পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৬৬-[১৭] শুরাইহ ইবনু হানী (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, যখন তিনি তাঁর গোত্রের প্রতিনিধি দলের সাথে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুনলেন যে, তাঁর গোত্র তাঁকে ’’আবুল হাকাম’’ (اَبُوْ الْحَكَمِ) উপনামে ডাকছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নিজের কাছে ডাকলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ তা’আলাই ’’হাকাম’’ এবং হুকুম তো তাঁরই ইখতিয়ারাধীন। তুমি কেন ’’আবুল হাকাম’’ উপনাম গ্রহণ করেছ। তিনি জবাবে বললেনঃ আমাদের সম্প্রদায়ের লোকেদের যখন কোন ব্যাপারে মতানৈক্য হয়, তখন তারা নিঃসন্দেহে আমার কাছে আসে এবং আমি তাদের মাঝে এমনভাবে ফায়সালা করি যে, তারা উভয় দলই সন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং আমার আদেশকে শিরোধার্য করে মেনে নেয়। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ কাজ খুব ভালো কাজ। তোমার কয়টি সন্তান আছে? জবাবে তিনি (হানী) বললেনঃ আমার তিনটি ছেলে আছে- ১. শুরাইহ, ২. মুসলিম, ৩. ’আবদুল্লাহ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কে? তিনি বললেনঃ ’’শুরাইহ’’। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ঠিক আছে, তোমার উপনাম আবূ শুরাইহ। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
عَن شُرَيْح بن هَانِئ عَن أبيهِ أَنَّهُ لَمَّا وَفَدَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ قَوْمِهِ سَمِعَهُمْ يُكَنُّونَهُ بِأَبِي الْحَكَمِ فَدَعَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَكَمُ فَلِمَ تُكَنَّى أَبَا الْحَكَمِ؟» قَالَ: إِنَّ قَوْمِي إِذَا اخْتَلَفُوا فِي شَيْءٍ أَتَوْنِي فَحَكَمْتُ بَيْنَهُمْ فَرَضِيَ كِلَا الْفَرِيقَيْنِ بِحُكْمِي. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَحْسَنَ هَذَا فَمَا لَكَ مِنَ الْوَلَدِ؟» قَالَ: لِي شُرَيْحٌ وَمُسْلِمٌ وَعَبْدُ اللَّهِ
قَالَ: «فَمَنْ أَكْبَرُهُمْ؟» قَالَ قُلْتُ: شُرَيْحٌ. قَالَ فَأَنْتَ أَبُو شُرَيْحٍ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ ‘আওনুল মা‘বূদে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে,
عن ابيه عن ابيه هانئ انه لما وفد إلى رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مع قومه سمعهم يكنونه بابى الحكم فدعاه رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فقال " ان الله هو الحكم واليه الحكم فلم تكنى ابا الحكم" فقال ان قومى اذا اختلفوا فى شيئ اتونى فحكمت بينهم فرضى كلا الفريقين فقال رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ "مااحسن هذا فمالك من الولد" قا لي شريح ومسلم وعبد الله قال ومن اكبرهم قلت شريح قال فأنت ابو شريح"
অর্থাৎ- তার পিতা হানি হতে বর্ণিত, তিনি যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তার সম্প্রদায়ের লোকেদের সঙ্গে আসলেন, তিনি তাদেরকে তাকে ‘আবুল হাকাম’ উপনামে আহবান করতে শ্রবণ করলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন, আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলাই হলেন الحكم (হাকাম) আর তার নিকটেই ফায়সালা الحكم (হাকাম), অতঃপর কেন? তোমাকে ابو الحكم (আবুল হাকাম) উপনামে ডাকা হয়। অতঃপর তিনি বললেন, নিশ্চয় আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন কোন বিষয়ে মতভেদ করেন। তখন তারা আমার কাছে আগমন করেন। অতঃপর আমি তাদের মাঝে সমাধান ও ফায়সালা প্রদান করি। অতঃপর উভয় দলের লোকেরা সন্তুষ্ট হয়ে যায়। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা কতই না সুন্দর! তোমার কি সন্তান রয়েছে? তখন তিনি বললেন আমার সন্তান রয়েছে শুরাইহ, মুসলিম ও ‘আবদুল্লাহ নামে (তিনজন)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তাদের মধ্যে বড় কে? আমি বললাম, শুরাইহ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, অতএব তুমি আবূ শুরাইহ। নাসায়ীতেও কিছু শাব্দিক পরিবর্তনসহ হাদীস রয়েছে।
শিক্ষা : ‘আবুল হাকাম’ কারো নাম রাখা যাবে না এবং বড় সন্তানের নামের সঙ্গে উপনাম হওয়াটা উচিত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৪৭; শারহুন নাসায়ী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৫৪০২)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৬৭-[১৮] মাসরূক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি ’উমার (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ’তুমি কে’? আমি বললাম, আমি আজদা’-এর পুত্র মাসরূক। ’উমার(রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ শয়তানের এক নাম আজদা’। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীস য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘মুজালিদ ইবনু সা‘ঈদ’’ নামের একজন য‘ঈফ বর্ণনাকারী আছে। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী বলেনঃ আমি তার হাদীস লিখি না, আমি তার হাদীস লিখি না, আমি তার হাদীসে সময় ব্যয় করি না। অন্যবার বলেন, সে মিথ্যুক। ইমাম যাহাবী বলেনঃ সে একজন য‘ঈফ বর্ণনাকারী। ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ঈন সহ অনেকে তাকে য‘ঈফ বলেছেন। বিস্তারিত দেখুন- তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ৫৭৮০।
وَعَن
مسروقٍ قَالَ: لَقِيتُ عُمَرَ فَقَالَ: مَنْ أَنْتَ؟ قُلْتُ: مَسْرُوقُ بْنُ الْأَجْدَعِ. قَالَ عُمَرُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْأَجْدَعُ شيطانٌ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وابنُ مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ ‘আওনুল মা‘বূদের মধ্যে মাসরূক বর্ণিত হাদীসে রয়েছে,
عَنْ مَسْرُوقٍ، قَالَ: لَقِيتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ؓ، فَقَالَ: مَنْ أَنْتَ؟ قُلْتُ مَسْرُوقُ بْنُ الْأَجْدَعِ، فَقَالَ عُمَرُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: "الْأَجْدُعُ: شَيْطَانٌ
অর্থাৎ- মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। অতঃপর তিনি বলেছেন। তুমি কে? আমি বললামঃ مسروق بن الاجدع (মাসরূক ইবনুল আজদা‘)। অতঃপর ‘উমার বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, الاجدع (আল আজদা‘) : শয়তান, অর্থাৎ শয়তানসমূহের একটি শয়তানের নাম।
শিক্ষা : الاجدع (আল আজদা‘) কারও নাম না রাখা, যেহেতু শয়তানের নামের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়।
(‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৪৯)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৬৮-[১৯] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা তোমাদের উত্তম নাম রাখবে। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে উল্লেখিত ‘‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ যাকারিয়্যা আবুদ্ দারদা ’’ থেকে হাদীসটি শোনেননি, কাজেই সনদে বিচ্ছিন্নতা হওয়ার কারণে হাদীসটি য‘ঈফ। দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ৫৪৬০।
وَعَنْ
أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ فَأَحْسِنُوا أسمائكم» رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ ‘আওনুল মা‘বূদের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ যাকারিয়্যা তিনি আবুদ্ দারদা হতে বর্ণনা করেন, আবুদ্ দারদা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন তোমাদের আহবান করা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতাদের নামে। অতএব তোমরা তোমাদের সুন্দর ও উত্তম নাম রাখ।
ত্ববারানীর বর্ণনায় রয়েছে,
فِىْ غَيْرِه أَوْ يُقَالُ تُدْعٰى طَائِفَةٌ بِأَسْمَاءِ الْآبَاءِ وَطَائِفَةٌ بِأَسْمَاءِ الْأُمَّهَاتِ (فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ) أَىْ أَسْمَاءَ أَوْلَادِكُمْ وَأَقَارِبِكُمْ وَخَدَمِكُمْ
অর্থাৎ একদলকে আহবান করা হবে পিতাদের নামে এক দলকে মাতাদের নামে। অতএব তোমরা তোমাদের (সন্তানদের, আত্মীয়দের, চাকর-চাকরাণীদের) সুন্দর ও উত্তম নাম রাখ।
শিক্ষা : আমাদের সবার উচিত কুরআন ও সহীহ হাদীসের সমর্থিত উত্তম ও সুন্দর নামগুলো রাখা। যে নামগুলো রাখতে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলো নাম না রাখা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৪০) [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৬৯-[২০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নাম ও উপনাম একই ব্যক্তির মধ্যে একত্র করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ- ’’মুহাম্মাদ’’ নাম রেখে তাঁরই উপনাম ’’আবুল কাসিম’’ রাখতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ نَهَى أَنْ يَجْمَعَ أَحَدٌ بَيْنَ اسْمه وكُنيتِه وَيُسمى أَبَا الْقَاسِم. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম এবং উপনাম একত্রে রাখতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। কারও জন্য একত্র রাখা বৈধ নয়। আর জাবির হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা আমার নাম রাখবে তখন তোমরা আমার উপনাম রাখবে না। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৪১)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭০-[২১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা আমার নামে নাম রাখবে, তখন আমার উপনামে উপনাম রাখবে না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি গরীব। আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার নামে নাম রাখবে, সে আমার উপনামে উপনাম রাখবে না। আর যে ব্যক্তি আমার উপনামে উপনাম রাখবে, সে আমার নামে নাম রাখবে না।
وَعَنْ
جَابِرٌ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: «إِذَا سَمَّيْتُمْ بِاسْمِي فَلَا تَكْتَنُوا بِكُنْيَتِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ. وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ قَالَ: «مَن تسمَّى باسمي فَلَا يَكْتَنِ بِكُنْيَتِي وَمَنْ تَكَنَّى بِكُنْيَتِي فَلَا يَتَسَمَّ باسمي»
ব্যাখ্যাঃ ‘আওনুল মা‘বূদের মধ্যে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَسَمَّوْا بِاسْمِي وَلَا تَكَنَّوْا بِكُنْيَتِي
অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার নামে নামকরণ করতে পার এবং আমার উপনামে ডাকিও না। এ প্রসঙ্গে পূর্বেও আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইমাম আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদি গ্রন্থে শাব্দিক কিছু পরিবর্তন সহকারে নিষেধ করা হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৫৭)
তুহফাতুল আহ্ওয়াযীতে রয়েছে, জাবির বর্ণিত হাদীসে এরূপ, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
إذا سميتم بِي فَلَا تَكَنَّوْا بِي
অর্থাৎ- যখন তোমরা আমার নামে নামকরণ করবে বা নাম রাখবে তখন তোমরা আমার উপনামে নামকরণ করবে না বা উপনামে ডাকবে না।
* উপনাম ও মূল নাম একত্রকরণ বৈধ হওয়ার দলীল এবং এটা কোন সময় বৈধ- এ ব্যাপারে আলোচনা উল্লেখ করা হলো,
عن محمد بن الحنفية قال قال علي ؓ الله قلت يا رسول الله ان ولد لى من بعدك ولد اسميه باسمك وأكنيه بكنيتك؟ قال نعم
অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবনু হানাফিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আলী বললেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আমার সন্তান হয় আপনার (মৃত্যুর পর) আমি কি তার নাম রাখতে পারি আপনার নামে এবং আমি কি আপনার উপনামে তার নাম রাখতে পারি বা তাকে আপনার উপনামে ডাকতে পারি? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, (উপনামে নাম রাখতে পার বা ডাকতে পার)। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৪২)
শিক্ষা : নিষেধাজ্ঞা সীমাবদ্ধ তার বেঁচে থাকা অবস্থায়, অতঃপর বৈধ হবে উভয়ের মাঝে একত্র করা তার মৃত্যুর পর- এ মত ব্যক্ত করেন ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)। অধিকাংশ ‘উলামার মত যেমন নাবাবীর আলোচনায় রয়েছে এবং ইমাম শাফি‘ঈ ও আহলুয্ যাহির বলেন, এ প্রসঙ্গে আবুল কাসিম কারো জন্য কখনও জায়িয নেই চাই তার নাম মুহাম্মাদ অথবা আহমাদ অথবা না হোক। আনাস -এর বাহ্যিক হাদীসের দৃষ্টিতে যা অধ্যায়ের মধ্যে রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭১-[২২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈকা মহিলা বলল : হে আল্লাহর রসূল! আমার একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। আমি তার নাম ’’মুহাম্মাদ’’ এবং তার কুনিয়াত ’’আবুল কাসিম’’ রেখেছি। অতঃপর আমার কাছে এ কথা ব্যক্ত করা হলো যে, আপনি এ নাম রাখা পছন্দ করেন না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কিসে আমার নাম হালাল করল, আর আমার কুনিয়াত হারাম করল? অথবা কিসে আমার উপনাম হারাম করল, আর নাম হালাল করল? [আবূ দাঊদ; আর ইমাম মুহয়িউইস্ সুন্নাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি গরীব[[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘মুহাম্মাদ ইবনু ‘ইমরান আল হাজাবী’’ নামের বর্ণনাকারী মুনকারুল হাদীস। এজন্য হাদীসটি য‘ঈফ। বিস্তারিত দেখুন- আর্ রওযুন্ নাযীর ৮০৮ নং হিদায়াতুর্ রুওয়াতি ইলা তাখরীজি আহাদীসিল মাসাবীহি ওয়াল মিশকাত ৪/৩৬২ পৃঃ।
وَعَنْ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ امْرَأَةً قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي وَلَدْتُ غُلَامًا فَسَمَّيْتُهُ مُحَمَّدًا وَكَنَّيْتُهُ أَبَا الْقَاسِمِ فَذُكِرَ لِي أَنَّكَ تَكْرَهُ ذَلِكَ. فَقَالَ: «مَا الَّذِي أَحَلَّ اسْمِي وَحرم كنيتي؟ أَو ماالذي حَرَّمَ كُنْيَتِي وَأَحَلَّ اسْمِي؟» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ. وَقَالَ محيي السّنة: غَرِيب
ব্যাখ্যাঃ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার নামে নাম রাখো আমার উপনামে নাম রেখ না।
عن عائشة رضي الله عنها قالت جاءت امرأة الى رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فقالت يا رسول الله انى قد ولدت غلاما فسميته محمدا و كنيته ابا القاسم فذكرلى انك تكره ذلك فقال "ما الذى احل اسمى وحرم كنيتى" أو " ما الذى حرم كنيتى واحل اسمى"
অর্থাৎ- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। জনৈকা মহিলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন, অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি একজন ছেলে জন্ম দিয়েছি, অতঃপর তার নাম রেখেছি মুহাম্মাদ এবং তার উপনাম রেখেছি আবুল কাসিম। অতঃপর আমার কাছে উল্লেখ করা হয়েছে আপনি তা অপছন্দ করেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কিসে আমার নাম হালাল করেছে এবং কিসে আমার উপনাম হারাম করেছে অথবা কিসে আমার উপনাম হারাম করেছে এবং কিসে আমার নাম হালাল করেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৬০)
তুহফাতুল আহ্ওয়াযীতে রয়েছে ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব হতে বর্ণিত হাদীস,
عن علي ابن أَبِىْ طالب انه قال يا رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ارأيت ان ولدلى بعدك ولد اسمه محمد أو اكنيه بكنيتك؟ قال نعم قال فكانت رخصة لي
অর্থাৎ ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার অভিমত কি? যদি আপনার (মৃত্যুর) পর আমার একটি ছেলে সন্তান হয় তাহলে কি তার নাম মুহাম্মাদ রাখতে পারব? আর আপনার উপনামে তাকে ডাকতে পারব বা আপনার উপনাম রাখতে পারব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ (পারবে)। রাবী বলেন, আমার জন্য অনুমতি পাওয়া গেল। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৪৩)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭২-[২৩] মুহাম্মাদ ইবনু হানাফিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! যদি আপনার ইন্তিকালের পর আমার কোন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে, তবে কি আমি আপনার নামে নাম ও আপনার উপনামে উপনাম রাখব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن مُحَمَّد
بن الحنفيَّةِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ وُلِدَ لِي بَعْدَكَ وَلَدٌ أُسَمِّيهِ بِاسْمِكَ وَأُكَنِّيهِ بِكُنْيَتِكَ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ তুহফাতুল আহ্ওয়াযীতে রয়েছে ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)-এর জন্য অনুমতি ছিল। অতঃপর জায়িয রয়েছে। একত্র করা সন্দেহ দূর হয়ে গেল। এ আলোচনা বহুবার হয়েছে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৪৩)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭৩-[২৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক প্রকার শাক তুলতাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ শাকের নামানুসারে আমার উপনাম রাখলেন। (তিরমিযী)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি এ বর্ণনা সূত্র ছাড়া অন্য কোন বর্ণনা সূত্রে বর্ণিত হয়নি। আর মাসাবীহ গ্রন্থকার এ হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘জাবির আল জু‘ফী’’ নামের বর্ণনাকারী; এ বর্ণনাকারী মাতরূক। এ হাদীসটির অন্য একটি সানাদ আছে যেটি এর চেয়ে ভালো। আর সেই সনদে একজন বর্ণনাকারী আছে যার নাম ‘‘শরীক ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল কাযী’’। সে একজন য‘ঈফ রাবী। দেখুন- আলবানী (রহিমাহুল্লাহ)-এর তাহক্বীককৃত হিদায়াতুর্ রুওয়াত ইলা তাখরীজি আহাদীসিল মাসাবীহি ওয়াল মিশকাত ৪/৩৬০ পৃঃ।
وَعَن أنس
قَالَ: كَنَّانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ بِبَقْلَةٍ كُنْتُ أَجْتَنِيهَا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ هَذَا الْوَجْه. وَفِي «المصابيح» صَححهُ
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭৪-[২৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুৎসিত নাম পরিবর্তন করে রাখতেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ كَانَ يُغَيِّرُ الِاسْم الْقَبِيح. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭৫-[২৬] বাশীর ইবনু মায়মূন (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর চাচা উসামাহ্ ইবনু আখদারী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একদল লোক এলো। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, তাকে ’’আসরাম’’ (গাছ কর্তনকারী বা কাঠুরিয়া) বলা হত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? লোকটি বলল : ’’আসরাম’’। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না; বরং তুমি ’’যুর’আহ্’’। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن بشير بن مَيْمُون عَن أُسَامَةَ بْنِ أَخْدَرِيٍّ أَنَّ رَجُلًا يُقَالُ لَهُ أصْرمُ كانَ فِي النَّفرِ الَّذِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا اسْمك؟» قَالَ: «بَلْ أَنْتَ زُرْعَةُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭৬-[২৭] ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আস, ’আযীয, ’আতালাহ্, শয়তান, হাকাম, গুরাব, হাবাব ও শিহাব ইত্যাদি নামগুলো পরিবর্তন করে রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, আমি সংক্ষিপ্ত করার জন্য এর বর্ণনাসূত্র পরিত্যাগ করেছি।[1]
وَقَالَ:
وَغَيَّرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْم الْعَاصِ وعزير وَعَتَلَةَ وَشَيْطَانٍ وَالْحَكَمِ وَغُرَابٍ وَحُبَابٍ وَشِهَابٍ وَقَالَ: تركت أسانيدها للاختصار
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দনীয় নাম পরিবর্তন করেছেন যেমন এক বর্ণনায় রয়েছে, এক ব্যক্তির নাম ছিল اسود (আসওয়াদ) অর্থ কালো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখলেন ابيض (আব্ইয়ায) যার অর্থ সাদা। যা বর্ণনা করেন ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ)।
এছাড়া আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় রয়েছে, এক ব্যক্তির নাম ছিল اصرم (আসরম), রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন زرعة (যুর্‘আহ্) আর صرم অর্থ কর্তন করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম العاص (‘আস) এর নাম عزيز (‘আযীয) ও شهاب، حباب، غراب، الحكم، شيطان، عتلة (শিহাব, হিবাব, গরাব, আল হাকাম, শয়তান, ‘আতালাহ্) নামগুলো পরিবর্তন করেন, এটা ছাড়া অনেক নাম পরিবর্তন করেছেন যা বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে।
আর তুহফাতুল আহ্ওয়াযীতে বর্ণিত হাদীসেও পরিবর্তনের কথা রয়েছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দনীয় নাম পরিবর্তন করতেন। ‘আওনুল মা‘বূদে পরিবর্তনের কথা উল্লেখ রয়েছে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭৭-[২৮] আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আবূ ’আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে অথবা আবূ ’আবদুল্লাহ(রাঃ) আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন যে, তুমি زَعَمُوْا শব্দটি সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কী বলতে শুনেছ? তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, زَعَمُوْا শব্দটি মানুষের নিকৃষ্ট বাহন (অর্থাৎ- এ শব্দটির ব্যবহার খারাপ)। (আবূ দাঊদ)[1]
ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আবূ ’আবদুল্লাহ হুযায়ফাহ্ -এর উপনাম।
وَعَن أبي
مسعودٍ الأنصاريِّ قَالَ لِأَبِي عَبْدِ اللَّهِ أَوْ قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ لِأَبِي مَسْعُودٍ: مَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي (زَعَمُوا)
قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «بِئْسَ مَطِيَّةُ الرَّجُلِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَقَالَ: إِنَّ أَبَا عَبْدِ اللَّهِ حُذَيْفَة
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭৮-[২৯] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এরূপ বলো না, ’’যা কিছু আল্লাহ চান এবং অমুক ব্যক্তি চায়’’; বরং তোমরা বলবে, ’’যা কিছু আল্লাহ চান’’ অতঃপর ’’অমুক ব্যক্তি চায়’’। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ
حُذَيْفَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا تَقُولُوا: مَا شَاءَ اللَّهُ وَشَاءَ فُلَانٌ وَلَكِنْ قُولُوا: مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ شَاءَ فلَان . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ অপছন্দনীয় নাম পরিবর্তন করা উচিত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ فُلَانٌ) ‘‘যা কিছু আল্লাহ চান এবং অমুক ব্যক্তি চায়’’ বলা যাবে না, এটাতে আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতা ও ব্যক্তির ক্ষমতা একই রূপ হয়ে যায়। আর এটা শির্কের পর্যায়ে পড়ে যায়। তাই এরূপ বলা যাবে না বরং ماشاء الله এর পরে واو হরফে আত্বফ রয়েছে তার পরিবর্তে ثم হরফে আত্বফ ব্যবহার করতে হবে। এটার ফলে মাখলূক ও খালিক-এর মাঝে দূরত্ব ও পার্থক্য উপলব্ধি করা যায়, এটার মাধ্যমে বিলম্ব বুঝা যায়। আল্লাহ তা‘আলা ও অন্যের মাঝে সাদৃশ্যপূর্ণ শির্ক হতে মুক্ত থাকা যায়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ فُلَانٌ) বলার পরিবর্তে (مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ فُلَانٌ) বলতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটাই সঠিক অন্যথায় শির্ক হবে। ইমাম আহমাদ, আবূ দাঊদ অনুরূপ বর্ণনা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সূরাহ্ আত্ তাকভীর-এ وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللهُ অর্থাৎ তোমরা চাইলে হবে না কোন কিছু, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা না চাইবেন’’- (সূরাহ্ আদ্ দাহর/ইনসান ৭৬ : ৩০)। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭৯-[৩০] অপর এক বর্ণনায় مُنْقَطِعْ হিসেবে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’যা কিছু আল্লাহ তা’আলা ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চান’’ বলবে না; বরং শুধু এতটুকু বলবে, ’’যা কিছু একমাত্র আল্লাহ তা’আলা চান’’। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَفِي رِوَايَةٍ
مُنْقَطِعًا قَالَ: لَا تَقُولُوا: مَا شَاءَ اللَّهُ وَشَاءَ مُحَمَّدٌ وَقُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ وحْدَه «. رَوَاهُ فِي» شرح السّنة
ব্যাখ্যাঃ (مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ مُحَمَّدٌ) আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে واو আত্বফ দ্বারা বর্ণনা করা যাবে না বরং ثم হরফে আত্বফ ‘আল্লাহ’ শব্দের পরে উল্লেখ করতে হবে তাহলে শির্ক হবে না অথবা ‘আল্লাহ’ শব্দের পরে وحده শব্দ উল্লেখ করতে হবে তাহলেও শির্ক হতে মুক্ত থাকা যাবে। যেমন (مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ مُحَمَّدٌ) বলা যাবে না বরং বলতে হবে مَا شَاءَ اللهُ وحْدَهٗ অথবা বলা যাবে (مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ شَاءَ مُحَمَّدٌ)। যদি কেউ বলে (مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ مُحَمَّدٌ) তা শির্কে জালী হবে অর্থাৎ স্পষ্ট শির্ক হবে। এ বর্ণনাটি শারহুস্ সুন্নাহ্-এর মধ্যে রয়েছে। অন্য রিওয়ায়াত অনুযায়ী ماشاء الله ثم شاء فلان বলা যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ) [সম্পাদক]
শিক্ষা : ماشاء الله وشاء فلان এবং مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ مُحَمَّدٌ বললে শির্ক হবে এবং ماشاء الله ثم شاء فلان أو محمد বললে শির্ক হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৮০-[৩১] উক্ত রাবী [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোন মুনাফিককে নেতা বলবে না। কেননা সে যখনই তোমাদের নেতা হয় বা তোমরা তাকে নেতা বলবে, তখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করলে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْهُ
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَقُولُوا لِلْمُنَافِقِ سَيِّدٌ فَإِنَّهُ إِنْ يَكُ سَيِّدًا فَقَدْ أَسْخَطْتُمْ رَبَّكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে মুনাফিককে سيد (সাইয়িদ) বলতে নিষেধ করা হয়েছে যে হাদীসটি হাদীস গ্রন্থ আবূ দাঊদে রয়েছে। এ হাদীসে মুনাফিককে سيد বলা যাবে না তাহলে বুঝা যায় مؤمن (মু’মিন)-কে সাইয়িদ বলা যাবে। আর এটা বিরোধী নয় যা বর্ণনা করেছে আহমাদ ও হাকিম ‘আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর হতে মারফু‘ হিসেবে। السيد দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকেই বুঝানো হয়েছে। যা মুসনাদ আহমাদে রয়েছে। আর যদি কেউ মুনাফিককে سيد বলে তাহলে সে যেন আল্লাহ তা‘আলাকে রাগান্বিত করল আর যে আল্লাহ তা‘আলাকে রাগান্বিত করল সে যেন বড় পাপ করল। আর এ হাদীসের ভাষ্য দ্বারা মুনাফিককে سيد বলা যাবে না। বললে আল্লাহ তা‘আলাকে রাগান্বিত করা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ) [সম্পাদক]
শিক্ষা ও মূলকথা : المولى ও السيد (আল মাওলা ও আস্ সাইয়িদ) উভয় শব্দটি আল্লাহ তা‘আলার জন্য প্রকৃত পক্ষ প্রযোজ্য, অন্যের জন্য রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। না করাটাই অনেক ভালো ও সঠিক। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। পরিচিতির জন্য অনেকে ব্যবহার করে থাকে জায়িয মনে করে। والله أعلم (আল্লাহ অধিক ভালো জানেন।)