পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
الْإِجَارَةِ - এর অভিধানিক অর্থ- প্রতিদান দেয়া, ’আরবরা যখন কাউকে প্রতিদান দেয়, তখন তারা বলে থাকে أجرته অর্থাৎ- আমি তাকে পারিশ্রমিক প্রদান করলাম। ইবনু হাজার ’আস্ক্বালানী একে উল্লেখ করেছেন। আর ’মুগরিব’-এ আছে, পরিভাষিক অর্থে- কোনো কিছুর বিনিময়ে কাউকে উপকার লাভের জন্য বস্তুর মালিক বানিয়ে দেয়া। আভিধানিক অর্থে তা أُجْرَةٌ শব্দের বিশেষ্য আর তা হলো শ্রমিক ভাড়া করা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
২৯৮১-[১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাবিত ইবনু যহহাক মনে করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্গাচাষ নিষেধ করেছেন এবং ইজারার অনুমতি দিয়েছেন। রাবী (সাবিত) বলেন, ইজারাতে কোনো আপত্তি নেই। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِجَارَةِ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: زَعَمَ ثَابِتُ بْنُ الضَّحَّاكِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْمُزَارَعَةِ وَأَمَرَ بِالْمُؤَاجَرَةِ وَقَالَ: «لَا بَأْسَ بِهَا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত বাক্যাংশে الْمُزَارَعَةِ বলতে নাজায়িয বলে যা জানা গেছে, আর مُؤَاجَرَةِ বলতে জায়িয বলে যা জানা গেছে। (لَا بَأْسَ بِهَا) অর্থাৎ পরিচিত শ্রম বিক্রিতে কোনো সমস্যা নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৮২-[২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগাতেন এবং শিঙ্গাদাতাকে মজুরি দিয়েছেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাকে ঔষধও নিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِجَارَةِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ احْتَجَمَ فَأَعْطَى الْحَجَّامَ أجره واستعط
ব্যাখ্যা: (فَأَعْطَى الْحَجَّامَ أَجْرَة) এ অংশটি শিঙ্গা লাগিয়ে পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে।
(اسْتَعَطَ) অর্থাৎ- সে তার নাকে ঔষধ প্রবেশ করাল। ত্বীবী (রহঃ) বলেন, السعوط শব্দের ‘সীন’ বর্ণে ‘যবর’ দিয়ে এক প্রকার ঔষধ যা নাকে প্রবেশ করানো হয়, যেমন ‘আরবীতে বলা হয় (اسعطت الرجل وَاِسْتَعَطَ) অর্থাৎ- আমি লোকটির নাকে ঔষধ দিলাম লোকটি নাকে ঔষধ গ্রহণ করল। উল্লেখিত হাদীসাংশ (اِسْتَعَطَ) এর মাঝে শ্রমিক খাটানোর বিশুদ্ধতা এবং ঔষধ প্রয়োগের বৈধতার প্রমাণ রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ফাতহুল বারীতে এসেছে, (اِسْتَعَطَ) সে নাক দিয়ে ব্যবহার করল, আর তা হলো ব্যক্তি তার পিঠের উপর ভর করে গা এলিয়ে দেয়া এবং তার কাঁধদ্বয়ের মাঝে এমন কিছু রাখা যা কাঁধদ্বয়কে উঁচু করে রাখবে, যাতে তার মাথা ঢালু হতে পারে এবং তার নাকে পানি অথবা তেল পতিত হতে পারে, যাতে আছে বিচ্ছিন্ন অথবা মিশ্র ঔষধ। যাতে এর মাধ্যমে তা মস্তিষ্কে পৌঁছতে পারে এবং মস্তিষ্কে যে রোগ আছে তা হাঁচির মাধ্যমে বের করতে পারে।
তিরমিযীতে অন্য সানাদে ইবনু ‘আব্বাস হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত আছে- (أَنَّ خَيْرَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ السَّعُوْط) অর্থাৎ- নিঃসন্দেহে তোমরা যে সকল ঔষধ ব্যবহার করে থাক তার মাঝে নাক সর্বোত্তম। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৯১)
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৮৩-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ এমন কোনো নবী পাঠাননি যিনি ছাগল-ভেড়া চরাননি। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আপনিও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, আমিও কিছু ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাহ্বাসীদের ছাগল-ভেড়া চরাতাম। (বুখারী)[1]
بَابُ الْإِجَارَةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا بَعَثَ اللَّهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الْغَنَمَ» . فَقَالَ أَصْحَابُهُ: وَأَنْتَ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ كُنْتُ أَرْعَى عَلَى قَرَارِيطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (عَلٰى قَرَارِيطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ) ইবনু মাজার এক বর্ণনাতে সুওয়াইদ বিন সা‘ঈদ হতে বর্ণিত আছে, তিনি ‘আমর বিন ইয়াহ্ইয়া হতে বর্ণনা করেন, (كُنْتُ أَرْعَاهَا لِأَهْلِ مَكَّةَ بِالْقَرَارِيطِ) অর্থাৎ- আমি মক্কাবাসীদের জন্য তা কারারীতের বিনিময়ে চড়াতাম।
অনুরূপভাবে ইসমা‘ঈলী একে মানী‘ঈ হতে, তিনি মুহাম্মাদ বিন হাস্সান হতে, তিনি ‘আমর বিন ইয়াহ্ইয়া হতে বর্ণনা করেছেন। হাদীসের বর্ণনাকারীদের একজন সুওয়াইদ বলেন, প্রত্যেক বকরীকে এক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে, অর্থাৎ- ক্বীরাত্ব বলতে যা দীনার অথবা দিরহাম-এর অংশ। মিরকাতুল মাফাতীহে বলা হয়েছে- قراريط শব্দটি قيراط এর বহুবচন, আর তা দানিকের অর্ধেক, আর دانق (দানিক) দিরহামের এক ৬ষ্ঠগোশত।’’
ইবরাহীম হারবী বলেন, قراريط (কারারীত্ব) মক্কাতে একটি স্থানের নাম। রৌপ্যের কারারীত্ব উদ্দেশ্য করা হয়নি। ইবনু নাসির-এর অনুসরণে ইবনু জাওযী একে সঠিক বলেছেন এবং সুওয়াইদ এর ব্যাখ্যাকে ভুল সাব্যস্ত করেছেন। তবে প্রথমটিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, কেননা মক্কাবাসীরা সেখানে এমন কোনো জায়গা চিনে না যাকে قراريط বলা হয়। আর নাসায়ী নাস্র বিন হাযান হতে যা বর্ণনা করেছেন তা হলো নাস্র বলেনঃ উটের মালিক এবং বকরীর মালিকরা গর্বে লিপ্ত হয়। অতঃপর আল্লাহর রসূল বলেন, ‘‘মূসাকে প্রেরণ করা হলো, তখন তিনি বকরীর রাখাল ছিলেন; আর যখন দাঊদকে প্রেরণ করা হলো, তখন তিনিও বকরীর রাখাল ছিলেন এবং আমাকে প্রেরণ করা হলো, এমতাবস্থায় আমি যিয়াদে আমার পরিবারের বকরী চড়াতাম।’’
কেউ কেউ বলেন, ‘আরবরা মুদ্রার অন্তর্গত ক্বীরাত্ব বলে কিছু চিনত না। এ কারণে সহীহাতে এসেছে, তারা ভূখণ্ড জয় করত, যেখানে ক্বীরাত্বের আলোচনা হয়। বিদ্বানগণ বলেন, নবূওয়াতের পূর্বে বকরী চড়ানোর মধ্য দিয়ে নাবীদেরকে অনুপ্রেরণা দেয়াতে হিকমাত হলো তাদের জাতির বিষয়ে তাদেরকে যে দায়িত্ব সম্পাদন করতে দেয়া হচ্ছে বকরী চড়ানোর মাধ্যমে সে ব্যাপারে তাদের অনুশীলন অর্জন হওয়া। কেননা এগুলোর সাথে তাদের মেলামেশার কারণে তাদের যা অর্জন হবে তা হলো সহনশীলতা ও দয়া। কেননা তারা যখন বকরী চড়ানোর মাঠে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এগুলো একত্র করবে এবং এক চারণ ক্ষেত্র হতে আরেক চারণ ক্ষেত্রে স্থানান্তর করবে এদের শত্রুকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে, অর্থাৎ হিংস্র জন্তু এবং অন্যান্য যেমন চোর ইত্যাদি হতে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করবে এবং এদের স্বভাবের ভিন্নতা, এগুলো দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও এদের মারাত্মক বিচ্ছিন্নতা, এগুলোর মাধ্যমে সন্ধির মুখাপেক্ষক্ষতা জানবে, তখন এ ধৈর্য ধারণ করা হতে তারা উম্মাতের প্রতি দয়ালু হবে, তাদের স্বভাবের ভিন্নতা, জ্ঞানের বৈপরীত্য সম্পর্কে জানবে, অতঃপর তাদের ভাঙ্গা পরিস্থিতিকে মেরামত করবে।
অতঃপর তাদের ঐ কষ্ট সহ্য করা ঐ অপেক্ষা অধিক সহজ হয়ে যাবে যদি তাদেরকে ঐ ব্যাপারে কর্ম সম্পাদন করতে প্রথমবার দায়িত্ব দেয়া হয়। বকরী চড়ানোর মাধ্যমে ঐ ব্যাপারে ক্রমান্বয়ে যা অর্জন হবে সে কারণে। এ ক্ষেত্রে বকরীকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তার কারণ বকরী অন্যান্য প্রাণী অপেক্ষা দুর্বল; উট, গরু রশি দ্বারা বাধা সম্ভবপর হওয়ার কারণে এদের অপেক্ষা বকরীর বিচ্ছিন্নতা অধিক, প্রচলিত নিয়মে বকরীর ক্ষেত্রে এমন না, এগুলো অধিক বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও এগুলো অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় অধিক দ্রুত আনুগত্যশীল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টি জীবের মাঝে সর্বাধিক সম্মানিত- এ কথা জানার পরও এ বিষয়কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উল্লেখ করাতে এমন কিছু আছে, যাতে নিজ রবের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহা নম্রতা, নিজের ওপর, নিজ ভাই নাবীদের ওপর, সকল নাবীদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৬২)
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৮৪-[৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, কিয়ামত দিবসে আমি তিন লোকের বিরুদ্ধে বাদী হবো- [১] যে লোক আমার নামে অঙ্গীকার করে পরে তা ভঙ্গ করেছে, [২] যে লোক স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য খেয়েছে এবং [৩] যে লোক শ্রমিক নিয়োগ করে পূর্ণ কাজ আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু তার প্রাপ্য মজুরী প্রদান করেনি। (বুখারী)[1]
بَابُ الْإِجَارَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَهُ . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ) ইবনু খুযায়মাহ্, ইবনু হিব্বান এবং ইসমা‘ঈলী এ হাদীসে (وَمَنْ كُنْتُ خَصمه خصمته) অর্থাৎ- আমি তার বিপক্ষে দাঁড়াব তার বিপক্ষে কথা বলব।’’ এ অংশটুকু বৃদ্ধি করেছেন। ইবনুত্ তীন বলেন, তিনি সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা সমস্ত অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে, তবে এদের ওপর তিনি স্পষ্টভাবে কঠোরতা আরোপ করেছেন।
(أَعْطٰى بِىْ ثُمَّ غَدَرَ) সকল বর্ণনাতে মাফউল বিলুপ্ত হওয়াবস্থায় এসেছে, উহ্য হলো (أَعْطٰى يَمِينَه بِي) অর্থাৎ- সে আমার নামে অঙ্গীকার করল, ঐ ব্যাপারে সে আল্লাহর শপথ করল। অতঃপর তা ভঙ্গ করল। (بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَه) বর্ণনার মাধ্যমে ‘‘খাওয়া’’ কথাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, কেননা তা সর্বাধিক বড় উদ্দেশ্য।
আবূ দাঊদে ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার কর্তৃক মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে- (ثَلَاثَةٌ لَا تُقْبَلُ مِنْهُمْ صَلَاةٌ) ‘‘তিন ব্যক্তির সালাত গ্রহণ করা হয় না।’’ অতঃপর তাদের মাঝে বর্ণনা করেছেন, (وَرَجُلٌ اعْتَبَدَ مُحَرَّرًا) ‘‘এবং এমন ব্যক্তি যে স্বাধীন ব্যক্তিকে দাসে পরিণত করেছে।’’
খত্ত্বাবী বলেনঃ সাধীন ব্যক্তিকে দাসে পরিণত করা দু’টি বিষয়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয়, প্রথমতঃ দাসকে মুক্তি দেয়া। তা গোপন করে রাখা অথবা তা অস্বীকার করা। দ্বিতীয়তঃ দাস হতে মুক্তি দেয়ার পর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে কাজে লাগানো, দু’টির মাঝে প্রথমটি শক্তিশালী।
মুহাল্লাব বলেনঃ এর পাপ অধিক কঠিন তার কারণ মুসলিমরা স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সমান। সুতরাং যে ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করবে, সে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহর বৈধ করা বিষয়ে স্বাধীন ইচ্ছা হতে বাধা দিবে, আল্লাহ যে অপমান হতে তাকে রক্ষা করেছেন সে ঐ ব্যক্তির জন্য তা আবশ্যক করল।
ইবনুল জাওযী বলেনঃ স্বাধীন ব্যক্তি আল্লাহর বান্দা, সুতরাং যে স্বাধীন ব্যক্তির ক্ষতি করবে তার মালিক (আল্লাহ) তার বিপক্ষে থাকবে।
ইবনুল মুনযির বলেনঃ তারা (বিদ্বানগণ) এ ব্যাপারে দ্বিমত করেনি যে, যে ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করবে তার হাত কাটা যাবে না। অর্থাৎ- যখন তাকে তার মতো সুরক্ষেত স্থান হতে চুরি না করবে। তবে ‘আলী হতে যা বর্ণনা করা হয় তা হলো- যে ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করবে, তার হাত কাটা হবে। তিনি বলেন, স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় বৈধ হওয়ার ব্যাপারে প্রাচীন মতানৈক্য ছিল, অতঃপর তা উঠে গেছে। অতঃপর ‘আলী হতে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিজের ব্যাপারে স্বীকৃতি দিবে যে, সে দাস তাহলে সে দাস।
(وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَه) এ অংশটুকু ঐ ব্যক্তির অর্থে যে ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে এবং তার মূল্য খেয়ে ফেলে, কেননা অত্র হাদীসে ব্যক্তি শ্রমিক থেকে বিনা মজুরীতে পূর্ণাঙ্গ উপকারিতা লাভ করেছে, এ ক্ষেত্রে সে যেন তার মূল্য খেয়ে ফেলেছে। কেননা সে তার থেকে বিনা পারিশ্রমিকে সেবা গ্রহণ করেছে, এ ক্ষেত্রে যেন সে তাকে দাস বানিয়েছে। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২২৭)
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৮৫-[৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মধ্যে একদল এক পানির কূপওয়ালাদের কাছে পৌঁছলেন, তাদের মধ্যে একজনকে বিচ্ছু অথবা সাপে দংশন করেছিল। কূপওয়ালাদের এক লোক এসে বললো, আপনাদের মধ্যে কোনো মন্ত্র (চিকিৎসা) জানা লোক আছে কি? এ কূপের ধারে একজন বিচ্ছু বা সাপে কাটা লোক রয়েছে। তখন তাঁদের মধ্য হতে একজন [আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ)] গেলেন এবং কিছু ছাগলের বিনিময়ে তার ওপর সূরা ফাতিহাহ্ পড়ে ফুঁক দিলেন। এতে সে সুস্থ হয়ে উঠলো এবং সাহাবী ছাগলগুলো নিয়ে স্বীয় সাথীদের কাছে আসলেন।
তাঁরা এটা অপছন্দ করে বলতে লাগলেন, আপনি কি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিলেন? পরিশেষে তাঁরা মদীনায় পৌঁছলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ইনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যেসব জিনিসের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকো, তাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহ (আল্লাহর কিতাব) অধিকতর উপযোগী। (বুখারী)[1]
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তোমরা ঠিকই করেছো, তা ভাগ-বণ্টন কর এবং আমার জন্যও তোমাদের সাথে এক অংশ রেখ।
بَابُ الْإِجَارَةِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرُّوا بِمَاءٍ فبهم لَدِيغٌ أَوْ سَلِيمٌ فَعَرَضَ لَهُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَاءِ فَقَالَ: هَلْ فِيكُمْ مِنْ رَاقٍ؟ إِن فِي المَاء لَدِيغًا أَوْ سَلِيمًا فَانْطَلَقَ رَجُلٌ مِنْهُمْ فَقَرَأَ بِفَاتِحَة الْكتاب على شَاءَ فبرئ فَجَاءَ بِالشَّاءِ إِلَى أَصْحَابِهِ فَكَرِهُوا ذَلِكَ وَقَالُوا: أَخَذْتَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا حَتَّى قَدِمُوا الْمَدِينَةَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخَذَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ: «أَصَبْتُمُ اقْسِمُوا وَاضْرِبُوا لِي مَعَكُمْ سَهْمًا»
ব্যাখ্যা: (لَدِيغٌ أَوْ سَلِيمٌ) বর্ণনাকারীর সন্দেহ সে জন্য উল্লেখিত শব্দদ্বয়ের মাঝে أَوْ তথা, অথবা বর্ণনা করেছেন। لَدِيغٌ শব্দটি অধিকাংশ সময় ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় যাকে বিচ্ছু দংশন করেছে এবং سَلِيمٌ শব্দটি ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় যাকে সাপ দংশন করেছে।
(رَجُلٌ مِنْهُمْ) একমতে বলা হয়েছে, তিনি হলেন : আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী। (فَقَرَأَ) ফল কথা, ঐ লোকটি তাদেরকে বলল, তোমরা আমাকে এ পরিমাণ ছাগল দিবে এ শর্তে আমি এ বিচ্ছু কাটা রোগীটিকে ঝাড়ব। অতঃপর রোগীর লোকেরা তাতে রাজী হলে আবূ সা‘ঈদ রোগীর ওপর সূরা ফাতিহাহ্ পাঠ করলেন ঐ বর্ণনার উপর ভিত্তি করে যে, সূরা ফাতিহাহ্ বিষ হতে আরোগ্য দানকারী। অতঃপর রোগীটি আল্লাহর কালামের বারাকাতে মুক্তি লাভ করল। একমতে বলা হয়েছে, ছাগলের সংখ্যা ছিল ত্রিশ এবং তারাও ছিল ত্রিশ জন।
(حَتّٰى قَدِمُوا) ত্বীবী বলেনঃ এ অংশটি ‘‘তারা বলল, তুমি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে এ সব গ্রহণ করেছ?’’ এ অংশের সাথে সম্পর্কিত। এর অর্থ হলো- তারা পথে এ বিষয়টিকে সর্বদা অস্বীকার করছিল, পরিশেষে তারা মদীনাতে আগমন করে।
(كِتَابِ اللّٰهِ) কাযী বলেন, এতে কুরআন পাঠের জন্য শ্রমিক ভাড়া করা, কুরআন দ্বারা ঝাড়-ফুঁক দেয়া বৈধ হওয়া এবং কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পরিশ্রমিক গ্রহণ বৈধ হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ আছে। এক সম্প্রদায় তা হারাম সাব্যস্ত করার মত পোষণ করেছেন, আর তা হলো- যুহরী, আবূ হানীফাহ্ এবং ইসহক (রহঃ)-এর মত। তারা ‘শারহুস্ সুন্নাহ্’তে ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আগত হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। অত্র হাদীসটিতে কুরআন দ্বারা, আল্লাহর জিকির দ্বারা ঝাড়ফুঁক বৈধ হওয়া এবং তার বিনিময়ে মজুরী গ্রহণের ব্যাপারে দলীল আছে। কেননা ক্বিরাআত বৈধ কর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যারা মুসহাফ ক্রয়-বিক্রয় এবং তা লিপিবদ্ধ করার বিনিময়ে মজুরী গ্রহণ করার অবকাশ দিয়েছেন তারা এর মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করেছেন। এ মত পোষণ করেছেন- হাসান, শা‘বী, ‘ইকরিমাহ্, সুফ্ইয়ান, মালিক, শাফি‘ঈ এবং আবূ হানীফার সাথীবর্গ (রহঃ)।
(اقْسِمُوا) ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ এটা মানবিকতা, স্বেচ্ছাসেবা, সাথীদের সাথে ভালোবাসার আচরণ এবং নম্রতা প্রদর্শন অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। অন্যথায় সমস্ত বকরীর মালিক ঝাড়ফুঁককারী। (لِىْ مَعَكُمْ سَهْمًا) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি বলেছেন তাদের মনে স্বাচ্ছন্দ্য দানের উদ্দেশ্য এবং তাদেরকে জানানোর ব্যাপারে আধিক্যতা স্বরূপ যে, এটা হালাল, এতে সন্দেহ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)