পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাথর মারা
২৬১৮-[১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কুরবানীর দিন নিজ সওয়ারীর উপর থেকে পাথর মারতে দেখেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমার নিকট হতে হজের হুকুম-আহকাম শিখে নাও। কারণ এ হজের পর আর আমি হজ্জ/হজ করতে পারব কিনা তা জানি না। (মুসলিম)[1]
بَابُ رَمْىِ الْجِمَارِ
عَن جَابر قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْمِي عَلَى رَاحِلَتِهِ يَوْمَ النَّحْرِ وَيَقُولُ: «لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ فَإِنِّي لَا أَدْرِي لَعَلِّي لَا أَحُجُّ بعد حجتي هَذِه» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, বড় খাম্বায় কংকর নিক্ষেপ করা কুরবানীর দিন পায়ে হেঁটে কংকর নিক্ষেপ করা অপেক্ষা সওয়ারীতে বসে উত্তম। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর নিকট মুস্তাহাব হলো সওয়ারীতে যে পৌঁছাবে তার সওয়ারীতে নিক্ষেপ করা আর পায়ে হেঁটে নিক্ষেপ করলেও জায়িয হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পায়ে হেঁটে পৌঁছবে সে দাঁড়িয়ে নিক্ষেপ করবে। আর এ হুকুম কুরবানীর দিবসের। পক্ষান্তরে আইয়্যামে তাশরীক্বের প্রথম দুই দিন সুন্নাত হলো তিন খাম্বাকে দাঁড়ানো অবস্থায় কংকর নিক্ষেপ করা। আর তৃতীয় দিন সওয়ারীতে আরোহিত অবস্থায় করে কংকর নিক্ষেপ করা।
শায়খ কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম-এর মতে উত্তম হলো পায়ে হেঁটে কংকর নিক্ষেপ করা বিনয়ের নিকটতম। বিশেষ করে বর্তমানে। কারণ সাধারণ লোক পায়ে হেঁটে কংকর নিক্ষেপ করে থাকে। তাই ভীড়ের কারণে সওয়ারীতে কংকর মারলে অন্যদের কষ্ট হবে। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সওয়ারীতে বসে কংকর নিক্ষেপ করার লক্ষ্য হলো যে, লোকদেরকে দেখানো যাতে তারা তাকে একতেদা করে। বায়হাক্বীতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আইয়্যামে তাশরীকে পায়ে হেঁটে কংকর নিক্ষেপ করেছেন। আর এটা বিশুদ্ধ হলে এটাই অনুসরণ করা উচিত। আর এটাকে ইমাম তিরমিযী ও অন্যান্যরা বিশুদ্ধ বলেছেন। ইবনু ‘আব্দুল বার অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন যে, খলীফাদের এক জামা‘আত তাঁর পরে এর উপর ‘আমল করেছেন।
উক্ত হাদীসের এ অংশ, অর্থাৎ- ‘‘তোমরা আমার থেকে হজ্জের নিয়ম শিখে নাও’’ হজ্জের বিষয়ে বড় একটা মূলনীতি। অনুরূপ রিওয়ায়াত মুসলিম ছাড়া অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমনিভাবে সালাতের ক্ষেত্রেও বর্ণিত হয়েছে, তোমরা সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় কর যেমনি আমাকে সালাত আদায় করতে দেখ।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাথর মারা
২৬১৯-[২] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জামারায় খযফ-এর পাথরের মতো পাথর মারতে দেখেছি। (মুসলিম)[1]
بَابُ رَمْىِ الْجِمَارِ
وَعَنْهُ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَمَى الْجَمْرَةَ بِمِثْلِ حَصَى الْخَذْفِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: খাম্বাতে যে কংকর নিক্ষেপ করতে হয় তার পরিমাপ হলঃ খেজুরের আটির মতো। অথবা পাথরের ঐ কুচি যা দুই আঙ্গুলের মধ্য করে দূরে নিক্ষেপ করা যায়।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাথর মারা
২৬২০-[৩] উক্ত রাবী (জাবির) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সকাল বেলায় পাথর মেরেছেন, কিন্তু এর পরের দিনগুলোতে সূর্যাস্তের পর মেরেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ رَمْىِ الْجِمَارِ
وَعَنْهُ قَالَ: رَمَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجَمْرَةَ يَوْمَ النَّحْرِ ضُحًى وَأَمَّا بَعْدَ ذَلِكَ فَإِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ
ব্যাখ্যা: কংকর নিক্ষেপ করার সময়ঃ কুরবানীর দিন বড় খাম্বায় সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। সময় হলো সূর্য উদয় হওয়ার পর থেকে সূর্য ঢলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। কুরবানীর দিনের পর আইয়্যামে তাশরীকে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিনটি খাম্বায় সাতটি করে কংকর নিক্ষেপ করবে। এই মাসআলায় ইমামগণ ঐকমত্য পেশ করেছেন। ইবনু ‘উমার থেকে ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন যে, আমরা সময়ের জন্য অপেক্ষা করতাম। অতঃপর যখন সূর্য ঢলে যেত তখন আমরা কংকর নিক্ষেপ করতাম।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, সুন্নাত হলো কুরবানীর দিন ছাড়া সূর্য ঢলে যাওয়ার পর খাম্বাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করবে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাথর মারা
২৬২১-[৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি জামারাতুল কুবরার (বড় জামারার) নিকট পৌঁছে বায়তুল্লাহকে বামে আর মিনাকে ডানে রেখে এর উপর সাতটি পাথর মারলেন, এতে প্রত্যেকবার ’আল্লা-হু আকবার’ বলেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, যাঁর ওপর সূরা আল বাক্বারাহ্ নাযিল হয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও এভাবে পাথর মেরেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ رَمْىِ الْجِمَارِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ: أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرَى فَجَعَلَ الْبَيْتَ عَنْ يَسَارِهِ وَمِنًى عَنْ يَمِينِهِ وَرَمَى بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ ثُمَّ قَالَ: هَكَذَا رَمَى الَّذِي أُنْزِلَتْ عَلَيْهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ
ব্যাখ্যা: ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) এর উক্তি ‘‘যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বড় খাম্বার কাছে পৌছাতেন, তখন বায়তুল্লাহকে বামে ও মিনাকে ডানে করতেন।’’ হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, বড় খাম্বাতে চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে।
১. কুরবানীর দিন কেবলমাত্র বড় খাম্বাতে পাথর মারতে হয়।
২. তার নিকট বিলম্ব করা যায় না।
৩. চাশতের সময় কংকর নিক্ষেপ করা।
৪. তার নিচ থেকে কংকর নিক্ষেপ করা মুস্তাহাব?
জামারাতুল ‘আকাবাহ্ বড় খাম্বাকে বলা হয়। আর মিনাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের নিকট হতে হিজরতের উপর বায়‘আত নিয়েছিলেন। মুস্তাহাব হলো, যে ব্যক্তি বড় খাম্বার নিকট দাঁড়াবে সে মক্কাহকে বাম দিকে ও মিনাকে ডান দিকে করবে আর তার চেহারাকে খাম্বার দিকে করবে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাথর মারা
২৬২২-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইস্তিঞ্জার ঢেলা নিতে হয় বেজোড়, জামারায় পাথর মারা বেজোড়, সাফা মারওয়ায় সা’ঈ বেজোড় এবং তাওয়াফ করতে হয় বেজোড়। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি সুগন্ধি ধোঁয়া গ্রহণ করে সেও যেন বেজোড় লাগায়। (মুসলিম)[1]
بَابُ رَمْىِ الْجِمَارِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الِاسْتِجْمَارُ تَوٌّ وَرَمْيُ الْجِمَارِ توٌّ وَالسَّعْيُ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ تَوٌّ وَالطَّوَافُ تَوٌّ وَإِذَا اسْتَجْمَرَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَجْمِرْ بِتَوٍّ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, ইস্তিঞ্জার মধ্যে ঢেলা বেজোড় নিবে। খাম্বাতে বেজোড় কংকর নিক্ষেপ করবে। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ বেজোড় করবে। তাওয়াফও বেজোড় করবে।