পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিয়ের ওয়ালী (অভিভাবক) এবং নারীর অনুমতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
৩১২৬-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রাপ্তবয়স্কা বা বিধবা নারীর অনুমতি ব্যতীত তার বিয়ে দেয়া যাবে না। কুমারীর সম্মতি ব্যতীত তার বিয়ে দেয়া যাবে না। তারা (উপস্থিত সাহাবায়ি কিরাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কুমারীর সম্মতি কিরূপে হবে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার নিরবতাই (বিয়ের) সম্মতি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِىِّ فِى النِّكَاحِ وَاسْتِئْذَانِ الْمَرْأَةِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُنْكَحُ الْأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلَا تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ» . قَالُوا: يَا رَسُول الله وَكَيف إِذْنهَا؟ قَالَ: «أَن تسكت»
ব্যাখ্যা : أَيِّمُ (আইয়িম) সে মহিলাকে বলা হয় যে তার স্বামীর মৃত্যু কিংবা ত্বলাকের কারণে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আর এটাই আইয়িম বা স্বামী পরিত্যক্ত মহিলার মৌলিক পরিচিতি। এ হাদীসে স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা ও কুমারী মহিলার মাঝে সস্পষ্টতই পার্থক্য দেখা যায়। এখানে সাইয়িবা মহিলার নির্দেশ পাওয়া ও বাকেরা (কুমারী মহিলা) থেকে অনুমোদন নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কাজেই উভয়ের মাঝে এ দৃষ্টিকোণ থেকে পার্থক্য পরিলক্ষেত হয় যে, নির্দেশ পাওয়াটা তার সঙ্গে পরামর্শ করার আবশ্যকতার উপর প্রমাণ করে। সুতরাং ওয়ালী বিবাহের ক্ষেত্রে সাইয়িবা মহিলার প্রকাশ্য অনুমতির দিকে মুখাপেক্ষী হবে। যদি বিবাহে আপত্তি জানায় তবে তার বিবাহ দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে নিষেধ। কিন্তু কুমারী মহিলার বিষয় তার বিপরীত। তার অনুমোদন মুখে কথা বলা ও নীরব থাকার মাধ্যমে হতে পারে।
অন্যদিকে «الْأَمْر» নির্দেশ তার বিপরীত, স্পষ্ট মৌখিক কথা বলাটা হলো «الْأَمْر» যা সাইয়িবা মহিলা থেকে পাওয়া জরুরী। অন্যদিকে কুমারী মহিলার নীরব থাকাই অনুমতি হিসেবে গণ্য হবে। কারণ সে মুখে কথা বলতে লজ্জাবোধ করে। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৩৬)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিয়ের ওয়ালী (অভিভাবক) এবং নারীর অনুমতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
৩১২৭-[২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রাপ্তবয়স্কা বা স্বামীহীনা নারী তার (বিয়ের অনুমতির) ব্যাপারে ওয়ালী থেকে বেশি অধিকার রাখে। আর কুমারী তার ব্যাপারে অনুমতির অধিকার রাখে এবং (বিয়েতে) নিরবতা তার অনুমতি।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, বিবাহিতা (বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা) তার (বিয়ের) ওয়ালী অপেক্ষা বেশি (কর্তৃত্বের) অধিকারিণী এবং কুমারীর সম্মতি নিতে হবে, তার নিরবতাই সম্মতি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِىِّ فِى النِّكَاحِ وَاسْتِئْذَانِ الْمَرْأَةِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا وَالْبِكْرُ تَسْتَأْذِنُ فِي نَفْسِهَا وَإِذْنُهَا صِمَاتُهَا» . وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «الثَّيِّبُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا وَالْبِكْرُ تُسْتَأْمَرُ وَإِذْنُهَا سُكُوتُهَا» . وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «الثَّيِّبُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا وَالْبِكْرُ يَسْتَأْذِنُهَا أَبُوهَا فِي نَفْسِهَا وَإِذْنُهَا صِمَاتُهَا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ইমাম শাফি‘ঈ, ইবনু আবূ ইয়া‘লা, আহমাদ, ইসহক (রহঃ)-সহ অন্যান্য ‘উলামাগণ বলেন, বিবাহের ওয়ালী যদি বাবা কিংবা দাদা হয় তবে কুমারী মহিলা থেকে অনুমতি নেয়া মুস্তাহাব। যদি তার অনুমতি ছাড়াই বিবাহ দিয়ে দেয় তবে বিবাহ বিশুদ্ধ হবে। কারণ বাবা কিংবা দাদা তার প্রতি পূর্ণ স্নেহশীল। অন্যদিকে বাবা কিংবা দাদা ব্যতীত অন্য কেউ ওয়ালী হলে অনুমতি নেয়া ওয়াজিব, অনুমতি ছাড়া বিবাহ বিশুদ্ধ হবে না। তবে আওযা‘ঈ, আবূ হানীফাহ্ এবং কুফার ‘উলামাগণের মতে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কা কুমারী মহিলা থেকে বিবাহের অনুমতি নেয়া ওয়াজিব। অন্যদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা কুমারী মহিলার চুপ থাকাই তার অনুমতি, এটি সকল কুমারী মহিলা ও ওয়ালী সবার জন্য প্রযোজ্য। আর কুমারী মহিলার নীরব থাকাই অনুমতির জন্য যথেষ্ট। কিন্তু স্বামী পরিত্যক্ত মহিলার ক্ষেত্রে মৌখিক অনুমতি জরুরী, ওয়ালী তার বাবা কিংবা অন্য যে কেউ হোক না কেন কারণ প্রথম বিবাহের ফলে তার পূর্ণ লজ্জাবোধ দূর হয়ে যায়। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪২১; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিয়ের ওয়ালী (অভিভাবক) এবং নারীর অনুমতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
৩১২৮-[৩] খানসা বিনতু খিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তার পিতা তাঁকে (পূর্বে বিবাহিতা অবস্থায় দ্বিতীয়বার) বিয়ে দিলেন, এতে তিনি সস্মত ছিলেন না। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে অভিযোগ করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ বিয়ে নাকচ করে দেন। (বুখারী)[1]
ইবনু মাজাহ্’র রিওয়ায়াতে রয়েছে, তার পিতার দেয়া বিবাহ বলে উল্লেখ আছে।
بَابُ الْوَلِىِّ فِى النِّكَاحِ وَاسْتِئْذَانِ الْمَرْأَةِ
وَعَن خنساء بنت خذام: أَنْ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ ثَيِّبٌ فَكَرِهَتْ ذَلِكَ فَأَتَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَدَّ نِكَاحَهَا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَه: نِكَاح أَبِيهَا
ব্যাখ্যা: সাওরীর অপর বর্ণনায় রয়েছে, খানসা বিনতু খিযাম বলেনঃ আমার বাবা আমাকে বিবাহ দিয়েছে আমার পছন্দের বাইরে, আর আমি তখন কুমারী ছিলাম। এ বর্ণনটি সঠিক নয় বরং উক্ত মহিলার সাইয়িবা হওয়ার বর্ণনাটি অধিক বিশুদ্ধ, কারণ ....... ইয়াহইয়া বিন সা‘ঈদ বিন আবুল কাসিম -এর বর্ণনায় রয়েছে যে, উক্ত মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলছে যে, আমি আমার সন্তানের চাচাকে বিবাহ করতে চেয়েছিলাম।
আবূ বাকরাহ্ বিন মুহাম্মাদ হতে বর্ণিত, এক আনসারী ব্যক্তি খানসা বিনতু খিযাম-কে বিবাহ করল, অতঃপর সে উহুদের যুদ্ধে নিহত হলো, তারপর তার বাবা তাকে অন্যত্র বিবাহ দিলে সে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল; আমার বাবা আমাকে বিবাহ দিয়েছে। অন্যদিকে আমার সন্তানের চাচা, অর্থাৎ আমার দেবরকেই বিবাহের জন্য অধিক পছন্দ করি। অতএব হাদীসদ্বয় প্রমাণ করে যে, পূর্ব স্বামীর পক্ষ হতে তার সন্তানও ছিল। সুতরাং উক্ত মহিলার সে সময় কুমারী থাকার প্রশ্নই উঠে না। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৩৮)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিয়ের ওয়ালী (অভিভাবক) এবং নারীর অনুমতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
৩১২৯-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন, যখন তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে দেয়া হয় তখন তার বয়স ছিল নয় বছর, তাঁর সাথে খেলনা ছিল। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তাঁর বয়স ১৮ বছর। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِىِّ فِى النِّكَاحِ وَاسْتِئْذَانِ الْمَرْأَةِ
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَهَا وَهِيَ بِنْتُ سَبْعِ سِنِينَ وَزُفَّتْ إِلَيْهِ وَهِيَ بِنْتُ تِسْعِ سِنِينَ وَلُعَبُهَا مَعَهَا وَمَاتَ عَنْهَا وَهِيَ بِنْتُ ثَمَانِيَ عَشْرَةَ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এখান থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, বাবা তার ছোট মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়াই বিবাহ দিতে পারবেন। আর দাদা তো বাবার মতই। ইমাম শাফি‘ঈ ও তার সাথীগণ বলেছেনঃ বাবা তাঁর মেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ না দেয়া মুস্তাহাব, যাতে সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বামীর সংসারে বন্ধি হতে বাধ্য না হয়। আর ছোট বিবাহিতার সাথে বাসরের সময়ের ব্যাপারে স্বামী এবং ওয়ালী যদি এমন বিষয়ে ঐকমত্য হয় যাতে ছোট মহিলার উপর ক্ষতির আশংকা নেই। তবে উক্ত মহিলার সঙ্গে বাসর কিংবা সহবাস করা যাবে। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ উক্ত মহিলার সঙ্গে বাসর তখনই করা যাবে যখন তার সহবাসে সক্ষমতা আসবে, তবে এটা মহিলা ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কোনো মহিলার যদি ৯ বছরের পূর্বেই সহবাসের সক্ষমতা আসে তবে তার সাথে বাসরে কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে কোনো মহিলার ৯ বছরের পরেও যদি সহবাসের সক্ষমতা না আসে, তবে তার সঙ্গে বাসর করার অনুমতিও নেই। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪২২)