পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ

২১০২-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। কিন্তু এক বছর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করতে পারলেন না। এর পরের বছর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশ দিন ’ইতিকাফ’ করলেন। (তিরমিযী)[1]

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ فَلَمْ يَعْتَكِفْ عَامًا. فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الْمقبل اعْتكف عشْرين. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

عن انس قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم يعتكف في العشر الاواخر من رمضان فلم يعتكف عاما. فلما كان العام المقبل اعتكف عشرين. رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস প্রমাণ করে যে, নির্ধারিত নফল ‘ইবাদাত ছুটে গেলে তা কাযা করতে হবে, যেমনঃ ফরয ছুটে গেলে তা কাযা করতে হয়। ‘আল্লামা আল কারী (রহঃ) বলেন, ফরয ‘ইবাদাতের কাযা ফরয এবং নাফলের কাযা আদায় করা নফল। ‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলব যে, এ হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে, যে ব্যক্তি ইতিকাফের প্রস্ত্ততি নিল, অতঃপর তা পালন সম্ভব হল না, তার জন্য তা কাযা করা মুস্তাহাব। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাযা করাটা তা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এ হাদীসটির উপর অধ্যায় বেঁধেছেন।

(باب ما جاء في الاعتكاف إذا خرج منه) অধ্যায়ঃ ইতিকাফ ছুটে যাওয়ার বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ

২১০৩-[৭] আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ হাদীসটি উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[1]

وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ عَنْ أَبِي بن كَعْب

ورواه ابو داود وابن ماجه عن ابي بن كعب

ব্যাখ্যা: উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন এক বছরে সফর করলেন বিধায় ইতিকাফ করতে পারলেন না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগামী বছরে ২০ দিন ইতিকাফ করলেন। ‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, নিশ্চয়ই নফল ‘ইবাদাত যখন ছুটে যাবে তখন তা কাযা আদায় করতে হবে। যেমনিভাবে ফরযের কাযা আদায় করতে হয় এবং এ দৃষ্টিকোণ থেকেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের সালাতের পর সে দুই রাক্‘আত সালাত (যুহরের পরের ২ রাক্‘আত) আদায় করলেন, যা থেকে তিনি প্রতিনিধি দলের আগমনের কারণে ব্যস্ত ছিলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ

২১০৪-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইতিকাফ’ করার নিয়্যাত করলে (প্রথম) ফজরের সালাত আদায় করতেন। তারপর ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَعْتَكِفَ صَلَّى الْفَجْرَ ثُمَّ دَخَلَ فِي مُعْتَكَفِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اراد ان يعتكف صلى الفجر ثم دخل في معتكفه. رواه ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতের পর নিজেকে মুক্ত করতেন (অর্থাৎ- ইতিকাফের জায়গায় প্রবেশ করতেন) কিন্তু এটাই ইতিকাফের সময়ের শুরু নয়। বরং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ২১ রাতর সূর্য অস্ত যাওয়া থেকে ইতিকাফ করতেন। তা না হলে ইতিকাফ ১০ দিন পূর্ণ হবে না। সে ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০ দিন পূর্ণ ইতিকাফ করতেন। আর ১০ দিন কিংবা একমাস পূর্ণ ইতিকাফের ইচ্ছা পোষণকারীর জন্য এটাই জমহূর ‘উলামাগণের নিকট অগ্রগণ্য, আর চার ইমামগণ এমন কথাই বলেছেন। আল হাফেয আল ‘ইরাক্বী এটা উল্লেখ করেছেন এবং শারহু জামিউস্ সগীরেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে।

আমি (‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী) বলব যে, জমহূর ‘উলামাগণ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফের নিয়্যাতে মসজিদে প্রবেশ করতেন রাতের প্রথমাংশে কিন্তু তার জন্য প্রস্ত্ততকৃত স্থানে নির্জনে (ইতিকাফের স্থলে) যেতেন ফজর সালাতের পর। ফজর উদিত হওয়ার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদেই থাকতেন। আর ইতিকাফের জন্য প্রস্ত্ততকৃত স্থানে ফজর সালাতের পরে যেতেন। আর জমহূর ‘উলামাগণ উল্লেখিত ব্যাখ্যা প্রণয়ন করেছেন, নিম্নে বর্ণিত দু’টি হাদীসের উপর ‘আমল করার স্বার্থে-

১. সহীহুল বুখারীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।

২. আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। প্রথম হাদীসে পাওয়া যায় ১০ রাত আর দ্বিতীয় হাদীসে রয়েছে ১০ দিন। এ উভয় হাদীসের সমন্বয়ে উল্লেখিত ব্যাখ্যা তারা প্রদান করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ

২১০৫-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে পথের এদিক সেদিক না গিয়ে ও না দাঁড়িয়ে রোগীর অবস্থা জিজ্ঞেস করতেন। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُ الْمَرِيضَ وَهُوَ مُعْتَكِفٌ فَيَمُرُّ كَمَا هُوَ فَلَا يُعَرِّجُ يَسْأَلُ عَنْهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: كان النبي صلى الله عليه وسلم يعود المريض وهو معتكف فيمر كما هو فلا يعرج يسال عنه. رواه ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: এখানে দলীল রয়েছে যে, ইতিকাফকারী যখন বৈধ কোন কারণে বের হবে, যেমন মানবীয় প্রয়োজন। অতঃপর অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করল কিংবা জানাযায় শারীক হলো। যদি তার বের হওয়াটা উক্ত ইচ্ছায় না হয়। অর্থাৎ- জানাযায় কিংবা রোগীর সেবা করার ইচ্ছায় যদি বের না হয়, তবে তাতে কোন ক্ষতি হবে না এবং ইতিকাফ নষ্টও হবে না- এ ব্যাপারে চার ইমামগণ একমত।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ

২১০৬-[১০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য এ নিয়ম পালন করা জরুরী- (১) সে যেন কোন রোগী দেখতে না যায়। (২) কোন জানাযায় শারীক না হয়। (৩) স্ত্রী সহবাস না করে। (৪) স্ত্রীর সাথে ঘেঁষাঘেষি না করে। (৫) প্রয়োজন ছাড়া কোন কাজে বের না হয়। (৬) সওম ছাড়া ইতিকাফ না করে এবং (৭) জামি’ মাসজিদ ছাড়া যেন অন্য কোথাও ইতিকাফে না বসে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن عَائِشَة رَضِي الله عَنْهَا قَالَتْ: السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ أَنْ لَا يَعُودَ مَرِيضًا وَلَا يَشْهَدُ جِنَازَةً وَلَا يَمَسُّ الْمَرْأَةَ وَلَا يُبَاشِرُهَا وَلَا يَخْرُجُ لِحَاجَةٍ إِلَّا لِمَا لابد مِنْهُ وَلَا اعْتِكَافَ إِلَّا بِصَوْمٍ وَلَا اعْتِكَافَ إِلَّا فِي مَسْجِدٍ جَامِعٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: السنة على المعتكف ان لا يعود مريضا ولا يشهد جنازة ولا يمس المراة ولا يباشرها ولا يخرج لحاجة الا لما لابد منه ولا اعتكاف الا بصوم ولا اعتكاف الا في مسجد جامع. رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসটি এ মর্মে দলীল, ইতিকাফকারী রোগীর সেবা ও জানাযায় উপস্থিত হওয়ার জন্য বের হতে পারবে না- এ মর্মে ‘উলামাগণের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে।

‘আল্লামা আল খিরক্বী (রহঃ) বলেন, ইতিকাফকারী ব্যক্তি রোগীর সেবা ও জানাযায় অংশগ্রহণ করতে পারবে, না তবে যদি এ বিষয়ে শর্ত করে তবে পারবে। (অর্থাৎ- রোগীর সেবা করা ও জানাযায় শারীক হওয়াটা যদি ইতিকাফের শর্ত হয়, তবে রোগীর সেবা কিংবা জানাযায় শারীক হতে পারবে।)

‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, যারা ইতিকাফের ক্ষেত্রে কোন শর্তের কথা বলেননি তাদের কথাই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। কারণ ইতিকাফে শর্তারোপ করা সহীহ, য‘ঈফ, আসার এমনকি বিশুদ্ধ কোন কিয়াস দ্বারাও প্রমাণিত নয়। আমাদের কাছে প্রাধান্য কথা হলো, রোগীর সেবা করা কিংবা জানাযার জন্য বের হওয়া জায়িয নেই, চাই ইতিকাফ ওয়াজিব বা ওয়াজিব নয়, যেমন ইতিকাফ হোক। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ থেকে রোগীর সেবা ও জানাযার সালাতের উদ্দেশে বের হননি। আর তার ইতিকাফ ওয়াজিব ছিল না। ‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেন, ওয়াজিব ইতিকাফের ক্ষেত্রে রোগীর সেবা ও জানাযায় গমন করা জায়িয নেই। তবে নাফলের ক্ষেত্রে তা জায়িয। আশ্ শামিল প্রণেতা বলন, এটা স্পষ্ট সুন্নাহ পরিপন্থী। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ থেকে রোগীর সেবা ও জানাযায় বের হতেন না। আর তার ইতিকাফ ছিল নফল, মানৎ-এর ইতিকাফ (ওয়াজিব) নয়।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে