পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান
৩৯৩৩-[৮] নু’মান ইবনু মুকররিন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে জিহাদে শরীক ছিলাম এবং তাঁকে দেখেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দিনের প্রথমভাগে কোনো যুদ্ধে লড়াই শুরু করতে না পারলে অপেক্ষা করতেন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া এবং মৃদু বাতাস প্রবাহিত হওয়া, আর আল্লাহর সাহায্য অবতীর্ণের সময় হওয়া পর্যন্ত। (আবূ দাঊদ)[1]
عَن النُّعْمَان بن مقرن قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ إِذَا لَمْ يُقَاتِلْ أَوَّلَ النَّهَارِ انْتَظَرَ حَتَّى تَزُولَ الشَّمْسُ وَتَهُبَّ الرِّيَاحُ وينزِلَ النَّصرُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (وَيَنْزِلَ النَّصْرُ) ‘‘এবং সাহায্য অবতীর্ণ হয়’’ অর্থাৎ- বিজয়ের বায়ু প্রবাহিত হয়। অথবা মুজাহিদগণ সালাতের মধ্যে আল্লাহর সমীপে বিজয়ের জন্য আবেদন করার ফলে বিজয় অবতরণ হয়, অর্থাৎ বিজয়ের সময় আসে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪৪২)
হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এই যে, সূর্য ঢলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন যাতে সালাতের সময় হয় আর তখন দু‘আ কবুল হওয়ার আশা করা যায়।
অনুরূপভাব সূর্য ঢলে যাওয়ার পর বায়ু প্রবাহিত হয় যা বিজয়ের বায়ু যেমনটি ঘটেছিল খন্দাকের যুদ্ধে। ফলে এই সময়ের বায়ু বিজয়ের বলে পরিগণিত হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৫২)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান
৩৯৩৪-[৯] কাতাদাহ সূত্রে নু’মান ইবনু মুকররিন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাঁকে দেখতাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের সময় হলে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ হতে বিরত থাকতেন। যখন সূর্য উদিত হয়ে যেত, তখন যুদ্ধ শুরু করতেন। আবার মধ্যাহ্ন হলে যুদ্ধ বন্ধ রাখতেন, যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ত। আবার সূর্য যখন পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ত, তখন (যুহরের সালাত আদায় করে) ’আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতেন। অতঃপর ’আসরের সালাতের জন্য বিরতি দিতেন এবং সালাত শেষে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করতেন। (রাবী কাতাদাহ বলেন) সাহাবায়ে কিরামগণ বলতেন, সে সময় আল্লাহর পক্ষ হতে বিজয়ের বাতাস প্রবাহিত হতো। আর মু’মিনগণ তাদের সালাতে নিজেদের সৈন্যদলের জন্য দু’আ করতেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَن قتادةَ عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ مُقَرِّنٍ قَالَ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ أَمْسَكَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَإِذَا طَلَعَتْ قَاتَلَ فَإِذَا انْتَصَفَ النَّهَارُ أَمْسَكَ حَتَّى تَزُولَ الشَّمْسُ فَإِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ قَاتَلَ حَتَّى الْعَصْرِ ثُمَّ أَمْسَكَ حَتَّى يُصَلَّى الْعَصْرُ ثُمَّ يُقَاتِلُ قَالَ قَتَادَةُ: كَانَ يُقَالُ: عِنْدَ ذَلِكَ تُهِيجُ رِيَاحُ النَّصْرِ وَيَدْعُو الْمُؤْمِنُونَ لِجُيُوشِهِمْ فِي صلَاتهم. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (كَانَ يُقَالُ : عِنْدَ ذٰلِكَ تَهِيجُ رِيَاحُ النَّصْرِ) বলা হয়েছে, এ সময় বিজয়ের বায়ু প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ- সাহাবীগণ বলতেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার হিকমাত এই যে, সূর্য ঢলার পর থেকে বিজয়ের বায়ু প্রবাহিত হয়। সাহাবীদের এ কথা সমর্থন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণী «نُصِرْتُ بِالصَّبَا» পূবালী বায়ু দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।
(وَيَدْعُو الْمُؤْمِنُونَ لِجُيُوشِهِمْ فِىْ صلَاتِهِمْ) আর মুসলিমগণ সালাতের মধ্যে তাদের সেনাবাহিনীর বিজয়ের জন্য দু‘আ করতেন। অর্থাৎ- তারা সালাত শেষে অথবা সালাতের ভিতরেই ইসলামী বাহিনীর বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৬১২)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান
৩৯৩৫-[১০] ’ইসামুল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এক অভিযানে সৈন্যদলের সাথে পাঠিয়ে উপদেশ দিলেন যে, যখন তোমরা কোনো অঞ্চলে মসজিদ দেখবে কিংবা আযান শুনবে, তখন সে অঞ্চলে কাউকেও হত্যা করবে না (সাবধানতা অবলম্বন করবে)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عصامٍ المزنيِّ قَالَ بَعَثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَرِيَّةٍ فَقَالَ: «إِذَا رَأَيْتُمْ مَسْجِدًا أَوْ سَمِعْتُمْ مُؤَذِّنًا فَلَا تَقْتُلُوا أَحَدًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ইসলামী প্রতীকের কোনো আলামত সম্পর্কে যখন নিশ্চিত অবহিত হতে পারবে তা কর্মগতই হোক অথবা বক্তব্যগতই হোক তখন তোমরা কাউকেই হত্যা করবে না যতক্ষণ যতক্ষণ পর্যন্ত মু’মিনদের মধ্যে থেকে কাফিরদেরকে সুস্পষ্টভাবে পৃথক না করা যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম শাওকানী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, কোনো এলাকায় মসজিদ থাকাটাই প্রমাণ করে যে, ঐ অঞ্চলের লোক মুসলিম। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৩২)