পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১০৬-[৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে, আর যদি তার পক্ষে এমন কোনো অঙ্গ দেখা সম্ভব হয় যা বিবাহের পক্ষে যথেষ্ট, তখন তা যেন দেখে নেয়। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى مَا يَدْعُوهُ إِلَى نِكَاحهَا فَلْيفْعَل» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা : মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ্ কর্তৃক হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, যার অন্তরে আল্লাহ তা‘আলা কোনো নারীকে বিবাহ করার আগ্রহ জাগিয়ে দিবেন, তার দিকে দেখতে কোনো দোষ নেই। নববী (রহঃ) বলেনঃ কোনো মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করলে তাকে দেখা মুস্তাহাব। আর এটাই জুমহূর ‘উলামাগণসহ মালিক, শাফি‘ঈ, হানাফী, কুফী মাযহাবের মত। তবে উক্ত মহিলার শুধু চেহারা ও দু’হাত দেখা বৈধ হবে। কারণ এ দু’টো লজ্জাস্থান নয়। আর চেহারাতে নারীর সুন্দরী বা অসুন্দরী হওয়া প্রমাণিত হবে। আর দু’ হাত দেখায় তার দেহের সৌন্দর্য প্রমাণিত হবে। আর এটাই আমাদের ও আধিকাংশ ‘উলামাগণের মত। হাফিয শামসুদ্দীন ইবনুল কইয়্যূম (রহঃ) বলেনঃ ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন, পয়গামকৃত মহিলা পর্দায় আবৃত অবস্থায় তার চোহারা ও দু’হাত দেখা যাবে, এর বেশী কিছু দেখা যাবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৮২)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১০৭-[১০] মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জনৈকা নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না, দেখিনি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে দেখে নাও। কেননা, এই দেখা তোমাদের মাঝে (বৈবাহিক সম্পর্ক) প্রণয়-ভালোবাসা জন্ম দিবে। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]
وَعَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ خَطَبْتُ امْرَأَةً فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ نَظَرْتَ إِلَيْهَا؟» قُلْتُ: لَا قَالَ: «فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১০৮-[১১] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা নারীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ হওয়ায় (তাঁর মনে তা প্রভাব পড়ায়) তিনি তৎক্ষণাৎ স্বীয় স্ত্রী সাওদাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। ঐ সময়ে সাওদাহ্ (রাঃ) সুগন্ধি প্রস্তুত করছিলেন এবং তাঁর কাছে কয়েকজন নারী বসে ছিল। তারা রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখে সাওদাহ্ (রাঃ)-কে একাকী ছেড়ে চলে গেল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজ চাহিদা পূরণ করলেন। অতঃপর ঘোষণা করলেন যে, অপর নারী দর্শনে কোনো পুরুষের হৃদয়ে চাঞ্চল্যের (কামভাবের) সৃষ্টি হলে সে যেন স্বীয় স্ত্রীর নিকট যায়। কেননা ঐ নারীর সদৃশ তার (প্রত্যেক) স্ত্রীর নিকটও আছে। (দারিমী)[1]
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ امْرَأَةً فَأَعْجَبَتْهُ فَأَتَى سَوْدَةَ وَهِيَ تَصْنَعُ طِيبًا وَعِنْدَهَا نِسَاءٌ فَأَخْلَيْنَهُ فَقَضَى حَاجَتَهُ ثُمَّ قَالَ: «أَيُّمَا رَجُلٍ رَأَى امْرَأَةً تُعْجِبُهُ فَلْيَقُمْ إِلَى أَهْلِهِ فَإِنَّ مَعَهَا مثل الَّذِي مَعهَا» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১০৯-[১২] উক্ত রাবী [ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমণী মাত্রই আবরণীয় (বিষয়), যখন সে বের হয় তখন শায়ত্বন তাকে সুশোভিত করে তোলে বা শায়ত্বন হাত আড় করে তার প্রতি তাকায়। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: শায়ত্বনের তাশরীফের অর্থ হলো, নারীর কোনো অঙ্গের দিকে সে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এবং পর্দার উপর তার হাত বিছিয়ে দেয়। এর অর্থ হলো, নারীর তার নিজকে প্রকাশ করাটা খুব নিকৃষ্ট কাজ। যখন সে বের হয় বাজে দৃষ্টি তাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে নেয়, ফলে সে অন্যের দিকে ধাবিত হয় এবং অন্য কেউ তার দিকে ধাবিত করে, ফলে উভয় কিংবা উভয়ের একজন ফিতনায় পতিত হয়। অথবা মানবরূপী পাপাচারী ব্যক্তি শায়ত্বনী কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৭৩)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১০-[১৩] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আলী (রাঃ)-কে বললেন, হে ’আলী! (কোনো নারীর প্রতি) আকস্মিক একবার দৃষ্টিপাতের পর আবার দৃষ্টিপাত করো না। তোমার জন্য প্রথম দৃষ্টি (অনিচ্ছার কারণে) জায়িয, পরবর্তী দৃষ্টি জায়িয নয়। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, দারিমী)[1]
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «يَا عَلِيُّ لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الْأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ والدارمي
ব্যাখ্যা: কোনো মহিলার দিকে প্রথমবার তাকানোর পর দ্বিতীয়বার আর তাকাবে না। কারণ প্রথমবার তাকানোটা ছিল অনিচ্ছায়। দ্বিতীয়বার তাকানোটা তো তোমার ইচ্ছায় হলো। আর এটার পাপ তোমার উপরেই বর্তাবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১৪৯)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১১-[১৪] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোনো স্বীয় ক্রীতদাসীকে নিজের ক্রীতদাসের (অপর স্বাধীন পুরুষের) সাথে বিবাহ দেয়, তখন সে যেন উক্ত দাসীর সত্রের (গোপনাঙ্গের) প্রতি দৃষ্টিপাত না করে। অন্য রিওয়ায়াতে আছে, সে যেন তার নাভি হতে হাঁটুর উপর পর্যন্ত না দেখে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا زَوَّجَ أَحَدُكُمْ عَبْدَهُ أَمَتَهُ فَلَا يَنْظُرَنَّ إِلَى عَوْرَتِهَا» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فَلَا يَنْظُرَنَّ إِلَى مَا دُونُ السُّرَّةِ وَفَوْقَ الرُّكْبَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীস এটাই স্পষ্ট করেছে যে, নাভী ও হাঁটুদ্বয় সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, যা অন্যান্য হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়। নাভী ও হাঁটুদ্বয়ের মাঝে যা তা সতর নয়।
‘উলামাগণ এ মর্মে ঐকমত্য রয়েছেন যে, পুরুষের নাভী সতর নয়। আর হাঁটু ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রহঃ)-এর মতে ‘আওরাত বা লজ্জাস্থান নয়। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও শাফি‘ঈ মাযহাবের কতিপয় অনুসারীর মতে এটা লজ্জাস্থানের অন্তর্ভুক্ত। আর দাসীর লজ্জাস্থান ইমাম মালিক ও শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে পুরুষের লজ্জাস্থানের মতই। ইমাম আবূ হানীফাহ্-এর মতে তার পেট ও পিঠ লজ্জাস্থানের অন্তর্ভুক্ত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১১০)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১২-[১৫] জারহাদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি কি জান না উরু (রান) সতরের (গোপনাঙ্গের) অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ جَرْهَدٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الْفَخِذَ عَوْرَةٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১৩-[১৬] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ’আলী! তুমি নিজের উরু (রান) খুলো না এবং কোনো জীবিত বা মৃতের উরুর প্রতিও দৃষ্টিপাত করো না। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «يَا عَلِيُّ لَا تُبْرِزْ فَخِذَكَ وَلَا تَنْظُرْ إِلَى فَخِذِ حَيٍّ وَلَا مَيِّتٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রতীয়ামান হয় যে, মৃত ও জীবিত ব্যক্তির সতরের হুকুম একই। সতরের ক্ষেত্রে ও জীবিত ব্যক্তির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩১৩৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১৪-[১৭] মুহাম্মাদ ইবনু জাহশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা’মার নামক এক সাহাবীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ঐ সময়ে তাঁর উরু খোলা ছিল। (এটা দেখে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, হে মা’মার! তোমার উরুদ্বয় ঢেকে রাখ, কেননা উরুদ্বয় সতরের অন্তর্ভুক্ত। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جَحْشٍ قَالَ: مَرَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مَعْمَرٍ وَفَخذه مَكْشُوفَتَانِ قَالَ: «يَا مَعْمَرُ غَطِّ فَخِذَيْكَ فَإِنَّ الفخذين عَورَة» . رَوَاهُ فِي شرح السّنة
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১৫-[১৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (বিনা প্রয়োজনে) উলঙ্গ হবে না। কেননা তোমাদের সাথে সর্বদা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) থাকেন, কেবলমাত্র প্রস্রাব-পায়খানা করা ও স্ত্রীসহবাসের সময় ব্যতীত, যাঁরা কখনও বিচ্ছিন্ন হয় না। সুতরাং তোমরা তাঁদের প্রতি লজ্জাবোধ কর এবং তাঁদেরকে (যথাযোগ্য) সস্মান কর। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيَّاكُمْ وَالتَّعَرِّيَ فَإِنَّ مَعَكُمْ مَنْ لَا يُفَارِقُكُمْ إِلَّا عِنْدَ الْغَائِطِ وَحِينَ يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى أَهْلِهِ فَاسْتَحْيُوهُمْ وَأَكْرِمُوهُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেনঃ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ‘আওরাত বা লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করা বৈধ নয়। যেমন প্রস্রাব-পায়খানা, স্ত্রী সহবাস এবং অনুরূপ কোনো একান্ত প্রয়োজনে তা উন্মুক্ত করা যাবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮০০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১৬-[১৯] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন তিনি ও মায়মূনাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলেন, এমন সময় ’আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতূম সেখানে আসলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদেরকে পর্দার আড়ালে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি (উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)) বললাম, সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে না! এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি অন্ধ যে, তাকে দেখতে পাচ্ছ না? (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ: أَنَّهَا كَانَتْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَيْمُونَةُ إِذْ أقبل ابْن مَكْتُومٍ فَدَخَلَ عَلَيْهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «احْتَجِبَا مِنْهُ» فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَيْسَ هُوَ أَعْمَى لَا يُبْصِرُنَا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفَعَمْيَاوَانِ أَنْتُمَا؟ أَلَسْتُمَا تُبْصِرَانِهِ؟» رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: যে সকল ‘উলামাগণ বলেন যে, মহিলাদের জন্য পুরুষের দিকে তাকানো হারাম যেমনটা পুরুষের মহিলার দিকে তাকানো হারাম। আর এটাই ইমাম শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রহঃ)-এর একটি কথা। ‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেনঃ এ মতটি অধিক বিশুদ্ধ। যেমন আল্লাহ তা‘আলার কথা : হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি ঈমানদার নারীদেরকে তাদের দৃষ্টি নিচু রাখতে বলুন। (সূরা আন্ নূর ২৪ : ৩১)
অন্যদিকে যারা বলেন যে, মহিলা পুরুষের নাভীর নিচ থেকে মাঝামাঝি অংশটুকু ছাড়া দেখতে পারবে। তাদের দলীল ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, সেখানে রয়েছে হাবশীরা মসজিদে তীরন্দাজী খেলছিল আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তা দেখছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাদর দ্বারা তাকে পর্দা করে রাখছিলেন। এর জবাবে বলা যায় যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তখন দায়িত্বশীলা ছিলেন না, অর্থাৎ- নাবালেগা ছিলেন। ‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেনঃ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তখন না-বালেগা ছিলেন, অথবা এটি পর্দার বিধান আগমনের পূর্বের ঘটনা।
হাফিয ‘আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ যখন হাবশী দল এসেছিল তখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বয়স ছিল ১৬ বছর। এ ছাড়া তারা ফাত্বিমাহ্ বিনতু কয়স বর্ণিত হাদীস দ্বারাও দলীল গ্রহণ করে থাকেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইবনু উম্মু মাখতুম-এর ঘরে ‘ইদ্দত পালন করতে বলেন এবং তিনি বললেন যে, সে অন্ধ লোক তুমি তার বাড়ীতে তোমরা কাপড়-চোপড় রাখতে পারবে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেনঃ উম্মু সালামাহ্ বর্ণিত হাদীস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের জন্য খাস। আর ফাত্বিমাহ্ বিনতু কয়স (রাঃ) বর্ণিত হাদীস সকল নারীদের জন্য প্রযোজ্য। এভাবেই আবূ দাঊদ দু’টি হাদীসের মাঝে সমন্বয় করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনঃ এটা অনেক উত্তম সমন্বয়। ‘আল্লামা মুনযিরী (রহঃ)-ও অনুরূপ সমন্বয় করেছেন। আর আমাদের শায়খবৃন্দ এটাকে খুব সুন্দর সমন্বয় বলে অবহিত করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১০৮)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১৭-[২০] বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) তাঁর পিতা ও দাদা (মু’আবিয়াহ্) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বীয় স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া সকল মানুষ হতে তোমার লজ্জাস্থানের হিফাযাত করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি কেউ (নির্জনে) একাকী থাকে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তখন আল্লাহকেই লজ্জা পাওয়া অধিকতর কর্তব্য। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «احْفَظْ عَوْرَتَكَ إِلَّا مِنْ زَوْجَتِكَ أَو مَا ملكت يَمِينك» فَقلت: يَا رَسُول الله أَفَرَأَيْت إِن كَانَ الرَّجُلُ خَالِيًا؟ قَالَ: «فَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ يستحيى مِنْهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: বাহয বিন হাকীম (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস প্রমাণ করে যে, নির্জন জায়গাতেও বিবস্ত্র হওয়া বৈধ নয়। কিন্তু ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর মতে নির্জন কিংবা একাকীত্ব গোসল করার ক্ষেত্রে বিবস্ত্র হওয়া বৈধ। তিনি মূসা ও আইয়ূব (রহঃ)-এর ঘটনা থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন।
এখানে উভয় বর্ণনার সমন্বয়ে বলা যায় যে, বাহয বিন হাকীম (রহঃ)-এর বর্ণনাকৃত হাদীসটির উপর ‘আমল করা উত্তম। ইমাম বুখারী (রহঃ) সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তার কথা, যে ব্যক্তি নির্জন স্থানে বিবস্ত্র হয়ে গোসল করবে এবং যে ব্যক্তি ঢেকে গোসল করবে তার অধ্যায়। আর নির্জন স্থানে ঢেকে গোসল করা উত্তম। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৬৯)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১৮-[২১] উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো পুরুষ অপর (মাহরাম নয় তথা বিবাহ বৈধ এমন) নারীর সাথে নিঃসঙ্গে দেখা হলেই শয়তান সেখানে তৃতীয় জন হিসেবে উপস্থিত হয়। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثالثهما الشَّيْطَان» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১১৯-[২২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে গৃহে স্বামী অনুপস্থিত থাকে তাদের (স্ত্রীদের) গৃহে তোমরা প্রবেশ করো না। কেননা, শিরায় রক্তের ন্যায় শায়ত্বন তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যে অবাধে বিচরণ করে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার মধ্যেও কি (অনুরূপ)? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। তবে আল্লাহ তা’আলা শায়ত্বনের মুকাবালায় আমাকে সাহায্য করেছেন বলে আমি (শায়ত্বনের কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট হতে) নিরাপদে আছি। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَلِجُوا عَلَى الْمُغَيَّبَاتِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنْ أَحَدِكُمْ مَجْرَى الدَّمِ» قُلْنَا: وَمِنْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «وَمِنِّي وَلَكِنَّ الله أعانني عَلَيْهِ فَأسلم» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এমন হতে পারে যে, মানুষের শিরা-উপশিরায় চলার জন্য শায়ত্বন সক্ষমতা পেয়েছে। অথবা তার অত্যধিক কুমন্ত্রণার কারণে আলোচ্য হাদীসে সতর্ক করা হয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৭২; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১২০-[২৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কন্যা) ফাতিমা (রাঃ)-এর ঘরে দান করেছেন এমন ক্রীতদাসসহ গমন করেন। তখন তাঁর পরিধানে এত ছোট কাপড় ছিল যে, মাথা ঢাকলে পা খুলে যায়, আর পা ঢাকলে মাথা খুলে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এরূপ অবস্থা দেখে বললেন, তুমি অস্বস্তিবোধ করো না, এখানে তোমার পিতা ও তোমার স্বীয় গোলাম ব্যতীত আর কেউই নেই। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى فَاطِمَةَ بِعَبْدٍ قَدْ وَهَبَهُ لَهَا وَعَلَى فَاطِمَةَ ثَوْبٌ إِذَا قَنَّعَتْ بِهِ رَأْسَهَا لَمْ يَبْلُغْ رِجْلَيْهَا وَإِذَا غَطَّتْ بِهِ رِجْلَيْهَا لَمْ يَبْلُغْ رَأْسَهَا فَلَمَّا رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا تَلْقَى قَالَ: «إِنَّهُ لَيْسَ عَلَيْكِ بَأْسٌ إِنَّمَا هُوَ أَبُوكِ وغلامك» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, দাসের জন্য তার মুনীবাকে দেখা বৈধ, কারণ সে তার জন্য মাহরাম ব্যক্তি। প্রয়োজনীয় তার সঙ্গে সফর করতে পারবে। মাহরাম ব্যক্তির সঙ্গে যেমন দেখা করতে পারবে তেমন দাসের সঙ্গেও দেখা করতে পারবে। আর এমন মত দিয়েছেন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ), সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)। আর এটাই অধিকাংশ সালাফদের কথা। পক্ষান্তরে জুমহূর ‘উলামাগণের মতে দাস বেগানা পুরুষের মতই, কেননা দাস আযাদ হয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে বিবাহ বৈধ। আল্লাহই ভালো জানেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১০২)