পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা

২৬০৪-[১] হিশাম ইবনু ’উরওয়াহ্ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার উসামাহ্ ইবনু যায়দকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে ’আরাফার ময়দান হতে ফিরে আসার সময় কিভাবে চলেছিলেন? জবাবে তিনি (’উরওয়াহ্) বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বাভাবিক গতিতে চলতেন এবং যখনই খোলা পথ পেতেন দ্রুতবেগে চলতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابٌ الدَّفْعُ مِنْ عَرَفَةَ وَالْمُزْدَلِفَةِ

عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: سُئِلَ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ: كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسِيرُ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ حِينَ دَفَعَ؟ قَالَ: كَانَ يَسِيرُ الْعُنُق فَإِذا وجد فجوة نَص

عن هشام بن عروة عن ابيه قال: سىل اسامة بن زيد: كيف كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسير في حجة الوداع حين دفع؟ قال: كان يسير العنق فاذا وجد فجوة نص

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বিশেষভাবে উসামাহ্ বিন যায়দকে জিজ্ঞেস করার কারণ হচ্ছে তিনি ছিলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আরাফাহ্ হতে মুযদালিফা গমন পথের সহগামী। আর তিনি ‘‘গ্রীবা নাড়িয়ে চলতেন’’ বলতে বুঝানো হয়েছে, দ্রুতও না এবং ধীরেও না; বরং এর মাঝামাঝি চলতেন। মানুষের কোমলতা তথা কষ্ট না দেয়ার জন্য তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ হাঁটতেন। অতঃপর যখন কোন ভীড় থাকত না তখন দ্রুত চলতেন। সালাফগণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্ণ অনুসরণ করার জন্য তাঁর চলা ও অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা

২৬০৫-[২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার ’আরাফার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ’আরাফার ময়দান হতে ফিরে এসেছেন। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছন হতে জোরে জোরে উট তাড়ানোর হাঁক ও উটকে পিটানোর শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের হাতের চাবুক দিয়ে পেছনে তাদের দিকে ইশারা করে বললেন, হে লোকেরা! তোমরা প্রশান্তির সাথে ধীরে সুস্থে চলো, কারণ উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়াই শুধু নেক কাজ নয়। (বুখারী)[1]

بَابٌ الدَّفْعُ مِنْ عَرَفَةَ وَالْمُزْدَلِفَةِ

وَعَن ابنِ عبَّاسٍ أَنَّهُ دَفَعَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَرَفَةَ فَسَمِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَاءَهُ زَجْرًا شَدِيدًا وَضَرْبًا لِلْإِبِلِ فَأَشَارَ بِسَوْطِهِ إِلَيْهِمْ وَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ عَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ فَإِنَّ الْبِرَّ لَيْسَ بِالْإِيضَاعِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عباس انه دفع مع النبي صلى الله عليه وسلم يوم عرفة فسمع النبي صلى الله عليه وسلم وراءه زجرا شديدا وضربا للابل فاشار بسوطه اليهم وقال: «يا ايها الناس عليكم بالسكينة فان البر ليس بالايضاع» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে (زَجْرًا) (ধমক দেয়া) বলতে উদ্দেশ্য উটকে দ্রুত চলার উৎসাহের জন্য চিৎকার করা। আর (عَلَيْكُمْ بِالسَّكِيْنَةِ) অর্থাৎ- ‘তোমরা ধীরে চলো’ বলতে উদ্দেশ্য কোমল আচরণ এবং ভীড় না করা। ‘‘দ্রুত চলার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই’’ বলার উদ্দেশ্য মানুষ যখন রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ থাকবে এবং দ্রুত চলায় তাদের কষ্ট হবে, তখন এই দ্রুত চলায় কোন কল্যাণ নেই। এ অবস্থায় আসতে চলা উত্তম। পূর্বের হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্রুত চলা প্রমাণিত আছে, অথচ তিনি এ হাদীসে আসতে চলতে বলছেন, উভয় হাদীসের মধ্যে বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হয়। এর সমাধান হচ্ছে ভীড়ের সময় আস্তে চলা এবং ফাঁকা পাওয়া অবস্থায় দ্রুত চলা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা

২৬০৬-[৩] উক্ত রাবী [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) ’আরাফার ময়দান হতে মুযদালিফা পর্যন্ত ফিরে আসার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে বসেছিলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুযদালিফা হতে মিনায় আসা পর্যন্ত (আমার বড় ভাই) ফযল ইবনু ’আব্বাসকেও তাঁর পেছনে বসিয়েছিলেন। তাঁরা উভয়ে বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারাতুল ’আক্বাবায় কংকর মারা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابٌ الدَّفْعُ مِنْ عَرَفَةَ وَالْمُزْدَلِفَةِ

وَعَنْهُ أَنَّ أُسَامَةَ بْنَ زِيدٍ كَانَ رِدْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ عَرَفَةَ إِلَى الْمُزْدَلِفَةِ ثُمَّ أَرْدَفَ الْفَضْلَ مِنَ الْمُزْدَلِفَةِ إِلَى مِنًى فَكِلَاهُمَا قَالَ: لَمْ يَزَلِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُلَبِّي حَتَّى رَمَى جَمْرَة الْعقبَة

وعنه ان اسامة بن زيد كان ردف النبي صلى الله عليه وسلم من عرفة الى المزدلفة ثم اردف الفضل من المزدلفة الى منى فكلاهما قال: لم يزل النبي صلى الله عليه وسلم يلبي حتى رمى جمرة العقبة

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়াহ্ পাঠ কখন শেষ হয়েছে, এ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছেঃ

১. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারাতুল ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন। এখানে কেউ কেউ উদ্দেশ্য নিয়েছেন প্রথম পাথর নিক্ষেপ করার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালবিয়াহ্ পাঠ শেষ করেছেন। এর সমর্থনে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যা বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন,   (لَمْ يَزَلَ حَتّٰى رَمٰى جَمْرَةَ الْعَقَبَةَ بِأَوْلِ حُطَاةٍ)

অর্থাৎ- তিনি জামারাতুল ‘আক্বাবায় প্রথম পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করতেন।

২. আর কেউ কেউ উদ্দেশ্য নিয়েছেন শেষ পাথর নিক্ষেপ করার পর পর্যন্ত (অর্থাৎ- জামারাতুল ‘আক্বাবায়) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তালবিয়াহ্ পাঠ করা শেষ করেছেন। এর সমর্থনে ইবনু খুযায়মার রিওয়ায়াতে বর্ণিত আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জামারাতুল ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করতেন এবং প্রত্যেক পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর পাঠ করতেন। অতঃপর শেষ পাথর নিক্ষেপের সাথে তালবিয়াহ্ পাঠ করা শেষ করতেন। দ্বিতীয় মতটিকে হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) ইবনু ‘আবদুল বার, ইমাম নাবাবী, ইমাম ‘আয়নী ও ইমাম আহমাদ (রহঃ) প্রাধান্য দিয়েছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা

২৬০৭-[৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ’ইশার সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) মুযদালিফায় একত্রে আদায় করেছেন। প্রত্যেক সালাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিয়েছেন এবং এ দুই সালাতের মাঝে কোন নফল সালাত আদায় করেননি এবং পরেও আদায় করাননি। (বুখারী)[1]

بَابٌ الدَّفْعُ مِنْ عَرَفَةَ وَالْمُزْدَلِفَةِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: جَمَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ بِجَمْعٍ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بِإِقَامَةٍ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا وَلَا عَلَى إِثْرِ كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعن ابن عمر قال: جمع النبي صلى الله عليه وسلم المغرب والعشاء بجمع كل واحدة منهما باقامة ولم يسبح بينهما ولا على اثر كل واحدة منهما. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: হাদীসে বলা হচ্ছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ‘ইশার সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) এক সাথে আদায় করেছেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় মাগরিব ও ‘ইশার সালাত আদায় করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে এক বাক্যে বলা যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় ‘ইশার ওয়াক্তে মাগরিব ও ‘ইশার সালাত আদায় করেছেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলাদা আলাদা ইক্বামাতে এ সালাত আদায় করেছেন। আর এ দু’ সালাতের মাঝে কোন তাসবীহ পাঠ করেননি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থান পরিবর্তন না করে একই স্থানে বসে এ দু’ সালাত আদায় করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা

২৬০৮-[৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কক্ষনো মুযদালিফায় মাগরিব ও ’ইশার সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) একত্রে আদায় করা ছাড়া আর অন্য কোন সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) একত্রে আদায় করতে দেখিনি। আর সেদিনই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের সালাতও (কিছু) সময়ের আগে আদায় করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابٌ الدَّفْعُ مِنْ عَرَفَةَ وَالْمُزْدَلِفَةِ

وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى صَلَاةً إِلَّا لِمِيقَاتِهَا إِلَّا صَلَاتَيْنِ: صَلَاةَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ وَصَلَّى الْفَجْرَ يومئِذٍ قبلَ ميقاتها

وعن عبد الله بن مسعود قال: ما رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم صلى صلاة الا لميقاتها الا صلاتين: صلاة المغرب والعشاء بجمع وصلى الفجر يومىذ قبل ميقاتها

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে এ বিধান সাব্যস্ত হয়েছে যে, হজ্জের সময় এক ওয়াক্তের সালাত অন্য ওয়াক্তে এসে বা আগত ওয়াক্তের সালাত বর্তমান ওয়াক্তের সাথে আদায় বৈধ। যেমন- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) ‘ইশার ওয়াক্তে আদায় করেছেন এবং যুহর ও ‘আসরের সালাত যুহরের ওয়াক্তে আদায় করেছেন। হাদীসে বলা হচ্ছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত ওয়াক্তের পূর্বে আদায় করেছেন। আসলে ব্যাপারটা এ রকম নয় বরং সাধারণতঃ যে সময়ে ফজরের সালাত আদায় করেন তার পূর্বে আদায় করেছেন। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ ওয়াক্তের শুরুতে আদায় করেছে পূর্বে নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা

২৬০৯-[৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পরিবারের যেসব দুর্বল (শিশু ও মহিলা)-দেরকে মুযদালিফার রাতে সময়ের আগেই (মিনায়) পাঠিয়েছিলেন আমিও তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابٌ الدَّفْعُ مِنْ عَرَفَةَ وَالْمُزْدَلِفَةِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَنَا مِمَّنْ قَدَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَة الْمزْدَلِفَة فِي ضعفة أَهله

وعن ابن عباس قال: انا ممن قدم النبي صلى الله عليه وسلم ليلة المزدلفة في ضعفة اهله

ব্যাখ্যা: এ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, মহিলা, শিশু এবং দুর্বল পুরুষরা মুযদালিফা হতে মিনায় ফজর উদিত হওয়ার পূর্বে এবং মাশ্‘আরে হারামে অবস্থান করার পূর্বে যেতে পারবে। এ হাদীসের সমর্থনে ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস বর্ণিত আছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফার রাতে ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, তুমি আমাদের দুর্বল লোক এবং মহিলাদের নিয়ে যাও, যেন তারা মিনায় গিয়ে ফজর সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করে এবং মানুষের পূর্বে জামারাতুল ‘আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে। সর্বসম্মতিক্রমে অর্ধরাত্রির পরে যেতে পারবে, রাতের প্রথম ভাগে নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা

২৬১০-[৭] ফযল ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটের পেছনে বসাছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’আরাফার সন্ধ্যায় ও মুযদালিফায় ভোরে লোকেদের উদ্দেশে বলেছেন, তোমরা (অবশ্যই) প্রশান্তির সাথে ধীরে সুস্থে চলবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও নিজের উষ্ট্রীকে মিনার অন্তর্গত মুহাস্‌সির নামক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত সংযত রেখেছিলেন। এখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’তোমরা আঙ্গুল দিয়ে ধরা যায় এমন ছোট পাথর জামারাতে মারার জন্য লও’। ফযল বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারায় পাথর মারা পর্যন্ত সব সময় তালবিয়াহ্ পড়ছিলেন। (মুসলিম)[1]

بَابٌ الدَّفْعُ مِنْ عَرَفَةَ وَالْمُزْدَلِفَةِ

وَعَن الفضلِ بن عبَّاسٍ وَكَانَ رَدِيفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ فِي عَشِيَّةِ عَرَفَةَ وَغَدَاةِ جَمْعٍ لِلنَّاسِ حِينَ دَفَعُوا: «عَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ» وَهُوَ كَافٌّ نَاقَتَهُ حَتَّى دَخَلَ مُحَسِّرًا وَهُوَ مِنْ مِنًى قَالَ: «عَلَيْكُمْ بِحَصَى الْخَذْفِ الَّذِي يُرْمَى بِهِ الْجَمْرَةَ» . وَقَالَ: لَمْ يَزَلْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُلَبِّي حَتَّى رَمَى الْجَمْرَةَ. رَوَاهُ مُسلم

وعن الفضل بن عباس وكان رديف النبي صلى الله عليه وسلم انه قال في عشية عرفة وغداة جمع للناس حين دفعوا: «عليكم بالسكينة» وهو كاف ناقته حتى دخل محسرا وهو من منى قال: «عليكم بحصى الخذف الذي يرمى به الجمرة» . وقال: لم يزل رسول الله صلى الله عليه وسلم يلبي حتى رمى الجمرة. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি ওয়াদীয়ে মুহাসসার-এ পৌঁছতে চায় তার জন্য মুস্তাহাব হলো যদি সে সওয়ারী হয় তাহলে সে আস্তে চলবে আর যদি পায়ে হেঁটে চলে তাহলে দ্রুত চলবে। ‘আরাফাহ্, মুযদালিফা এমনকি ভীড়ের জায়গাগুলোতে আস্তে চলা এটা রাস্তার আদব। আর (وَهُوَ مِنِّيْ) বলতে বুঝানো হয়েছে ওয়াদীয়ে মুহাসসার মিনার অন্তর্ভুক্ত এবং কেউ মুযদালিফা উদ্দেশ্য নিয়েছেন। মূলত মুযদালিফা এবং মিনার মধ্যবর্তী ওয়াদীয়ে মুহাসসার নামক স্থানটি কবরের ন্যায়। এজন্য আস্তে চলতে বলা হয়েছে। (عَلَيْكُمْ بِحَصَي الْخَذَفِ) বলতে বৃদ্ধা ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয়ের দুই পাশ দিয়ে ছোট কঙ্কর নিক্ষেপ করা উদ্দেশ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরাফাহ্ ও মুযদালিফা হতে ফিরে আসা

২৬১১-[৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফা হতে প্রশান্তির সাথে ধীরস্থিরভাবে রওয়ানা হলেন, লোকজনকেও শান্তশিষ্টভাবে রওয়ানা হওয়ার জন্য আদেশ করলেন। তবে মুহাস্‌সির উপত্যকায় পৌঁছার পর উটকে কিছুটা দৌড়ালেন এবং তাদেরকে জামারায় আঙুল দিয়ে নিক্ষেপ করার মতো পাথর মারতে নির্দেশ দিলেন। এমন সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সম্ভবত এ বছরের পর আমি আর তোমাদেরকে দেখতে পাবো না। (গ্রন্থকার লিখেছেন, বুখারী ও মুসলিমে এ হাদীসটি পাইনি, তবে তিরমিযী কিছু আগ-পিছ করে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)[1]

بَابٌ الدَّفْعُ مِنْ عَرَفَةَ وَالْمُزْدَلِفَةِ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَفَاضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ جَمْعٍ وَعَلَيْهِ السَّكِينَةُ وَأَمَرَهُمْ بِالسَّكِينَةِ وَأَوْضَعَ فِي وَادِي مُحَسِّرٍ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَرْمُوا بِمِثْلِ حَصَى الْخَذْفِ وَقَالَ: «لَعَلِّي لَا أَرَاكُمْ بَعْدَ عَامِي هَذَا» . لَمْ أَجِدْ هَذَا الْحَدِيثَ فِي الصَّحِيحَيْنِ إِلَّا فِي جَامِعِ التِّرْمِذِيِّ مَعَ تقديمٍ وَتَأْخِير

وعن جابر قال: افاض النبي صلى الله عليه وسلم من جمع وعليه السكينة وامرهم بالسكينة واوضع في وادي محسر وامرهم ان يرموا بمثل حصى الخذف وقال: «لعلي لا اراكم بعد عامي هذا» . لم اجد هذا الحديث في الصحيحين الا في جامع الترمذي مع تقديم وتاخير

ব্যাখ্যা: এ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় ওয়াদীয়ে মুহাসসার দ্রুত অতিক্রম করা বৈধ। সে স্থানটির সীমা ছিল ৫৪৫ গজ। দ্রুত অতিক্রম বৈধ হওয়ার কারণ হলো সেখানে ‘আরববাসীরা অবস্থান করতো এবং তাদের গর্বকারী পূর্বপুরুষদের আলোচনা করতো।

(حَصَي الْخَذْفِ) কঙ্কর নিক্ষেপ বলতে ছোট কঙ্কর নিক্ষেপ উদ্দেশ্য। আর (لَعَلِّىْ لَا أَرَاكُمْ بَعْدَ عَامِىْ هٰذَا) তথা সম্ভবত আমি এ বছর পর তোমাদের দেখতে পাব না। সম্ভবত তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদ্বেগ কণ্ঠে বলেছেন যেন তারা হজ্জের কার্যাবলী শিখে নিয়ে মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দেন।

অন্য বর্ণনায় আছে- لَتَأخُذُوْا مَنَاسِكَكُمْ فَاِنِّيْ لَا اَدْرِىْ لَعَلِّيْ لَا اَحُّجَ بَعْدَ حَجَّتِىْ هٰذِه তথা তোমরা হজ্জের কার্যাবলী শিখে নাও। কেননা আমি জানি না হয়তবা এ হজ্জের পর আর হজ্জ/হজ করতে পারব না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে