পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুকুর সম্পর্কে বর্ণনা

৪০৯৮-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গবাদিপশু পাহারাদানকারী কিংবা শিকারী কুকুর ছাড়া অন্য কোন কুকুর পোষে, প্রতিদিন তার ’আমল হতে দু’ ক্বীরাত্ব পরিমাণ হ্রাস পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ الْكَلْبِ

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «مَنِ اقْتَنَى كَلْبًا إِلَّا كَلْبَ مَاشِيَةٍ أَوْ ضَارٍ نَقَصَ مِنْ عَمَلِهِ كُلَّ يَوْمٍ قِيرَاطَانِ»

عن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من اقتنى كلبا الا كلب ماشية او ضار نقص من عمله كل يوم قيراطان»

ব্যাখ্যাঃ কুকুর পালন করলে নেকী কমে যাওয়ার কারণ নিয়ে ‘উলামার মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। কারো মতে বাড়ীতে কুকুর থাকলে মালাক (ফেরেশতা) না প্রবেশ করার কারণে নেকী কমে যাবে। কেউ কেউ বলেছেন, কুকুর প্রতিপালনের কারণে পথ চলা ব্যক্তিদের যে ক্ষতি পৌঁছে তার কারণে নেকী কমবে। আবার কারো মতে, এটি কুকুর পালনকারীর শাস্তিস্বরূপ, কারণ শিকারী কিংবা সেচন কাজে ব্যবহার ছাড়া কুকুর প্রতিপালন নিষেধ, এটি অমান্য করার কারণে তার ‘আমল থেকে নেকী কমতে থাকবে। আল্লাহই ভালো জানেন। (শারহুন নাবাবী ১০ম খন্ড, হাঃ ১৫৭৪/৫০)


হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুকুর সম্পর্কে বর্ণনা

৪০৯৯-[২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গবাদিপশু পাহারাদানকারী কিংবা শিকারের জন্য নিয়োজিত অথবা খেত-খামারের ফসলাদি রক্ষণাবেক্ষণকারী কুকুর ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশে কুকুর পালে, প্রতিদিন তার ’আমলের সাওয়াব হতে এক ক্বীরাত্ব পরিমাণ কমে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ الْكَلْبِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «من اتَّخَذَ كَلْبًا إِلَّا كَلْبَ مَاشِيَةٍ أَوْ صَيْدٍ أَو زرعٍ انتقَصَ منْ أجرِه كلَّ يومٍ قِيرَاط»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من اتخذ كلبا الا كلب ماشية او صيد او زرع انتقص من اجره كل يوم قيراط»

ব্যাখ্যাঃ মুসলিম ও নাসায়ীর বর্ণনায় আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, যে ব্যক্তি এমন কুকুর পালবে যা শিকারী কিংবা সেচন কাজ অথবা পাহারার জন্য ব্যবহার করা হয় না। এ কুকুর পালনে প্রতিদিন দুই ক্বীরাত্ব করে নেকী কমে যাবে। এছাড়া আবূ হাযিম থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, বাড়ীওয়ালা তার বাড়ীতে কুকুর বেঁধে রাখবে যা শিকারী কিংবা পাহারাদার নয় তাহলে পালনেওয়ালার ‘আমল থেকে প্রতিদিন দুই ক্বীরাত্ব নেকী কমতে থাকবে।

আলোচ্য হাদীসে প্রতীয়মান হয় যে, শিকারী ও পাহারার জন্য কুকুর গ্রহণ করা বৈধ। ক্ষেত খামারের ক্ষেত্রেই অনুরূপ বিধান প্রযোজ্য। কেননা কুকুর এ সকল ক্ষেত্রে রক্ষণশীল বেশি। এছাড়া অন্য কোন কাজের জন্য কুকুর প্রতিপালন করা অপছন্দনীয়।

উল্লেখিত হাদীসে কুকুর প্রতিপালনের এক ক্বীরাত্ব নেকী কমে যাওয়ার কথা রয়েছে। আবার অন্য বর্ণনায় দুই ক্বীরাত্ব নেকী কমে যাওয়ার কথা রয়েছে। এর কারণ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে এক ক্বীরাত্ব কমে যাওয়ার কথা বলেছেন, প্রথম রাবী এটা শ্রবণ করে হুবহু তিনি বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তীতে দুই ক্বীরাত্ব কমে যাওয়ার কথা বলেছেন, দ্বিতীয় রাবী তা শ্রবণ করেই বর্ণনা করেছেন। আবার কারো মতে দু’টি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দু’টি বিধান অবতীর্ণ হয়েছে। দুই ক্বীরাত্ব কমে যাওয়া কুকুর দ্বারা ক্ষতির আধিক্য উদ্দেশ্য, অর্থাৎ যে কুকুর দ্বারা মানুষের ক্ষতি বেশি সে কুকুর প্রতিপালনে দুই ক্বীরাত্ব নেকী কমবে। আর যে কুকুর দ্বারা মানুষের ক্ষতি কম হয় তা প্রতিপালনে এক ক্বীরাত্ব নেকী কমবে। কেউ কেউ বলেছেন, মদীনাহ্ আশ্ শারীফায় হলে কুকুর প্রতিপালন করলে দুই ক্বীরাত্ব কমবে আর মদীনার বাইরে হলে এক ক্বীরাত্ব কমবে। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৩২২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুকুর সম্পর্কে বর্ণনা

৪১০০-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (মদীনার) সমস্ত কুকুর মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিলেন। ফলে মফস্বল হতে যে মহিলাটি কুকুরসহ আগমন করত, আমরা তাকেও হত্যা করতাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল কুকুর বধ করতে নিষেধ করেন এবং বললেন, তোমরা কেবলমাত্র ঐ সমস্ত কুকুর বধ করো, যেগুলো মিশমিশে কালো এবং দু’ চোখের উপরিভাগে দু’টি সাদা ফোঁটার চিহ্ন আছে। কেননা তা শয়তান। (মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ الْكَلْبِ

وَعَن جَابر قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَتْلِ الْكِلَابِ حَتَّى إِنَّ الْمَرْأَةَ تَقْدَمُ منَ البادِيةِ بكلبِها فتقتلَه ثُمَّ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ قَتْلِهَا وَقَالَ: «عَلَيْكُمْ بِالْأَسْوَدِ الْبَهِيمِ ذِي النقطتين فَإِنَّهُ شَيْطَان» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال: امرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم بقتل الكلاب حتى ان المراة تقدم من البادية بكلبها فتقتله ثم نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن قتلها وقال: «عليكم بالاسود البهيم ذي النقطتين فانه شيطان» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ এখানে কালো কুকুর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে কুকুরের শরীরে কোন ধরনের সাদা বর্ণ নেই। কোন কোন ‘উলামা এ বৈশিষ্ট্যধারী কুকুর শিকারীর কাজে ব্যবহার করতেও অনিহা প্রকাশ করেছেন, হাদীসে কুকুরকে শয়তানের সাথে তুলনা করার কারণ হলো, কালো বর্ণের কুকুরগুলো সর্বনিকৃষ্ট, এগুলোর অনিষ্টতা বেশি ও উপকার অতি নগণ্য।

শারহুস্ সুন্নাহ্য় রয়েছে কুকুর হত্যার নির্দেশ দ্বারা মদীনার কুকুর উদ্দেশ্য, কারণ মদীনাতুল মুনাওয়ারায় মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ওয়াহী দ্বারা বেষ্টন করে রাখে, আর যে বাড়ীতে কুকুর থাকে সে বাড়ীতে তো মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করে না। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৮৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুকুর সম্পর্কে বর্ণনা

৪১০১-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিকারী কুকুর কিংবা মেষ-দুম্বা পাহারাদানকারী কুকুর অথবা গবাদিপশু পাহারায় নিয়োজিত কুকুর ছাড়া অন্যান্য সব কুকুর বধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ ذِكْرِ الْكَلْبِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِقَتْلِ الْكِلَابِ إِلَّا كَلْبَ صيدٍ أَو كلب غنم أَو مَاشِيَة

وعن ابن عمر ان النبي صلى الله عليه وسلم امر بقتل الكلاب الا كلب صيد او كلب غنم او ماشية

ব্যাখ্যাঃ ইমাম আল হারামায়ন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাথমিক পর্যায়ে সকল কুকুর হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর এটা রহিত করা হয়। অতঃপর গাঢ় কালো কুকুর ব্যতীত অন্যান্য কুকুর হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। অতঃপর শারী‘আহ্ এ মর্মে স্বীকৃতি দেয় যে, যে সকল কুকুরের মাঝে কোন ক্ষতির আশংকা নেই সে সব কুকুর মারা নিষেধ, চাই তা কালো হোক বা না হোক।

আর কুকুর প্রতিপালনের যে বিষয়টা রয়েছে আমাদের সিদ্ধান্ত হলো, বিনা প্রয়োজনে কুকুর পালন করা হারাম। তবে শিকারী, ক্ষেত খামার পাহারা বা সেচন কাজের জন্য কুকুর পালন করা জায়িয।

এছাড়া বাড়ী পাহারা বা প্রহরী কিংবা এ জাতীয় কাজে কুকুর প্রতিপালন করা যাবে কিনা- এ বাপারে দু’টি দিক রয়েছে।

১. হাদীসগুলোর বাহ্যিক দিক বিবেচনায় ক্ষেতের, পাহারা, সেচন কাজে ব্যবহৃত কুকুর ও শিকারী কুকুর- এ তিনটি ছাড়া কোন কাজের জন্য কুকুর প্রতিপালন জায়িয নেই।

২. হাদীসে উল্লেখিত তিনটি বিষয়ের উপর ক্বিয়াস করে কারণ বিবেচনায় জায়িয। অর্থাৎ প্রয়োজন থাকলে জায়িয এবং এটাই বিশুদ্ধ। (শারহুন নাবাবী ১০ম খন্ড, হাঃ ১৫৭১/৪৬)


হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে