পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৮৩-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ এমন কোনো নবী পাঠাননি যিনি ছাগল-ভেড়া চরাননি। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আপনিও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, আমিও কিছু ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাহ্বাসীদের ছাগল-ভেড়া চরাতাম। (বুখারী)[1]
بَابُ الْإِجَارَةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا بَعَثَ اللَّهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الْغَنَمَ» . فَقَالَ أَصْحَابُهُ: وَأَنْتَ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ كُنْتُ أَرْعَى عَلَى قَرَارِيطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (عَلٰى قَرَارِيطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ) ইবনু মাজার এক বর্ণনাতে সুওয়াইদ বিন সা‘ঈদ হতে বর্ণিত আছে, তিনি ‘আমর বিন ইয়াহ্ইয়া হতে বর্ণনা করেন, (كُنْتُ أَرْعَاهَا لِأَهْلِ مَكَّةَ بِالْقَرَارِيطِ) অর্থাৎ- আমি মক্কাবাসীদের জন্য তা কারারীতের বিনিময়ে চড়াতাম।
অনুরূপভাবে ইসমা‘ঈলী একে মানী‘ঈ হতে, তিনি মুহাম্মাদ বিন হাস্সান হতে, তিনি ‘আমর বিন ইয়াহ্ইয়া হতে বর্ণনা করেছেন। হাদীসের বর্ণনাকারীদের একজন সুওয়াইদ বলেন, প্রত্যেক বকরীকে এক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে, অর্থাৎ- ক্বীরাত্ব বলতে যা দীনার অথবা দিরহাম-এর অংশ। মিরকাতুল মাফাতীহে বলা হয়েছে- قراريط শব্দটি قيراط এর বহুবচন, আর তা দানিকের অর্ধেক, আর دانق (দানিক) দিরহামের এক ৬ষ্ঠগোশত।’’
ইবরাহীম হারবী বলেন, قراريط (কারারীত্ব) মক্কাতে একটি স্থানের নাম। রৌপ্যের কারারীত্ব উদ্দেশ্য করা হয়নি। ইবনু নাসির-এর অনুসরণে ইবনু জাওযী একে সঠিক বলেছেন এবং সুওয়াইদ এর ব্যাখ্যাকে ভুল সাব্যস্ত করেছেন। তবে প্রথমটিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, কেননা মক্কাবাসীরা সেখানে এমন কোনো জায়গা চিনে না যাকে قراريط বলা হয়। আর নাসায়ী নাস্র বিন হাযান হতে যা বর্ণনা করেছেন তা হলো নাস্র বলেনঃ উটের মালিক এবং বকরীর মালিকরা গর্বে লিপ্ত হয়। অতঃপর আল্লাহর রসূল বলেন, ‘‘মূসাকে প্রেরণ করা হলো, তখন তিনি বকরীর রাখাল ছিলেন; আর যখন দাঊদকে প্রেরণ করা হলো, তখন তিনিও বকরীর রাখাল ছিলেন এবং আমাকে প্রেরণ করা হলো, এমতাবস্থায় আমি যিয়াদে আমার পরিবারের বকরী চড়াতাম।’’
কেউ কেউ বলেন, ‘আরবরা মুদ্রার অন্তর্গত ক্বীরাত্ব বলে কিছু চিনত না। এ কারণে সহীহাতে এসেছে, তারা ভূখণ্ড জয় করত, যেখানে ক্বীরাত্বের আলোচনা হয়। বিদ্বানগণ বলেন, নবূওয়াতের পূর্বে বকরী চড়ানোর মধ্য দিয়ে নাবীদেরকে অনুপ্রেরণা দেয়াতে হিকমাত হলো তাদের জাতির বিষয়ে তাদেরকে যে দায়িত্ব সম্পাদন করতে দেয়া হচ্ছে বকরী চড়ানোর মাধ্যমে সে ব্যাপারে তাদের অনুশীলন অর্জন হওয়া। কেননা এগুলোর সাথে তাদের মেলামেশার কারণে তাদের যা অর্জন হবে তা হলো সহনশীলতা ও দয়া। কেননা তারা যখন বকরী চড়ানোর মাঠে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এগুলো একত্র করবে এবং এক চারণ ক্ষেত্র হতে আরেক চারণ ক্ষেত্রে স্থানান্তর করবে এদের শত্রুকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে, অর্থাৎ হিংস্র জন্তু এবং অন্যান্য যেমন চোর ইত্যাদি হতে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করবে এবং এদের স্বভাবের ভিন্নতা, এগুলো দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও এদের মারাত্মক বিচ্ছিন্নতা, এগুলোর মাধ্যমে সন্ধির মুখাপেক্ষক্ষতা জানবে, তখন এ ধৈর্য ধারণ করা হতে তারা উম্মাতের প্রতি দয়ালু হবে, তাদের স্বভাবের ভিন্নতা, জ্ঞানের বৈপরীত্য সম্পর্কে জানবে, অতঃপর তাদের ভাঙ্গা পরিস্থিতিকে মেরামত করবে।
অতঃপর তাদের ঐ কষ্ট সহ্য করা ঐ অপেক্ষা অধিক সহজ হয়ে যাবে যদি তাদেরকে ঐ ব্যাপারে কর্ম সম্পাদন করতে প্রথমবার দায়িত্ব দেয়া হয়। বকরী চড়ানোর মাধ্যমে ঐ ব্যাপারে ক্রমান্বয়ে যা অর্জন হবে সে কারণে। এ ক্ষেত্রে বকরীকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তার কারণ বকরী অন্যান্য প্রাণী অপেক্ষা দুর্বল; উট, গরু রশি দ্বারা বাধা সম্ভবপর হওয়ার কারণে এদের অপেক্ষা বকরীর বিচ্ছিন্নতা অধিক, প্রচলিত নিয়মে বকরীর ক্ষেত্রে এমন না, এগুলো অধিক বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও এগুলো অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় অধিক দ্রুত আনুগত্যশীল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টি জীবের মাঝে সর্বাধিক সম্মানিত- এ কথা জানার পরও এ বিষয়কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উল্লেখ করাতে এমন কিছু আছে, যাতে নিজ রবের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহা নম্রতা, নিজের ওপর, নিজ ভাই নাবীদের ওপর, সকল নাবীদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৬২)