পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা
২৬১২-[৯] মুহাম্মাদ ইবনু ক্বায়স ইবনু মাখরামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দানকালে বললেন, জাহিলী যুগের লোকেরা যখন সূর্যাস্তের পূর্বে মানুষের চেহারায় মানুষের পাগড়ীর মতো দেখা যেত তখন ’আরাফার ময়দান হতে রওয়ানা হতো। আর সূর্যোদয়ের পর মানুষের চেহারায় ওইভাবে মানুষের পাগড়ীর মতো যখন দেখাতো তখন মুযদালিফা হতে রওয়ানা হতো। আর আমরা সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত ’আরাফার ময়দান হতে রওয়ানা হবো না এবং সূর্যোদয়ের আগে মুযদালিফা হতে রওয়ানা হবো। আমাদের নিয়ম-নীতি মূর্তিপূজক ও শির্কপন্থীদের নিয়ম-নীতির বিপরীত। (বায়হাক্বী)[1]
وَعَن محمّدِ بنِ قيسِ بن مَخْرمةَ قَالَ: خَطَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوا يَدْفَعُونَ مِنْ عَرَفَةَ حِينَ تَكُونُ الشَّمْسُ كَأَنَّهَا عَمَائِمُ الرِّجَالِ فِي وُجُوهِهِمْ قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ وَمِنَ الْمُزْدَلِفَةِ بَعْدَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ حِينَ تَكُونُ كَأَنَّهَا عَمَائِمُ الرِّجَالِ فِي وُجُوهِهِمْ. وَإِنَّا لَا نَدْفَعُ مِنْ عَرَفَةَ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ وَنَدْفَعُ مِنَ الْمُزْدَلِفَةِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ هَدْيُنَا مُخَالِفٌ لِهَدْيِ عَبَدَةِ الْأَوْثَانِ وَالشِّرْكِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان وَقَالَ فِيهِ: خَطَبنَا وَسَاقه بِنَحْوِهِ
ব্যাখ্যা: কুরায়শগণ ব্যতীত জাহিলী যুগের লোকেরা ‘আরাফাহ্ হতে সূর্য ডুবার পূর্বে আসতো এবং মুযদালিফা হতে সূর্যাস্তের পর আসতো। কিন্তু সঠিক নিয়ম হচ্ছে ‘আরাফাহ্ হতে সূর্যাস্তের পর আসা এবং মুযদালিফা হতে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে আসা। সূর্যকে মানুষের পাগড়ীর সাথে সাদৃশ্য দেয়ার কারণ হচ্ছে দিনের দুই প্রান্তে সূর্য যখন আকাশের কিনারার নিকটবর্তী হয় তখন পাগড়ীর মতো দেখা যায় আর এটা মানুষের চেহারায় চকচক করে পাগড়ীর শুভ্রতার উজ্জ্বলতার কারণে হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা
২৬১৩-[১০] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফার রাতে আমাদেরকে ’আবদুল মুত্ত্বালিব বংশীয় বালকদেরকে গাধার উপর চড়িয়ে দিয়ে তাঁর আগেই মিনার দিকে রওয়ানা দিলেন। তখন আমাদের উরু চাপড়িয়ে বললেন, আমার প্রিয় সন্তানেরা! তোমরা সূর্যোদয়ের পূর্বে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করো না। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَدَّمَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً الْمُزْدَلِفَةِ أُغَيْلِمَةَ بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَى حُمُرَاتٍ فَجَعَلَ يَلْطَحُ أَفْخَاذَنَا وَيَقُولُ: «أُبَيْنِيَّ لَا تَرْمُوا الْجَمْرَةَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে জামারায় ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপের বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ হাদীস এ দিকে ইঙ্গিত করছে যে, কুরবানীর দিন জামারায় ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপের সময় হলো- সূর্য উদয়ের পর। অর্থাৎ- কুরবানীর দিন সূর্য উদয়ের পর পাথর মারতে হবে।
‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, পাথর সূর্যোদয়ের পর মারতে হবে। যাদের কোন সমস্যা নেই তাদের এ ব্যাপারে কোন সুযোগ নেই। আর নারী বা দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ আছে। অর্থাৎ- তারা এর পূর্বেও পাথর মারতে পারবে। এ কথার সমর্থনে সহীহ সনদে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা
২৬১৪-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর (আগের) রাতে উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে (মিনায়) পাঠালেন। তিনি [উম্মু সালামাহ (রাঃ)] ভোর হবার আগেই পাথর মারলেন। তারপর মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে যিয়ারা (তাওয়াফে ইফাযাহ্) করলেন। আর সেদিনটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাঁর ঘরে থাকারই দিন ছিল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عَائِشَة قَالَتْ: أَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بأُمِّ سَلَمَةَ ليلةَ النَّحْر فرمت الجمرةَ قبلَ الْفَجْرِ ثُمَّ مَضَتْ فَأَفَاضَتْ وَكَانَ ذَلِكَ الْيَوْمُ الْيَوْمَ الَّذِي يَكُونَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدهَا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীসটিতে মহিলাদের জন্য ফজরের পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করা বৈধ প্রমাণিত হয়। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে প্রকাশ্য ছিলেন। আর তিনি স্বীকৃতিও দিয়েছেন। আল আমীর আল ইয়ামানী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর পূর্বের হাদীসের সাথে বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়। আর তার সমাধান হলোঃ যে ব্যক্তির ওযর (কোন কারণ) থাকে তাহলে তার জন্য ফজরের পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করা বৈধ। আর ছোট বাচ্চাদের কোন ওযর-আপত্তি ছিল না।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা
২৬১৫-[১২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুক্বীম (মক্কাবাসী) অথবা ’উমরাহকারী (মক্কার বাইরে থেকে আগন্তুক) হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ না করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ (লাব্বায়কা) পাঠ করতে থাকবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن ابنِ عبَّاسٍ، قَالَ: يُلَبِّي المقيمُ أَوِ المعتَمِرُ حَتَّى يستلمَ الْحَجَرَ) . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَقَالَ: وَرُوِيَ مَوْقُوفًا على ابنِ عبَّاس.
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি ‘উমরা’র ইহরাম বেঁধেছে সে ইহরাম বাঁধা থেকে শুরু করে তাওয়াফ শুরু করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করবে। অতঃপর তালবিয়াহ্ পাঠ করা ছাড়বে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালবিয়াহ্ পাঠ বন্ধ করতেন যখন পাথর চুম্বন করতেন।