পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাক্বী‘ ও নবীয সম্পর্কীয় বর্ণনা
নিহায়াতে এসেছে, নাক্বী’ হলো এমন পানীয় যা আঙ্গুর বা অন্যান্য হতে প্রস্তুত করা হয় যা পানিতে ভিজানো হয় পাকানো ছাড়া। আর খেজুর, আঙ্গুর, কিসমিস, মধু, গম ও যব ইত্যাদি ভিজিয়ে যে মিঠা শরবত প্রস্তুত করা হয় তা নবীয। যেমন বলা হয়, আমি আঙ্গুর ও খেজুরকে নবীয করেছি যখন পানিতে ভিজিয়ে রেখেছি যাতে নবীয হয়। এ নবীয অনেক উপকার বিশেষ করে শক্তি বৃদ্ধিতে।
মীরাক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা সর্বসম্মতক্রমে হালাল যতক্ষণ পর্যন্ত মিষ্টি থাকে আর নেশাগ্রস্ত অবস্থায় না পৌঁছে। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সব নেশাই হারাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
৪২৮৬-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এ পেয়ালা দ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিভিন্ন প্রকারের পানীয় পান করাতাম। যেমন- মধু, নবীয, পানি ও দুধ। (মুসলিম)[1]
بَابُ النَّقِيعِ وَالْأَنْبِذَةِ
عَن أنسٍ قَالَ: لَقَدْ سَقَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحِي هَذَا الشَّرَابَ كُلَّهُ: الْعَسَلَ والنَّبيذَ والماءَ وَاللَّبن. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ উদ্দেশ্য হলো নবীয যতক্ষণ না তা নেশার সীমায় পৌঁছে। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ২০০৮)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাক্বী‘ ও নবীয সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪২৮৭-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য চামড়ার মশকে নবীয প্রস্তুত করতাম। তার উপর হতে শক্ত করে বাঁধা হত এবং নিচেও একটি মুখ ছিল। আমরা সকালে যে নবীয বানাতাম, তিনি তা বিকালে পান করতেন এবং বিকালে যে নবীয বানাতাম, তিনি তা সকালে পান করতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ النَّقِيعِ وَالْأَنْبِذَةِ
وَعَن عائشةَ قَالَتْ: كُنَّا نَنْبِذُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سِقَاءٍ يُوكَأُ أَعْلَاهُ وَلَهُ عَزْلَاءُ نَنْبِذُهُ غُدْوَةً فَيَشْرَبُهُ عِشَاءً وَنَنْبِذُهُ عِشَاءً فيشربُه غُدوةً. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পাত্রকে ঢাকা এবং তার মুখকে শক্ত করে বাধাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন, কারণ হলো ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ ও প্রাণী হতে বাঁচা। (عَزْلَاءُ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পাত্রের নীচের মুখ। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পাত্রের নীচের ছিদ্র যাতে তা হতে পানি পান করা যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাক্বী‘ ও নবীয সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪২৮৮-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য রাত্রের প্রথম ভাগে নবীয তৈরি করা হত। তিনি তা পরবর্তী দিন সকালে, এর পরের রাত্রে, দ্বিতীয় দিনে ও দ্বিতীয় রাত্রে এবং তৃতীয় দিন ’আসর পর্যন্ত পান করতেন। এরপরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকত, তা চাকর-বকরদেরকে পান করাতেন অথবা ফেলে দেয়ার জন্য নির্দেশ করতেন, তখন তা ফেলে দেয়া হত। (মুসলিম)[1]
بَابُ النَّقِيعِ وَالْأَنْبِذَةِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُنْبَذُ لَهُ أَوَّلَ اللَّيْلِ فَيَشْرَبُهُ إِذَا أَصْبَحَ يَوْمَهُ ذَلِكَ وَاللَّيْلَةَ الَّتِي تَجِيءُ وَالْغَدَ وَاللَّيْلَةَ الْأُخْرَى وَالْغَدَ إِلَى الْعَصْرِ فَإِنْ بَقِيَ شَيْءٌ سَقَاهُ الْخَادِمَ أَوْ أَمَرَ بهِ فصُبَّ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ হাদীস প্রমাণ করে নবীয বৈধ যতক্ষণ না তার মিষ্টতা পরিবর্তন হয় এবং নেশা পরিগণিত না হয়, এটার উপর সকলের ইজমা।
(سَقَاهُ الْخَادِمَ أَوْ أَمَرَ بِه فَصُبَّ) চাকরদের পান করাতেন অথবা ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিতেন। কখনও কখনও পান করাতেন আবার কখনও ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিতেন, এটা নবীযের অবস্থায় উপর নির্ভর করে। যদি নবীযে নেশার ছাপ স্পষ্ট না হয় অথবা নেশার ভাব হওয়ার পূর্বেই চাকরদেরকে পান করাতেন আর ফেলে দিতেন না, কারণ অযথা সম্পদ নষ্ট করা হারাম। আর যদি নেশার ছাপ চলে আসে এবং মদে রূপান্তরিত হয় তাহলে খাওয়াতেন না এবং ফেলে দিতে বলতেন, কারণ তা হারাম এবং অপবিত্র হয়ে গেছে।
আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস সকালের নবীয বিকালে আর বিকালের নবীয সকালে পান করা। ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীসের বিপরীত না। কেননা ঋতু বা মওসুমের পরিবর্তনে নবীযের মধ্যে নেশা সৃষ্টি হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে সময়ের ব্যবধান হয়। যেমন গ্রীষ্মের মওসুমে কোন জিনিস যত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় শীতের সময়ে তত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না। অতএব ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস গরম বা গ্রীষ্মের সময়ে যাতে এক দিনের ঊর্ধ্বেই নষ্ট হয়ে যায়। আর ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস অন্য সময়ে যে সময়ে তিনদিনের পূর্বে নষ্ট হয় না। অথবা হতে পারে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস স্বল্প নবীয একদিনে সমাপ্ত হয়। আর ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস অধিক পরিমাণ নবীয যা একদিনে সমাপ্ত হয় না। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ২০০৪)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাক্বী‘ ও নবীয সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪২৮৯-[৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য মশকে নবীয প্রস্তুত করা হত। যখন তারা তা না পেত, তখন পাথর নির্মিত পাত্রে নবীয তৈরি করা হত। (মুসলিম)[1]
بَابُ النَّقِيعِ وَالْأَنْبِذَةِ
وَعَن جابرٍ قَالَ: كَانَ يُنْبَذُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سِقَائِهِ فَإِذَا لَمْ يَجِدُوا سِقَاءً يُنْبَذُ لَهُ فِي تَوْرٍ مِنْ حِجَارَةٍ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (تَوْرٍ) ছোট পাত্র, যা দ্বারা পান করা হয় অথবা উযূ করা হয়।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা বদনা যা কেতলির সাদৃশ্য তা হতে পান করা হয়। নিহায়াতে বলা হয়েছে, ছোট পাত্র যা কাপড় ধুইতে ব্যবহার করা হয়। কামূস অভিধানে এসেছে, এমন পাত্র যা হতে শুধুমাত্র পুরুষেরাই পান করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাক্বী‘ ও নবীয সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪২৯০-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কদুর খোলস, সবুজ মটকা, আলকাতরা লাগানো পাত্র এবং খেজুর বৃক্ষের মূলের পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন এবং চামড়ার মশকে নবীয প্রস্তুত করতে আদেশ করেছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ النَّقِيعِ وَالْأَنْبِذَةِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نهى عَن الدُّبَّاء والحنتم والمرفت وَالنَّقِيرِ وَأَمَرَ أَنْ يُنْبَذَ فِي أَسْقِيَةِ الْأَدَمِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (دُبَّاءِ) দুববা লাউয়ের শুকনা খোলস দ্বারা তৈরি পাত্র।
(حَنْتَمِ) (হানতাম) মটকা জাতীয় সবুজ বর্ণের পাত্র বিশেষ।
(مُزَفَّتِ) (মুযাফফাত) এমন ধরনের পাত্র যা ভিতরে কিংবা বাইরে আলকাতরা লেপিয়ে দেয়া হয়।
(نَقِيرِ) (নাক্বীর) খেজুর গাছের মূলের দ্বারা নির্মিত পাত্র।
মূলত এগুলো তৎকালীন ‘আরবরা মদ তৈরির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করত। ইসলামে মদ হারাম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্ত পাত্রের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কারণ পাত্রগুলোতে নবীয প্রস্তুত করলে তা খুব তাড়াতাড়ি নেশায় বা মদে পরিণত হত। অতঃপর ইসলামের সময় দীর্ঘ হলে নেশা হারাম হওয়া স্পষ্ট হয়, আর প্রত্যেক পাত্রে নবীয বৈধতার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এ বিষয়ে সামনের হাদীসে আলোচনা আসছে। আর এ সংক্রান্ত আলোচনা ঈমান অধ্যায়ে বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাক্বী‘ ও নবীয সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪২৯১-[৬] বুরয়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কয়েক প্রকারের পাত্রের ব্যবহার নিষেধ করেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে কোন পাত্র হারাম বস্তুকে হালালে এবং হালাল বস্তুকে হারামে পরিণত করতে পারে না। অবশ্য নেশা সৃষ্টিকারী প্রত্যেক জিনিসই হারাম। অন্য এক বর্ণনার মধ্যে আছে, আমি তোমাদেরকে চামড়ার মশক ছাড়া অন্যান্য পাত্রে পানীয় প্রস্তুত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা প্রত্যেক প্রকারের পাত্রে পান করতে পার। তবে নেশা সৃষ্টিকারী কোন জিনিসই পান করবে না। (মুসলিম)[1]
بَابُ النَّقِيعِ وَالْأَنْبِذَةِ
وَعَن بُرَيْدَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «نَهَيْتُكُمْ عَنِ الظُّرُوفِ فَإِنَّ ظَرْفًا لَا يُحِلُّ شَيْئًا وَلَا يُحَرِّمُهُ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ» . وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «نَهَيْتُكُمْ عَنِ الْأَشْرِبَةِ إِلَّا فِي ظُرُوفِ الْأَدَمِ فَاشْرَبُوا فِي كُلِّ وِعَاءٍ غَيْرَ أَنْ لَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দুব্বা, হানতাম, মুযাফফাত, নাক্বীর- এগুলো ইসলামের প্রথমদিকে হারাম ছিল, কারণ এগুলোতে নবীয প্রস্তুত করলে খুব তাড়াতাড়ি মদে পরিণত হয়; এ আশঙ্কায় ব্যবহার হারাম করা হয়। পরে সময় দীর্ঘ হলে এবং নেশা স্পষ্ট হারাম হওয়ায় পাত্রগুলো ব্যবহারের নিষিদ্ধ রহিত হয় আর প্রত্যেক পাত্রে নবীয তৈরির অনুমোদন হয়; তবে শর্ত হলো মদ যেন পান না করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)