পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭১২-[৬] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর বামপার্শ্বে বালিশে ভর দিয়ে বসতে দেখেছি। (তিরমিযী)[1]

عَن جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَّكِئًا عَلَى وِسَادَةٍ عَلَى يَسَارِهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

عن جابر بن سمرة قال: رايت النبي صلى الله عليه وسلم متكىا على وسادة على يساره. رواه الترمذي

ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বামপার্শ্বে ভর দিয়ে বসতেন। এভাবে বসা জায়িয করার জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বামপার্শ্বে বালিশে ভর দিয়ে দেখিয়েছেন। ইবনু মুলক বলেছেনঃ বামপার্শ্বে ভর দিয়ে বসা মানদূব। ফাতহুল বারীর প্রণেতা ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ বাম-ডান পার্শ্বে এভাবে হেলান দিয়ে বসা মুস্তাহাব। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭১৩-[৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে বসতেন, তখন ইহতিবা করে (হাঁটুদ্বয় খাড়া করে নিতম্ব জমিনে ঠেকিয়ে দু’ হাত দ্বারা দু’ পায়ের গোড়ালিকে জড়িয়ে ধরে) বসতেন। (রযীন)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا جَلَسَ فِي الْمَسْجِد احتبى بيدَيْهِ. رَوَاهُ رزين

وعن ابي سعيد الخدري قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا جلس في المسجد احتبى بيديه. رواه رزين

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭১৪-[৮] কয়লাহ্ বিনতু মাখরামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে কুরফুসা অবস্থায় বসে থাকতে দেখেছি। তিনি আরো বললেনঃ আমি যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুনয়-বিনয়ের চরম অবস্থায় দেখলাম, তখন ভয়-ভীতিতে আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن قيلة بنت مخرمَة أَنَّهَا رَأَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ وَهُوَ قَاعِدٌ الْقُرْفُصَاءَ. قَالَتْ: فَلَمَّا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَخَشِّعَ أُرْعِدْتُ مِنَ الْفَرَقِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن قيلة بنت مخرمة انها رات رسول الله صلى الله عليه وسلم في المسجد وهو قاعد القرفصاء. قالت: فلما رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم المتخشع ارعدت من الفرق. رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীস থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হলো সালাত শেষ করে হোক বা অন্য কোন প্রয়োজনে হোক মসজিদে বসার পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। ১. কুরফুসা পদ্ধতিতে বসা অর্থাৎ দু’ হাঁটু খাড়া করে পেটের সাথে মিলিয়ে দু’ হাত দ্বারা দু’ পায়ের নলা জড়িয়ে ধরে নিতম্ব মাটিতে রেখে বসা। ২. ইহতিবা অবস্থায় বসা ৩. তারাববু তথা হাঁটু খাড়া রেখে মাথা হাঁটুর মধ্যে ঝুকিয়ে নিতম্বের উপর বসা, ৪. সালাতের তাশাহহুদের মতো বসা। মসজিদে বসার বিভিন্ন পদ্ধতি থাকলেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় তাশাহ্হুদে বসার মতো বসতেন। কেননা এতে বিনয়ী হওয়ার ভাব প্রকাশ পায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭১৫-[৯] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে সূর্য ভালোভাবে উদয় না হওয়া পর্যন্ত নিজের স্থানেই চারজানু হয়ে বসে থাকতেন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ تَرَبَّعَ فِي مَجْلِسِهِ حَتَّى تطلع الشَّمْس حسناء. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن جابر بن سمرة قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا صلى الفجر تربع في مجلسه حتى تطلع الشمس حسناء. رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে সালাতের স্থানেই বসে থাকতেন, কতটুকু পরিমাণ সময় বসে থাকতেন- এ নিয়ে ‘উলামার মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। কেউ কেউ বলেছেন, প্রকাশ্যভাবে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। আবার কেউ বলেছেন, পরিপূর্ণভাবে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। ‘আল্লামা তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ প্রথমটি সঠিক। তখন এ বাক্যটির মর্মার্থ হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করার পর সালাতের স্থানেই বসে দু‘আ, তিলাওয়াত ও সাহাবীদের সাথে দীনের কথা বলতে থাকতেন। ভালোভাবে সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত। অতঃপর ইশরাকের সালাত আদায় করে মসজিদ হতে বের হতেন। ‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাববু বসার মতো বসেছিলেন সূর্য পরিষ্কারভাবে না উঠা পর্যন্ত সূর্য উদিত হওয়ার পর সূর্য হতে হলুদ রং দূর হয়ে গেলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জায়গা হতে উঠে যেতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭১৬-[১০] আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কোথাও যখন আরাম করতেন, তখন ডান পাঁজরে ভর দিয়ে ঘুমাতেন। আর যখন ভোর সংলগ্ন সময়ে কোথাও অবস্থান করতেন, তখন বাহু খাড়া করে হাতের তালুর উপর মাথা রেখে বিশ্রাম করতেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

وَعَنْ
أَبِي قَتَادَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا عَرَّسَ بِلَيْلٍ اضْطَجَعَ عَلَى شِقِّهِ الْأَيْمَنِ وَإِذَا عَرَّسَ قُبَيْلَ الصُّبْحِ نَصَبَ ذِرَاعَهُ وَوَضَعَ رَأْسَهُ عَلَى كَفِّهِ. رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ»

وعن ابي قتادة: ان النبي صلى الله عليه وسلم كان اذا عرس بليل اضطجع على شقه الايمن واذا عرس قبيل الصبح نصب ذراعه ووضع راسه على كفه. رواه في «شرح السنة»

ব্যাখ্যাঃ বিশ্রাম ও নিদ্রার জন্য মুসাফিরের শেষ রাতে অবস্থান করা, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়মনীতি ছিল। সফরের সময় কোথাও বিশ্রাম কিংবা ঘুমানোর জন্য অবস্থান করলে তখন দেখতেন রাত কি পরিমাণ আছে। যদি ভোর হতে দেরী থাকত, তখন তিনি ডান পাজরে কাত হয়ে ঘুমাতেন। মূলত এ পাজরে ঘুমানো ছিল সবসময়ের অভ্যাস। আর যদি ভোর হতে দেরী না থাকত, তখন হাতের কনুইকে মাটিতে ঠেস দিয়ে হাতের তালুর উপর মাথা রেখে ঘুমাতেন। মূলত এ অবস্থায় ঘুমালে যথাসময়ে জাগ্রত হওয়া যায়। ফলে ফজরের সালাত কাযা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কেননা পাজরে ঘুমালে গভীর নিদ্রায় ডুবে থাকার আশংকা কম থাকে। এজন্য ডান পাজরে শোয়াই সুন্নাহ্। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭১৭-[১১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর বংশধরদের কতিপয় ব্যক্তি হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিছানা এরূপ কাপড়ের ছিল, যেরূপ কাপড়ে তাঁকে কবরে রাখা হয়েছিল, আর মসজিদ তাঁর শিয়রের কাছেই ছিল। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ بَعْضِ
آلِ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَ: كَانَ فِرَاشُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوًا مِمَّا يُوضَعُ فِي قَبْرِهِ وَكَانَ الْمَسْجِدُ عِنْد رَأسه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن بعض ال ام سلمة قال: كان فراش رسول الله صلى الله عليه وسلم نحوا مما يوضع في قبره وكان المسجد عند راسه. رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন যাপন ছিল সাধারণ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো বিলাসীভাবে জীবন যাপন করা পছন্দ করতেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো এমন পোশাক পরিধান করতেন না যার মাধ্যমে মনের মাঝে অহংকার সৃষ্টি হয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাধারণ পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিধান করে জীবন যাপন করতেন। যেরূপ সাধারণ পোশাকে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭১৮-[১২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন, এভাবে শয়ন করা আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন না। (তিরমিযী)[1]

وَعَن
أبي هريرةَ قَالَ: رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مُضْطَجِعًا عَلَى بَطْنِهِ فَقَالَ: «إِنَّ هَذِهِ ضِجْعَةٌ لَا يُحِبُّهَا اللَّهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

وعن ابي هريرة قال: راى رسول الله صلى الله عليه وسلم رجلا مضطجعا على بطنه فقال: «ان هذه ضجعة لا يحبها الله» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের অর্থ হলো পেটের উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শয়ন করা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপুড় হয়ে শয়ন করে ও গভীর ঘুমে মগ্ন থাকার কারণে তাকে সম্বোধন করে বললেন, এ ধরনের শয়ন আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না। ইসলামী শারী‘আতে উপড় হয়ে শয়ন করা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ। ১. উপুড় হয়ে শয়ন করা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না। যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস বলেছেন, এভাবে উপুড় হয়ে শয়ন করাতে আল্লাহ রাগান্বিত হন। ২. উপুড় হয়ে শোয়া জাহান্নামীদের বৈশিষ্ট্য। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নিশ্চয় জাহান্নামীরা এভাবে শয়ন করে। ৩. উপুড় হয়ে শয়ন করলে নাকে-মুখে রক্ত এসে মৃত্যু হতে পারে। ৪. এটা শয়তান ও তার অনুসরীদের শোয়া। ৫. বুক ও মুখমণ্ডলে শরীরের মধ্যে মর্যাদাসম্পন্ন অঙ্গ। তাই সিজদা্ ব্যতীত অন্য কোন অবস্থায় তা নিম্নমুখী করা উচিত নয়। এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপুড় হয়ে শয়ন করতে নিষেধ করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭১৯-[১৩] ইয়া’ঈশ ইবনু ত্বিখফাহ্ ইবনু কায়স আল-গিফারী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি (ত্বিখফাহ্ ইবনু কায়স আল-গিফারী) আসহাবে সুফফাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি বলেন, আমি একদিন বুকের ব্যথার কারণে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি তাঁর পা দ্বারা নাড়া দিয়ে আমাকে বললেনঃ এরূপ শয়নে আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট হন। তখন আমি তাকিয়ে দেখলাম, তিনি স্বয়ং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ يَعِيشَ
بْنِ طِخْفَةَ بْنِ قَيْسٍ الْغِفَارِيِّ عَن أبيهِ - وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ الصُّفَّةِ - قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا مُضْطَجِعٌ مِنَ السَّحَرِ عَلَى بَطْنِي إِذَا رَجُلٌ يحركني بِرجلِهِ فَقَالَ: «هَذِهِ ضِجْعَةٌ يَبْغَضُهَا اللَّهُ» فَنَظَرْتُ فَإِذَا هُوَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

وعن يعيش بن طخفة بن قيس الغفاري عن ابيه - وكان من اصحاب الصفة - قال: بينما انا مضطجع من السحر على بطني اذا رجل يحركني برجله فقال: «هذه ضجعة يبغضها الله» فنظرت فاذا هو رسول الله صلى الله عليه وسلم. رواه ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যাঃ আহলে সুফফার পরিচয়, বলা হয় যে সকল গরিব সাহাবী মসজিদে নাবাবীর বারান্দায় অবস্থান করতেন তাদেরকে আহলে সুফফাহ্ বলে। তারা জ্ঞান অর্জনের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিল। দুনিয়ার প্রতি তাদের আসক্তি ছিল না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাদিয়া স্বরূপ যা আসতো তারা তাই আহার করত। এরা সংখ্যায় ৭০ বা তার কিছু বেশি।

(يحركني بِرجلِه) ইসলামী শারী‘আতের সংস্কৃতির প্রবর্তক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন শায়িত লোকটিকে পা দিয়ে নাড়াচাড়া করলেন। এরূপ করার রহস্য হলো :

ক. ত্বিখফাহ্  ছিলেন অসুস্থ। একদিন তার ভীষণ বুক ব্যথা হয়। ফলে তিনি মসজিদে নাবাবীতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েন। কারণ উপুড় হয়ে শয়ন করলে বুকে পেটে চাপ পড়লে কিছুটা আরামবোধ হয়। কিন্তু এরূপ শয়ন আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না, তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পা দিয়ে নাড়া দিলেন এবং উপুড় হয়ে না শোয়ার জন্য সতর্ক করলেন। এ মতটি অধিক গ্রহণযোগ্য।

খ. জাহিলী যুগে ‘আরবদের ধারণা ছিল কোন ব্যক্তিকে জীন-ভূত আসর করলে অথবা মৃগী রোগে আক্রান্ত হলে তাকে পা দিয়ে নাড়া দিলে সে ভালো হয়ে যেত। সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কারণেই তাকে পা দিয়ে নাড়া দিয়েছিলেন।

গ. হয়তো বা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটতে গিয়ে তার শরীরে পা লেগে গিয়েছিল।(মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২০-[১৪] ’আলী ইবনু শায়বান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে ঘরের ছাদে ঘুমাবে, আর তার উপর কোন আড়াল থাকবে না। অন্য এক বর্ণনায় আছে, যার উপর কোন পাথর অর্থাৎ- পাথরের প্রাচীর থাকবে না, তার উপর আল্লাহ তা’আলার কোন দায়-দায়িত্ব থাকে না। কেননা সে নিজেই নিজেকে বিপদে নিক্ষেপ করেছে। (আবূ দাঊদ)[1]

ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর مَعَالِمُ السُّنَنِ গ্রন্থে حِجَابٌ বা حِجَارٌ-এর স্থলে حِجًىْ উল্লেখিত হয়েছে।

وَعَن
عليِّ بن شَيبَان قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ بَاتَ عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ لَيْسَ عَلَيْهِ حِجَابٌ - وَفِي رِوَايَةٍ: حِجَارٌ - فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ «. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ. وَفِي» مَعَالِمِ السّنَن «للخطابي» حجى

وعن علي بن شيبان قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من بات على ظهر بيت ليس عليه حجاب - وفي رواية: حجار - فقد برىت منه الذمة «. رواه ابو داود. وفي» معالم السنن «للخطابي» حجى

ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী : (فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ) আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের নিরাপত্তা ও হিফাযাতের দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু বান্দা যদি নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় তখন আল্লাহ তা‘আলা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যান। এ উক্তির মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝিয়েছেন যে, যে স্থানে অসুবিধা বা মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন স্থানে তোমরা শয়ন করা থেকে বিরত থাকবে। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এরূপ ঘরের ছাদে ঘুমাবে আর তার উপর কোন আড়াল থাকবে না, সে যেন নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিল নিজের জানের নিরাপত্তাকে দূরে নিক্ষেপ করল। এ অবস্থায় নিচে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে তা আত্মহত্যারই নামান্তর। অথচ এটা হারাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২১-[১৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে এমন ছাদের উপর শয়ন করতে নিষেধ করেছেন, যেখানে পর্দার অন্তরাল না থাকে। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ
قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَنَامَ الرَّجُلُ عَلَى سطحٍ لَيْسَ بمحجورٍ عَلَيْهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن جابر قال: نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان ينام الرجل على سطح ليس بمحجور عليه. رواه الترمذي

ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাদের উপর শয়ন করতে নিষেধ করেছেন। চাই তা রাতে হোক বা দিনে হোক যে সমস্ত ছাদের বেষ্টন বা দেয়াল নেই। ছাদ হতে নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সতর্কতার জন্য সে সকল ছাদে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ সর্বদা মুসলিমগণ নিজের জানের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৭২১; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২২-[১৬] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখেই অভিশপ্ত হয়েছে, যে ব্যক্তি হালকার (পরিধির) মাঝখানে গিয়ে বসে। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن
حذيفةَ قَالَ: مَلْعُونٌ عَلَى لِسَانِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَعَدَ وَسْطَ الْحَلْقَةِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

وعن حذيفة قال: ملعون على لسان محمد صلى الله عليه وسلم من قعد وسط الحلقة. رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী : (وَسْطَ الْحَلْقَةِ) দ্বারা উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এর দ্বারা দু’টির মধ্যে যে কোন একটি হতে পারে।

ক. মানুষ যে স্থানে বৃত্তাকারে বসে আলোচনা করতে থাকে এমন মাজলিসের মধ্যস্থলে বসা, মাজলিসের ফাঁকা স্থানে না বসা।

খ. উক্ত পরিধির মাঝে এমনভাবে বসা যে, তার কারণে একে অপরের মুখ দেখতে পায় না। উভয় প্রকার বসাই দূষণীয় এবং আদাবে মাজলিসের পরিপন্থী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২৩-[১৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম মাজলিস তাই যা প্রশস্ত জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ
أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ الْمَجَالِسِ أَوْسَعُهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن ابي سعيد الخدري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «خير المجالس اوسعها» . رواه ابو داود

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২৪-[১৮] জাবির ইবনু সামুরাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সাহাবায়ে কিরাম বসেছিলেন। (এ সময়) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেনঃ কি হলো? তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখছি! (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن
جَابر بن سَمُرَة قَالَ: جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ جُلُوسٌ فَقَالَ: «مَا لِي أَرَاكُمْ عِزينَ؟» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن جابر بن سمرة قال: جاء رسول الله صلى الله عليه وسلم واصحابه جلوس فقال: «ما لي اراكم عزين؟» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (مَا لِي أَرَاكُمْ عِزينَ؟) কি হলো তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বসে থাকতে দেখছি। এর দ্বারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্দেশ্য করেছেন তোমরা এভাবে পৃথক পৃথক হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বসবে না। বরং তোমরা সুন্দরভাবে সারিবদ্ধ হয়ে বসবে। অথবা গোলাকার হয়ে বসবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুশৃঙ্খল বৈঠক হবে সর্বোত্তম বৈঠক। দলবদ্ধ হওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘‘তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ করো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’’ (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১০৩)

বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে বসা কাফিরদের বসার সাথে সাদৃশ্য রাখে। এই মর্মে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন : ‘‘অতএব, কাফিরদের কি হলো যে, তারা আপনার দিকে ছুটে আসছে ডান ও বাম দিক থেকে দলে দলে।’’ (সূরাহ্ আল মা‘আরিজ ৭০ : ৩৬-৩৭)

সুফ্ইয়ান (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, গোলাকার হয়ে বসা উত্তম। এলোমেলোভাবে বসার কারণে পরস্পরে মনোমালিন্য হতে পারে। যা ইসলামে অত্যন্ত ঘৃণিত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২৫-[১৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ছায়ায় বসে, পরে তার উপর হতে ছায়া চলে যায় এবং এ অবস্থায় তার শরীরের কিছু অংশ রোদে এবং কিছু অংশ ছায়ায় থাকে, তবে সে যেন সেখান থেকে উঠে চলে যায়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فِي الْفَيْء فقلص الظِّلُّ فَصَارَ بَعْضُهُ فِي الشَّمْسِ وَبَعْضُهُ فِي الظل فَليقمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «اذا كان احدكم في الفيء فقلص الظل فصار بعضه في الشمس وبعضه في الظل فليقم» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ডাক্তারগণ গবেষণা করে বের করেছেন, শরীরে কিছু অংশ রোদে আর কিছু অংশ ছায়ায় থাকলে, মানুষের দেহে ও মেজাজে যথেষ্ট ক্ষতি হতে পারে। এতে কুষ্ঠরোগ, চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া মানসিক দিক দিয়ে মেজাজ খিটখিটে ও চঞ্চল হয়ে পড়ে, ফলে কোন ভালো কাজের উদ্যম থাকে না তাই এরূপ স্থানে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২৬-[২০] শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে উক্ত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ছায়ায় বসে অতঃপর তার উপর হতে ছায়া চলে যায়, তবে সে যেন উঠে চলে যায়। কেননা এটা (কিছু অংশ ছায়ায় আর কিছু অংশ রোদে) শয়তানের বসার স্থান। মা’মার এ হাদীসটি মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।[1]

وَفِي «
شرح السّنة» عَنهُ. قَالَ: «وَإِذا كَانَ أَحَدُكُمْ فِي الْفَيْءِ فَقَلَصَ عَنْهُ فَلْيَقُمْ فَإِنَّهُ مَجْلِسُ الشَّيْطَانِ» . هَكَذَا رَوَاهُ مَعْمَرٌ مَوْقُوفًا

وفي « شرح السنة» عنه. قال: «واذا كان احدكم في الفيء فقلص عنه فليقم فانه مجلس الشيطان» . هكذا رواه معمر موقوفا

ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (فَلْيَقُمْ فَإِنَّهٗ مَجْلِسُ الشَّيْطَانِ) রৌদ্র ছায়ায় বসা থেকে সে যেন উঠে যায়। কেননা এটা শয়তানের মাজলিস, এর ব্যাখ্যা হলো :

ক. মূলত এরূপ রৌদ্র ছায়ায় মিলন মোহনায় শয়তান আসর জমায়। তাই এখানে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। খ. এরূপ স্থানে বসতে শয়তান মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। গ. রৌদ্র ছায়ায় বসলে মানুষের শরীরে প্রাকৃতিক প্রভাব পড়বে যাতে তার মারাত্মক ব্যাধি হতে পারে। ঘ. এরূপ স্থানে বসলে দেহে দু’টি রং বা বর্ণের প্রতিফলন ঘটে যা কেবল শয়তানের স্বভাব। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২৭-[২১] আবূ উসায়দ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ হতে বের হচ্ছিলেন, এ সময় রাস্তায় পুরুষগণ মহিলাদের সাথে মিশে চলছিল। এমতাবস্থায় তিনি শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের উদ্দেশে বললেনঃ তোমরা পুরুষদের পেছনে চলো। রাস্তার মধ্যখান দিয়ে চলা তোমাদের জন্য সমীচীন নয়। এ কথা শুনে মহিলারা প্রাচীর ঘেঁষে চলতে লাগল। এতে কখনো কখনো তাদের কাপড় প্রাচীরের সাথে আটকে যাচ্ছিল। (আবূ দাঊদ ও বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমানে)[1]

وَعَن أبي
أُسيد الأنصاريِّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ وَهُوَ خَارِجٌ مِنَ الْمَسْجِدِ فَاخْتَلَطَ الرجالُ مَعَ النِّسَاء فِي الطَّرِيق فَقَالَ النِّسَاء: «اسْتَأْخِرْنَ فَإِنَّهُ لَيْسَ لَكُنَّ أَنْ تُحْقِقْنَ الطَّرِيقَ عَلَيْكُنَّ بِحَافَاتِ الطَّرِيقِ» . فَكَانَتِ الْمَرْأَةُ تَلْصَقُ بِالْجِدَارِ حَتَّى إِنَّ ثَوْبَهَا لَيَتَعَلَّقُ بِالْجِدَارِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»

وعن ابي اسيد الانصاري انه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول وهو خارج من المسجد فاختلط الرجال مع النساء في الطريق فقال النساء: «استاخرن فانه ليس لكن ان تحققن الطريق عليكن بحافات الطريق» . فكانت المراة تلصق بالجدار حتى ان ثوبها ليتعلق بالجدار. رواه ابو داود والبيهقي في «شعب الايمان»

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, ইসলামী শারী‘আত অনুমতি দিয়েছে যে, মহিলারাও মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে পারবে। সর্বাবস্থায়ই নারী-পুরুষ মিলেমিশে রাস্তায় চলাফেরা করা হতে নিষেধ করা হয়েছে। মহিলাগণ পর্দা করে চলাফেরা করবে। পুরুষগণ আগে যাবে মহিলারা তাদের পিছনে, রাস্তার একপাশ দিয়ে যাবে। এতে তাদের মান-সম্মান রক্ষা পাবে, কখনো রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলবে না। এ হাদীস থেকে বুঝা যায় নারীগণ রাস্তার একপাশ দিয়ে হিজাবসহ শালীনতার সাথে চলবে। তাহলে সমাজে তাদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায় তারা হবে ঘৃণিত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ উসাইদ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২৮-[২২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে দু’জন মহিলার মাঝখানে হাঁটতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنِ
ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم نهى أنْ يمشيَ - يَعْنِي الرجلٌ - بَين المرأتينِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابن عمر: ان النبي صلى الله عليه وسلم نهى ان يمشي - يعني الرجل - بين المراتين. رواه ابو داود

হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা

৪৭২৯-[২৩] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হতাম, তখন শেষের দিকের খালি জায়গায় বসে পড়তাম। (আবূ দাঊদ)[1]

(গ্রন্থকার বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ)-এর হাদীসদ্বয় بَابِ الْقِيَامِ-এ বর্ণিত হয়েছে এবং أَسْمَاءِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاتِه অধ্যায়ে ’আলী (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস ইনশা-আল্লাহ বর্ণনা করব।)

وَعَن جابرِ
بن سمرةَ قَالَ: كُنَّا إِذَا أَتَيْنَا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَسَ أَحَدُنَا حَيْثُ يَنْتَهِي. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
وَذكر حَدِيثا عبد الله بن عَمْرٍو فِي «بَابِ الْقِيَامِ»
وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ عَلِيٍّ وَأَبِي هُرَيْرَةَ فِي «بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاتِهِ» إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى

وعن جابر بن سمرة قال: كنا اذا اتينا النبي صلى الله عليه وسلم جلس احدنا حيث ينتهي. رواه ابو داود وذكر حديثا عبد الله بن عمرو في «باب القيام» وسنذكر حديث علي وابي هريرة في «باب اسماء النبي صلى الله عليه وسلم وصفاته» ان شاء الله تعالى

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস থেকে বসার আদব, শিষ্টাচার প্রমাণিত হয় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (جَلَسَ أَحَدُنَا حَيْثُ يَنْتَهِي) এ বাক্যটির দু’টি অর্থ হতে পারে।

১. আমরা মাজলিসের সে স্থানে বসতাম, যেখানে সম্মুখ হতে লোকেদের বসা শেষ হয়েছে। ২. আমরা মাজলিসের প্রান্তসীমায় বসতাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে