পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৭৯-[৩] বারা’ ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দু’জন মুসলিম একত্র হয়, অতঃপর পরস্পর করমর্দন করে, তখন তারা পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন দু’জন মুসলিম মিলিত হয়ে পরস্পর করমর্দন করে, আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন তাদের উভয়কেই ক্ষমা করে দেয়া হয়।
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلَّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَتَفَرَّقَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ قَالَ: «إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ فَتَصَافَحَا وَحَمِدَا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَاهُ غفر لَهما»
ব্যাখ্যাঃ (قَبْلَ أَنْ يَتَفَرَّقَا) অর্থাৎ মুসাফাহার পর স্বশরীরে পৃথক হওয়ার পূর্বে গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। অপর বর্ণনায় রয়েছে, তাদের গুনাহ গাছের পাতার ন্যায় ঝরে যায়।
উল্লেখ্য এক হাতে মুসাফাহ্ করা সুন্নাত। অর্থাৎ সাক্ষাতের সময় হোক বা কেনা-বেচার সময় হোক দুই জনের দুই হাত দ্বারা মুসাফাহ্ করা সুন্নাত। হানাফী, শাফি‘ঈ ও হাম্বালী ‘আলিমগণ এ ব্যাখ্যা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন। ফকীহ শায়খ মুহাম্মাদ আমীন ওরফে ইবনু আবিদীন স্বীয় رد المختار على الله المختار নামক গ্রন্থে বলেনঃ উত্তম হলো ডান হাতে মুসাফাহ্ করা। কারণ ভালো কাজে ডান পক্ষই অবলম্বন করা শ্রেয়। সে কারণ ‘‘বাহরুল আমীন’’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, হাজরে আসওয়াদ হলো আল্লাহর ডান পক্ষ। এর দ্বারা আল্লাহ তার বান্দার সাথে মুসাফাহ্ করেন। আর মুসাফাহ্ ডানই হয়। শায়খ জিয়াউদ্দীন হানাফী নকশবন্দী তাঁর শারাহ لوامع العقول নামক গ্রন্থে বলেন, শারী‘আতে সুন্নাত পালনের আদাব হলো, উভয় পক্ষের ডান হাতকে নিযুক্ত করা। সুতরাং সেটা বাম হাতের দ্বারা বাম হাতের অথবা ডান হাতে বাম হাতে সমাধা করলে হবে না। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) ডান হাতে মুসাফাহ্ করাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন।
শায়খুল আলম রববানী সায়্যিদ ‘আবদুল কাদির জিলানী তাঁর ‘‘গুনিয়াতুত্ তালিবীন’’ গ্রন্থে বলেনঃ যে সব কাজ ডান হাত দ্বারা করতে হয় এবং যা বাম হাত দ্বারা সম্পাদিত করতে হয় তা পৃথক। ডান হাত দ্বারা কতক কাজ করা মুস্তাহাব। যেমন- খাওয়া, পান করা, মুসাফাহ্ করা এবং উযূ করা, জুতা ও কাপড় ডান দিক থেকে শুরু করা। সাক্ষাতের সময় বা বায়‘আতের সময় হোক মুসাফাহ্ উভয়ের ডান হাত দ্বারা করা সুন্নাত।
১ম দলীল : ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেন, হাসসান ইবনু নূহ বলেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসরকে বলতে দেখেছি, তিনি বলেন, তোমরা আমার এ হাতকে দেখছ, আর আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আমার হাতের তালুকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতের তালুর উপর রেখেছি- (সানাদ সহীহ)। অন্য বর্ণনায় আছে, তোমরা আমার এ হাতকে দেখছ যে, আমি এর দ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মুসাফাহ্ করেছি- (সানাদ মুত্তাসিল)।
আর উমামাহ্-এর হাদীসে রয়েছে, تَمَامُ التَّحِيَّةِ الْأَخْذُ بِالْيَدِ وَالْمُصَافَحَةُ بِالْيُمْنٰى ডান হাতে মুসাফাহ্ করার মাধ্যমে সালাম পরিপূর্ণতা লাভ করে।
২য় দলীল : ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ মুসলিমে ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললাম, আপনি ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি আপনার নিকটে বায়‘আত করব।
মুসনাদে আহমাদে সহীহ সনদে বর্ণিত। আবূ গাদিয়া বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে বায়‘আত করেছি। আবূ সা‘ঈদ বলেনঃ আমি তাকে বললাম, ডান হাত দ্বারা? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। মুসনাদে আহমাদে আনাস ইবনু মালিক-এর হাদীসে রয়েছে, আনাস বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে সাধ্যমত শুনার ও পালন করার জন্য আমার এ হাত অর্থাৎ ডান হাত দিয়ে বায়‘আত করেছি।
তুহফাতুল আহ্ওয়াযী গ্রন্থকার বলেনঃ যদি তুমি বল ‘আমর ইবনুল ‘আস, আবূ গাদিয়া, আনাস ইবনু মালিক ও জারীর-এর হাদীস থেকে প্রমাণ হলো, বায়‘আতের সময় ডান হাত দ্বারা মুসাফাহ্ করা সুন্নাত, সাক্ষাতের সময় নয়। তবে এর উত্তরে আমি বলব, এসব হাদীস দ্বারা যেমন বায়‘আতের সময় ডান হাত দ্বারা মুসাফাহ্ সুন্নাত প্রমাণ হয় তেমনিভাবে সাক্ষাতের সময় ডান হাতে মুসাফাহ্ সুন্নাতও প্রমাণ হয়। কারণ বায়‘আতের মুসাফাহ্ ও সাক্ষাতের মুসাফাহ্ বাস্তবে এক ও অভিন্ন। এ দুয়ের মাঝে বাস্তবিক পার্থক্যের কোন দলীল নেই।
৩য় দলীল : মুসাফাহ্ হলো, هِيَ إِلْصَاقُ صَفْحِ الْكَفِّ بِصَفْحِ الْكَفِّ অর্থাৎ হাতের তালুর সাথে হাতের তালু মিলানো। অতএব মাসনূন মুসাফাহ্ হয়, উভয় পক্ষের এক হাতের দ্বারা হবে অথবা উভয়ের দুই হাত দ্বারা হবে। উভয় অবস্থা ধরে নেয়া যাক, এবার প্রথম অবস্থা তো হাদীসে স্পষ্ট। আর দ্বিতীয় অবস্থাতে ডান হাতের তালুর সাথে ডান হাতের তালু মিলানো এবং বাম হাতের তালুর সাথে বাম হাতের তালু মিলানো। অথচ আমাদেরকে শারী‘আত একটি মুসাফাহ্ করার নির্দেশ দিয়েছে দুই মুসাফাহ্ করার জন্য নয়। আর যদি উভয়ের ডান হাতের তালুর সাথে ডান হাতের তালু মিলানো এবং বাম হাতের তালুর সাথে ডান হাতের পিঠ মিলানো হয়, তাহলে ডান হাতের তালুর সাথে ডান হাতের তালু মিলানোকে মুসাফাহ্ বলা গেল। কিন্তু বাম হাতের তালুর সাথে ডান হাতের পিঠ মিলানোর কোন অর্থই হয় না। কারণ এ অবস্থাটি মুসাফাহার বাস্তবতার বাহিরে।
এক্ষণে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাদীস, عَلَّمَنِى النَّبِىُّ وَكَفِّىْ بَيْنَ كَفَّيْهِ التَّشَهُّدَ كَمَا يُعَلِّمُنِى السُّورَةَ مِنَ الْقُرْآنِ - (বুখারী ও মুসলিম)। এখানে এটা মুসাফাহার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটা শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব ও মনোনিবেশ করার জন্য হাত ধরেছেন। যেমন এ ব্যাপারে ‘আল্লামা ফাযিল লাক্ষনবী তাঁর এক ফাতাওয়ার হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
لَيْسَ ظَاهِرٌ أَنَّ است كه مُصَافَحَةٌ مُتَوَارَثَةٌ كه بِوَقْتِ تَلَاقِي مَسْنُونٍ است نبوده بدكه طريقه تعليميه بوده كه أكابر بِوَقْتِ اهتمام تعليم جيزي ازهردودست يايكدست دست اصاغر كرفته تعليم ميسازند
যার মর্মার্থ হলো, সহীহুল বুখারীতে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর যে হাদীসটা রয়েছে তা সাক্ষাতের সময়ে মাসনূন মুসাফাহ্ সম্পর্কে নয়। বরং এটা শিক্ষা দানের সময়ে গুরুত্ব দেয়ার জন্য হাত ধরা সম্পর্কে। যেমন বড়রা ছোটদের শিক্ষা দানের সময়ে করে থাকে। তারা ছোটদের এক অথবা দুই হাত ধরেন। আবার হানাফী ফকীহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন যে, আল্লাহর নবীর দুই হাতের মাঝে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাত ছিল তাশাহ্হুদ শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব ও মনোযোগ আকর্ষণের জন্য। শিক্ষাদানের সময় হাত ধরা সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন মুসনাদে আহমাদে আছে, আবূ কতাদাহ্ ও আবূ দাহ্মাহ্ বলেনঃ আমরা এক বেদুঈন লোকের নিকটে আসলাম। বেদুঈন লোকটি বলল, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে এমন কিছু শিক্ষা দিলেন যা আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।
তিরমিযীতে রয়েছে, শিকল ইবনু হামীদ (রাঃ) বলেনঃ আমি রসূলের খেদমতে এসে বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে আশ্রয় প্রার্থনার উপায় অর্থাৎ تعوذ শিক্ষা দিন, যাতে আমি আশ্রয় চাইতে পারি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাতের তালু ধরলেন এবং বললেন, তুমি বল اللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي... الْحَدِيثَ ‘‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শুনার অনিষ্ট হতে...’’হাদীস। তিরমিযীর অপর বর্ণনায় রয়েছে, আবূ হুরায়রা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কে এমন আছ, যে এ বাক্যগুলো শিখবে এবং ‘আমল করবে? আমি বললাম, আমি, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন। তারপর পাঁচটি গুণে দিলেন এবং বললেন, اتَّقِ الْمَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ তুমি হারাম থেকে বেঁচে থাক তাহলে তুমি সর্বোত্তম বান্দায় পরিণত হবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭২৭)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮০-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্য হতে কেউ যদি তাঁর কোন মুসলিম ভাইয়ের কিংবা কোন বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করে, তবে কি সে (তাঁর সম্মানার্থে) মাথা নত করবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না। লোকটি বলল : তবে কি সে আলিঙ্গন করবে এবং তাকে চুম্বন করবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি তার হাত ধরবে এবং পরস্পর করমর্দন করবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। (তিরমিযী)[1]
وَعَن أنس قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ أَيَنْحَنِي لَهُ؟ قَالَ: «لَا» . قَالَ: أَفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ؟ قَالَ: «لَا» . قَالَ: أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (قَالَ: أَفَيَأْخُذُ بِيَدِه وَيُصَافِحُهٗ؟) হলো عطف تفسير অথবা যেটা নির্দিষ্টতা বা অধিক পূর্ণাঙ্গ।
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দ্বিতীয়টি নির্দিষ্ট কারণ হাত ধরা ও মুসাফাহ্ করাকে ‘আরবী কায়দার ভাষায় عام خاص مطلق বলে। অর্থাৎ ব্যাপকভাবে বলার পর নির্দিষ্টভাবে বলা। অর্থাৎ হাত ধরা বলতে মুসাফাহ্ করা। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭২৮)
এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, আলিঙ্গন করা অনুরূপ সালাম দেয়ার সময় নত হওয়া মাকরূহ এবং সুন্নাত পরিপন্থী। কিন্তু সফর থেকে আগমনের সময় কোলাকুলি করা সুন্নাত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ ইবনু হারিসাহ্ এবং জা‘ফার ইবনু আবূ ত্বালিব যখন হাবাশাহ্ থেকে ফিরে আসলেন তখন তাদের সাথে আলিঙ্গন করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, সফর ছাড়াও কোলাকুলি করা যায়। যদি ফিতনার আশংকা না থাকে এবং দু’টি কাপড় পরিধান করে থাকে। কিন্তু যদি শুধু লুঙ্গি পরে থাকে তাহলে কোলাকুলি করা মাকরূহ স্ত্রী ব্যতীত। (মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, ৪র্থ খন্ড, ২৬-২৭ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮১-[৫] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখাশুনা পূর্ণতা হয় যখন তোমাদের কেউ রোগীর কপালে বা হাতে নিজের হাত রাখে এবং তার কুশল সংবাদ জিজ্ঞেস করে। তোমাদের সালামের পরিপূর্ণতা হলো, সালামের পর পরস্পর করমর্দন করা। [আহমাদ ও তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আলী ইবনু ইয়াযীদ’’ একজন য‘ঈফ রাবী। দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১২৮৮।
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: تَمَامُ عِيَادَةِ الْمَرِيضِ أَنْ يَضَعَ أَحَدُكُمْ يَدَهُ عَلَى جَبْهَتِهِ أَوْ عَلَى يَدِهِ فَيَسْأَلَهُ: كَيْفَ هُوَ؟ وَتَمَامُ تَحِيَّاتِكُمْ بَيْنَكُمُ الْمُصَافَحَةُ . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَضَعفه
ব্যাখ্যাঃ ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ দুইয়ের অতিরিক্ত নেই। যদি বেশি করা হয় তবে তা কষ্টকর হবে। আসলে তিনি এর দ্বারা মধ্যমপন্থার কথা বলেছেন। এর অর্থ এ নয় যে, এর চাইতে কম বেশি করা যাবে না।
কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অতিরিক্ত হলে কঠিন হয়। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিম্নমানের পূর্ণতা। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৩২)
অন্য হাদীসে রয়েছে, যখন তোমরা রোগীকে দেখতে যাবে তখন তাকে বেঁচে থাকায় খুশি রাখ। অর্থাৎ এরূপ বল যে, এখনো তুমি অনেক দিন বেঁচে থাকবে, রোগ খুব কঠিন নয় ভালো হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ। এরূপ বলাতে তাকদীর পরিবর্তন হয় না কিন্তু রোগীর এমন খুশি হয়। রোগীর এ খুশি থাকলে সুস্থ হয়ে যাওয়ার আশা করা যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, ৪র্থ খন্ড, ২৭ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮২-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়দ ইবনু হারিসাহ্ মদীনায় আগমন করলেন। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন। যায়দ ইবনু হারিসাহ্(রাঃ) এসে ঘরের দরজায় আওয়াজ করলেন, তখনই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালি গায়ে চাদর টানতে টানতে তাঁর কাছে গেলেন। (’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ) আল্লাহর কসম! আমি তাঁকে এর পূর্বে বা পরে কখনো খালি গায়ে দেখিনি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে আলিঙ্গন করলেন এবং তাঁকে চুম্বন করলেন। (তিরমিযী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘মুহাম্মাদ ইবনু ইসপদকব’’ নামের বর্ণনাকারী একজন প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী। যে ‘‘আন’’ দ্বারা হাদীস বর্ণনা করেছেন। দেখুন- রিয়াযুস্ সলিহীন হাঃ ৮৯৬।
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَدِمَ زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ الْمَدِينَةَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي فَأَتَاهُ فَقَرَعَ البابَ فقامَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرْيَانًا يَجُرُّ ثَوْبَهُ وَاللَّهِ مَا رَأَيْتُهُ عُرْيَانًا قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ فَاعْتَنَقَهُ وَقَبَّلَهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যাঃ মিরক্বাতুল মাফাতীহে বলা হয়েছে, এর দ্বারা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এ কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাভী থেকে চাদর পড়ে যাওয়ায় নাভীর উপরের দিক অনাবৃত ছিল। যদি প্রশ্ন করা হয় কিভাবে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কসম খেয়ে বললেন যে, আমি এর পূর্বে ও পরে কখনো বিবস্ত্র দেখিনি? অথচ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দীর্ঘদিন তার সাথে এক চাদরে মিলিত হয়েছেন এবং সাহচর্যে থেকেছেন তবে এর উত্তরে বলা যায় যে, হয়ত বা তিনি এর দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আর কোন লোকের সাথে এভাবে অনাবৃত হয়ে মুখোমুখি হননি এবং কোলাকুলি করেননি। আসলে তিনি অবস্থার চাহিদা মোতাবেক কথাকে সংক্ষেপ করেছেন। হাদীসে সফর থেকে আগমনকারী ব্যক্তির সাথে কোলাকুলি করা সঠিকভাবে প্রমাণিত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৩২)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮৩-[৭] আইয়ূব ইবনু বুশায়র (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি ’আনাযাহ্ গোত্রের এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন আমি একদিন আবূ যার গিফারী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে, তখন কি তিনি তোমাদের সাথে করমর্দন করতেন? আবূ যার বললেনঃ আমি যখনই তাঁর সাথে সাক্ষাত করেছি, তখনই তিনি আমার সাথে করমর্দন করেছেন। একদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডেকে পাঠালেন, তখন আমি বাড়িতে ছিলাম না। যখনই বাড়িতে এলাম, আমাকে সংবাদ দেয়া হলো। আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হলাম, তখন তিনি একটি খাটের উপর বসা ছিলেন। তিনি আমার সাথে আলিঙ্গন করলেন। আর এ আলিঙ্গন ছিল অতি উত্তম, অতি উত্তম। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আনাযাহ্’’ গোত্রের একজন অপরিচিত লোক আছে যার পরিচয় জানা যায় না। তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/৪৩৪ পৃঃ।
وَعَنْ أَيُّوبَ بْنِ بُشَيْرٍ عَنْ رَجُلٍ مِنْ عَنَزةَ أنَّه قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي ذَرٍّ: هَلْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَافِحُكُمْ إِذَا لَقِيتُمُوهُ؟ قَالَ: مَا لَقِيتُهُ قَطُّ إِلَّا صَافَحَنِي وَبَعَثَ إِلَيَّ ذَاتَ يَوْمٍ وَلَمْ أَكُنْ فِي أَهْلِي فَلَمَّا جِئْتُ أُخْبِرْتُ فَأَتَيْتُهُ وَهُوَ عَلَى سَرِيرٍ فَالْتَزَمَنِي فَكَانَتْ تِلْكَ أَجْوَدَ وَأَجْوَدَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (عَلٰى سَرِيرٍ) ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কখনো খাট سرير বলতে রাজত্ব ও নি‘আমাতকে বুঝানো হয়। এখানে سرير বা খাট বলতে নুবুওয়াতের রাজত্ব ও এর নি‘আমাত উদ্দেশ্য। কেউ বলেন, এ খাট ছিল খেজুর কাঠের যা মদীনাবাসী এবং মিসরের লোকেরা ঘুমানোর জন্য এবং পোকা-মাকড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তৈরি করে থাকে। (فَكَانَتْ تِلْكَ أَجْوَدَ) অর্থাৎ এ আলিঙ্গন ছিল মুসাফাহার চাইতে মনোতৃপ্তি এবং হাতের জন্য অধিক আরামদায়ক। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২০৫)
ফিতনার ভয় না থাকলে সফর ছাড়াও কোলাকুলি বৈধতার জন্য কেউ এ হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তবে এর উত্তরে বলা যায় যে, আবূ যার সফর থেকে এসেছিলেন, তার স্পষ্ট প্রমাণ হলো যে, তিনি বলেছেন لم اكن في اهلي অর্থাৎ আমি আমার পরিবারের নিকট ছিলাম না।
(মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, ৪থ খন্ড, ২৮ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮৪-[৮] ’ইকরিমাহ্ ইবনু আবূ জাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হই, তিনি আমাকে দেখেই বললেনঃ হিজরতকারী আরোহীর প্রতি মুবারকবাদ। (তিরমিযী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘মূসা ইবনু মাস্‘ঊদ’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। দেখুন- তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৮/৫ পৃঃ।
وَعَن عكرمةَ بن أبي جهلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ جِئْتُهُ: «مَرْحَبًا بِالرَّاكِبِ الْمُهَاجِرِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ ‘আসকারী বর্ণনা করেন সায়ফ ইবনু যীইয়াযান সর্বপ্রথম (مَرْحَبًا) শব্দটি ব্যবহার করেন। এ হাদীসে আগমনকারী ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করার দলীল রয়েছে। রসূলের নিকট থেকে এরূপ ঘটনার নযীর বারবার হয়েছে। (بِالرَّاكِبِ الْمُهَاجِرِ) এখানে মুহাজির বলতে আল্লাহ ও তার রসূলের পথে হিজরতকারী অথবা দারুল হারব থেকে দারুল ইসলামের দিকে হিজরত করা বুঝানো হয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় জানা গেল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী لا هجرة بعد الفتح মক্কা বিজয়ের পর থেকে কোন হিজরত নেই, কারণ এটা এখন দারুল ইসলাম। এর বিধান মক্কা বিজয়ের পূর্বের হিজরতের বিধানের বিপরীত। কারণ তখন হিজরত ওয়াজিব, বরং শর্ত ছিল। আর দারুল কুফর থেকে দারুল ইসলামে হিজরত করার আবশ্যকতা কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৩৫)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮৫-[৯] উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) নামক আনসার গোত্রীয় ব্যক্তি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, একদিন তিনি নিজের সম্প্রদায়ের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন এবং এর মধ্যে হাসি-তামাশা হচ্ছিল। তিনি নিজের কথাবার্তায় জনতাকে হাসাচ্ছিলেন। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লাকড়ি দ্বারা তাঁর পাঁজরে খোঁচা দিলেন। তখন উসায়দ(রাঃ) বললেনঃ আপনি আমাকে খোঁচা দিয়েছেন, এখন আমাকে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করার সুযোগ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ প্রতিশোধ গ্রহণ করো। উসায়দ(রাঃ) বললেনঃ আপনার শরীর জামা দ্বারা আবৃত, অথচ আমার গায়ে জামা ছিল না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জামা তুলে ধরলেন। তখন উসায়দ(রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জড়িয়ে ধরলেন এবং তাঁর পাঁজরে চুমু দিতে লাগলেন। আর বলতে লাগলেন : হে আল্লাহর রসূল! এটাই আমি চেয়েছিলাম। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أُسَيدِ بن حُضَيرٍ - رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ - قَالَ: بَيْنَمَا هُوَ يُحَدِّثُ الْقَوْمَ - وَكَانَ فِيهِ مُزَاحٌ - بَيْنَا يُضْحِكُهُمْ فَطَعَنَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خَاصِرَتِهِ بِعُودٍ فَقَالَ: أَصْبِرْنِي. قَالَ: «أَصْطَبِرُ» . قَالَ: إِنَّ عَلَيْكَ قَمِيصًا وَلَيْسَ عَلَيَّ قَمِيصٌ فَرَفَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ قَمِيصِهِ فَاحْتَضَنَهُ وَجَعَلَ يُقَبِّلُ كَشْحَهُ قَالَ: إِنَّمَا أَرَدْتُ هَذَا يَا رسولَ الله. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ رجل মাসাবীহ গ্রন্থে رجل যের যোগে বলা হয়েছে। তখন এর অর্থ হলো রসিক ব্যক্তি ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী ব্যক্তি হচ্ছে একজনই সেটা হলো বর্ণনাকারী উসায়দ ইবনু হুযায়র। আর "جامع الاصول" গ্রন্থে বর্ণিত হাদীসের মাতান ভিন্নভাবে এসেছে। যেমন, عن ابن حضير قال ان رجلا من الانصار كان فيه مزاح فبينما هو يحدث القوم لضحكهم এ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, রসিক ব্যক্তি অন্যজন ছিল। তার ঘটনা উসায়দ বর্ণনা করেছে এভাবে যে, সে রসিক লোক ছিল এবং মানুষকে হাসাত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তার সাথে রসিকতা করতেন। খত্ত্বাবী নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে গাছের ভাঙ্গা ডাল দ্বারা খোঁচা দিয়ে রসিকতা করেন। তখন সে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমাকে প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়ের কাপড় উঠালে সে তার কোমরের পাশে কটিদেশে চুম্বন করে। এ থেকে বুঝা গেল, শারী‘আহ্ পরিপন্থী যদি না হয় তাহলে রসিকতা করা বা শোনা যায়।
(‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২১৫; মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, ৪র্থ খন্ড, ২৮ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮৬-[১০] শা’বী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জা’ফার ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন, তখন তাঁর সাথে আলিঙ্গন করলেন এবং তাঁর দু’ চোখের মধ্যখানে (কপালে) চুম্বন করলেন। (আবূ দাঊদ)
আর ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর "شُعَبُ الْإِيْمَانِ" গ্রন্থে হাদীসটি مُرْسَلْ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর مَصَابِيْحِ গ্রন্থের কোন কোন কপিতে এবং شَرْحُ السُّنَّةِ গ্রন্থে ইমাম বায়াযী হতে مُتَّصِلْ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘আজলাহ্’’ নামক বর্ণনাকারী, যিনি য‘ঈফ। তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ২৭৮৯।
وَعَنِ
الشَّعْبِيِّ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَلَقَّى جَعْفَرَ بْنَ أَبِي طَالِبٍ فَالْتَزَمَهُ وقبَّلَ مابين عَيْنَيْهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» مُرْسَلًا
وَفِي بَعْضِ نُسَخِ «الْمَصَابِيحِ» وَفِي «شرح السّنة» عَن البياضي مُتَّصِلا
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস এবং পরের হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সফর থেকে ফেরার সময় কোলাকুলি করা বৈধ। ‘আলিমগণ এসব হাদীসকে সামনে রেখে জ্ঞানী ও সম্মানী ব্যক্তিদের হাতে চুম্বন করাকে সঠিক বলেছেন। কিন্তু "در المختار" গ্রন্থে সাক্ষাতের সময় স্বীয় সাথীদের হাত চুম্বন করাকে সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ বলেছেন। অনুরূপভাবে ‘আলিম বা নেতাদের সামনে ভূমি চুম্বন করাকে হারাম আখ্যা দিয়েছেন। যে এরূপ করবে এবং এতে সন্তুষ্ট হবে উভয়ে পাপী হবে। এটা তো মূর্তিপূজা সদৃশ। আর যদি ‘ইবাদাত বা সম্মানের উদ্দেশে করে তাহলে সে কাফির হবে। কিন্তু অভিবাদনের উদ্দেশে করলে সে কাফির হবে না তবে কাবীরাহ্ গুনাহ হবে।
"ملتقط" গ্রন্থে বলা হয়েছে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশে নত হওয়া হারাম। "مبانية" গ্রন্থে রয়েছে, যখন কোন সম্মানী ব্যক্তি আসবে তখন তার সম্মানের উদ্দেশে দাঁড়ানো জায়িয বরং মানদূব। (মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, ৪র্থ খন্ড, ২৯ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮৭-[১১] জা’ফার ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) হাবাশাহ্ হতে প্রত্যাবর্তনের ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, আমরা হাবাশাহ্ হতে রওয়ানা করে মদীনায় এসে পৌঁছলাম। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং আমার সাথে আলিঙ্গন করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি বলতে পারছি না খায়বার বিজয় আমার কাছে বেশি আনন্দের, না জা’ফার-এর ফিরে আসাটা বেশি আনন্দের! জা’ফার (রাঃ) ঘটনাক্রমে সেদিনই এসেছিলেন, যেদিন খায়বার বিজয় হয়েছিল। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘মুজালিদ ইবনু সা‘ঈদ’’ নামের বর্ণনাকারী শক্তিশালী নয়। অন্য একটি বর্ণনায় শা‘বী (রহিমাহুল্লাহ) থেকে দু’জন বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী ‘‘মুজালিদ ইবনু সা‘ঈদ’’-এর বিপরীত বর্ণনা করেছেন। দেখুন- আর্ রওযুন্ নাযীর ৯৩৪, হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪৩৩১ পৃঃ।
وَعَنْ
جَعْفَرِ بْنِ أَبِي طَالِبٍ فِي قِصَّةِ رُجُوعِهِ مِنْ أَرْضِ الْحَبَشَةِ قَالَ: فَخَرَجْنَا حَتَّى أَتَيْنَا الْمَدِينَةَ فَتَلَقَّانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاعْتَنَقَنِي ثُمَّ قَالَ: مَا أَدْرِي: أَنَا بِفَتْحِ خَيْبَرَ أَفْرَحُ أَمْ بِقُدُومِ جَعْفَرٍ؟ «. وَوَافَقَ ذَلِكَ فَتْحَ خَيْبَرَ. رَوَاهُ فِي» شَرْحِ السّنة
ব্যাখ্যাঃ (قَالَ: "مَا أَدْرِي: أَنَا بِفَتْحِ خَيْبَرَ أَفْرَحُ أَمْ بِقُدُومِ جَعْفَرٍ؟") এর অর্থ হলো, আমার খুশির কারণ একাধিক। সুতরাং আমি বুঝতে পারছি না, এ দিকে লক্ষ্য করব না ঐ দিকে লক্ষ্য করব। কারণ প্রত্যেকটিই খুশির জন্য স্বনির্ভর কারণ ছিল। খুশির কারণগুলো একটির সাথে আরেকটি যুক্ত হয় না। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা আসলে পূর্ণতার সাথে অপূর্ণতাকে মিলিত করার উপযুক্ত সাদৃশ্যদানের একটি রীতিমাত্র। সে কারণে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খায়বার বিজয়ের তুলনায় জা‘ফার-এর আগমনকে অপূর্ণরূপে প্রকাশ করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮৮-[১২] যারি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। যিনি ’আবদুল কায়স প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, যখন আমরা মদীনায় আগমন করলাম তখন আমরা তাড়াহুড়া করে সওয়ারী হতে অবতরণ করলাম এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত ও পা চুম্বন করলাম। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن زارع
وَكَانَ فِي وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ: لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا فَنُقَبِّلُ يَدُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرجله. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ হাফিয আবূ বকর ইস্পাহানী মাকরী (রহিমাহুল্লাহ) হাতে চুম্বন করা জায়িযের ব্যাপারে একটি খন্ড রচনা করেন। সেখানে তিনি ইবনু ‘উমার, ইবনু ‘আব্বাস, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ, বুরয়দাহ্ ইবনু হাসিব, সফওয়ান ইবনু ‘আসসাল, বুরয়দাহ্ আল ‘আবদী, যারি‘ ইবনু ‘আমির ‘আবদী প্রমুখদের হাদীস উল্লেখ করেন। তিনি সেখানে আরো সাহাবী ও তাবি‘ঈদের সহীহ আসার তুলে ধরেছেন।
কেউ কেউ বলেন, মালিক (রহিমাহুল্লাহ) উপরোক্ত মতকে এবং এ বিষয়ের হাদীস মানেননি। তবে অন্যরা এটাকে জায়িয বলেছেন।
আবহুরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মূলত ইমাম মালিক তাকে অপছন্দ করেছেন যখন চুম্বন অহংকারবশতঃ ও সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্য হয়। অতএব যখন তা গোপনাঙ্গ ব্যতীত কারো হাত, মুখমণ্ডলে বা শরীরের অন্য কোন অঙ্গ চুম্বন করা, তার ‘ইলম, দীন, মর্যাদার কারণে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য হয়ে থাকে তখন জায়িয। আল্লাহর রসূলের হাতে চুম্বন করা আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের সহায়ক। আর যা কোন পার্থিব উদ্দেশে অথবা কোন নেতার উদ্দেশে বা অনুরূপ কোন অহংকারবশতঃ হয়ে থাকে তবে তা নাজায়িয। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২১৪)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৮৯-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আকৃতি-প্রকৃতি, স্বভাব-চরিত্র ও কাঠামো-অবয়বে; (অপর এক রিওয়ায়াতে আছে) আলাপ-আলোচনায় ফাতিমা (রাঃ) ছাড়া অন্য কাউকে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সদৃশ পাইনি। ফাতিমা (রাঃ) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসতেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ফাতিমার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে চুম্বন করতেন এবং নিজের আসনে বসাতেন। অনুরূপভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ফাতিমা (রাঃ)-এর কাছে যেতেন, ফাতিমা (রাঃ) উঠে দাঁড়াতেন, তাঁর হাত ধরতেন, হাতে চুম্বন করতেন এবং নিজের বসার স্থানে তাঁকে বসাতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ أَحَدًا كَانَ أَشْبَهَ سَمْتًا وَهَدْيًا وَدَلًّا. وَفِي رِوَايَةٍ حَدِيثًا وَكَلَامًا بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ فَاطِمَةَ كَانَتْ إِذَا دَخَلَتْ عَلَيْهِ قَامَ إِلَيْهَا فَأَخَذَ بِيَدِهَا فَقَبَّلَهَا وَأَجْلَسَهَا فِي مَجْلِسِهِ وَكَانَ إِذَا دَخَلَ عَلَيْهَا قَامَتْ إِلَيْهِ فَأَخَذَتْ بِيَدِهِ فَقَبَّلَتْهُ وَأَجْلَسَتْهُ فِي مجلسِها. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) অন্যের উদ্দেশে বিতর্কিত দাঁড়ানোর বৈধতার জন্য এ হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এর উত্তরে ইবনুল হজ্জ বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমার সম্মানার্থে তাকে স্বীয় স্থানে বসানোর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। এটা সেই বিতর্কিত ক্বিয়াম ছিল না। অবশ্য যতটুকু জানা যায় সেটা হলো তাদের বাড়ী সংকীর্ণ হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত বিছানা না থাকার কারণে তাকে বসাতে গিয়ে দাঁড়ানো এবং এদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা দরকার ছিল।
অন্যের উদ্দেশে দাঁড়ানোর অপর হাদীস হলো সা‘দ ইবনু মু‘আয-এর হাদীস যা সম্মানের উদ্দেশে ছিল না। বরং তা তাকে গাধার পিঠ থেকে নামতে সাহায্য করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে দাঁড়াতে বলেছিলেন।
আর এর প্রমাণ হলো মুসনাদে আহমাদে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস তথা قُومُوا إِلٰى سَيِّدِكُمْ فَأَنْزِلُوهُ তোমরা তোমাদের নেতার জন্য দাঁড়িয়ে তাকে নামিয়ে দাও। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২০৮)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৯০-[১৪] বারা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক(রাঃ) যখন (কোন যুদ্ধ হতে) প্রথম মদীনায় আসেন, তখন আমি তাঁর সাথে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম। আমি দেখলাম, তাঁর কন্যা ’আয়িশাহ্ (রাঃ) শুয়ে আছেন। তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আবূ বকর সিদ্দীক(রাঃ) তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে বৎস! তুমি কেমন আছ? এবং তাঁর গালে চুম্বন করলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن البراءِ
قَالَ: دَخَلْتُ مَعَ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أولَ مَا قدمَ المدينةَ فَإِذا عَائِشَة مُضْطَجِعَة قد أصابتها حُمَّى فَأَتَاهَا أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ: كَيْفَ أَنْتِ يَا بُنَيَّةُ؟ وَقَبَّلَ خَدَّهَا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অনুগ্রহ, ভালোবাসা, অথবা সুন্নাত রক্ষার লক্ষ্যে তিনি তাকে গালে চুম্বন করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২১৩)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন
৪৬৯১-[১৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একটি শিশুকে আনা হলো, তিনি তাকে চুম্বন করে বললেনঃ এরাই কার্পণ্যের হেতু, ভীরুতার কারণ। আর এরাই আল্লাহর সুগন্ধিতুল্য একটি অন্যতম নি’আমাত। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘ইবনু লাহী‘আহ্’’ নামের বর্ণনাকারী সায়্যিউল হিফয বা খারাপ স্মৃতিশক্তির অধিকারী।
وَعَنْ عَائِشَةَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِصَبِيٍّ فَقَبَّلَهُ فَقَالَ: «أَمَا إِنَّهُمْ مَبْخَلَةٌ مَجْبَنَةٌ وَإِنَّهُمْ لَمِنْ ريحَان الله» . رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
ব্যাখ্যাঃ সন্তান-সন্ততি কৃপণতা ও ভীরুতার কারণ। কেননা তারা পিতা-মাতাকে কৃপণ বানিয়ে দেয়। ফলে তারা তাদের জন্য ধন-সম্পদে কৃপণ হয়ে পড়ে। ফলে সে কিছু দেয় না। ভীরুতার কারণ, তারা এজন্যে যুদ্ধে যেতে ভয় পায় যে, যুদ্ধে সে মারা গেলে তার সন্তানরা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে। এ হাদীস থেকে সন্তানের প্রতি পিতামাতার পূর্ণ ভালোবাসা ও অত্যধিক হৃদ্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি অধিকাংশ মানুষ ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনে তাদের জন্য উপকারী একনিষ্ঠ শারী‘আতের নির্দেশিত বিষয়সমূহ ও সন্তোষজনক প্রশংসনীয় যাবতীয় কর্মকাণ্ড-র উপরে সন্তানদের প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
(لَمِنْ ريحَان الله) অর্থাৎ আল্লাহর রিজিক। কারণ রিযক্বের মাধ্যমে তার উন্নতি ঘটে। অথবা ريحان দ্বারা এমন কিছু হতে পারে যার ঘ্রাণ নেয়া হয়। কারণ ঘ্রাণ নেয়া হয় এমন বস্তুকে ريحان বলা হয়। তখন এর অর্থ হবে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে এর দ্বারা সম্মানিত করেছেন এবং তাদেরকে দান করেছেন। কারণ তাদের ঘ্রাণ নেয়া হয় এবং চুম্বন করা হয়। সুতরাং যেন তারা আল্লাহ সৃষ্ট ঘ্রাণ সমষ্টির অংশ। ভাষ্যকার বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রিজিক অথবা সুঘ্রাণ। এর দ্বারা আল্লাহ মানুষের অন্তরকে আনন্দিত করেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)