পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৮৯-[৯] ’উতবাহ্ ইবনুল মুনযির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম, তিনি (সূরা আল কাসাস-এর) ’ত্বা’ ’সীন’ ’মীম’ হতে পড়তে শুরু করে মূসা (আঃ)-এর ঘটনা পর্যন্ত পৌঁছে বললেন, মূসা (আঃ) লজ্জাস্থান সংরক্ষণ ও পেটপুর্তির জন্য আট বা দশ বৎসর নিজেকে মজুরীতে খাটিয়েছিলেন। (আহমাদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ عُتْبَةَ بْنِ الْمُنْذِرِ قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَرَأَ: (طسم)
حَتَّى بَلَّغَ قِصَّةَ مُوسَى قَالَ: «إِنَّ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ آجَرَ نَفْسَهُ ثَمَانِ سِنِينَ أَوْ عَشْرًا عَلَى عِفَّةِ فَرْجِهِ وَطَعَامِ بَطْنِهِ» . رَوَاهُ أَحْمد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (حَتّٰى بَلَّغَ قِصَّةَ مُوسٰى) অর্থাৎ- শু‘আয়ব (আঃ)-এর সাথে তার মিলিত হওয়ার ঘটনা। (اٰجَرَ نَفْسَه ثَمَانِ سِنِينَ أَوْ عَشْرًا) অর্থাৎ- বরং মাওয়ার্দী বুখারী এবং অন্যান্যগণ দশ সংখ্যা গ্রহণ করেছেন, নিঃসন্দেহে তিনি দু’টি সময়ের মাঝে শেষ সময়টি সম্পন্ন করেছেন, এরপর তাঁর কাছে আরও দশ বছর অবস্থান করেছেন, এরপর প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা করেছেন।
(عَلٰى عِفَّةِ فَرْجِه) অর্থাৎ- নিজেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্য।
(وَطَعَامِ بَطْنِه) ত্বীবী বলেনঃ শিষ্টাচার অবলম্বনে তিনি এর মাধ্যমে বিবাহ সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছেন এবং ঐ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে, পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যক্ষ্য যে পন্থা গ্রহণ করা হয় তা সম্পদ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। আর এ ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে। আবূ হানীফার সাথীবর্গ বলেনঃ কোনো নারীর এক বছর সেবা করে তা মুহরানা গণ্য করার মাধ্যমে ঐ নারীকে বিবাহ করা বৈধ হবে না, তবে কোনো মেয়েলোকের দাস এক বছর সেবা করার মাধ্যমে ঐ মেয়েকে বিবাহ করা আবূ হানীফার সাথীবর্গ বৈধ বলেছেন। আর তারা বলেছেন সম্ভবত এটা ঐ শারী‘আতে বৈধ ছিল এবং মোহর অন্য কিছু হওয়াও সম্ভব। তিনি কেবল এ সময়ে তার ছাগলের রাখাল হওয়াকে উদ্দেশ্য করেছেন। নির্দিষ্ট সময় কাজ করার চুক্তি অথবা নির্দিষ্ট পারিশ্রমিককে মোহর গণ্য করে ব্যক্তির অনুমতিসাপেক্ষে বিবাহ করা ইমাম শাফি‘ঈ বৈধ বলেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৯০-[১০] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি এক লোককে লেখা এবং কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলাম, সে আমার জন্য একটি ধনুক উপহার দিয়েছে, যা মূল্যবান কোনো মাল নয়। সুতরাং আমি কি জিহাদে ঐ ধনুক ব্যবহার করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি তুমি জাহান্নামের শিকল গলায় পরতে ভালোবাসা, তবে তা গ্রহণ করতে পারো। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ رَجُلٌ أَهْدَى إِلَيَّ قَوْسًا مِمَّنْ كُنْتُ أُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْقُرْآنَ وَلَيْسَتْ بِمَالٍ فَأَرْمِي عَلَيْهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ: «إِنْ كُنْتَ تُحِبُّ أَنْ تُطَوَّقَ طَوْقًا مِنْ نَارٍ فَاقْبَلْهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (لَيْسَتْ بِمَالٍ) অর্থাৎ- সামাজিক প্রথায় ধনুকের হিসাব মজুরীর মাঝে গণ্য করা হয়নি। সুতরাং তা গ্রহণ ক্ষতি সাধন করবে না। এভাবে ফাতহুল ওয়াদূদে আছে, (وَلَيْسَتْ بِمَالٍ) অর্থাৎ- তা তেমন কোনো বড় ধরনের সম্পদ নয়। আর পারস্পরিক পরিচিতিতে ধনুককে মজুরীর মাঝে গণ্য করা হয়নি, অথবা ধনুক এমন কোনো সম্পদ নয় যা বিক্রয়ের জন্য সঞ্চয় করব, বরং তা সরঞ্জাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(أَنْ تُطَوَّقَ طَوْقًا مِنْ نَارٍ) অর্থাৎ আগুনের বেড়ী তোমার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। খত্ত্বাবী বলেনঃ এ হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিদ্বানগণের একটি সম্প্রদায় মতানৈক্য করেছেন। অতঃপর তাদের কেউ হাদীসটির বাহ্যিকতার দিকে গিয়েছেন। তারা মনে করেছেন যে, কুরআন শিক্ষা দিয়ে মজুরী গ্রহণ বৈধ নয়। যুহরী, আবূ হানীফাহ্ ও ইসহক বিন রহওয়াই এ মত পোষণ করেছেন। একদল বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত শর্ত না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এতে কোনো সমস্যা নেই। এটা হাসান বাসরী, ইবনু সীরীন ও শা‘বী-এর মত। অন্যান্যগণ একে বৈধ বলেছেন আর তা ‘আত্বা, মালিক, শাফি‘ঈ ও আবূ সাওর-এর মত। তারা সাহল বিন সা‘দ-এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন যাতে আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ লোকটিকে বলেছিলেন, যে ব্যক্তি মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দিল, অথচ মোহর দেয়ার মতো কিছু খুঁজে পেল না।
(زَوَّجْتُكَهَا عَلٰى مَا مَعَك مِنْ الْقُرْآن) অর্থাৎ- ‘‘কুরআন হতে তোমার সাথে যা আছে তার বিনিময়ে আমি তোমাকে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম।’’ আর তারা ‘উবাদার হাদীসকে ঐদিকে ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি কুরআন শিক্ষা দানের মাধ্যমে অনুদান করেছেন এবং তাতে সাওয়াবের নিয়্যাত করেছেন, শিক্ষাদানের সময় বিনিময় এবং উপকার গ্রহণ করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার সাওয়াব বিনষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং সে ব্যাপারে তাকে হুমকি দিয়েছেন। আর এ ক্ষেত্রে ‘উবাদার পন্থা হলো ঐ ব্যক্তির পন্থা যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তির হারানো বস্তুকে ফেরত দিল, অথবা অনুদান স্বরূপ অথবা সাওয়াবের আশায় সমুদ্রে কারো ডুবে যাওয়া বস্তু উদ্ধার করে দিল। সুতরাং ঐ ব্যাপারে তার কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণের অধিকার নেই। সাওয়াবের উদ্দেশ্য ঐ কাজটি করার পূর্বে সে যদি তার জন্য পারিশ্রমিক অনুসন্ধান করে থাকে, ওটা তার জন্য বৈধ হবে। আহলুস্ সুফফাহ্ (মসজিদে বসবাসকারী) নিঃস্ব সম্প্রদায় এরা মানুষের অনুদান দ্বারা জীবন যাপন করত। সুতরাং তাদের কাছ থেকে সম্পদ গ্রহণ অপছন্দনীয় এবং তাদের নিকট তা ফিরিয়ে দেয়া মুস্তাহাব। কতিপয় বিদ্বান বলেন, কুরআন শিক্ষা দেয়ার বিনিময়ে মজুরী গ্রহণের অনেক অবস্থা রয়েছে, যখন মুসলিমদের মাঝে বিশেষ ব্যক্তি ছাড়া আরও ব্যক্তি থাকবে, যে কুরআন শিক্ষার কাজ সম্পাদন করবে তখন ঐ ব্যক্তির জন্য কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে মজুরী গ্রহণ বৈধ হবে। কেননা ঐ ফরয তখন তার ওপর নির্দিষ্ট হবে না। আর ঐ ব্যক্তি যখন এমন অবস্থায় অথবা এমন স্থানে থাকবে যেখানে সে ছাড়া অন্য কেউ ঐ কাজ সম্পাদন করে না, তখন তার জন্য মজুরী গ্রহণ বৈধ হবে না- এক্ষেত্রে মতবিরোধপূর্ণ হাদীসসমূহ এভাবেই ব্যাখ্যা করতে হবে।
ফাতহুল ওয়াদূদে সুয়ূত্বী বলেনঃ এক সম্প্রদায় এ হাদীসের বাহ্যিক দিক গ্রহণ করেছেন, অন্যরা এর ব্যাখ্যা করেছে এবং তারা বলেছে, এটা (زَوَّجْتُكَهَا عَلٰى مَا مَعَك مِنْ الْقُرْآن) ‘‘কুরআন হতে তোমার সাথে যা আছে তার বিনিময়ে আমি তোমাকে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম।’’ এ হাদীস এবং ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস-এর (إِنَّ أَحَقّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَاب اللّٰه) অর্থাৎ- ‘‘তোমরা যার পরিশ্রমিক গ্রহণ করে থাক তার মধ্যে আল্লাহর কিতাব সর্বাধিক অগ্রগণ্য।’’ এর দ্বারা কুরআন শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার প্রমাণ পেশ করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৪১৩)