পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৪৩-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (একবার) মদ পান করে, আল্লাহ তা’আলার কাছে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত গৃহীত হয় না। তবে যদি সে তওবা্ করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার তওবা্ কবুল করেন। অতঃপর যদি সে (দ্বিতীয়বার) মদ পান করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করেন না। এরপরও যদি সে তওবা্ করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার তওবা্ কবুল করেন। তারপরও যদি সে (তৃতীয়বার) মদ পান করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করেন না। পুনরায়ও যদি সে তওবা্ করে, আল্লাহ তা’আলা তার তওবা্ কবুল করেন। অতঃপর যদি সে চতুর্থবার মদ পানের পুনরাবৃত্তি করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করেন না। এবারও যদি সে তওবা্ করে, আল্লাহ তা’আলা তার তওবা্ কবুল করবেন না এবং তাদেরকে জাহান্নামীদের রক্ত ও পুঁজের নহর হতে পান করাবেন। (তিরমিযী)[1]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم«مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ لَهُ صَلَاةَ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ. فَإِن عَاد لم يقبل الله لَهُ صَلَاة أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَإِن عَاد لم يقبل الله لَهُ صَلَاة أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَإِنْ عَادَ فِي الرَّابِعَةِ لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ لَهُ صَلَاة أَرْبَعِينَ صباحا فَإِن تَابَ لم يَتُبِ اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَقَاهُ مِنْ نَهْرِ الْخَبَالِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: সালাতকে উল্লেখ করার কারণ হলো সালাত সর্বোত্তম ‘ইবাদাত যখন সালাতই কবুল হবে না তখন অন্য কোনো ‘ইবাদাতও কবুল হবে না।
মুযহির বলেনঃ মূলতঃ ধমকানোর উদ্দেশে বলা হয়েছে যে, সালাত আদায় করলে ফরযের দায়িত্বমুক্ত হবে ঠিকই কিন্তু সাওয়াব লাভে বঞ্চিত হবে।
ইমাম নববী বলেনঃ প্রত্যেক আনুগত্য দু’টি দিক রয়েছে। দায়িত্ব থেকে মুক্ত অপরটি সাওয়াবের মর্যাদা অর্জন। আর সালাত কবুল না হওয়াতে সাওয়াবের মর্যাদা অর্জিত হয় না। চল্লিশ দিন বলার কারণ সম্ভবতঃ পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত মদের চিহ্ন পেটে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৪৪-[১১] আর নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী এ হাদীসটি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَاهُ النَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ عَنْ عَبْدِ الله بن عَمْرو
ব্যাখ্যা: مَا أَسْكَرَ যে কোনো বস্তু যদিও পানীয় না হয় যা নেশাগ্রস্ত করে তা হারাম। অধিক পরিমাণ ব্যবহার করলেও স্বল্প পরিমাণও হারাম।
উম্মাহ ঐকমত্য হয়েছে, আঙ্গুরের মদ যদি উথলে এবং ফেনা উঠে তা হারাম হবে এবং এর স্বল্পতেও হারাম হবে।
আর জুমহূরের নিকট আঙ্গুর ছাড়াও যে জিনিস অধিক পরিমাণ ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি করে তা স্বল্প ব্যবহার করলেও হারাম বলে অপরিহার্য হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৬৭৮)
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৪৫-[১২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে জিনিসে অতিমাত্রায় নেশা আনয়ন করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: হাদীসে সুস্পষ্ট প্রতিবাদ প্রমাণিত হয় হানাফীদের কেউ কেউ বলেন, যে পরিমাণ খেলে বা ব্যবহার করলে নেশাগ্রস্ত হয় তার চেয়ে কম পান করলে তা হারাম হবে না। এটা একটি বাতিল কথা যা সুস্পষ্ট হাদীস দ্বারা বাতিল বলে প্রমাণিত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮৬৫)
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৪৬-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে জিনিসে এক ’ফারক্ব’ পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে, তা হাতের অঞ্জলি পরিমাণ হলেও হারাম। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا أسكرَ مِنْهُ الفرْقُ فَمِلْءُ الْكَفِّ مِنْهُ حَرَامٌ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: খত্ত্বাবী বলেনঃ ফারক্ব বলতে ১৬ রিত্বল। নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ১৬ রিত্বল তথা ১২ মুদ্রা যা তিন সা‘। আহলে হিজাযদের নিকট কারো মতে ফার্ক্ব হলো পাঁচ ক্বিস্ত আর এক ক্বিস্ত সমান অর্ধেক সা‘।
ত্বীবী বলেনঃ এক ‘‘ফার্ক্ব’’ আর হাতের অঞ্জলি দ্বারা কম বেশী উদ্দেশ্য। নির্ধারিত কোনো পরিমাণ উদ্দেশ্য। খত্ত্বাবী বলেনঃ এটা সুস্পষ্ট বর্ণনা নেশাগ্রস্ত সামান্য পানীয় হারাম। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ৩৬৮৪)
[এক ফার্ক্ব পরিমাণ তিন সা‘। আর এক সা‘ সমান প্রায় ৩ কেজি ৩২৪ গ্রাম।]
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৪৭-[১৪] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় গম, যব, খেজুর, কিসমিস এবং মধু থেকেও মদ প্রস্তুত হয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্; ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ الْحِنْطَةِ خَمْرًا وَمِنَ الشَّعِيرِ خَمْرًا وَمِنَ التَّمْرِ خَمْرًا وَمِنَ الزَّبِيبِ خَمْرًا وَمِنَ الْعَسَلِ خَمْرًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: হাদীসের অর্থ এমনটি নয় যে, শুধুমাত্র এই পাঁচটি বস্তু থেকেই মদ প্রস্তুত হয়। খাস করার কারণ হলো সে সময় সাধারণ এসব বস্তু থেকে মদ প্রস্তুত হত। সুতরাং যেই বস্তু থেকে মদ তৈরি হোক না কেন চাই তা জোয়ার, সালাত বা গাছের নির্যাস থেকে তার হুকুম হারাম বলে বিবেচিত হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৬৭৩)
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৪৮-[১৫] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের নিকট জনৈক ইয়াতীমের কিছু মদ ছিল। অতঃপর যখন সূরা আল মায়িদাহ্ নাযিল হলো (অর্থাৎ- মদ হারাম হওয়ার আয়াত নাযিল হলো), তখন আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম এবং বললাম, এটাতো ইয়াতীমের মাল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবুও তা ঢেলে ফেল। (তিরমিযী)[1]
وَعَن أبي سعيدٍ الخدريِّ قَالَ: كانَ عندَنا خَمْرٌ لِيَتِيمٍ فَلَمَّا نَزَلَتِ (الْمَائِدَةُ)
سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْهُ وَقُلْتُ: إِنَّه ليَتيمٍ فَقَالَ: «أهْريقوهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীস দলীল হিসেবে প্রমাণিত হয় যে, মদের মালিকানা হওয়া যাবে না। তা আটকিয়ে রাখা যাবে না বরং তা তাৎক্ষণিক ঢেলে ফেলে দিতে হবে এবং এর দ্বারা কেউ উপকারও নিতে পারবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২৬৩)
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৪৯-[১৬] আনাস (রাঃ) আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর নবী! আমি ঐ সকল ইয়াতীমদের জন্য কিছু মদ ক্রয় করেছি, যারা আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হচ্ছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মদ ঢেলে ফেল এবং তার পাত্রগুলো ভেঙ্গে ফেল। (তিরমিযী; অবশ্য তিনি এ হাদীসটিকে য’ঈফ বলেছেন)[1]
আর আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে, আবূ ত্বলহাহ্ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, তার তত্ত্বাবধানে যে সকল ইয়াতীম আছে, উত্তরাধিকার সূত্রে তারা কিছু মদের মালিক হয়েছে (এমতাবস্থায় তা কি করব?) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা ফেলে দাও। আবূ ত্বলহাহ্ বললেনঃ আমি কি তা দিয়ে সিরকা বানাতে পারব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না।
وَعَنْ أَنَسٍ عَنْ أَبِي طَلْحَةَ: أَنَّهُ قَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنِّي اشْتَرَيْتُ خَمْرًا لِأَيْتَامٍ فِي حِجْرِي قَالَ: «أَهْرِقِ الْخَمْرَ وَاكْسِرِ الدِّنَانَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَضَعَّفَهُ. وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ: أَنه سَأَلَهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَيْتَامٍ وَرِثُوا خَمْرًا قَالَ: «أَهْرِقْهَا» . قَالَ: أَفَلَا أَجْعَلُهَا خلاًّ؟ قَالَ: «لَا»
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা শাওকানী বলেছেনঃ এটা জুমহূরের সুস্পষ্ট দলীল মদকে সিরকা করা বৈধ না এবং সিরকা করার মাধ্যমে মদ পবিত্র হয় না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৬৪৯)