পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ
الإِعْتِكَابِ এর শাব্দিক অর্থ হলো, কোন বিষয়ের আবশ্যকতা এবং নিজকে তার ওপর আটকে রাখা, তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, সাধারণ অবস্থান তা যে কোন স্থানেই হোক।
পারিভাষিক অর্থে ইতিকাফ হলো, নির্দিষ্ট কোন বিষয়কে আবশ্যকীয় করতঃ মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়।
’আল্লামা কুসতুলানী (রহঃ) বলেন, শাব্দিক অর্থেই ইতিকাফ হলো, অবস্থান করা, আটক রাখা, ভালো কিংবা মন্দ কোন বিষয়কে আবশ্যক করা। যেমন আল্লাহ তা’আলার বাণী,
لَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ অর্থাৎ- ’’মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় তোমরা রমণীদের সাথে সঙ্গম কর না।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৮৭)
’আল্লামা ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ এ মর্মে একমত হয়েছেন যে, ইতিকাফ সুন্নাত, তা মানুষের ওপর ওয়াজিব নয়। তবে যদি কোন ব্যক্তি তার নিজের ওপর মানতের মাধ্যমে ইতিকাফ ওয়াজিব করে নেয়, তবে তা পালন করা ওয়াজিব।
২০৯৭-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সবসময়ই মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করেছেন, তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْاِعْتِكَافِ
وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بعده
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُه مِنْ بَعْدِه) অর্থাৎ- মৃত্যুর পরে তার সুন্নাত জিন্দা করণার্থে এবং তার পথের উপর অবিচল থাকার জন্য তার রমণীগণ ইতিকাফ করতেন।
এখানে দলীল হলো ইতিকাফ খাস ‘ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং নারীরা ইতিকাফের ক্ষেত্রে পুরুষের মতই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কতিপয় স্ত্রীকে ইতিকাফ করার অনুমতি প্রদান করেছেন।
‘আল্লামা নাবাবী বলেন, এ হাদীস নাবীদের ইতিকাফ বিশুদ্ধ হওয়ারই দলীল, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে নারীদের ইতিকাফ বাড়ির মসজিদে বৈধ এবং তা হলো তার বাড়ির নির্জন ঘর যা সালাতের জন্য বরাদ্দ। আর তিনি বলেন, মসজিদে ইতিকাফ করা পুরুষের জন্য বরাদ্দ। তিনি বলেন, পুরুষের জন্য বাড়ির সালাতের জায়গায় ইতিকাফ বৈধ নয়। ‘আল্লামা ইবনুল কুদামাহ্ বলেন, নারীর জন্য প্রত্যেক মসজিদে ইতিকাফ করা বৈধ, জামা‘আত প্রতিষ্ঠিত হওয়া (জামা‘আত) তার ওপর ওয়াজিব নয়। আর ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, নারীর ইতিকাফ বাড়িতে হবে না।
আমরা বলব, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَجِدِ ‘‘তোমরা মসজিদে ইতিকাফকারী।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৮৭)
এখানে মাসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এমন স্থানের নাম যা গঠন করা হয়েছে তাতে সালাত আদায় করার জন্য। আর বাড়িতে যে সালাতের স্থান তা মাসজিদ নয়, কেননা তা সালাতের জন্য গঠিত হয়নি। যদি তাকে মাসজিদ বা নামাজের জায়গা বলা হয় তা মাযাজী বা হুকমী। অতএব তার জন্য প্রকৃত মসজিদের হুকুম প্রযোজ্য নয়। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ তাঁর নিকট মসজিদে ইতিকাফ করার অনুমতি চেয়েছেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অনুমতি দিয়েছেন মসজিদেই ইতিকাফ করার জন্য।
যদি (মাসজিদ) তাদের ইতিকাফের স্থান না হতো, তবে মসজিদে ইতিকাফের অনুমতি দিতেন না। যদি মাসজিদ ব্যতীত অন্যত্র ইতিকাফ বৈধ হত, তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তাদেরকে জানিয়ে দিতেন। যেহেতু ইতিকাফের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রে মাসজিদ শর্ত, কাজেই নারীদের জন্যও মাসজিদ শর্ত। যেমন ত্বওয়াফের জন্য উভয়ের একই শর্ত।
আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস যা আমরা উল্লেখ করেছি তা আমাদের জন্য দলীল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের ইতিকাফ অপছন্দ করেছেন ঐ অবস্থাতে তাদের তাঁবুর আধিক্যের কারণে। কারণ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা দেখছিলেন, অতঃপর তাদের ওপর তাদের নিয়্যাতের বিপর্যয়ের আশংকা করছিলেন। আর এজন্যই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইতিকাফ বর্জন করেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ধারণা করেছিলেন যে, নিশ্চয়ই তারা (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ) তাঁর সাথে অবস্থানের প্রতিযোগিতা করছে। তারা (ইমাম আবূ হানীফাহ্ সহ অন্যান্যরা) যে অর্থ উল্লেখ করেছেন, (নারীদের ইতিকাফ বাড়িতে করতে হবে, মসজিদে বৈধ নয়) ব্যাপারটা তাই যদি হত, তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বাড়িতে ইতিকাফের নির্দেশ দিতেন, তাদের জন্য মসজিদে ইতিকাফের অনুমতি দিতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ
২০৯৮-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কল্যাণকর কাজের ব্যাপারে (দান-খয়রাত) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী। আর তাঁর হৃদয়ের এ প্রশস্ততা রমাযান (রমজান) মাসে বেড়ে যেত সবচেয়ে বেশী। রমাযান (রমজান) মাসে প্রতি রাতে জিবরীল আমীন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে কুরআন শুনাতেন। জিবরীল আমীনের সাক্ষাতের সময় তাঁর দান প্রবাহিত বাতাসের বেগের চেয়েও বেশী বেড়ে যেত। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْاِعْتِكَافِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَان وَكَانَ جِبْرِيلُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقُرْآنَ فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ كَانَ أَجْوَدُ بِالْخَيْرِ مِنَ الرّيح الْمُرْسلَة
ব্যাখ্যা: ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীল (আঃ) পরস্পরের দারসে্র ভিত্তিতে কুরআন পাঠ করতেন। বুখারীর অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি (জিবরীল) তাঁকে কুরআনের পাঠ শিখালেন আর তা হলো, তুমি অন্যের নিকট কুরআনের নির্দিষ্ট অংশ পড়বে এবং সে তোমাদের ওপর নির্দিষ্ট অংশ পড়বে এবং উল্লেখিত হাদীসে কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্য সর্বদাই দানশীলতার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা এবং রমাযানে তা বৃদ্ধি করা। সৎকর্মশীলদের সাথে সংঘবদ্ধ থাকা, সৎকর্মশীলদের সাথে সাক্ষাৎ করা, যদি সাক্ষাতকৃত ব্যক্তি বিরক্ত না হয় তবে বারংবার সাক্ষাৎ করা। আর রমাযানে অধিক অধিক কুরআন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব এবং তা অন্যান্য জিকির-আযকারের তুলনায় উত্তম। যদি জিকিরই উত্তম হত কিংবা তিলাওয়াত সমান হত তবে তারা দু’জন (জিবরীল ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাই করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ
২০৯৯-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রতি বছর (রমাযানে) একবার কুরআন শরীফ পড়ে শুনানো হত। তাঁর মৃত্যুবরণের বছর কুরআন শুনানো হয়েছিল (দু’বার)। তিনি প্রতি বছর (রমাযান (রমজান) মাসে) দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তিকালের বছর তিনি ইতিকাফ করেছেন বিশ দিন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْاِعْتِكَافِ
وَعَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: كَانَ يعرض على النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقُرْآنَ كُلَّ عَامٍ مَرَّةً فَعَرَضَ عَلَيْهِ مَرَّتَيْنِ فِي الْعَامِ الَّذِي قُبِضَ وَكَانَ يَعْتَكِفُ كُلَّ عَامٍ عَشْرًا فَاعْتَكَفَ عِشْرِينَ فِي الْعَامِ الَّذِي قُبِضَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: আল ইসমা‘ঈলী (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে জিবরীল (আঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর কুরআন উপস্থাপন করতেন প্রতি রমাযানে। এ হাদীস ও পূর্বোল্লিখিত হাদীসের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। পূর্বের হাদীসে রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আঃ) উভয়েই একে অপরকে কুরআন শুনাতেন।
‘আল্লামা আসকালানী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ইনতিকালের বছর ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন তার কারণ হলো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পূর্ববর্তী বছরে সফর অবস্থায় ছিলেন, এর উপর প্রমাণ করে নাসায়ীর বর্ণিত হাদীস এবং তার শব্দে উল্লেখিত আবূ দাঊদ-এর বর্ণিত হাদীস। ইবনু হিব্বান এবং অন্যান্যগণ তা সহীহ বলেছেন। উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। অতঃপর এক বছর সফর করলেন ফলে তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি, যখন আগামী বছর আগমন করল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ২০ দিন ইতিকাফ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ
২১০০-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করার সময় মাসজিদ থেকে আমার দিকে তাঁর মাথা বাড়িয়ে দিতেন। আমি মাথা আঁচড়ে দিতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া কখনো ঘরে প্রবেশ কর তেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْاِعْتِكَافِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اعْتَكَفَ أَدْنَى إِلَيَّ رَأَسَهِ وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ فَأُرَجِّلُهُ وَكَانَ لَا يَدْخُلُ الْبَيْتَ إِلَّا لحَاجَة الْإِنْسَان
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে রয়েছে যে, ইতিকাফকারীর জন্য পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা অর্জন গোসল করা মাথা মুন্ডানো, মাথা আঁচড়ানোর মাধ্যমে সৌন্দর্য বজায় রাখা বৈধ। ‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, নিশ্চয়ই ইতিকাফকারীর জন্য চুল চরিতার্থ করা বৈধ। অন্য অর্থে মাথা মুন্ডানো, নখ কাটা, ময়লা থেকে শরীর পরিষ্কার করা। ‘আল্লামা আল হাফেয (রহঃ) বলেন, (স্বাভাবিকভাবে) মসজিদে যে সকল কাজ ঘৃণিত নয়, ইতিকাফ অবস্থায়ও তা ঘৃণিত নয়। ‘আল্লামা ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ এ মর্মে একমত হয়েছেন, ইতিকাফকারী ব্যক্তি প্রসাব এবং পায়খানার জন্য ইতিকাফ থেকে বের হতে পারবে। কারণ এটি তার জন্য আবশ্যক যা মসজিদে করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আলোচ্য হাদীস (لِحَاجَةِ الْإِنْسَانِ) বা মানুষের প্রয়োজন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রস্রাব ও পায়খানা। কেননা প্রতিটি মানুষের খাদ্য ও পানীয়ের দিকে প্রয়োজন রয়েছে। যখন তার নিকট খাদ্য পৌঁছানোর কেউ না থাকবে তখন তার খাদ্যের জন্য বের হওয়া বৈধ এবং যদি বমন (বমি) চেপে যায় তবে বমনের জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া বৈধ। কারণ এগুলো আবশ্যকীয় বিষয় যা মসজিদে সম্পাদন করা সম্ভব নয়। এমন কাজে বাইরে গেলে ইতিকাফ নষ্ট হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ
২১০১-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ’উমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, (হে আল্লাহর রসূল!) জাহিলিয়্যাতের যুগে আমি এক রাতে মসজিদে হারামে ইতিকাফ করার মানৎ করেছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার মানৎ পুরা করো। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْاِعْتِكَافِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ عُمَرَ سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كُنْتُ نَذَرْتُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَنْ أَعْتَكِفَ لَيْلَةً فِي الْمَسْجِد الْحَرَام؟ قَالَ: «فأوف بِنَذْرِك»
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় যে, সিয়াম ছাড়াই ইতিকাফ করা বৈধ। কেননা রাত তো সিয়ামের সময় নয়, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানৎ যে গুণাবলীতে আবশ্যক সে গুণাবলীতে পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। (অর্থাৎ- আলোচ্য হাদীস ইবনু ‘উমার রাতে ইতিকাফের মানৎ করেছিলেন) ‘আল্লামা হাফেয আসকালানী (রহঃ) বলেন, ইতিকাফের জন্য যদি সিয়াম শর্ত হত তবে অবশ্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিতেন। বলা হয় যে, ইতিকাফের জন্য সিয়ামের নির্দেশ বর্ণিত রয়েছে, বিশুদ্ধ সানাদে ‘আবদুল্লাহ বিন বুদায়ল এর সূত্রে আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে রয়েছে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ইতিকাফ কর এবং সিয়াম রাখো।
আমি বলব যে, এটি আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারাকুত্বনী, বায়হাক্বী ও হাকিম প্রত্যেকেই ‘আবদুল্লাহ বিন বুদায়ল বিন ওয়ারাকা আল মাক্কী থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ‘আল্লামা হাফেয দারাকুত্বনী, ইবনু জুরায়জ ইবনু ‘উওয়াইনাহ্, হাম্মাদ বিন সালামাহ্ ও হাম্মাদ বিন যায়দ- সকলের দৃষ্টিতে তিনি য‘ঈফ। আর সহীহুল বুখারীতে ‘উবায়দুল্লাহ বিন ‘উমার হতে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি রাতে ইতিকাফ করলেন। অতএব প্রমাণিত হয় যে, ‘উমার (রাঃ) তার মানতের সিয়াম কিছু বৃদ্ধি করেননি। নিশ্চয়ই ইতিকাফের জন্য সিয়াম জরুরী নয় এবং তার জন্য নির্দিষ্ট কোন সিয়ামও নেই। এখানে লক্ষণীয় বিষয় যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণিত রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাওয়ালের প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছেন এবং ঈদুল ফিত্বরের দিনও তো তার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
‘আল্লামা আল ইসমা‘ঈলী (রহঃ) বলেন, এখানে সিয়াম ছাড়া ইতিকাফ বৈধ হওয়ার দলীল রয়েছে। কেননা শাওয়ালের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিত্বরের দিন আর এ দিনে সিয়াম রাখা হারাম। ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস কাফির থেকে ইসলাম কবূলের পরে কাফির অবস্থায় কৃত মানৎ পূর্ণ করা ওয়াজিব হওয়ার দলীল, শাফি‘ঈ মাযহাবের কতক অনুসারী এ মতই গ্রহণ করছেন। জমহূরের মতে কাফিরের মানৎ সংঘটিত হবে না। তবে ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস তাদের বিরুদ্ধে দলীল।