পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৬৫-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মা’ইয আল আসলামী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, তিনি যিনা করেছেন। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তখন তিনি সেদিকে যেয়ে বললেন, তিনি যিনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবারও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তখন তিনি পুনরায় সেদিকে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যিনা করেছি। পরিশেষে চতুর্থবার (স্বীকারেক্তিতে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ’রজমের’ নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাকে ’হাররাহ্’ নামক এলাকায় নিয়ে তাকে রজম করা হলো। কিন্তু যখন তার শরীরে পাথর নিক্ষেপ করছিল তখন (অসহ্য যন্ত্রণায়) তিনি দৌড়িয়ে পালিয়ে গেলেন এবং এমন এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন যার হাতে উটের চোয়ালের হাড্ডি ছিল। তিনি তা দিয়ে তাকে আঘাত করল এবং অন্য লোকের আঘাতে সে মৃত্যুবরণ করল। অতঃপর লোকেরা ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বলল যে, তিনি পাথরের আঘাতে মৃত্যু ভয়ে পালাচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে কেন ছেড়ে দিলে না? (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, তোমরা কেন তাকে ছেড়ে ছিলে না? হতে পারে সে তওবা্ করত আর আল্লাহ তা’আলা তার তওবা্ কবুল করতেন।
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: جَاءَ مَاعِزٌ الْأَسْلَمِيُّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنَّه قدْ زَنى فأعرضَ عَنهُ ثمَّ جَاءَ مِنْ شِقِّهِ الْآخَرِ فَقَالَ: إِنَّهُ قَدْ زنى فَأَعْرض عَنهُ ثمَّ جَاءَ من شقَّه الْآخَرِ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ قَدْ زَنى فَأَمَرَ بِهِ فِي الرَّابِعَةِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْحَرَّةِ فَرُجِمَ بِالْحِجَارَةِ فَلَمَّا وَجَدَ مَسَّ الْحِجَارَةِ فَرَّ يَشْتَدُّ حَتَّى مَرَّ بِرَجُلٍ مَعَهُ لَحْيُ جَمَلٍ فَضَرَبَهُ بِهِ وَضَرَبَهُ النَّاسُ حَتَّى مَاتَ. فَذَكَرُوا ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنه فرحين وَجَدَ مَسَّ الْحِجَارَةِ وَمَسَّ الْمَوْتِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلَّا تَرَكْتُمُوهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَفِي رِوَايَةٍ: «هَلَّا تَرَكْتُمُوهُ لَعَلَّه أَن يَتُوب الله عَلَيْهِ»
ব্যাখ্যা: ইবনুল মালিক বলেনঃ যে লোক যিনার স্বীকারোক্তি করেছে যদি সে পরে এই কথা বলে যে, আমি পূর্বে মিথ্যা বলেছি বা আমি যিনা করিনি তখন তার ওপর থেকে ‘‘হাদ্দ’’ রহিত হয়ে যাবে। আর যদি শাস্তি দেয়ার সময় অস্বীকার করে তখন তার অবশিষ্ট শাস্তি দেয়া যাবে না। কিছু কিছু সংখ্যক ‘উলামাহ্ বলেন, ‘‘হাদ্দ’’ রহিত হবে না, অন্যথায় মা‘ইয সম্বন্ধে এ কথা বলতে হবে যে, তার পলায়নের পরেও তাকে হত্যা করাটা (قتل خطاء) তথা ভুলবশত হয়েছে যাতে হত্যাকারীদের আত্মীয়দের ওপর দিয়াত (রক্তমূল্য) ওয়াজিব হয়। এর উত্তর এই যে, এ ক্ষেত্রে সে তার স্বীকারোক্তি থেকে ফিরে গেছে বলে প্রকাশ পায়নি বরং পাথরের আঘাত অসহ্য হওয়ায় পলায়ন করেছে এবং হাদ্দ প্রয়োগের সময় পলায়ন করলে অবশিষ্ট হাদ্দ রহিত হয় না।
«هَلَّا تَرَكْتُمُوهُ» তোমরা তাকে ছেড়ে দিলে না কেন? মূলত এর রূপক অর্থ হলো: যে তার বিষয়টি লক্ষ্য করতো যে, সে পাথরের আঘাতে পলায়ন করছে না তার যিনার স্বীকারোক্তি থেকে ফিরে আসছে।
শারহুস্ সুন্নাহয় এসেছে: হাদীসে দলীল সাব্যস্ত হয় যে, যে ব্যক্তি যিনা করার স্বীকৃতি দেয় নিজের ওপর, অতঃপর হাদ্দ প্রয়োগের সময় স্বীকারোক্তি থেকে ফিরে আসে আর সে বলে আমি মিথ্যা বলেছি, আমি যিনা করিনি, তাহলে অবশিষ্ট হাদ্দ রহিত হয়ে যাবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪২৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৬৬-[১২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা’ইয ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললেন, তোমার ব্যাপারে আমার কাছে যে সংবাদ এসেছে, তা কি সত্য, তুমি কি অমুকের সাথে যিনা করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আর তিনি তা চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ’রজমের’ নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাকে রজম করা হয়। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ: «أَحَقٌّ مَا بَلَغَنِي عَنْكَ؟» قَالَ: وَمَا بَلَغَكَ عَنِّي؟ قَالَ: «بَلَغَنِي أَنَّكَ قَدْ وَقَعْتَ عَلَى جَارِيَةِ آلِ فُلَانٍ» قَالَ: نَعَمْ فَشَهِدَ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ فَأمر بهِ فرجم. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ত্বীবী বলেনঃ এ হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব থেকে মা‘ইয-এর ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন এবং পরে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছিল। কিন্তু পূর্বে বুরায়দাহ্ থেকে বর্ণিত হাদীসে পরিষ্কারভাবে বুঝা গেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুই অবগত ছিলেন না। সুতরাং এ বিরোধের উত্তর হলো এ বর্ণনাকারীগণ কখনো ঘটনা আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন আবার কখনো শুরু ও শেষাংশটি বর্ণনা করে ক্ষ্যান্ত হন। এ পর্যায়ে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ঘটনা কেবল শুরু ও শেষ বর্ণনা করে ক্ষ্যান্ত হয়েছেন। বিস্তারিত ঘটনার অবতারণা করেননি। সুতরাং উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৬৭-[১৩] ইয়াযীদ ইবনু নু’আয়ম (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মা’ইয নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে যিনায় লিপ্ত হওয়ার কথা চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ’রজমের’ নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হায্যাল-কে বললেন, তুমি যদি মা’ইয (রাঃ)-কে তোমার কাপড় দ্বারা আড়াল করতে (অপরাধ প্রকাশ না করতে), তবে তা তোমার জন্য উত্তম হতো। ইবনুল মুনকাদির বলেন, হাযযাল-ই মা’ইয (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এতদসম্পর্কে জানাতে বলেছিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ نُعَيْمٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ مَاعِزًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقَرَّ عِنْدَهُ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ فَأَمَرَ بِرَجْمِهِ وَقَالَ لِهَزَّالٍ: «لَوْ سَتَرْتَهُ بِثَوْبِكَ كَانَ خَيْرًا لَكَ» قَالَ ابْنُ الْمُنْكَدِرِ: إِنَّ هَزَّالًا أَمَرَ مَاعِزًا أَنْ يَأْتِيَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فيخبره. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (إِنَّ هَزَّالًا أَمَرَ مَاعِزًا أَنْ يَّأْتِىَ النَّبِىَّ ﷺ فَيُخْبِرَه) এই হায্যাল মা‘ইয -কে আদেশ করেছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে এসে উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করার জন্য। আর এটা এজন্য যে, মা‘ইয যে মেয়েটির সাথে যিনা করেছিল তার নাম ফাত্বিমাহ্ আর সে মুক্ত দাস ছিল। অতঃপর হাযযাল-এর বিষয়টি জানলে মা‘ইয-কে পরামর্শ দিলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার। মূলত সে চেয়েছে তার অপমান ও লাঞ্ছনা কিসাস স্বরূপ তার আযাদকৃত দাসীর সাথে এ আচরণের জন্য। কারো মতে এবং এটা অধিক গ্রহণযোগ্য এটা তার জন্য উপদেশ ছিল হায্যাল-এর পক্ষ থেকে যা তৃতীয় অনুচ্ছেদে আসবে দ্বিতীয় হাদীসে।
ইবনু হুমাম বলেনঃ বুখারী বর্ণনা করেছেন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ‘ সূত্রে।
مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللّٰهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الْاٰخِرَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللّٰهُ فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاللّٰهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا دَامَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ
যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাই-এর দুনিয়ার কোনো দুঃখ কষ্ট লাঘবে করে, আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে আখিরাতে দুঃখ কষ্ট লাঘব করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাই-এর দোষ-ত্রুটি গোপন করবে তার দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ সর্বদাই ঐ বান্দার সহযোগিতায় থাকেন যে বান্দা অপর ভাই এর সহযোগিতায় থাকেন।
আর আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে ‘উকবা বিন ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
أَنَّ النَّبِيُّ ﷺ مَنْ رَأَى أَيَّ عَوْرَةٍ فَسَتَرَهَا كَانَ كَمَا أَحْيَا مَوْءُودَةً
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো গোপন দোষ ত্রুটি দেখলো আর তা গোপন করলো, সে যেন প্রোথিত সন্তানকে জীবন দান করলো।
তবে গোপন করার বিষয়টি তখন প্রযোজ্য হবে যখন যিনাটা গোপন হবে আর সে এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারিণী যদি প্রকাশ্যভাবে করে এবং প্রচারণা চালায় তাহলে সমাজ থেকে পাপাচারের কর্মকা- উপড়ে ফেলার জন্য হাদ্দ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন, এক্ষেত্রে গোপন না করে সাক্ষ্য প্রদান করাই ওয়াজিব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৬৮-[১৪] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে সংঘটিত দণ্ডযোগ্য বিষয়সমূহ পরস্পরের মধ্যে ক্ষমা করে দাও এবং মিটিয়ে ফেল। কেননা যখন আমার নিকট দণ্ডের বিষয়টি পৌঁছবে তখন তা বাস্তবায়ন করা অবধারিত হয়ে যাবে। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تَعَافَوُا الْحُدُودَ فِيمَا بَيْنَكُمْ فَمَا بَلَغَنِي مِنْ حَدٍّ فَقَدْ وَجَبَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে সাব্যস্ত হয় যে, শাসকের জন্য হাদ্দ যা মাওকূফ করা বৈধ নয় যখন তার কাছে উপস্থাপন করা হয়। আর মুনীবের জন্য হাদ্দ প্রয়োগ করা তার দাসের ওপর বরং ক্ষমা করে দিবে অথবা বিষয়টি শাসকের নিকট উপস্থাপন করবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৩৬৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৬৯-[১৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সম্মানিত লোকেদের দণ্ডযোগ্য অপরাধ ব্যতীত সাধারণ ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أقيلوا ذَوي الهيآت عثراتهم إِلَّا الْحُدُود» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (أَقِيْلُوْا) ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখো, (ذَوِى الْهَيْئَاتِ) সম্মানিত ব্যক্তি ও প্রশংসিত স্বভাবের অধিকারী ইবনু মালিক বলেনঃ যে সকল মানুষ সুন্দর চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত।
(إِلَّا الْحُدُوْدَ) ‘যা হাদ্দকে ওয়াজিব করে’ সম্বন্ধে ব্যক্তিরা হলো শাসক ও অন্যান্যরা যাদের ওপর শাস্তি ও বিচার প্রয়োগ করা অপরিহার্য।
(عَثَرَاتِ) দ্বারা উদ্দেশ্য পদস্খলনের কারণে আল্লাহর অধিকারসমূহের কোনো অধিকার নষ্ট করার মাধ্যমে বা মানুষের কোনো অধিকার নষ্টের মাধ্যমে। আবার কারো মতে সগীরাহ্ গুনাহ বা ছোট গুনাহ উদ্দেশ্য। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৩৬৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭০-[১৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের যথাসম্ভব দণ্ডযোগ্য শাস্তি থেকে যদি সামান্যতম অব্যাহতির উপায় থাকে, তাহলে তাকে ছেড়ে দাও। কেননা শাসকের ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ভুল করা শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করার চেয়ে উত্তম। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «ادرؤا الْحُدُودَ عَنِ الْمُسْلِمِينَ مَا اسْتَطَعْتُمْ فَإِنْ كَانَ لَهُ مَخْرَجٌ فَخَلُّوا سَبِيلَهُ فَإِنَّ الْإِمَامَ أَنْ يُخْطِئَ فِي الْعَفْوِ خَيْرٌ مِنْ أَنْ يُخْطِئَ فِي الْعُقُوبَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: قَدْ رُوِيَ عَنْهَا وَلم يرفع وَهُوَ أصح
ব্যাখ্যা: মুযহির বলেনঃ তোমাদের সাধ্যানুযায়ী হাদ্দ মাওকূফ করো আমার (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নিকট পৌঁছানোর পূর্বে। কেননা শাসকের ক্ষমা প্রদর্শনের ব্যাপারে ভুল করা শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে ভুল করা থেকে উত্তম অধিক আর যখন শাসকের নিকট পৌঁছবে হাদ্দ বাস্তবায়ন তার ওপর ওয়াজিব।
ত্বীবী বলেনঃ হাদীসের ভাবার্থ মূলত تَعَافَوْا الْحُدُودَ فِيمَا بَيْنَكُمْ فَمَا بَلَغَنِي مِنْ حَدٍّ فَقَدْ وَجَبَ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার কাছে পৌঁছানোর পূর্বে তোমাদের সংঘটিত হাদ্দযোগ্য অপরাধ নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে ফেলো কেননা সে হাদ্দের ব্যাপার আমার নিকট পৌঁছবে তা বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব হবে। এ হাদীসের ব্যাখ্যা স্বরূপ।
আর হাদীসে সম্বোধন মূলত সাধারণ মুসলিমের ওপর। আর সম্ভাবনা রয়েছে: আবূ হুরায়রাহ্-এর হাদীস। কোনো এক ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট আর বুরায়দাহ্-এর হাদীস মা‘ইয-এর ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট। তাহলে সম্বোধন হবে শাসকের প্রতি যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য লোকটির জন্য أَبِكَ جُنُونٌ তুমি কি পাগল? অতঃপর বলেছেন, তুমি কি বিবাহ করেছো? আর মা‘ইয-এর ব্যাপারে বলেছেনঃ أَبِه جُنُونٌ সে কি পাগল? আরো বলেছেনঃ أَشَرِب সে কি মদ পান করেছে? কেননা এসব সতর্ক করে দেয়া শাসককে তিনি সন্দেহের ক্ষেত্রে হাদ্দকে যেন মাওকূফ করে।
সঠিক হলো: সম্বোধন হলো, শাসকের উদ্দেশে তাদের উচিত হবে আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে হাদ্দকে মাওকূফ করবে, যেমনটি মা‘ইয ও অন্যান্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রায় বার স্মরণ করে দিয়েছেন আত্মপক্ষ সমর্থনে তথা তা পেশ করার জন্য। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪২৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭১-[১৭] ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এক মহিলার সাথে জোরপূর্বক যিনা করা হয়েছিল, যিনার অভিযোগে জনৈকা নারীর ওপর দণ্ড ক্ষমা করে; কিন্তু পুরুষের ওপর দণ্ড প্রয়োগ করেছিলেন। তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীটির জন্য মোহর ধার্য করেছিলেন কিনা বর্ণনাকারী তা উল্লেখ করেননি। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ: اسْتُكْرِهَتِ امْرَأَةٌ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَرَأَ عَنْهَا الْحَدَّ وَأَقَامَهُ عَلَى الَّذِي أَصَابَهَا وَلَمْ يُذْكَرْ أَنَّهُ جَعَلَ لَهَا مَهْرًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: মুযহির এবং ইবনু মালিক বলেনঃ এ হাদীস মোহর ওয়াজিব না এমনটি প্রমাণিত হয় না, কেননা অন্য হাদীস দ্বারা মোহর ওয়াজিব এটি প্রমাণিত হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৫৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭২-[১৮] উক্ত রাবী [ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈকা মহিলা সালাতের উদ্দেশে বের হলো। এমন সময় এক ব্যক্তি তাকে ধরে নিয়ে জোরপূর্বক যিনা করলে মহিলাটির চিৎকারে পুরুষটি পালিয়ে যায়। তখন মুহাজিরদের একটি দল সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তখন মহিলাটি বলল, ঐ লোকটি আমার সাথে এরূপ এরূপ করেছে। তারা তখন ঐ লোকটিকে গ্রেফতার করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ মহিলাটিকে বললেন, চলে যাও আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর যে লোকটি মহিলাটির সাথে যিনা করেছিল। যিনাকারীর ব্যাপারে হুকুম করলেন, একে পাথর নিক্ষেপে হত্যা কর। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, লোকটি এমনভাবে তওবা্ করেছে যদি মদীনার সকল লোক এরূপ তওবা্ করত, তাহলে তাদের সকলের পক্ষ থেকে তা কবুল করা হতো। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْهُ: أَنَّ امْرَأَةً خَرَجَتْ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُرِيدُ الصَّلَاةَ فَتَلَقَّاهَا رَجُلٌ فَتَجَلَّلَهَا فَقَضَى حَاجَتَهُ مِنْهَا فَصَاحَتْ وَانْطَلَقَ وَمَرَّتْ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ فَقَالَتْ: إِنَّ ذَلِكَ الرَّجُلَ فَعَلَ بِي كَذَا وَكَذَا فَأَخَذُوا الرَّجُلَ فَأَتَوْا بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهَا: «اذْهَبِي فَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكِ» وَقَالَ لِلرَّجُلِ الَّذِي وَقَعَ عَلَيْهَا: «ارْجُمُوهُ» وَقَالَ: «لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا أَهْلُ الْمَدِينَةِ لَقُبِلَ مِنْهُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (فَقَضٰى حَاجَتَه مِنْهَا) ‘‘তার প্রয়োজন পূরণ করেছে’’ শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তাকে ডেকে নিয়েছে এবং তার সাথে যিনা করেছে।
(اذْهَبِىْ فَقَدْ غَفَرَ اللّٰهُ لَكِ) তুমি চলে যাও আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন, কেননা তোমাকে জোর করে তথা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার সাথে এ আচরণ করা হয়েছে।
(لِلرَّجُلِ الَّذِىْ وَقَعَ عَلَيْهَا : ارْجُمُوْهُ) আর লোকটি যিনার কথা স্বীকার করেছে এবং তাকে রজম করার আদেশ দিয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যেহেতু সে বিবাহিত।
(لَقُبِلَ مِنْهُمْ) লোকটির তাওবার পরিমাণ এতো বেশি তা যদি মদীনাবাসীকে বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তা যথেষ্ট হতো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭৩-[১৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক নারীর সাথে যিনা করেছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চাবুক মারার হুকুম করলেন। কিন্তু চাবুক মারার পর জানা গেল সে বিবাহিত, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তা কার্যকর করা হলো। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ جَابِرٍ: أَنَّ رَجُلًا زَنَى بِامْرَأَةٍ فَأَمَرَ بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجُلِدَ الْحَدَّ ثُمَّ أُخْبِرَ أَنَّهُ مُحْصَنٌ فَأَمَرَ بِهِ فرجم. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাদীসে সাব্যস্ত হয় চাবুক মারা এবং পাথর নিক্ষেপ করা উভয়ই হাদ্দ বা শাস্তি হলেও একটি অপরটির স্থলাভিষিক্ত হবে না। সুতরাং অবগতির পর আসল ও প্রকৃত শাস্তি প্রয়োগ করা ওয়াজিব হয়ে যায় আর পাথর নিক্ষেপ করলে চাবুকের শাস্তির অবকাশ থাকে না এটাই স্থলাভিষিক্ত, এমনটি বলেছেন আশরাফ ও ইবনু মালিক। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭৪-[২০] সা’ঈদ ইবনু সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্(রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমন ব্যক্তিকে ধরে আনলেন, যে ছিল বিকলাঙ্গ ও ব্যাধিগ্রস্ত। তাকে এলাকার এক বাঁদীর সাথে যিনাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন একটি খেজুরের বড় ছড়া নিয়ে আসো যার মধ্যে ছোট ছোট একশত শাখা রয়েছে এবং তা দ্বারা লোকটিকে একবার আঘাত কর। (শারহুস্ সুন্নাহ্; ইবনু মাজাহ্-তে অনুরূপ একটি বর্ণনা আছে)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِرَجُلٍ كَانَ فِي الْحَيِّ مُخْدَجٍ سقيم فَوجدَ على أمة من إمَائِهِمْ بخبث بِهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُذُوا لَهُ عِثْكَالًا فِيهِ مِائَةُ شِمْرَاخٍ فَاضْرِبُوهُ ضَرْبَة» . رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَه نَحوه
ব্যাখ্যা: (سَقِيْمٍ) এমন অসুস্থ যা সুস্থ হওয়ার আশা করা যায় না।
ইবনু মালিক বলেনঃ এ হাদীসটি ‘আমলযোগ্য না কেননা তা সরাসরি কুরআনের বিরোধী, কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللّٰهِ
অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহর বিধান কার্যকরের কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়’’- (সূরা আন্ নূর ২৪ : ২)। আর হাদীসের ভাষ্যমতে প্রহার করা দয়ার উদ্রেক হওয়া তবে এটা ভুল ব্যাখ্যা, তাফসীরে হাদীস ও ফিক্হী দৃষ্টিভঙ্গিতে। তাফসীরের দৃষ্টিতে অর্থ হলো : দয়ার উদ্রেক না হয় তবে আনুগত্য ও হাদ্দ বাস্তবায়নে। অতঃপর তোমরা সে হাদ্দকে বাতিল করবে বা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ لَوْ سَرَقَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ لَقَطَعْتُ يَدَهَا মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ে ফাত্বিমাও চুরি করে তাহলে আমি তার হাত অবশ্যই কেটে দিবো। অনুরূপ ভাবার্থ বায়যাভীও বলেছেন।
কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ হাদীসে দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হয় যে, শাসক শাস্তি প্রয়োগকৃত ব্যক্তির প্রতি খেয়াল রাখবে এবং তার জীবন সংরক্ষণ করবে। আর যদিও রোগী ব্যক্তির ওপর হাদ্দ প্রয়োগ করে হদ প্রয়োগ দেরী করবে না তবে যদি গর্ভবতী হয় তাহলে গর্ভপাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যা ‘আলী (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭৫-[২১] ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যে ব্যক্তিকেই লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের মতো (সমকামী) দেখতে পাও, তখন তাদের উভয়কে (যে করে এবং যার সাথে করা হয়) হত্যা কর। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عِكْرِمَةَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُول بِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: লাওয়াত্বাত (সমকামী)-এর শাস্তির ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
ইমাম শাফি‘ঈ-এর দু’ মতের মধ্যে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মত এবং ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ-এর মতে যিনার শাস্তির অবিকল অনুরূপ বিবাহিত হলে রজম করা হবে আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত আর যার সাথে লাওয়াতাত করা হয়েছে শাফি‘ঈ-এর মতে তার উপর এবং এক বৎসর নির্বাসন চাই পুরুষ হোক আর নারী হোক।
ইমাম মালিক ও আহমাদ বলেন, বিবাহিত হোক আর অবিবাহিত হোক উভয় অবস্থায় রজম করতে হবে। ইমাম শাফি‘ঈ-এর অন্য একটি অভিমত, যে লাওয়াত্বাত করে এবং যার সাথে করা হয় উভয়কেই হত্যা করতে হবে হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী।
কীভাবে হত্যা করা হবে? কারো মতে দেয়াল চাপা দিয়ে, কারো মতে উঁচু স্থান থেকে নিক্ষেপ করে, যেভাবে কওমে লূত্ব-এর ওপর করা হয়েছে। আর আবূ হানীফাহ্-এর মতে তিরস্কার করা হবে হাদ্দ প্রয়োগ করা হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৫৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭৬-[২২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো জন্তু-জানোয়ারের সাথে অপকর্ম করল, তাকে হত্যা করে দাও এবং তার সাথে ঐ জানোয়ারটিকেও হত্যা করে ফেল। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, জানোয়ারটি কেন হত্যাযোগ্য? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছুই শুনিনি। তবে আমি মনে করি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানোয়ারটির গোশ্ত/মাংস খাওয়া বা কোনভাবে তাত্থেকে উপকৃত হওয়াকে অপছন্দ করেন। যেহেতু জানোয়ারটির সাথে অপকর্ম হয়েছে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَتَى بَهِيمَةً فَاقْتُلُوهُ وَاقْتُلُوهَا مَعَهُ» . قِيلَ لِابْنِ عَبَّاسٍ: مَا شَأْنُ الْبَهِيمَةِ؟ قَالَ: مَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ذَلِكَ شَيْئا وَلَكِن أره كَرِهَ أَنْ يُؤْكَلَ لَحْمُهَا أَوْ يُنْتَفَعَ بِهَا وَقَدْ فُعِلَ بِهَا ذَلِكَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: জানোয়ারটিকে হত্যা করার হিকমাহ্ হলো সানাদী সুয়ূত্বী থেকে বলেন, হতে পারে ঐ জানোয়ারের পেট থেকে মানুষের আকৃতিতে জানোয়ার কিংবা জানোয়ার আকৃতি মানুষ জন্ম লাভ করতে পারে।
অধিকাংশ ফুকাহাদের মতে যেমনটি খত্ত্বাবী বর্ণনা করেন, এ হাদীসের উপর ‘আমল করা যাবে না। জানোয়ারটিকে হত্যা করা যাবে না আর যে ব্যক্তি এমনটি করবে তার ওপর তিরস্কার, যেমনটি ইবনু ‘আব্বাস থেকে তিরমিযী বর্ণনা করেন।
مَنْ أَتٰى بَهِيمَةً فَلَا حَدَّ عَلَيْهِ যে ব্যক্তি জানোয়ারের সাথে অপকর্ম করবে তার ওপর হাদ্দ প্রয়োগ নেই। হাদীসটি সহীহ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৪৫৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৫৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭৭-[২৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের ওপর সবচেয়ে বেশি যে জিনিসের আশঙ্কা করি, তা হলো লূত (আঃ)-এর গোত্রের কুকর্ম (সমকামিতা)। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي عَمَلُ قَوْمِ لُوطٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এটা এমন একটি সামাজিক ও নৈতিক ব্যাধি, যে জাতির মধ্যে এ রোগ দেখা দেয় সে জাতি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যায়। বস্তুত সে জাতি নৈতিক দেওলিয়াপনায় পৌঁছে যায় তাদের ধ্বংস অনিবার্য। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৫৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭৮-[২৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাকর ইবনু লায়স গোত্রের জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে চারবার স্বীকারোক্তি দিল যে, সে এক নারীর সাথে যিনা করেছে। লোকটি ছিল অবিবাহিত, তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে একশত চাবুক মারলেন এবং নারীটির বিরুদ্ধে তার নিকট প্রমাণ চাইলেন। নারীটি বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর কসম সে মিথ্যা বলেছে। এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকটির ওপর হাদ্দে কয্ফ জারি করলেন (মিথ্যা তুহমতের হাদ্দ জারী করলেন)। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ رَجُلًا مِنْ بَنِي بَكْرِ بْنِ لَيْثٍ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقَرَّ أَنَّهُ زَنَى بِامْرَأَةٍ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ فَجَلَدَهُ مِائَةً وَكَانَ بِكْرًا ثُمَّ سَأَلَهُ الْبَيِّنَةَ عَلَى الْمَرْأَةِ فَقَالَتْ: كَذَبَ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَجُلِدَ حَدَّ الْفِرْيَةِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (حَدَّ الْفِرْيَةِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে কয্ফ। তথা মিথ্যা অভিযোগ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭৯-[২৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করে যখন কুরআনের আয়াত নাযিল হলো তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে তা তিলাওয়াত করলেন। অতঃপর মিম্বার হতে নেমে দু’জন পুরুষ ও একজন মহিলাকে দণ্ড দেয়ার হুকুম করলেন। তখন লোকেরা তাদের ওপর (মিথ্যা অপবাদের) ’হাদ্দ’ জারি করলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: لَمَّا نَزَلَ عُذْرِي قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَذَكَرَ ذَلِكَ فَلَمَّا نَزَلَ مِنَ الْمِنْبَرِ أَمَرَ بِالرَّجُلَيْنِ وَالْمَرْأَةِ فَضُرِبُوا حَدَّهُمْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: যে দু’জন পুরুষকে মিথ্যা অপবাদের জন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে তারা হলেন মিসতাহ ইবনু উসামাহ্ ও ইসলামী কবি হাসসান বিন সাবিত আর মহিলাটি হলো হামনাহ্ বিনতু জাহশ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৪৬৪)