পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম ও তালবিয়াহ্
২৫৪৭-[৮] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইহরাম বাঁধার উদ্দেশে কাপড় খুলতে ও গোসল করতে দেখেছেন। (তিরমিযী ও দারিমী)[1]
عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَجَرَّدَ لِإِهْلَالِهِ وَاغْتَسَلَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: (تَجَرَّدَ لِإِهْلَالِه) ‘‘তিনি ইহরাম বাঁধার জন্য কাপড় খুললেন’’। অর্থাৎ- ইহরাম বাঁধার উদ্দেশে সেলাই করা কাপড় খুলে চাদর পরিধান করলেন। (وَاغْتَسَلَ) ‘‘এবং গোসল করলেন’’। অর্থাৎ- ইহরামের জন্য গোসল করলেন।
ইমাম শাওকানী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, ইহরাম বাঁধার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। অধিকাংশ ‘উলামাগণের অভিমত এটিই।
নাসির বলেনঃ ইহরামের জন্য গোসল করা ওয়াজিব। ইহরামের জন্য গোসল করার উদ্দেশ্য, শরীর পরিষ্কার করা এবং শরীর থেকে দুর্গন্ধ দূর করা যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।
ইবনুল মুনযির বলেনঃ ‘উলামাহগণ এ বিষয়ে একমত যে, ইহরামের উদ্দেশে গোসল করা বৈধ, তবে তা ওয়াজিব নয়। কিন্তু হাসান বাসরী বলেনঃ কেউ যদি গোসল করতে ভুলে যায় তাহলে যখন স্মরণ হবে তখন গোসল করে নিবে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম ও তালবিয়াহ্
২৫৪৮-[৯] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঠালো বস্তু দিয়ে মাথার চুল জড়ো করেছিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَبَّدَ رَأْسَهُ بِالْغِسْلِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (لَبَّدَ رَأْسَه بِالْغِسْلِ) গোসলের উপকরণ (খিতমী বা অন্য কিছু) দিয়ে স্বীয় মাথাকে তালবীদ করেছেন।
পূর্বে বর্ণিত ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীসে (سمعت رسول الله - ﷺ- يهل ملبدًا) তালবীদ সম্পর্কে আলোচনা গত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম ও তালবিয়াহ্
২৫৪৯-[১০] খল্লাদ ইবনুস্ সায়িব তার পিতা (সায়িব) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসে আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন আমার সাহাবীগণকে উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ করতে আদেশ করি। (মালিক, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
وَعَنْ خَلَّادِ بْنِ السَّائِبِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَتَانِي جِبْرِيلُ فَأَمَرَنِي أَنْ آمُرَ أَصْحَابِي أَنْ يرفَعوا أصواتَهم بالإِهْلالِ أَو التَّلبيَةِ» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: (أَمَرَنِىْ أَنْ اٰمُرَ أَصْحَابِىْ) ‘‘তিনি আদেশ করেছেন’’। অর্থাৎ- আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে অবহিত করেছেন) আমি যেন আমার সঙ্গীদের আদেশ করি। জমহূরের মতে এ আদেশ মুস্তাহাব। আহলুয্ যাহিরদের মতে তা ওয়াজিব।
(أَنْ يَرْفَعُوْا أَصْوَاتَهُمْ بِالْإِهْلَالِ) তারা যেন ইহরাম বাঁধার সময় উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ করে। যাতে ইহরামের নিদর্শন প্রকাশ পায় এবং অজ্ঞরা তা শিখতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম ও তালবিয়াহ্
২৫৫০-[১১] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম যখন তালবিয়াহ্ পাঠ করে, তখন তার সাথে সাথে তার ডান বামে যা কিছু আছে- পাথর, গাছ-গাছড়া কিংবা মাটির ঢেলা তালবিয়াহ্ পাঠ করে থাকে। এমনকি এখান থেকে এদিক ও ওদিকে (পূর্ব ও পশ্চিমের) ভূখগুের শেষ সীমা পর্যন্ত। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُلَبِّي إِلَّا لَبَّى مَنْ عَنْ يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ: مِنْ حَجَرٍ أَوْ شَجَرٍ أَوْ مَدَرٍ حَتَّى تنقطِعَ الأرضُ منْ ههُنا وههُنا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (حَتّٰى تَنْقَطِعَ الْأَرْضُ مِنْ هٰهُنَا وَهٰهُنَا) এমনকি তা পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছে যায়। পাথর, বৃক্ষ ও ইট এসবগুলোর তালবিয়াহ্ পাঠের দ্বারা মুসলিমদের বুঝানো হচ্ছে যে, এ যিকিরের মর্যাদা অনেক বেশী। আল্লাহর নিকট এর অনেক ফাযীলাত ও মর্যাদা রয়েছে। এটাও অসম্ভব নয় যে, তালবিয়াহ্ পাঠকারীর ‘আমলনামায় তাদের তালবিয়াহ্ পাঠের সাওয়াবও লিখা হবে। কেননা তিনি অন্যদের তালবিয়াহ্ পাঠের কারণ।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম ও তালবিয়াহ্
২৫৫১-[১২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলায়ফায় ইহরাম বাঁধার সময় দুই রাক্’আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করেছেন। অতঃপর যুলহুলায়ফার মসজিদের কাছে তাঁর উষ্ট্রী তাঁকে নিয়ে দাঁড়ালে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ সব শব্দের দ্বারা তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন, ’’লাব্বায়কা আল্লা-হুম্মা লাব্বায়কা লাব্বায়কা ওয়া সা’দায়কা, ওয়াল খয়রু ফী ইয়াদায়কা লাব্বায়কা, ওয়ার্ রগবা-উ ইলায়কা ওয়াল ’আমলু’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে উপস্থিত, আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। আমি উপস্থিত আছি ও তোমার দরবারের সৌভাগ্য লাভ করেছি, সব কল্যাণ তোমার হাতে নিহীত। আমি উপস্থিত, সকল কামনা-বাসনা তোমারই হাতে, সকল ’আমল তোমারই জন্যে।)। (বুখারী ও মুসলিম; তবে শব্দগুলো মুসলিমের)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْكَعُ بِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ إِذَا اسْتَوَتْ بِهِ النَّاقَةُ قَائِمَةً عِنْدَ مَسْجِدِ ذِي الْحُلَيْفَةِ أَهَلَّ بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ وَيَقُولُ: «لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِي يَدَيْكَ لَبَّيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَل» . مُتَّفق عَلَيْهِ وَلَفظه لمُسلم
ব্যাখ্যা: (يَرْكَعُ بِذِى الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলায়ফাতে (ইহরামের পূর্বে) দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করতেন।’’ ‘আল্লামা যুরক্বানী বলেনঃ এ দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) সুন্নাতুল ইহরাম তথা ইহরামের সুন্নাত। আর তা ছিল নফল সালাত (সালাত/নামাজ/নামায)। জমহূর ‘উলামাগণের অভিমত এটাই।
হাসান বাসরী ফরয সালাতের পর ইহরাম বাঁধা মুস্তাহাব মনে করতেন। ‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ সালাতের পর ইহরাম বাঁধা মুস্তাহাব। ফরয সালাতের সময় হলে ফরয সালাতের পর ইহরাম বাঁধবে। তা না হলে দু’ রাক্‘আত নফল সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করে ইহরাম বাঁধবে। ‘আত্বা, ত্বাউস, মালিক, শাফি‘ঈ, সাওরী, আবূ হানীফা, ইসহাক, আবূ সাওর ও ইবনুল মুনযির তা মুস্তাহাব মনে করতেন। ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকেও এমনটি বর্ণিত হয়েছে। মোটকথা হলো সালাতের পর ইহরাম বাঁধা সুন্নাত। যদি ফরয সালাতের পর তা বাঁধা হয় তাহলে শুধুমাত্র সুন্নাতের উপর ‘আমল হলো। আর যদি নফল সালাতের পর বাঁধা হয় তাহলে সুন্নাত ও মুস্তাহাব দু’টিই পাওয়া গেল।
(أَهَلَّ بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ) ‘‘তালবিয়ার শব্দগুলো উচ্চস্বরে পাঠ করতেন’’। হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ করা মুস্তাহাব।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম ও তালবিয়াহ্
২৫৫২-[১৩] ’উমারাহ্ ইবনু খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন তালবিয়াহ্ শেষ করলেন, তখন আল্লাহর নিকট তাঁর সন্তুষ্টি ও জান্নাত কামনা করলেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর রহমতের দ্বারা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাইলেন। (শাফি’ঈ)[1]
وَعَنْ عِمَارَةَ بْنِ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ إِذَا فَرَغَ مِنْ تَلْبِيَتِهِ سَأَلَ اللَّهَ رِضْوَانَهُ وَالْجَنَّةَ وَاسْتَعْفَاهُ بِرَحْمَتِهِ مِنَ النَّارِ. رَوَاهُ الشَّافِعِي
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, মুহরিম ব্যক্তি যখনই তালবিয়াহ্ পাঠ করা শেষ করবে তখন অত্র দু‘আটি পাঠ করবেঃ
اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مَغْفِرَتَكَ وَرِضَاكَ وَالْجَنَّةَ فِى الْاٰخِرَةِ، وَأَنْ تَعْفُوْ عَنِّىْ وَتُعِيْذَنِىْ وَتُعْتِقَنِىْ بِرَحْمَتِكَ مِنَ النَّارِ.
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও আপনার সন্তুষ্টি প্রার্থনা করি এবং পরকালে জান্নাত কামনা করি। আপনি আমাকে মাফ করুন। স্বীয় দয়ায় জাহান্নামের আগুন থেকে আমাকে পরিত্রাণ ও আশ্রয় দান করুন।’’