পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৮৬-[৬] খারিজাহ্ ইবনু সালত (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে রওয়ানা হয়ে এক ’আরব গোত্রের কাছে পৌঁছলাম। তারা বলল, আমরা সংবাদ পেয়েছি, আপনারা এ ব্যক্তির (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নিকট হতে কল্যাণ (কিতাবুল্লাহ) নিয়ে এসেছেন। আপনাদের নিকট কি কোনো চিকিৎসা বা মন্ত্র আছে? আমাদের নিকট শিকলে বন্দী একটি পাগল আছে। আমরা বললাম, হ্যাঁ, আছে। তারা বন্দী অবস্থায় পাগলটাকে নিয়ে আসলো। আমি তিনদিন পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা তার ওপর এরূপে সূরা ফাতিহাহ্ পড়লাম, আমি আমার থুথু একত্র করে তার ওপর ফুঁকলাম।
তিনি বলেন, এতে সে হঠাৎ বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তারা আমাকে কিছু (চিকিৎসার বিনিময়ে) পারিশ্রমিক দিলো। আমি বললাম, না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, খাও! আমার জীবনের শপথ, অবশ্যই কেউ তো বাতিল মন্ত্র (চিকিৎসা) দ্বারা খায়, আর তুমি তো সত্য (কিতাবুল্লাহ’র) মন্ত্র দ্বারা আহার্য করছো। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ خَارِجَةَ بْنِ الصَّلْتِ عَنْ عَمِّهِ قَالَ: أَقْبَلْنَا مِنْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَيْنَا عَلَى حَيٍّ مِنَ الْعَرَبِ فَقَالُوا: إِنَّا أُنْبِئْنَا أَنَّكُمْ قَدْ جِئْتُمْ مِنْ عِنْدِ هَذَا الرَّجُلِ بِخَيْرٍ فَهَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ دَوَاءٍ أَوْ رُقْيَةٍ؟ فَإِنَّ عِنْدَنَا مَعْتُوهًا فِي الْقُيُود فَقُلْنَا: نعم فجاؤوا بِمَعْتُوهٍ فِي الْقُيُودِ فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ غُدْوَةً وَعَشِيَّةً أَجْمَعُ بُزَاقِي ثُمَّ أَتْفُلُ قَالَ: فَكَأَنَّمَا أُنْشِطَ مِنْ عِقَالٍ فَأَعْطَوْنِي جُعْلًا فَقُلْتُ: لَا حَتَّى أَسْأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «كُلْ فَلَعَمْرِي لَمَنْ أَكَلَ بِرُقْيَةِ بَاطِلٍ لَقَدْ أَكَلْتَ بِرُقْيَةِ حَقٍّ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ‘আয়নী বলেনঃ এ ঘটনাটি যা খারিজার চাচার হাদীসে আছে তা ঐ ঘটনা নয় যা আবূ সা‘ঈদ-এর হাদীসে আছে। কেননা এ হাদীসে যে আছে সে পাগল এবং একে ঝড়ফুঁকারী খারিজার চাচা। আর অপর হাদীসে রোগী ব্যক্তি বিচ্ছুতে কাটা এবং তাকে ঝাড়ফুঁককারী আবূ সা‘ঈদ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞাত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৯৭)
(لَعَمْرِىْ) ‘আমার জীবনের শপথ’। ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হয়তো এ সকল কসমের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুমতি দেয়া হয়েছিল, আর এটা মহান আল্লাহর لَعَمْرك إِنَّهُمْ لَفِىْ سَكْرَتهمْ يَعْمَهُونَ অর্থাৎ- ‘‘আপনার বয়সের শপথ! নিঃসন্দেহে তারা তাদের মাতলামিতে দিশেহারা।’’ এ বাণীর কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত। একমতে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনের শপথ করেছেন এবং অন্য কারো জীবনের শপথ কখনো করেননি, এটা মূলত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানার্থে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৮৭-[৭] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দিবে। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «أعْطوا الْأَجِيرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (قَبْلَ أَنْ يَّجِفَّ عَرَقُه) এ থেকে পারিশ্রমিক দ্রুত প্রদান করা এবং প্রতিশ্রুতি পূর্ণকরণে টালবাহানা বর্জন করা উদ্দেশ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৮৮-[৮] হুসায়ন ইবনু ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাচ্ঞাকারীর হক রয়েছে, যদিও সে ঘোড়ায় চড়ে আসে। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ; আর মাসাবীহতে মুরসালরূপে বর্ণিত হয়েছে)[1]
وَعَنِ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لِلسَّائِلِ حَقٌّ وَإِنْ جَاءَ عَلَى فَرَسٍ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَفِي المصابيح: مُرْسل
ব্যাখ্যা: (لِلسَّائِلِ حَقٌّ وَإِنْ جَاءَ عَلٰى فَرَسٍ) অর্থাৎ যাঞ্চাকারী ঘোড়ায় আরোহণ করে এলেও তাকে বিমুখ করবে না। এতে ঐ মুসলিম ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম ধারণা করতে নির্দেশ আছে যে মুসলিম যাঞ্চা করার মুখোমুখী হয়েছে তার প্রতি মন্দ ধারণার মাধ্যমে এবং তাকে অপমানিত করার মাধ্যমে তার মুখোমুখী হওয়া যাবে না। বরং তার প্রতি আনন্দ প্রকাশের মাধ্যমে তাকে সম্মান করতে হবে। নিশ্চয় যে ঘোড়াটি তার অধীনে আছে তা ধার করাও হতে পারে অথবা সে ঐ ব্যক্তিরও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ধনী হওয়া সত্ত্বেও যার জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ। এমন হতে পারে যে, সে অন্যের দায় বহন করে অথবা পরস্পরের মাঝে শত্রুতার মীমাংসা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে অথবা সে আল্লাহর পথে অংশগ্রহণকারীদের একজন হতে পারে তখন এ ব্যক্তি যাকাত হতে অমুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও তার জন্য যাকাত গ্রহণ করা বৈধ হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৩য় খন্ড, হাঃ ১৬৬২)
ইবনুল আসীর ‘নিহায়াহ্’তে বলেন, যাঞ্চাকারী, অনুসন্ধানকারী-এর তাৎপর্য হলো- যাঞ্চাকারী যখন তোমার সম্মুখীন হবে তখন তার ব্যাপারে উত্তম ধারণা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সত্যায়ন করা সম্ভবপর হওয়া সত্ত্বেও মিথ্যারোপ ও ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করা। অর্থাৎ- তুমি যাঞ্চাকারীর ক্ষতি করবে না যদিও তার দৃশ্য তোমাকে সন্দেহে পতিত করে, সে ঘোড়ায় আরোহণ করে আসে, কেননা ব্যক্তির কখনো ঘোড়া থাকে তার পেছনে থাকে পরিবার অথবা ঋণ যার উপস্থিতিতে তার সাদাকা গ্রহণ বৈধ হয় অথবা সে যোদ্ধা অথবা ঋণগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, আর তার জন্য সদাকাতে একটি অংশ রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)