পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৭৭-[১] কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের মধ্যে কি করমর্দনের রীতি প্রচলিত ছিল? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। (বুখারী)[1]
بَابُ الْمُصَافَحَةِ وَالْمُعَانَقَةِ
عَن قتادةَ قَالَ: قُلْتُ لِأَنَسٍ: أَكَانَتِ الْمُصَافَحَةُ فِي أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نعم. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ মুসাফাহ্ বলা হয়, بِهَا الْإِفْضَاءُ بِصَفْحَةِ الْيَدِ إِلَى صَفْحَةِ الْيَدِ হাতের তালুর সাথে হাতের তালু মিলানো। এ সংজ্ঞা প্রথম ব্যক্ত করেছেন ইয়ামানবাসীরা।
ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সংক্ষিপ্ত নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলেন, التصفح বলা হয়, تصفيق কে। আর তা হলো হাতের তালুর সাথে হাতের তালু মারা। এ থেকে مصافحة এর উৎপত্তি। তিনি মুসাফাহার সংজ্ঞায় বলেন, هِيَ إِلْصَاقِ صفحة صَفْحِ الْكَفِّ بِالْكَفِّ এটি মুফাতালাহ্ বাবের শব্দ, অর্থাৎ হাতের তালুর সাথে হাতের তালু মিলানো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সাক্ষাতের সময় মুসাফাহ্ করা মুস্তাহাব। তবে ‘আসরের পর এবং ফজরের পর মানুষের যে মুসাফাহ্ প্রচলন আছে শারী‘আতে এমন কোন নিয়ম-নীতি নেই। তবে এভাবে মুসাফাহ্ দোষ নেই। কারণ মুসাফাহার মূল হলো সুন্নাত। তবে কোন সময় বেশি মুসাফাহ্ করা বা সব সময়ে অধিক মুসাফাহ্ করা শারী‘আহ্ বহির্ভূত কাজ নয়।
হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর বিপরীত মত পোষণ করেন। তিনি বলেনঃ কোন বিদ ব্যক্তির জন্য কোন সময়কে নির্দিষ্ট করাকে মাকরূহ বলেছেন। আবার কেউ বলেন, এমন দলীল শারী‘আতে নেই। ‘আল্লামা কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সে কারণে আমাদের কোন ‘আলিম এ ধরনের ‘আমলকে মাকরূহ এবং নিন্দনীয় বিদ্‘আত বলেন।
তুহফাতুল আহ্ওয়াযী গ্রন্থকার হাফিয ও কারীর মতকে সমর্থন করেন। ‘আবদুস্ সালাম তাঁর القواعد গ্রন্থে বলেন, মুসাফাহার জন্য কোন সময়কে নির্দিষ্ট করা মুবাহ-বিদ্‘আত। অনুরূপভাবে কারী ‘আল্লামা বাশীরুদ্দীন কান্নুজী দুই ঈদের পরে মুসাফাহ্ ও মু‘আনাকা করাকে بدعة مذمومة বা নিন্দনীয় বিদ্‘আত বলেছেন। তবে ‘আল্লামা শাওকানী (রহিমাহুল্লাহ) বিদ্‘আতের ভাগকরণকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭২৯)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৭৮-[২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নিজ দৌহিত্র) হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ)-কে চুম্বন করলেন, তখন তাঁর কাছে আকরা’ ইবনু হাবিস (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। আকরা’ (রাঃ) বললেনঃ আমার দশ দশটি সন্তান আছে, আমি তাদের কাউকে চুম্বন করিনি। এতদশ্রবণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে তাকালেন। অতঃপর বললেনঃ ’’যে ব্যক্তি অনুগ্রহ করে না, তার ওপর অনুগ্রহ করা হয় না’’। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
গ্রন্থকার বলেনঃ আবূ হুরায়রা বর্ণিত أَثَمَّ لُكَعُ বাক্য বিশিষ্ট হাদীসটি ইনশা-আল্লাহ مَنَاقِبِ أَهْلِ بَيْتِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ অধ্যায়ে অতি সত্বর উল্লেখ করব এবং উক্ত বিষয়বস্তুর উপর উম্মু হানী (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি اَلْأَمَانُ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
بَابُ الْمُصَافَحَةِ وَالْمُعَانَقَةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَبْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ وَعِنْدَهُ الْأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ. فَقَالَ الْأَقْرَعُ: إِنَّ لِي عَشَرَةً مِنَ الْوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أَحَدًا فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «مَنْ لَا يَرْحَمْ لَا يُرْحَمْ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ أَبِي هُرَيْرَةَ: «أَثَمَّ لُكَعُ» فِي «بَابِ مَنَاقِبِ أَهْلِ بَيْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَعَلَيْهِمْ أَجْمَعِينَ» إِنْ شَاءَ تَعَالَى
وَذَكَرَ حَدِيثَ أمِّ هَانِئ فِي «بَاب الْأمان»
ব্যাখ্যাঃ (مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أَحَدًا) হয়ত বা তিনি নিজেকে বড় মনে করে অথবা তুচ্ছতাহেতু কাউকে চুম্বন করতেন না। আকরা‘ (রাঃ)-এর কথার প্রেক্ষিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীতে যা বুঝা যায় তা হলো সন্তান, স্ত্রী মাহরাম বা অন্যান্য ব্যক্তিকে চুম্বন দেয়া যায়। তবে হ্যাঁ যেন এটা দয়া স্নেহবশতঃ হয়। কিন্তু উত্তেজনা এবং উপভোগবশতঃ না হয়। অনুরূপ বিধান আলিঙ্গন বা কোলাকুলি ও ঘ্রাণ নেয়ার ক্ষেত্রে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯৯৭)
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) কোন ব্যক্তির তার ছোট সন্তানকে চুম্বন করাকে ওয়াজিব বলেছেন। অনুরূপভাবে অন্যদেরকে স্নেহ, দয়া ও আত্মীয়তার মুহাববাত স্বরূপ চুম্বন করা সুন্নাত। কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ চুম্বন ওয়াজিব হওয়ার জন্য স্পষ্ট হাদীসের স্মরণাপন্ন হতে হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)