পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৬৩-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন নিঃশ্বাসে পান করতেন। অর্থাৎ- একবারে এক ঢোকে সবটুকু পান করতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
অবশ্য মুসলিম-এর রিওয়ায়াতের মধ্যে বর্ধিত আছে এবং তিনি বলেন, এভাবে পান করা তৃপ্তিদায়ক, স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ ও লঘুপাক।
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَنَفَّسُ فِي الشَّرَابِ ثَلَاثًا. مُتَّفق عَلَيْهِ. وزادَ مسلمُ فِي روايةٍ ويقولُ: «إِنَّه أرْوَى وأبرَأُ وأمرأ»
ব্যাখ্যাঃ ইমাম বাগাবী (রহিমাহুল্লাহ) ‘শারহুস্ সুন্নাহ্’ গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তিনবারে পানি পান করা। প্রতিবারে পাত্র থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে শ্বাস ফেলে নুতন করে পান শুরু করা। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের মধ্যে শ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (হাদীসের বর্ণনানুযায়ী) পান করার দ্বারা বেশি তৃষ্ণা নিবারণ হয়ে থাকে এবং খাদ্যের হজম, পরিপাকের উপর ক্ষমতা জাগিয়ে থাকে। পাকস্থলীর ধ্বংস এবং রগ-রেশার দুর্বলতা থেকে সংরক্ষণ হয়ে থাকে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا দু‘বার অথাব তিনবার, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক শ্বাসে পানি পান করা শেষ করতেন না। বরং দুই শ্বাসে পানি পান করে তৃপ্ত হলে তাহলে আর পান করতেন না। আর তৃপ্ত না হলে তৃতীয়বার পান করতেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৪২৬৩)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৬৪-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকের মুখ হতে (মুখ লাগিয়ে) পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَن الشّرْب من قي السقاء
ব্যাখ্যাঃ মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ একই সাথে পাকস্থলীতে পানি যেয়ে ক্ষতি সাধন করে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন শ্বাসে পানি পান করতে বলেছেন। যেমনটি পূর্বের হাদীসে বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
অত্র হাদীসে উপদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। কেননা মশকের বা কলসের মুখে মুখ লাগিয়ে পান করলে ভিতরে কি আছে তা দেখা যায় না। হয়ত কোন অরুচিকর কিছু তার ভিতরে থাকতে পারে। অথবা সকলে একত্রে চলার সময় কেউ এ কাজ করলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে পানি পান করলে গলায় আটকে মৃত্যুরও সম্ভাবনা থাকে। কাজেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত মেনে চলা উচিত। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৬৫-[৩] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশক হতে ইখতিনাস করতে নিষেধ করেছেন। অপর এক রিওয়ায়াতের মধ্যে বর্ধিত আছে, ইখতিনাস হলো মশককে উল্টিয়ে ধরে তার মুখ হতে পানি পান করা। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ اخْتِنَاثِ الْأَسْقِيَةِ. زَادَ فِي رِوَايَةٍ: وَاخْتِنَاثُهَا: أَنْ يُقْلَبَ رَأْسُهَا ثُمَّ يُشْرَبَ مِنْهُ
ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দুর্গন্ধের কারণে এ কাজ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে, প্রতিনিয়ত এভাবে পানি পান করলে পাত্রের গন্ধ পরিবর্তন হয়ে যাবে।
এটাও বলা হয় যে, পানির পাত্রের মুখ প্রশস্ত হওয়ার কারণে পানকারীর ওপর যেন পড়ে না যায় সে জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে পান করতে নিষেধ করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭১৬; তুহফাতুল আহ্ওয়াবী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮৯০)
সকল ফকীহ একমত যে, এ নিষেধটি সতর্কতামূলক نَهْيُ تَنْزِيهٍ হারাম নিষেধ নয়। অতঃপর বলা হয়, এ নিষেধের কারণ হলো মশকের মুখে কোন ক্ষতিকর বস্তু থাকতে পারে যা তাকে কষ্ট দিবে, একই সাথে পাকস্থলীতে পানি যেয়ে ক্ষতি সাধন করতে পারে। এও বলা হয় যে, এভাবে পান করলে অন্যের কাছে অরুচিকর হতে পারে। এও বলা হয়েছে যে, এটা দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে অথবা এভাবে পান করাটা অরুচিকর। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ২০২৩)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৬৬-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ نَهَى أَنْ يَشْرَبَ الرَّجُلُ قَائِمًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৬৭-[৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউই যেন দাঁড়িয়ে পান না করে। যদি কেউ ভুলবশতঃ এরূপ করে, সে যেন বমি করে ফেলে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَشْرَبَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ قَائِمًا فَمَنْ نَسِيَ مِنْكُمْ فَلْيَسْتَقِئْ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ উক্ত হাদীসের মধ্যে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের মধ্যে যমযমের পানি এবং ওযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ বিরোধের সমাধানে ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দাঁড়িয়ে পান করা নিষেধের হাদীস মাকরূহে তানযীহীর উপর প্রযোজ্য, আর দাঁড়িয়ে পান করা (সম্পর্কিত হাদীস) হচ্ছে জায়িযের উপর প্রযোজ্য।
(فَمَنْ نَسِيَ مِنْكُمْ فَلْيَسْتَقِئْ) এখানে ভুলে দাঁড়িয়ে পান করলে বমি করে ফেলার নির্দেশ ওয়াজিব নয়, বরং মুস্তাহাব। যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পান করল তার ওপর মুস্তাহাব হলো বমি করে ফেলা। দলীল স্বরূপ এ সহীহ হাদীসটি। কেননা হাদীসটি কোন ওযরে ওয়াজিব না হলে মুস্তাহাব হবেই।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জ্ঞানীদের মধ্যে কোন ইখতিলাফ (মতভেদ) নেই যে, কোন ব্যক্তি ভুল করে দাঁড়িয়ে পান করলে তাকে বমি করা লাগবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়ত কোন ওযরের কারণে দাঁড়িয়ে পান করেছিলেন। ‘ইকরিমাহ্ (রহঃ) শপথ করে বলেন, সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহী অবস্থায় ছিলেন। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ২০২৪)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৬৮-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি এক বালতি যম্যমে্র পানি নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হলাম, তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِدَلْوٍ مِنْ مَاءِ زَمْزَمَ فَشَرِبَ وَهُوَ قَائِمٌ
ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি জায়িযের উপর প্রযোজ্য। যেমনটি ইমাম নাবাবীর কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এটারও সম্ভাবনা আছে যে, যমযমের পানি পান করার সময় মানুষের ভিড়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বসার মতো জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে পান করেন। এটাও সম্ভাবনা আছে যে, পরবর্তীতে দাঁড়িয়ে পান করার বিধানকে মানসূখ করা হয়েছে।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি কারও থেকে দাঁড়িয়ে পান করার হাদীসটি শুনলেন, তখন তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখেছিলাম, পরবর্তীতে তাঁকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করতেও শুনেছি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৬৯-[৭] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি যুহরের সালাত আদায় করলেন, অতঃপর জনগণের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ সমাধানের জন্য কূফার (মসজিদের) আঙ্গিনায় বসলেন। এমনকি ’আসর সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তারপর পানি আনা হলো। তিনি তার কিছুটা পান করলেন এবং নিজের হস্তদ্বয় ও মুখ ধুইলেন।বর্ণনাকারী তাঁর মাথা ও পদদ্বয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন (অর্থাৎ- উযূ করলেন)। অতঃপর উঠে দাঁড়ালেন এবং দাঁড়ানো অবস্থায় পাত্রের অবশিষ্ট পানি পান করলেন। পরে বললেন, লোকেরা দাঁড়িয়ে পানি পান করাকে মাকরূহ মনে করে, অথচ আমি যেরূপ করেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও অনুরূপ করেছেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّهُ صَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ قَعَدَ فِي حَوَائِجِ النَّاسِ فِي رَحَبَةِ الْكُوفَةِ حَتَّى حَضَرَتْ صَلَاةُ الْعَصْرِ ثُمَّ أُتِيَ بِمَاءٍ فَشَرِبَ وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ وَذَكَرَ رَأسه وَرجلَيْهِ ثمَّ قَامَ فَشرب فَصله وَهُوَ قَائِمٌ ثُمَّ قَالَ: إِنَّ أُنَاسًا يَكْرَهُونَ الشُّرْبَ قَائِمًا وَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যাঃ হাদীসে উল্লেখিত উযূর পদ্ধতি সম্পর্কে সুনানে নাসায়ীতে বলা হয়েছে, وَهٰذَا وُضُوءُ مَنْ لَمْ يُحْدِثْ এটা হলো ঐ ব্যক্তির উযূর পদ্ধতি যার উযূ নষ্ট হয়নি। এটি সহীহুল বুখারীর শর্তানুযায়ী সহীহ। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬১৬)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৭০-[৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসারীর নিকট গেলেন। তাঁর সঙ্গে একজন সাথী ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম করলেন এবং লোকটি সালামের জবাব দিলো। এ সময় সে তার বাগানে পানি দিচ্ছিল। তখন (লোকটির উদ্দেশে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার কাছে রাত্রের মশকে রাখা বাসি পানি আছে কি? অন্যথায় আমরা (এতে) মুখ লাগিয়ে পান করব। সে বলল, আমার কাছে রাত্রে মশকে রাখা পানি আছে। অতঃপর সে তার ঝুপড়িতে গেল এবং একটি পেয়ালায় পানি ঢালল, এরপর তাতে গৃহপালিত বকরী দোহন করল। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেন। সে আবার তাতে (পানীয়) নিলো এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যে সাহাবী ছিলেন তিনি তা পান করলেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ وَمَعَهُ صَاحِبٌ لَهُ فَسَلَّمَ فَرَدَّ الرَّجُلُ وَهُوَ يُحَوِّلُ الْمَاءَ فِي حَائِطٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ كَانَ عِنْدَكَ مَاءٌ بَاتَ فِي شَنَّةٍ وَإِلَّا كَرَعْنَا؟» فَقَالَ: عِنْدِي مَاءٌ بَاتَ فِي شَنٍّ فَانْطَلَقَ إِلَى الْعَرِيشِ فَسَكَبَ فِي قَدَحٍ مَاءً ثُمَّ حَلَبَ عَلَيْهِ مِنْ دَاجِنٍ فَشَرِبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ أَعَادَ فَشَرِبَ الرَّجُلُ الَّذِي جَاءَ مَعَهُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ (دَخَلَ عَلٰى رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ) জনৈক আনসারের বাড়ীতে প্রবেশ করলেন। তিনি হলেন আবুল হায়সাম ইবনু আত্তিহান আনসারী।
অপর এক বর্ণনায় আছে, أَنَّ رَسُولَ اللهِ أصَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَتٰى قَوْمًا مِنَ الْأَنْصَارِ يَعُودُ مَرِيضًا রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারী কওমের নিকট এসেছিলেন যাতে তাদের অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখাশুনা করতে পারেন। (মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১৪৭০৮)
(إِنَّ كَانَ عِنْدَكَ مَاءٌ بَاتَ فِىْ شَنَّةٍ) তোমার কাছে রাত্রে মশকে রাখা বাসি পানি আছে কি? বাসি পানি চাওয়ার হিকমাহ্ হলো সে পানি অধিক ঠাণ্ডা এবং পরিষ্কার হয়। আর পানির সাথে দুধ মিশানোর উদ্দেশ্য হলো তা গরমের দিনে ছিল যেমনটি ঘটেছিল আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে রাখালের।
আমি ভাষ্যকার বলি : ঘটনা দু’টি আবূ বকর (রাঃ)-এর দুধ মিশানো প্রচণ্ড গরমের কারণে। আর আনসারীর খাদ্য হলো তিনি চাচ্ছিলেন শুধুমাত্র পানি পান করাবেন না এবং দুধও আপ্যায়ন করাবেন সাথে অন্যান্য।
(وَإِلَّا كَرَعْنَا؟) অন্যথায় মুখ লাগিয়ে যা পান করব, যেমন চতুষ্পদ জন্তু নদীতে বা বিলে সরাসরি মুখ লাগিয়ে পান করে। (ফাতহুল বারী ১ম খন্ড, হাঃ ৫৬১৩)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৭১-[৯] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রৌপ্য পাত্রে পান করে, বস্তুত সে যেন তার পেটের মধ্যে জাহান্নামের আগুনের ঢোক গিলে নেয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
আর মুসলিম-এর রিওয়ায়াতে আছে, যে ব্যক্তি রৌপ্য ও স্বর্ণের পাত্রে পানাহার করে.....।
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الَّذِي يَشْرَبُ فِي آنِيَةِ الْفِضَّةِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: «إِنَّ الَّذِي يَأْكُلُ وَيَشْرَبُ فِي آنِية الْفضة وَالذَّهَب»
ব্যাখ্যাঃ (الَّذِىْ يَشْرَبُ فِىْ آنِيَةِ الْفِضَّةِ) যে ব্যক্তি রৌপ্য পাত্রে পান করে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, مَنْ شَرِبَ فِي إِنَاءٍ مِنْ ذَهَبٍ، أَوْ فِضَّةٍ যে পান করে স্বর্ণ রৌপ্যে পাত্রে। (সহীহ মুসলিম হাঃ ২-[২০৬৫])
(إِنَّمَا يُجَرْجِرُ) এটা এমন একটি আওয়াজ যা উট পুনারাবৃত্তি করে যাবাহের সময়।
অনুরূপ আওয়াজ ঘোড়ার চোয়ালে লাগাম লাগানোর সময় যা করে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৩৪)
আর পানীয়কে আগুন নামকরণের কারণ হলো কেননা তা সে দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامٰى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِىْ بُطُونِهِمْ نَارًا
‘‘যারা ইয়াতীমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে...।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১০)।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসের মর্মার্থের বিষয়ে মতানৈক্য হলো কারও মতে এটা কাফিরদের জন্য সংবাদ। চাই তারা অনারবী রাষ্ট্রে হোক বা অন্য কোন রাষ্ট্রে হোক যারা অভ্যাসগতভাবে এমনটি করে থাকে। যেমন অন্য হাদীসে এসেছে, هِيَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَكُمْ فِي الْآخِرَةِ এটা কাফিরদের জন্য দুনিয়াতে আর তোমাদের জন্য আখিরাতে অনুরূপ রেশমী কাপড়ের ব্যাপারে। এটা কাফিররা দুনিয়াতে পরিধান করবে আখিরাতে তাদের জন্য হবে না।
আবার কারও মতে : এ নিষেধাজ্ঞা মুসলিমদের জন্য আর এই নিষেধাজ্ঞা শাস্তিকে ওয়াজিব করে, আল্লাহ তা ক্ষমাও করতে পারেন। এটা কাযীর ভাষ্য। সঠিক হলো এই নিষেধাজ্ঞা সকলের জন্য চাই মুসলিম হোক আর কাফির হোক। আর বাস্তব হলো শারী‘আতের শাখা-প্রশাখার বিষয়ে কাফিরদের জন্যও প্রযোজ্য।
আর সকল মুসলিম ঐকমত্য পোষণ করেছেন স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে খাওয়া ও পান করা হারাম। চাই পুরুষ হোক আর নারী হোক। এ ব্যাপারে কেউ মতানৈক্য করেনি, তবে ‘ইরাকীরা বলেনঃ শাফি‘ঈদের পুরাতন বক্তব্য হলো তা অপছন্দ তথা ঘৃণিত, হারাম না। আর দাঊদ জাহিরী হতে বর্ণনা করেন, পানীয় হারাম। খাওয়া বৈধ আর সকল কার্যক্রম বৈধ। তবে এ দু’ বর্ণিত বক্তব্য বাতিল তথা অগ্রহণযোগ্য। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৬৫)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৭২-[১০] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমরা মোটা কিংবা মিহি রেশমী বস্ত্র পরিধান করো না এবং সোনা ও রূপার পেয়ালায় পান করো না। আর তামার পাত্রে খেয়ো না। কেননা এগুলো হলো তাদের (কাফিরদের) জন্য দুনিয়াতে আর তোমাদের (মু’মিনদের) জন্য এগুলো হলো আখিরাতে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تَلْبَسُوا الْحَرِيرَ وَلَا الدِّيبَاجَ وَلَا تَشْرَبُوا فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَا تَأْكُلُوا فِي صِحَافِهَا فَإِنَّهَا لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَهِيَ لَكُمْ فِي الْآخِرَةِ»
ব্যাখ্যাঃ (دِيبَاجٌ) ‘দীবাজ’ হলো রেশমীরই প্রকার। রেশমী হতে পৃথক করার কারণ হলো কাপড়ের কোন একপাশে চার আঙ্গুল পরিমাণ তথা সামান্য পরিমাণ রেশমী থাকলে তা দীবাজ হিসেবে পরিচিত।
আর এটা কখনো কখনো যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করা বৈধ চুলকানী ও উকুন হতে বেঁচে থাকার জন্য।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসটি দলীল হিসেবে প্রমাণিত তাদের বিরুদ্ধে যারা বলে কাফিররা শারী‘আতের শাখা-প্রশাখার ব্যাপারে সম্বোধিত না। কেননা হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়নি তাদের জন্য বৈধ। বরং তারা অভ্যাসগত ব্যবহার করে থাকে সেটি বর্ণিত হয়েছে যদিও তাদের জন্য হারাম যেমনটি মুসলিমদের জন্য হারাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৭৩-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য একটি গৃহপালিত বকরীর দুধ দোহন করা হলো এবং তাতে আনাস (রাঃ)-এর কূপের পানি মিশানো হলো। অতঃপর তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে পেশ করা হল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা পান করলেন। এ সময় তাঁর বাম পার্শ্বে ছিলেন আবূ বকর(রাঃ) এবং ডানে ছিল এক বেদুঈন। তখন ’উমার(রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! (অবশিষ্ট) আবূ বকর (রাঃ)-কে প্রদান করুন। কিন্তু তিনি তাঁর ডান পার্শ্বের সে বেদুঈনকেই দিলেন। অতঃপর বললেনঃ ডানদিকের ব্যক্তিরই হক প্রথমে। অপর এক রিওয়ায়াতে বর্ণিত। ডানে যারা রয়েছে, তারপর ডানে যারা রয়েছে তারা হকদার। সাবধান! ডান পার্শ্বওয়ালাদের অগ্রাধিকার দাও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَن أنسٍ قَالَ: حُلِبَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةٌ دَاجِنٌ وَشِيبَ لَبَنُهَا بِمَاءٍ مِنَ الْبِئْرِ الَّتِي فِي دَارِ أَنَسٍ فَأُعْطِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَدَحَ فَشَرِبَ وَعَلَى يَسَارِهِ أَبُو بَكْرٍ وَعَنْ يَمِينِهِ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ عُمَرُ: أَعْطِ أَبَا بَكْرٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَعْطَى الْأَعْرَابِيَّ الَّذِي عَنْ يَمِينِهِ ثُمَّ قَالَ: الْأَيْمَنُ فَالْأَيْمَنُ وَفِي رِوَايَةٍ: «الْأَيْمَنُونَ الْأَيْمَنُونَ أَلاَ فيَمِّنوا»
ব্যাখ্যাঃ অন্য বর্ণনায় এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দুধের পেয়ালা নিয়ে আসা হলো তিনি তা হতে পান করলেন এবং তাঁর ডানপার্শ্বে ছিল একটি বালক আর বামপার্শ্বে ছিল প্রবীণ ও বয়স্ক লোকজন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বৎস! তুমি কি আমাকে অনুমতি দিবে যে, আমি আমার অবশিষ্টাংশটুকু এ সমস্ত প্রবীণদেরকে প্রদান করব? সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! না। আল্লাহর কসম আমার অংশ অন্য কাউকে অগ্রাধিকার দিব না।
এ সমস্ত হাদীসে প্রমাণিত হয়, এটা সুস্পষ্ট সুন্নাহ্ সে ডানই প্রাধান্য পাবে সকল প্রকার সম্মানের ক্ষেত্রে। পানীয়ের ক্ষেত্রে অনুরূপ সকল ক্ষেত্রে ডান দিকই প্রাধান্য পাবে। যদিও ছোট অথবা অপেক্ষাকৃত কম মর্যাদাসম্পন্ন হয়। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রাম্যলোক ও ছোট বালককে আবূ বকর (রাঃ)-এর ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। আর অন্যান্য সময়ে সমতার ক্ষেত্রে সম্মানিত ও বয়স্ক প্রাধান্য পাবে, এজন্য সালাতে ইমামতিতে সমতায় বয়স্কলোক প্রাধান্য পাবে। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ৪২৭৩)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা
৪২৭৪-[১২] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে (দুধের) একটি পেয়ালা পেশ করা হলো, তিনি তা হতে কিছু পান করলেন। তাঁর ডানে ছিল উপস্থিত জনতার মধ্যে সর্বাপেক্ষা ছোট একটি বালক। আর প্রবীণ ও বয়স্ক লোকজন ছিলেন তাঁর বামে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বালকটিকে বললেনঃ হে বৎস! তুমি কি আমাকে এ অনুমতি দেবে যে, আমি আমার অবশিষ্টটুকু এ সমস্ত প্রবীণদেরকে (অগ্রে) প্রদান করি? সে বলল : হে আল্লাহর রসূল! আপনার অবশিষ্টের ব্যাপারে আমি কাউকেও অগ্রাধিকার দেব না। (বর্ণনাকারী বলেনঃ) তখন তিনি পেয়ালাটি বালকটিকে দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
এ প্রসঙ্গে আবূ কতাদাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস ইন্শা-আল্লাহ আমি ’’মু’জিযাত’’ (অলৌকিক ঘটনাবলী)-এর অধ্যায়ে উল্লেখ করব।
بَابُ الْأَشْرِبَةِ
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: أَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحٍ فَشَرِبَ مِنْهُ وَعَنْ يَمِينِهِ غُلَامٌ أَصْغَرُ الْقَوْمِ وَالْأَشْيَاخُ عَنْ يَسَارِهِ فَقَالَ: «يَا غُلَامُ أَتَأْذَنُ أَنْ أُعْطِيَهُ الْأَشْيَاخَ؟» فَقَالَ: مَا كُنْتُ لِأُوثِرَ بِفَضْلٍ مِنْكَ أَحَدًا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأعْطَاهُ إِيَّاه
وَحَدِيث أبي قتادةَ سنذكر فِي «بَابِ الْمُعْجِزَاتِ» إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى