযিল করবেন। [ইবনু মাজাহ ও তিরমিযী;[1] আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি সহীহ বলে বর্ণনা করেছেন।]
আর আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর এক বর্ণনায় আছে যে, মানুষ যখন কোন অত্যাচারীকে অত্যাচার করতে দেখেও তার হাত ধরে না ফেলে, অনতিবিলম্বেই আল্লাহ তা’আলা তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। ইমাম আবূ দাঊদ-এর অপর এক বর্ণনায় আছে যে, যে জাতির মধ্যে পাপাচার হয়, আর সে জাতির পরিবর্তন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সেটার পরিবর্তন না করে, তাহলে অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা’আলা তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। তাঁর অপর এক বর্ণনায় আছে যে, যে জাতি পাপাচারে লিপ্ত হয়, আর পাপে লিপ্তদের তুলনায় সাধারণ লোক সংখ্যায় বেশি হয়।
وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنكم تقرؤونَ هذهِ الْآيَة: (يَا أيُّها الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ)
فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا مُنْكَرًا فَلَمْ يُغَيِّرُوهُ يُوشِكُ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابِهِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالتِّرْمِذِيُّ وَصَحَّحَهُ. وَفِي رِوَايَةِ أبي دَاوُد: «إِذا رَأَوْا الظَّالِم فَم يَأْخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ» . وَفِي أُخْرَى لَهُ: «مَا مِنْ قَوْمٍ يُعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِي ثُمَّ يَقْدِرُونَ عَلَى أَنْ يُغَيِّرُوا ثُمَّ لَا يُغَيِّرُونَ إِلَّا يُوشِكُ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ» . وَفِي أُخْرَى لَهُ: «مَا مِنْ قَوْمٍ يُعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِي هُمْ أَكْثَرُ مِمَّن يعمله»
ব্যাখ্যাঃ يٰاَيُّها الَّذِينَ اٰمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ হাদীসে উল্লেখিত এই আয়াত (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ১০৫) কাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে তা নিয়ে অনেক মতানৈক্য রয়েছে। প্রখ্যাত তাবি‘ঈ মুজাহিদ এবং সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহিমাহুমাল্লাহ) বলেন, এ আয়াতটি ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। এর অর্থ হলো:
عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، فَخُذُوا مِنْهُمُ الْجِزْيَةَ وَاتْرُكُوهُمْ
অর্থাৎ- তোমাদের ওপর আবশ্যক হলো তোমরা নিজেদেরকে অন্যায় থেকে সংরক্ষণ করবে তাহলে কিতাবধারীদের মধ্যে যারা গুমরাহ হয়েছে তারা তোমাদের কোনরূপ ক্ষতি করতে পারবে না। আর তোমরা তাদের থেকে খাজনা গ্রহণ করে তাদের থেকে দূরে থাক।
উল্লেখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় আবূ ‘উবায়দ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) এ কথা ভেবে ভয় পেয়ে গেলেন যে, লোকেরা হয়তবা আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করতে পারে। তারপর মানুষদেরকে সৎকাজের আদেশ দেয়া থেকে নিষেধ করতে পারে। তাই তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিলেন যে, বিষয়টি প্রকৃতপক্ষ এমন নয় বরং এখানে উদ্দেশ্য হলো বিধর্মীদের মধ্যে যারা মুসলিম অঞ্চলের মুয়াহাদ তথা চুক্তিবদ্ধ তাদেরকে তাদের শির্কী কর্মকাণ্ড থেকে বাধা প্রদান না করার ব্যাপারে অনুমতি দেয়া হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২১৬৮)
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪৩-[৭] জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে জাতিতে কোন লোক পাপে লিপ্ত থাকে, আর ঐ ব্যক্তিকে পাপ থেকে ফেরাতে জাতির লোকেদের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও না ফেরায়, তাহলে তাদের মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করবেন। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن جَرِير بن عبد الله قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ رَجُلٍ يَكُونُ فِي قَوْمٍ يَعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِي يَقْدِرُونَ عَلَى أَنْ يُغَيِّروا عَلَيْهِ وَلَا يُغَيِّرُونَ إِلَّا أَصَابَهُمُ اللَّهُ مِنْهُ بِعِقَابٍ قبل أَن يموتو» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ (عَلٰى أَنْ يُغَيِّروا عَلَيْهِ وَلَا يُغَيِّرُونَ) এখানে হাত বা মুখ দ্বারা বাধা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এ কাজ করার জন্য তার ওপর একটি শর্ত রয়েছে তা হলো সে নিজে এমন গর্হিত কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত থাকবে। এক্ষেত্রে তার ওপর দু’টো বিষয় করণীয় : ১. সে নিজেকে সৎকাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ থেকে বারণ করবে। ২. অন্যকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে। তাকে আরো একটি বিষয় মেনে চলতে হবে সেটা হলো সে সকলের সাথে কোমল ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে। তবেই তার দা‘ওয়াতী কাজে সফল আসবে।
এ প্রসঙ্গে ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে ব্যক্তি গোপনে তার কোন ভাইকে নাসীহাত করল সে যেন তাকে দোষমুক্ত আর পরিপাটি করল, আর যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে তার কোন ভাইকে নাসীহাত করল সে যেন তাকে অসম্মান আর দোষী সাব্যস্ত করল। সুতরাং প্রকাশ্যে কোন ভাইকে নাসীহাত করার চাইতে লোক আড়ালে একান্তে নাসীহাত করাই ভালো। তবে বৃহৎ উপকার লাভে জনসম্মুখে নাসীহাত করা বৈধ আছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৩৩১)
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪৪-[৮] আবূ সা’লাবাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহ তা’আলার এ বাণী- عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ সম্পর্কে বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমি এ আয়াত সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছি (অর্থাৎ- এ আয়াত অনুযায়ী সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ করা থেকে বিরত থাকব কি-না)। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’’না’’; বরং ঐ পর্যন্ত চালু রাখো, যখন তোমরা দেখবে, কৃপণের অনুসরণ করা হয়, প্রবৃত্তির পূজা করা হয়, ইহকালকে পরকালের উপর প্রাধান্য দেয়া হয় এবং প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তি নিজের মতকে পছন্দনীয় বলে মনে করে। তুমি এমন কাজ দেখবে, যা থেকে তুমি এড়িয়ে চলতে পারবে না। তখন তুমি নিজেকেই নিজে রক্ষা করো এবং জনগণকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। কারণ তোমাদের ভবিষ্যৎযুগ এমন হবে, তোমাকে শুধু ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করবে, তার অবস্থা এরূপ হবে, যেন সে নিজের হাতে নিজে অঙ্গার উঠিয়ে নিয়েছে। সে সময় যে ব্যক্তি ধর্মের কাজে ’আমল করবে, সে পঞ্চাশজন লোকের ’আমল করার সাওয়াব পাবে। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! সে যামানারই পঞ্চাশজন লোকের ’আমলে সাওয়াবের সমান হবে? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, তোমাদের যামানার পঞ্চাশজনের ’আমলের সাওয়াবের সমান হবে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
ولبعض فقره شَوَاهِد)
وَعَن أبي ثعلبةَ فِي قَوْلُهُ تَعَالَى: (عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضل إِذا اهْتَدَيْتُمْ)
فَقَالَ: أَمَا وَاللَّهِ لَقَدْ سَأَلْتُ عَنْهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: بَلِ ائْتَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنَاهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ حَتَّى إِذَا رأيتَ شُحّاً مُطاعاً وَهوى مُتَّبَعاً ودينا مُؤْثَرَةً وَإِعْجَابَ كُلِّ ذِي رَأْيٍ بِرَأْيِهِ وَرَأَيْتَ أَمْرًا لَا بُدَّ لَكَ مِنْهُ فَعَلَيْكَ نَفْسَكَ وَدَعْ أَمْرَ الْعَوَامِّ فَإِنَّ وَرَاءَكُمْ أَيَّامَ الصَّبْرِ فَمَنْ صَبَرَ فِيهِنَّ قَبَضَ عَلَى الْجَمْرِ لِلْعَامِلِ فِيهِنَّ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْهُمْ؟ قَالَ: «أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْكُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ (عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ) উল্লেখিত আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় ইমাম বায়যাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আয়াতাংশের অর্থ হলো তোমরা নিজেরদেরকে বিপদাপদ ও অন্যায় অশ্লীলতা থেকে হিফাযাত কর এবং কৃত অন্যায় অপরাধ থেকে সংশোধন কর।
(بَلِ ائْتَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنَاهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ) বর্ণিত হাদীসাংশের অর্থ হলো তোমরা একে অন্যকে সৎকাজের আদেশ কর আর এক দল অন্যদলকে মন্দ কাজে থেকে নিষেধ কর।
ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তোমরা এ দু’টো বিষয়কে (সৎকাজের আদেশ আর মন্দ কাজের নিষেধ) পরিপূর্ণরূপে উত্তম পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন কর। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪৫-[৯] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসরের সালাতের পর আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। কিয়ামত পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটবে, সেগুলো বর্ণনা করলেন। সেসব কথা যে স্মরণ রাখল তো রাখল, আর যে ভুলে গেল তো ভুলে গেল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা কিছু বললেন, এতে এ কথাও ছিল যে, দুনিয়াটা একটা মিষ্টি ও সুস্বাদু বস্তু। আল্লাহ তা’আলা এতে তোমাদেরকে তাঁর প্রতিনিধি বানিয়ে দিলেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কিভাবে ’আমল করো। সাবধান! দুনিয়ার মোহ থেকে বাঁচো এবং বাঁচো রমণীদের থেকে। অতঃপর বললেনঃ নিশ্চয় কিয়ামতের দিন প্রতিটি ওয়া’দা ভঙ্গকারীর জন্য একটি ঝাণ্ডা হবে, যা দুনিয়ার ওয়া’দা অনুসারে উঁচু-নিচু হবে। কোন ওয়া’দা ভঙ্গকারী জনপ্রতিনিধি বা জনসাধারণের শাসকদের ওয়া’দা ভঙ্গের চেয়ে বড় হবে না। তার ঝাণ্ডা তার বসার স্থানের কাছে দণ্ডায়মান করা হবে। তারপর তিনি বললেনঃ মানুষের ভীতি যেন তোমাদের কাউকে ন্যায় কথা বলা থেকে বিরত না রাখে, যখন সে সেটাকে ন্যায় বলে জানে।
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোন অন্যায় কাজ করতে দেখে, লোকভীতি যেন সেটাকে উৎপাটন করা থেকে তাকে বিরত না করে। এ বলে আবূ সা’ঈদ আল খুদরী(রাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং বললেনঃ আমি অবশ্য অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখেছি; কিন্তু মানুষের ভয়ে আমি সেটা নিষেধ করতে পারিনি। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ স্মরণ রেখ, আদম সন্তানকে বিভিন্ন স্তরে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে, মু’মিন হিসেবে জন্মগ্রহণ করে, মু’মিন হিসেবে জীবন-যাপন করে এবং মু’মিন হিসেবে মৃত্যুবরণ করে এবং তাদের কেউ কেউ এমনও রয়েছে যে, জন্মগ্রহণ করে কাফির হিসেবে, জীবন-যাপন করে কাফির হিসেবে এবং মৃত্যুবরণ করে কাফির হিসেবে। আর তাদের থেকে কেউ কেউ এমন রয়েছে যে, জন্মগ্রহণ করে মু’মিন হিসেবে, জীবন-যাপন করে মু’মিন হিসেবে; কিন্তু মৃত্যুবরণ করে কাফির হিসেবে। আবার কেউ কেউ এমন আছে যে, কাফির হিসেবে জন্মগ্রহণ করে, কাফির হিসেবে জীবন-যাপন করে; কিন্তু মৃত্যুবরণ করে মু’মিন হিসেবে।
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী(রাঃ) বলেন, তারপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগ সম্পর্কে বললেনঃ কেউ কেউ এমন আছে, যারা খুব তাড়াতাড়ি রাগে এবং তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়। একটি অপরটির ক্ষতিপূরণকারী। আবার কেউ কেউ এমন আছে, যারা খুব দেরিতে রাগে এবং তাদের রাগ নিবারিত হতেও দেরি হয়। এ দু’টো অবস্থাও একটি অপরটির ক্ষতিপূরক। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যার রাগ দেরিতে আসে এবং তাড়াতাড়ি রাগ প্রশমিত হয়ে যায় এবং সে ব্যক্তি নিকৃষ্ট, যে তাড়াতাড়ি রাগে এবং দেরিতে ঠাণ্ডা হয়। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা রাগ থেকে বাঁচো। কেননা সেটা আদম সন্তানের হৃদয়ে একটি জ্বলন্ত অঙ্গার। তোমরা কি দেখনি, মানুষ যখন রাগে, তখন শাহ-রগ ফুলে ওঠে এবং চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যায়। অতএব, তোমাদের কেউ যখন রাগ উপলব্ধি করবে, সে যেন চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে এবং ভূমির সাথে মিশে থাকে।
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী(রাঃ) বলেনঃ অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে, যে ঋণ পরিশোধ যথাসময়ে করে; কিন্তু সে যদি কাউকে ঋণ দিয়ে থাকে, তাহলে সেটা আদায়ের ব্যাপারে খুব কঠিন হয়ে পড়ে এবং খুব খারাপ ব্যবহার করে। এগুলোর মধ্যে একটি অভ্যাস অপর অভ্যাসটির ক্ষতিপূরক। আবার কোন লোক এমন আছে, যে ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে খুবই খারাপ; কিন্তু সে যদি কাউকে ঋণ দিয়ে থাকে, তাহলে নরম কথা বলে ঋণ আদায় করে। এসব অভ্যাস একটি অপরটির ক্ষতিপূরক। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কারো নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করলে ঠিক সময় মতো পরিশোধ করে; আর সে যদি কারো নিকট পাওনা থাকে, তাহলে নরম কথা বলে তার ঐ পাওনা আদায় করে। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বনিকৃষ্ট, যে ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে খারাপ এবং নিজের পাওনা আদায়ের ব্যাপারে কঠিন ও কটুভাষী হয়। ততক্ষণে সূর্য খেজুরের ডাল এবং দেয়ালের কিনারায় পৌঁছল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সাবধান! সময় চলে গিয়েছে। তার মোকাবিলায় এতটুকু পরিমাণ দুনিয়াবী জীবন বাকি আছে, যতটুকু এ দিনের ক্ষুদ্রাংশ বাকি আছে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيبًا بَعْدَ الْعَصْرِ فَلَمْ يَدَعْ شَيْئًا يَكُونُ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا ذَكَرَهُ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ وَكَانَ فِيمَا قَالَ: «إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَنَاظِرٌ كَيْفَ تَعْمَلُونَ أَلَا فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ» وَذَكَرَ: «إِنَّ لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءً يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقَدْرِ غَدْرَتِهِ فِي الدُّنْيَا وَلَا غَدْرَ أَكْبَرُ مِنْ غَدْرِ أَمِيرِ الْعَامَّةِ يُغْرَزُ لِوَاؤُهُ عِنْدَ اسْتِهِ» . قَالَ: «وَلَا يَمْنَعْنَّ أَحَدًا مِنْكُمْ هَيْبَةُ النَّاسِ أَنْ يَقُولَ بِحَقٍّ إِذَا عَلِمَهُ» وَفِي رِوَايَةٍ: «إِنْ رَأَى مُنْكَرًا أَنْ يُغَيِّرَهُ» فَبَكَى أَبُو سَعِيدٍ وَقَالَ: قَدْ رَأَيْنَاهُ فَمَنَعَتْنَا هَيْبَةُ النَّاسِ أَنْ نَتَكَلَّمَ فِيهِ. ثُمَّ قَالَ: «أَلَا إِنَّ بَنِي آدَمَ خُلِقُوا عَلَى طَبَقَاتٍ شَتَّى فَمنهمْ مَن يولَدُ مُؤمنا وَيحيى مُؤْمِنًا وَيَمُوتُ مُؤْمِنًا وَمِنْهُمْ مَنْ يُولَدُ كَافِرًا وَيحيى كَافِرًا وَيَمُوتُ كَافِرًا وَمِنْهُمْ مَنْ يُولَدُ مُؤْمِنًا وَيحيى مُؤْمِنًا وَيَمُوتُ كَافِرًا وَمِنْهُمْ مَنْ يُولَدُ كَافِرًا وَيحيى كَافِرًا وَيَمُوتُ مُؤْمِنًا» قَالَ: وَذَكَرَ الْغَضَبَ «فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ سَرِيعَ الْغَضَبِ سَرِيعَ الْفَيْءِ فَإِحْدَاهُمَا بِالْأُخْرَى وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ بَطِيءَ الْغَضَبِ بَطِيءَ الْفَيْءِ فَإِحْدَاهُمَا بِالْأُخْرَى وَخِيَارُكُمْ مَنْ يَكُونُ بَطِيءَ الْغَضَبِ سَرِيعَ الْفَيْءِ وَشِرَارُكُمْ مَنْ يَكُونُ سَرِيعَ الْغَضَبِ بَطِيءَ الْفَيْءِ» . قَالَ: «اتَّقُوا الْغَضَبَ فَإِنَّهُ جَمْرَةٌ عَلَى قَلْبِ ابْنِ آدَمَ أَلَا تَرَوْنَ إِلَى انْتِفَاخِ أَوْدَاجِهِ؟ وَحُمْرَةِ عَيْنَيْهِ؟ فَمَنْ أَحَسَّ بِشَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ فَلْيَضْطَجِعْ وَلْيَتَلَبَّدْ بِالْأَرْضِ» قَالَ: وَذَكَرَ الدَّيْنَ فَقَالَ: «مِنْكُمْ مَنْ يَكُونُ حَسَنَ الْقَضَاءِ وَإِذَا كَانَ لَهُ أَفْحَشَ فِي الطَّلَبِ فإحداهُما بِالْأُخْرَى وَمِنْهُم مَن يكونُ سيِّءَ الْقَضَاءِ وَإِنْ كَانَ لَهُ أَجْمَلَ فِي الطَّلَبِ فَإِحْدَاهُمَا بِالْأُخْرَى وَخِيَارُكُمْ مَنْ إِذَا كَانَ عَلَيْهِ الدَّيْنُ أَحْسَنَ الْقَضَاءِ وَإِنْ كَانَ لَهُ أَجْمَلَ فِي الطَّلَبِ وَشِرَارُكُمْ مَنْ إِذَا كَانَ عَلَيْهِ الدَّيْنُ أَسَاءَ الْقَضَاءَ وَإِنْ كَانَ لَهُ أَفْحَشَ فِي الطَّلَبِ» . حَتَّى إِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ عَلَى رؤوسِ النَّخْلِ وَأَطْرَافِ الْحِيطَانِ فَقَالَ: «أَمَا إِنَّهُ لَمْ يَبْقَ مِنَ الدُّنْيَا فِيمَا مَضَى مِنْهَا إِلَّا كَمَا بَقِيَ مِنْ يَوْمِكُمْ هَذَا فِيمَا مَضَى مِنْهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ الدُّنْيَا خَضِرَةٌ) অর্থাৎ- দুনিয়া অনেক চাকচিক্যময় আর প্রমোদের জায়গা। এর ভোগ্য বস্তুগুলো অত্যন্ত মজাদার ও চমৎকার।
হাদীসে الدُّنْيَا শব্দের বিশেষণ হিসেবে خَضِرَةٌ আর حُلْوَةٌ ব্যবহার করার কারণ হলো ‘আরবের লোকেরা সুখকর ও পছন্দনীয় বস্তুর ক্ষেত্রে উক্ত শব্দদ্বয় ব্যবহার করে তার মাধুর্যতা প্রকাশ করে থাকেন। সে দিক থেকে এখানেও তার প্রয়োগ ঘটেছে।
(فَاتَّقُوا الدُّنْيَا) অর্থাৎ- জীবন ধারণের তাগিদে আর ধর্মীয় কারণে যতটুকু প্রয়োজন তাতেই সীমাবদ্ধ থাকা। অতিরিক্ততা বর্জনই হলো আসল উদ্দেশ্য।
(وَاتَّقُوا النِّسَاءَ) অর্থাৎ- নারীদের চক্রান্ত, ছলনা আর কুটবুদ্ধি থেকে সতর্ক থাক।
وَلَا غَدْرَةَ أَعْظَمَ مِنْ غَدْرَةِ إِمَامٍ عَامَّةٍ ‘আল্লামা তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) এ ধরনের ইমামের ব্যাপারে বলেনঃ এখানে উদ্দেশ্য হলো ঐ ব্যক্তি যিনি কোনরূপ চক্রান্ত বা ছলচাতুরীর মদদ ছাড়াই মুসলিম অধ্যূষিত এলাকায় জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন এবং জনগণের একান্ত আন্তরিকতায় বিভিন্ন সময়ে সাহায্যপ্রাপ্ত হন। এমন ব্যক্তি যখন জনগণের সাথে প্রতারণা করেন তখন এর চাইতে জঘন্যতম ও ক্ষতিকর প্রতারণা আর কিছুই হতে পারে না। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২১৯১; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪৬-[১০] আবুল বাখতারী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের মধ্যে একজনের থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ ধ্বংস হবে না তার মধ্যে পাপের পরিমাণ বেশি না হওয়া পর্যন্ত। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي
الْبَخْتَرِيِّ عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لن يهْلك النَّاس حَتَّى يعذروا فِي أنفسهم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (لَنْ يَّهْلِكَ النَّاسُ حَتّٰى يَعْذِرُوْا فِىْ أَنْفُسِهِمْ) উল্লেখিত হাদীসের তাফসীরে ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আবূ ‘উবায়দ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন,يعذروا শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যতক্ষণ না তাদের দোষ-ত্রুটি ও পাপাচার বৃদ্ধি পাবে। আবার বলা হয়েছে, হাদীসের অর্থ হলো ‘‘যতক্ষণ না তাদের কাছে সত্য প্রকাশ না করা এবং তার ওপর ‘আমল করতে না পারার কোন ওযর থাকবে।’’ তাই বিনা ওযরে সত্য প্রত্যাখ্যাত হলে আল্লাহর শাস্তি অবধারিত হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৩৩৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪৭-[১১] ’আদী ইবনু ’আদী আল কিন্দী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মুক্ত গোলাম আমাদের নিকট বর্ণনা করেন যে, আমার দাদাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’আলা কোন জাতিকে তাদের বিশেষ কোন লোকের পাপের কারণে শাস্তি প্রদান করবেন না, যতক্ষণ না ঐ জাতির অধিকাংশ লোক ঐ পাপের কথা জানতে পারবে যে, তাদের মধ্যে খারাপ কাজ করা হচ্ছে এবং তারা সেটা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিরোধ না করে। যখন তারা এরূপ করে, তখন আল্লাহ তা’আলা ঐ জাতির সকলকে ব্যাপকভাবে শাস্তি প্রদান করেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ এর সনদে ‘‘মাওলা’’র অজ্ঞতা থাকার কারণে য‘ঈফ। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৮৮। য‘ঈফুল জামি‘ ১৬৭৫, আহমাদ ১৭৭২০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩৭৮৮।
وَعَنْ عَدِيِّ
بْنِ عَدِيٍّ الْكِنْدِيِّ قَالَ: حَدَّثَنَا مَوْلًى لَنَا أَنَّهُ سَمِعَ جَدِّي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَا يُعَذِّبُ الْعَامَّةَ بِعَمَلِ الْخَاصَّةِ حَتَّى يَرَوُا الْمُنْكَرَ بَيْنَ ظَهْرَانِيهِمْ وَهُمْ قَادِرُونَ عَلَى أَنْ يُنْكِرُوهُ فَلَا يُنْكِرُوا فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَذَّبَ اللَّهُ العامَّةَ والخاصَّةَ» . رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪৮-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈল গোত্র যেখন পাপাচারে লিপ্ত হয়ে গেল, তখন তাদের ’আলিমগণ প্রথমত তাদেরকে সেটা থেকে নিষেধ করলেন। যখন তারা বিরত হলো না, তখন তারাও তাদের মাজলিসে বসতে লাগল এবং তাদের সাথে একত্রে খাদ্য খেতে ও মদ পান করতে লাগল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাদের কারো কারো অন্তর কারো কারো অন্তর দ্বারা কলুষিত করে দিলেন। তখন আল্লাহ তা’আলা দাঊদ (আ.) ও ’ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ.)-এর যবানিতে তাদের ওপর অভিসম্পাত করলেন। এ অভিসম্পাত তাদের পাপের কারণে ও সীমালঙ্ঘন করার কারণে হয়েছে।
রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালিশে হেলান দিয়ে শুয়েছিলেন। এ কথা বলে তিনি উঠে বসলেন এবং বললেনঃ ঐ পবিত্র সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা অত্যাচারী ও পাপীদের পাপকার্য থেকে নিষেধ করবে। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
অন্য বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! তোমরা তাদেরকে অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। অত্যাচারীদের হস্তদ্বয় ধরে ফেলবে, তাদেরকে সৎকাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করবে এবং সৎকাজের উপর স্থিতিশীল রাখবে। নতুবা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কারো কারো অন্তরকে কারো কারো অন্তরের সাথে মিলিয়ে দেবেন। তারপর বনী ইসরাঈলকে যেভাবে অভিসম্পাত করেছিলেন, সেভাবে তোমাদেরকেও অভিসম্পাত করবেন।
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, ‘‘ইবনু মাস্‘ঊদ’’-এর মাঝে তার বিচ্ছিন্নতার কারণে, আর তার ছেলের নাম আবূ ‘উবায়দাহ্। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১১০৫, হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৮৯, আহমাদ ৩৭১৩।
وَعَنْ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَمَّا وَقَعَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ فِي الْمَعَاصِي نَهَتْهُمْ عُلَمَاؤُهُمْ فَلَمْ يَنْتَهُوا فَجَالَسُوهُمْ فِي مَجَالِسِهِمْ وَآكَلُوهُمْ وَشَارَبُوهُمْ فَضَرَبَ اللَّهُ قُلُوبَ بَعْضِهِمْ بِبَعْضٍ فَلَعَنَهُمْ عَلَى لسانِ دَاوُد وَعِيسَى ابْن مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ» . قَالَ: فَجَلَسَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ: «لَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ حَتَّى تَأْطِرُوهُمْ أَطْرًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَفِي رِوَايَتِهِ قَالَ: «كَلَّا وَاللَّهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ وَلَتَأْخُذُنَّ عَلَى يَدَيِ الظَّالِمِ ولنأطرنه على الْحق أطرا ولنقصرنه عَلَى الْحَقِّ قَصْرًا أَوْ لَيَضْرِبَنَّ اللَّهُ بِقُلُوبِ بَعْضِكُمْ عَلَى بَعْضٍ ثُمَّ لَيَلْعَنَنَّكُمْ كَمَا لَعَنَهُمْ»
ব্যাখ্যাঃ (فَضَرَبَ اللهُ قُلُوبَ بَعْضِهِمْ بِبَعْضٍ) ‘আল্লামা ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে بِبَعْضٍ শব্দের শুরুর "ب" হরফটি কারণ বর্ণনা করার অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কাজেই এর অর্থ হলো, অন্যায়কারী ব্যক্তির সহচার্যে থাকার কারণে তা দুষ্কৃতির দ্বারা একজন সৎ ব্যক্তির অন্তরকে আল্লাহ মলিন করে দিয়েছেন। এক কথায় পাপী ব্যাক্তির সহচার্যে সৎলোকের অন্তর কলুষিত হয়। এভাবে তাদের সকলের অন্তর সঠিক ও কল্যাণকর বিষয় গ্রহণ করার ব্যাপারে কঠোর ও নির্দয় হয়েছিল। এটি ছিল বানী ইসরাঈলের ওপর আল্লাহর বিশেষ ধরনের অভিসম্পাত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৩২৮; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ৩০৪৭; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৪৯-[১৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি বহু লোককে দেখেছি যে, তাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরীল! এরা কারা? জিবরীল (আ.) বললেনঃ এরা আপনার উম্মাতের মধ্যে বক্তাগণ, যারা লোকেদেরকে ভালো কাজের আদেশ করত; কিন্তু নিজেদেরকে ভুলে যেত। অর্থাৎ- নিজেরা সৎকাজ করত না। (শারহুস্ সুন্নাহ্ ও বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমান’’)[1]
ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ)-এর অপর এক বর্ণনায় আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে এমন সব খত্বীব বা বক্তা হবে, যারা এমন সব কথা বলবে, যা তারা নিজেরা কার্যকর করবে না। তারা আল্লাহ তা’আলার কুরআন পাঠ করবে; কিন্তু সে মতো ’আমল করত না।
وَعَنْ
أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي رِجَالًا تُقْرَضُ شِفَاهُهُمْ بِمَقَارِيضَ مِنْ نَارٍ قُلْتُ: مَنْ هؤلاءِ يَا جبريلُ؟ قَالَ: هؤلاءِ خُطباءُ أُمَّتِكَ يَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبَرِّ وَيَنْسَوْنَ أَنْفُسَهُمْ «. رَوَاهُ فِي» شرح السّنة «وَالْبَيْهَقِيّ فِي» شعب الإِيمان وَفِي رِوَايَتِهِ قَالَ: «خُطَبَاءُ مِنْ أُمَّتِكَ الَّذِينَ يقولونَ مَا لَا يفعلونَ ويقرؤونَ كتابَ اللَّهِ وَلَا يعملونَ»
পরিচ্ছেদঃ ২২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভালো কাজের আদেশ
৫১৫০-[১৪] ’আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মূসা (আ.)-এর কওমের ওপর আকাশ থেকে রুটি ও মাংসের থালা অবতীর্ণ করা হয়েছিল এবং তাদেরকে আদেশ করা হয়েছিল আমানাতে খিয়ানাত না করার। অর্থাৎ- প্রয়োজনের অধিক নেবে না ও অন্যের অংশেও হাত দেবে না এবং আগামীকালের জন্য সঞ্চয় করে রাখবে না। কিন্তু তারা খিয়ানাত করল ও সঞ্চয়ও করল এবং অন্য দিনের জন্য কিছু খাবার রেখেও দিলো। এজন্য আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক তাদের আকৃতি-অবয়ব পরিবর্তন করে বানর ও শূকর বানিয়ে দেয়া হলো। (তিরমিযী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ এর সনদে ‘‘কতাদাহ্’’ নামক বর্ণনাকারীগণ একজন প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস ব্যক্তি। আর সে ‘‘আন’’ দ্বারা হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ১৬৫১।
وَعَنْ عَمَّارِ
بْنِ يَاسِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أُنْزِلَتِ الْمَائِدَةُ مِنَ السَّمَاءِ خُبْزًا وَلَحْمًا وَأُمِرُوا أَنْ لَا يَخُونُوا وَلَا يَدَّخِرُوا لِغَدٍ فَخَانُوا وَادَّخَرُوا وَرَفَعُوا لغَدٍ فمُسِخوا قَردةً وخَنازيرَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (أُنْزِلَتِ الْمَائِدَةُ مِنَ السَّمَاءِ) ‘আল্লামা রাগিব আল আসবাহানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ الْمَائِدَةُ হলো এক ধরনের প্রশস্ত প্লেট যাতে বিভিন্ন প্রকারের খাবার থাকে।
ইমাম ইবনু কাসীর (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীর ইবনু কাসীর’-এ উল্লেখ করেছেন যে, ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ.)-এর যুগে বানী ইসরাঈলের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে এ খাবার অবতীর্ণ হত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ৩০৬১; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)