পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে
৪৮৮৫-[২] আবূ হুরায়রা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদের সাথে কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তা বলছেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, (এ কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তার মধ্যেও) আমি সত্য কথাই বলছি। (তিরমিযী)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ تُدَاعِبُنَا. قَالَ: «إِنِّي لَا أَقُولُ إِلَّا حَقًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّكَ تُدَاعِبُنَا) الدعابة মাসদার থেকে تُدَاعِبُنَا শব্দটি গঠিত। অর্থাৎ আপনি আমাদের সাথে কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তা বলছেন? এ প্রসঙ্গে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক বৃদ্ধা মহিলাকে বলেছিলেন, لَا تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَجُوزٌ অর্থাৎ ‘জান্নাতে কোন বৃদ্ধা মহিলা প্রবেশ করবে না।’ (হাদীসটি হাসান, গয়াতুল মারাম ৩৭৫নং)
হাদীসটির অর্থ হলো জান্নাতে প্রবেশ করার সময় কোন ব্যক্তি বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা থাকবে না। বাহ্যিকভাবে মনে হচ্ছে যেন বৃদ্ধা জান্নাতে যেতে পারবে না। এটাই ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কৌতুক। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯০)
(إِنِّي لَا أَقُولُ إِلَّا حَقًا) অর্থাৎ আমি ন্যায় ও সত্য কথা বলি। কথা ও কাজে পদস্খলন থেকে আমাকে রক্ষা করার কারণে। আর তোমাদেরকে রক্ষা না করার কারণে তোমাদের কেউ এই সীমাবদ্ধতার উপর ক্ষমতাবান নও। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯০)
হাদীসটির বাস্তবিক প্রয়োগ : ন্যায়ের উপর অটল অবিচল থেকে কৌতুক করা যায়। কিন্তু কোনটা ন্যায় যার উপর অটল থেকে কৌতুক করা বৈধ হবে, এরূপ বাছ-বিচার করার মতো জ্ঞানী ব্যক্তি খুবই কম আছে। তাই ঢালাওভাবে কোন বাছ-বিচার না করে শারী‘আতকে অবমূল্যায়ন করে যারা ঠাট্টা ও কৌতুক করেন, তারা নিঃসন্দেহে অপরাধ করেন। এ অপরাধ কখনো কুফরীর পর্যায়ে পৌঁছে। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে
৪৮৮৬-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সওয়ারী চাইল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমার সওয়ারীর জন্য উষ্ট্রীর বাচ্চা দান করব। তখন লোকটি বলল, আমি উষ্ট্রীর বাচ্চা দিয়ে কি করব? অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উট তো উষ্ট্রী-ই প্রসব করে। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أنسٍ أَنَّ رَجُلًا اسْتَحْمَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِنِّي حَامِلُكَ عَلَى وَلَدِ نَاقَةٍ؟» فَقَالَ: مَا أَصْنَعُ بِوَلَدِ النَّاقَةِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَهَلْ تَلِدُ الْإِبِلُ إِلَّا النُّوقُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (مَا أَصْنَعُ بِوَلَدِ النَّاقَةِ؟) মোটা বুদ্ধির সাধারণ মানুষ উটের বাচ্চা বলতে ছোট উট বুঝে, যার উপর আরোহণ করা যায় না। মূলত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা বোঝাননি। তিনি একটি আরোহণযোগ্য পরিণত উটের কথা বুঝিয়েছেন। তবে লোকটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অর্থ বুঝতে ভুল করেছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৯০)
(هَلْ تَلِدُ الْإِبِلُ إِلَّا النُّوقُ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাকে সওয়ারীর জন্য একটি উটের বাচ্চা দিব। তখন লোকটি একটু অসন্তুষ্ট হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বুঝিয়ে দিলেন যে, উট বড় হয়ে গেলেও তো উটেরই বাচ্চা। বাচ্চা বলতে যে ছোট উটই উদ্দেশ্য হবে এমন নয়। বড় উটও হতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে সে সত্য কথাই বলেছেন, সেটা তিনি বড় উট ও ছোট উট দ্বারা বুঝিয়ে ছিলেন।
‘আল্লামা বায়জূরী (রহিমাহুল্লাহ) ‘শারহুশ শামায়িল’ গ্রন্থে বলেনঃ এর অর্থ হলো যদি তুমি আমার কথার অর্থ চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলতে, তবে এরূপ কথা বলতে পারতে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথায় ইঙ্গিত আছে যে, যে ব্যক্তি কোন কথা শুনবে তার উচিত হলো ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে উত্তর দেয়া। শুনেই তাড়াহুড়া না করে উত্তর দেয়া উচিত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৯০)
হাদীসটির বাস্তবিক শিক্ষা : আজকে ইন্টারনেটের যুগে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কিছু বক্তার বক্তব্যকে ছোট করে অংশ বিশেষ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আর সাধারণ জনগণ না বুঝেই, আগে-পিছে, না শুনেই এক-একটা মন্তব্য করে বসে। কেউ কাফির পর্যন্ত বলে গালি-গালাজ করে বসে। আবার কেউ ‘আলিমদের ব্যঙ্গ চিত্র তৈরি করে মন্তব্য করছে। যেগুলো কাবীরাহ্ গুনাহের শামিল। অথচ যদি মন্তব্যকারী বক্তার কথা সম্পূর্ণ শুনে চিন্তা-ভাবনা করত তবে এরূপ মন্তব্য করা সম্ভব ছিল না। (সম্পাদক)
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে
৪৮৮৭-[৪] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ হে দু’ কর্ণধারী! (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «يَا ذَا الْأُذُنَيْنِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (يَا ذَا الْأُذُنَيْنِ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাস (রাঃ)-কে সুন্দরভাবে মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য উৎসাহিত ও সতর্ক সাবধান করেছেন। কারণ কানের কাজ হলো মনোযোগ দিয়ে শোনা। আল্লাহ যাকে দু’টি কান দিয়েছেন, আর সে মনোযোগ দিয়ে না শুনে অন্যমনষ্ক থাকে তার কোন ওযর-আপত্তি নেই। এটাও বলা হয়েছে যে, এ বাক্যটির অর্থ হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কৌতুক করে আনাস (রাঃ)-কে কথাটি বলেছিলেন। এটা ছিল তার কোমল চরিত্রের নমুনা। নিহায়াহ্ গ্রন্থকার এরূপ বলেছেন।
(তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯১, ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৯৪)
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে
৪৮৮৮-[৫] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধা মহিলাকে বললেনঃ কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করল, কি কারণে বৃদ্ধারা জান্নাতে যাবে না? অথচ এ বৃদ্ধা মহিলা কুরআন পাঠ করেছিল। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি কুরআনের এ আয়াত পাঠ করনি- إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنشاءً فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا অর্থাৎ- ’’তাদেরকে (অর্থাৎ ঐ হূরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি এক অভিনব সৃষ্টিতে’’- (সূরাহ্ আল ওয়াক্বি’আহ্ ৫৬ : ৩৫)। (রযীন; আর শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে মাসাবীহের উদ্ধৃতিতে বর্ণিত)[1]
وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِامْرَأَةٍ عَجُوزٍ: «إِنَّهُ لَا تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَجُوزٌ» فَقَالَتْ: وَمَا لَهُنَّ؟ وَكَانَتْ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ. فَقَالَ لَهَا: «أَمَا تَقْرَئِينَ الْقُرْآنَ؟ (إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنشاءً فجعلناهُنَّ أَبْكَارًا)
رَوَاهُ رَزِينٌ. وَفِي
شَرْحِ السُّنَّةِ» بِلَفْظِ «الْمَصَابِيحِ»
ব্যাখ্যাঃ (قَالَ لِامْرَأَةٍ عَجُوزٍ) বলা হয়েছে যে, এই বৃদ্ধা মহিলার নাম সফিয়্যাহ্ বিনতু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব। যিনি যুবায়র ইবনু ‘আও্ওয়াম (রাঃ)-এর মা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফুফু। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(لَا تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَجُوزٌ. فَقَالَتْ: وَمَا لَهُنَّ؟) অর্থাৎ বৃদ্ধা মহিলাগণ কোন কারণে জান্নাতে যেতে পারবে না অথচ তারা মু’মিনাদের অন্তর্ভুক্ত? অর্থাৎ তাদেরও তা সাধারণ যুবতী মু’মিনা নারীদের সাথে জান্নাতের যাওয়ার কথা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(فَقَالَ لَهَا:أَمَا تَقْرَئِينَ الْقُرْآنَ؟) অর্থাৎ বৃদ্ধা মহিলার প্রশ্নের উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করেন। তুমি কি কুরআন পড় না? পবিত্র কুরআন মাজীদেই তো তোমার প্রশ্নের উত্তর আছে। তা হলো মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَاءً فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا ‘‘তাদেরকে (অর্থাৎ ঐ হূরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি এক অভিনব সৃষ্টিতে’’- (সূরাহ্ আল ওয়াক্বি‘আহ্ ৫৬ : ৩৫)।
মহিলাদেরকে কিভাবে কুমারী করা হবে তার ২টি ব্যাখ্যা আছে। ১. যখনই তাদের স্বামীরা তাদের কাছে সহবাসের জন্য আসবে তখনই তাদেরকে কুমারী পাবে। আর ২. আল্লাহ পরকালে তাদেরকে নব যৌবন দান করবেন। যাতে তারা হূরদের চেয়ে সুন্দরী হয়ে যাবে। আর সে সকল মহিলার কয়েকজন স্বামী থাকবে তাদেরকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্রবান স্বামীকে বেছে নেয়ার জন্য স্বাধীনতা দেয়া হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে
৪৮৮৯-[৬] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’’যাহির ইবনু হারাম’’ নামক এক বনভূমির বাসিন্দা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য বনভূমি থেকে উপঢৌকন হিসেবে কিছু নিয়ে আসত। সে যখন চলে যাওয়ার মনস্থ করত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পথের সম্বল গোছগাছ করে দিতেন। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বললেনঃ যাহির আমাদের জন্য বনভূমির গোমস্তা, আর আমরা তার শহরের গোমস্তা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ভালোবাসতেন। সে ছিল দেখতে কুৎসিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে এলেন, তখন যাহির তার পণ্য সামগ্রী বিক্রি করছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন থেকে তাকে বুকে চেপে ধরলেন, ফলে সে তাঁকে দেখতে পেল না। যাহির বলল : কে? আমাকে ছেড়ে দাও। সে আড়চোখে লক্ষ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চিনতে পারল। তখন সে তার পিঠকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বুকের সাথে বারাকাতের জন্য মিলাতে চেষ্টা করে সফল হলো। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে লাগলেন, ’’গোলাম কিনবে কে?’’ যাহির এটা শুনে বলল : হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম, আপনি আমাকে অকেজো পাবেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিন্তু আল্লাহ তা’আলার নিকট তুমি অকেজো নও। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنْهُ أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ كَانَ اسْمه زَاهِر بن حرَام وَكَانَ يهدي النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْبَادِيَةِ فَيُجَهِّزُهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَخْرُجَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ زَاهِرًا بَادِيَتُنَا وَنَحْنُ حَاضِرُوهُ» . وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّهُ وَكَانَ دَمِيمًا فَأَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا وَهُوَ يَبِيعُ مَتَاعَهُ فَاحْتَضَنَهُ مِنْ خلفِه وَهُوَ لَا يُبصره. فَقَالَ: أَرْسِلْنِي مَنْ هَذَا؟ فَالْتَفَتَ فَعَرَفَ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم فَجعل لَا يألوا مَا أَلْزَقَ ظَهْرَهُ بِصَدْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ عَرَفَهُ وَجَعَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ يَشْتَرِي الْعَبْدَ؟» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِذًا وَاللَّهِ تَجِدُنِي كَاسِدًا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَكِنْ عِنْدَ اللَّهِ لَسْتَ بِكَاسِدٍ» رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
ব্যাখ্যাঃ (أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ) ‘‘আল ইস্তী‘আব’’ গ্রন্থে আছে যে, লোকটি হিজাযের অধিবাসী ছিল, তবে তিনি বনভূমিতে বাস করতেন। ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি বাদর যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(مِنَ الْبَادِيَةِ) অর্থাৎ বনভূমিতে যে সকল ফল-মূল, শাক-সবজি, সুগন্ধি ও অন্যান্য জিনিসপত্র পাওয়া যায় তা তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উপঢৌকন বা হাদিয়া দিতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(لَكِنْ عِنْدَ اللهِ لَسْتَ بِكَاسِدٍ) একজন মানুষ নিজেকে ছোট বা নগণ্য মনে করবে এটাই স্বাভাবিক। এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই সাহাবী নিজেকে কম দামের মানুষ মনে করেছিলেন, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সুসংবাদ ছিলেন যে, তুমি নিজেকে ছোট বা নগণ্য মনে করলেও আল্লাহর নিকট ঈমানদার হওয়ার কারণে তোমার মূল্য অনেক। তুমি তার নিকট অনেক সম্মানিত এক লোক। হাদীসটি আল্লাহর সৎ বান্দাদের মূল্য যে আল্লাহর নিকট কত দামী তার প্রমাণ বহন করে। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে
৪৮৯০-[৭] ’আওফ ইবনু মালিক আল আশজা’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তাবূকের যুদ্ধের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি একটি চামড়ার তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করছিলেন। আমি সালাম প্রদান করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, ভিতরে চলে এসো। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার সম্পূর্ণ শরীরটি নিয়েই ভিতরে আসব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, সম্পূর্ণটা নিয়েই। তখন আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। ’উসমান ইবনু আবূ ’আতিকাহ্ বলেনঃ ’আওফ ইবনু মালিক-এর ’’আমি সম্পূর্ণ প্রবেশ করব?’’ বলে কৌতুক করার কারণ ছিল, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাঁবুটি ছোট ছিল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ قَالَ: أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَهُوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ فَسَلَّمْتُ فَرَدَّ عَلَيَّ وَقَالَ: «ادْخُلْ» فَقُلْتُ: أَكُلِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «كُلُّكَ» فَدَخَلْتُ. قَالَ عُثْمَان بن أبي عَاتِكَة: إِنَّمَا قَالَ أَدْخُلُ كُلِّي مِنْ صِغَرِ الْقُبَّةِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (أَكُلِّي يَا رَسُولَ اللهِ؟) সাহাবী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলার কারণ হলো যে তাবুর মধ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন, সে তাবুটি ছোট ছিল। যেমনটি সামনে বর্ণনা আসছে। আর অত্র হাদীসটি হতে বুঝা যাচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেরূপ সাহাবীদের সাথে ঠাট্টা-কৌতুক করতেন, ঠিক তেমনি সাহাবীরাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ঠাট্টা-কৌতুক করতেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৯২)
তাবূক যুদ্ধ : ৯ম হিজরীর রজব মাসে তাবূক যুদ্ধ সংগঠিত হয়। মুতার যুদ্ধে রোমকদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযানের ১৩ মাস পর এটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযান। আর এটিই ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অংশগ্রহণে তার জীবনের শেষ যুদ্ধ।
এ অভিযানে মুসলিম বাহিনীতে সৈন্যসংখ্যা ছিল ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) এবং রোমকদের সৈন্য সংখ্যা ছিল ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার)-এর বেশী। যাদের মধ্যে লাখাম ও জুযামসহ অন্যান্য ‘আরব খ্রিষ্টান গোত্রসমূহ ছিল। যারা ইতিমধ্যে শামের (بلقاء) ‘বালকা’ পর্যন্ত এসে গিয়েছিল। গত বছরে মুতার যুদ্ধের শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবার জন্য তারা সরাসরি মদীনায় হামলার এই গোপন প্রস্তুতি নেয়। তাতে মদীনার সর্বত্র রোমক ভীতির (خَوْفُ غَسَّانَ) সঞ্চার হয়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতিরোধে রোমান সীমান্ত অভিমুখে যাত্রা করলে তারা সংবাদ পেয়ে ভীত হয়ে পালিয়ে যায়। রমাযান মাসে মুসলিম বাহিনী বিনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে মদীনায় ফিরে আসে। এ অভিযানকালে সূরাহ্ তাওবার অনেকগুলো আয়াত নাযিল হয়। পঞ্চাশ দিনের এ দীর্ঘ সফরে ৩০ দিন যাতায়াতে এবং ২০ দিন তাবূকে অবস্থানে ব্যয়িত হয়।ৎ
(ইবনু হিশাম ২/৫১৫-১৬, যাদুল মা‘আদ ৩/৪৬১, আর্ রা্হীক ৪২০, সীরাতুর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৮৩ পৃঃ)
এ যুদ্ধে সাহাবীগণ প্রচুর পরিমাণে দান করেন। এ যুদ্ধের জন্য আবূ বকর (রাঃ) তার সমস্ত সম্পদ এনে পেশ করেন এবং ‘উমার ফারূক (রাঃ) তার অর্ধেক সম্পদ পেশ করেন। এ যুদ্ধ থেকে ফিরে (مسجد الضرار) ‘মসজিদে যিরার’ বা অনিষ্টকারী মসজিদকে ভেঙ্গে ফেলা হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে
৪৮৯১-[৮] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আবূ বকর(রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন, তখনই তিনি ’আয়িশাহ (রাঃ)-এর সুউচ্চ কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। যখন তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন, ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে চড় মারার অভিপ্রায়ে তাঁর হাত ধরে ফেললেন এবং বললেনঃ সাবধান! ভবিষ্যতে যেন তোমাকে কখনো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বরের চেয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে না শুনি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ)-কে থামাতে এবং শান্ত করতে চেষ্টা করতে লাগলেন। অতঃপর রাগান্বিতভাবেই আবূ বকর(রাঃ) বের হয়ে চলে গেলেন। যখন আবূ বকর চলে গেলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটার হাত থেকে তোমাকে কিভাবে বাঁচালাম দেখলে? রাবী বর্ণনা করেন যে, এ ঘটনার পর কয়েকদিন আবূ বকর(রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসেননি। অতঃপর একদিন তিনি উপস্থিত হয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন এবং ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও ’আয়িশাহ্ (রাঃ) উভয়েই পারস্পরিক সমঝোতার পরিবেশে রয়েছেন। তখন আবূ বকর(রাঃ) উভয়কে লক্ষ্য করে বললেনঃ যেভাবে তোমরা আমাকে তোমাদের যুদ্ধের অংশীদার করেছিলে, সেভাবে তোমাদের সন্ধি ও সমঝোতায়ও অংশীদার করো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা তা-ই করলাম। আমরা তা-ই করলাম। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن النعمانِ بن بشيرٍ قَالَ: اسْتَأْذَنَ أَبُو بَكْرٍ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ صَوْتَ عَائِشَةَ عَالِيًا فَلَمَّا دَخَلَ تَنَاوَلَهَا لِيَلْطِمَهَا وَقَالَ: لَا أَرَاكِ تَرْفَعِينَ صَوْتَكِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يحجزه وَأَبُو بَكْرٍ مُغْضَبًا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ خَرَجَ أَبُو بَكْرٍ: «كَيْفَ رَأَيْتِنِي أَنْقَذْتُكِ مِنَ الرَّجُلِ؟» . قَالَتْ: فَمَكَثَ أَبُو بَكْرٍ أَيَّامًا ثُمَّ اسْتَأْذَنَ فَوَجَدَهُمَا قَدِ اصْطَلَحَا فَقَالَ لَهُمَا: أَدْخِلَانِي فِي سِلْمِكُمَا كَمَا أَدْخَلْتُمَانِي فِي حَرْبِكُمَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ فَعَلْنَا قَدْ فَعَلْنَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ (كَيْفَ رَأَيْتِنِي أَنْقَذْتُكِ مِنَ الرَّجُلِ؟) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বাড়ীর ভিতর মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে শুনে তার পিতা ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শ্বশুর আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে তার মেয়েকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বেয়াদবির জন্য মারতে উদ্যত হলেন। তবে মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর প্রতি অত্যন্ত ভালোবাসা থাকার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার পিতার হাত থেকে রক্ষা করলেন তথা মারতে দিলেন না। মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর আচরণে ব্যথিত হয়ে আবূ বকর অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ‘আয়িশাকে কৌতুক করার ছলে উল্লেখিত উক্তিটি করেন। যার অর্থ হলো দেখলে তো লোকটার হাত থেকে তোমাকে কিভাবে বাঁচালাম।’
(مِنَ الرَّجُلِ) বলার কারণ : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমাকে লোকটির হাত থেকে রক্ষা করেছি, কিন্তু তোমাকে তোমার পিতার হাত থেকে রক্ষা করেছি বললেন না কেন? এর জবাবে বলা যায়, যদি আবূ বকর (রাঃ) পিতা হিসেবে তোমাকে মারতে চাইতেন, তাহলে পিতৃস্নেহে মারা সম্ভব হতো না। কেননা পিতৃস্নেহ ও সন্তানকে মারধর করা পরস্পর বিরোধী। বস্তুত তিনি একজন পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি হিসেবে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অন্যায় হচ্ছে দেখে সত্যি সত্যিই মারতে উদ্যত হয়েছিলেন। সুতরাং তোমার ওপর ক্রোধ ‘বাপ’ হিসেবে ছিল না, বরং ‘‘মর্দে মু’মিন’’ হিসেবে ছিল। তাই তিনি মারতে না পারায় রাগ করে চলে গেলেন। সেজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম مِنَ الرَّجُلِ ‘‘লোকটি থেকে’’ বলেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
হাদীসটির শিক্ষা ও বাস্তবিক প্রয়োগ : অত্র হাদীসটিতে সহীহ মুসলিম এর ৫২নং হাদীসের প্রয়োগ লক্ষণীয়। তা হলো مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِه، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِه، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِه، وَذٰلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কোন খারাপ কাজ (শারী‘আতবিরোধী কাজ) দেখবে তখন সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিরোধ করে, ‘সম্ভব না হলে মুখ দিয়ে.....। পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ একজন মহিলাকে তার স্বামীর সামনে যিনি শ্রেষ্ঠ রসূল তার পিতা যিনি নবী-রসূলদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ, তিনি মারার জন্য উদ্দ্যত হচ্ছেন। আমার সামাজিকতায় কি এটা ভাবা যায়? আমাদের সমাজে অনেক মেয়েই তার স্বামী বা স্বামীর পরিবারস্থ লোকেদের সাথে মন্দ আচরণ করে,’ ফলে পরস্পর আত্মীয়দের মধ্যে নানা প্রকার বিবাদের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু যদি মেয়ের পক্ষপাতিত্ব না করে যথোপযুক্ত শাসন করে, তাহলে সেই বিবাদ বা বিপদ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ঠাট্টা ও কৌতুক প্রসঙ্গে
৪৮৯২-[৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি তোমার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করো না, কৌতুক করো না এবং এমন ওয়া’দা করো না, যা রক্ষা করতে পারবে না। [তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি গরীব।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘লায়স ইবনু আবূ সুলায়ম’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪০১ পৃঃ।
-
[এ অধ্যায়ে তৃতীয় অনুচ্ছেদ নেই।]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تُمَارِ أَخَاكَ وَلَا تُمَازِحْهُ وَلَا تَعِدْهُ مَوْعِدًا فَتُخْلِفَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حديثٌ غَرِيب
وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلِ الثَّالِثِ
ব্যাখ্যাঃ (وَلَا تُمَازِحْهُ) এখানে কৌতুক দ্বারা নাজায়িয ও মনে কষ্টদায়ক কৌতুক করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে, যে কৌতুকে মানুষের মান-সম্মান নষ্ট হয়। জায়িয ও সত্য কৌতুক করা নিষেধ করা হয়নি। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৫; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
এ অধ্যায়ের শুরুতে যে শর্তগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী কৌতুক করা যাবে। অন্য কোন কৌতুক করা যাবে না।