পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৫৫-[২০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারে সওম রাখতেন। (তিরমিযী, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيس. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসটির শব্দবিন্যাস নাসায়ীর একটি বর্ণনায়। তার অপর বর্ণনায় রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারে সিয়াম পালনের উপর উৎসাহ দিতেন।
অনুরূপ তিরমিযী ও ইবনু মাজাহতে রয়েছে, অর্থাৎ- তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ দু’দিনে সিয়াম পালনের ইচ্ছা করতেন এবং এ সিয়ামদ্বয়কে উত্তম মনে করতেন।
ইবনু মাজাহয় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কেউ বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি সোম ও বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করেন, এর কারণ কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সোম এবং বৃহস্পতিবারে আল্লাহ সকল মুসলিমদের ক্ষমা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৫৬-[২১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবারে (আল্লাহর দরবারে বান্দার) ’আমল পেশ করা হয়। তাই আমি চাই আমার ’আমল পেশ করার সময় আমি সওম অবস্থায় থাকি। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, এ হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (রাতের ‘আমলনামা দিনের পূর্বে উঠানো হয় এবং দিনের ‘আমলনামা রাতের পূর্বে উঠানো হয়)-এর বিরোধী নয়। কেননা رفع (উত্তোলন করা) ও عرض (উপস্থাপন করা) এর মাঝে পার্থক্য রয়েছে। কারণ সপ্তাহের মাঝে ‘আমলনামাগুলো একত্রিত করা হয়, আর তা উল্লেখিত দু’দিনে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে উপস্থাপন করা হয়। সহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, মানুষের ‘আমল প্রতি জুমায় (সপ্তাহে) দু’বার যথাক্রমে সোমবার ও বৃহস্পতিবার উপস্থাপন করা হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক ঈমানদারদেরকে ক্ষমা করেন, তবে একে অপরের সাথে বিদ্বেষপরায়ণ ব্যক্তি ব্যতীত। অতঃপর বলা হয় যে, তাদের মাঝে মীমাংসা হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতি লক্ষ্য কর।
‘আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এটি শা‘বান মাসে ‘আমলনামা উঠানোর হাদীসের বিরোধ নয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই এ মাসে ‘আমল উঠানো হয় আর আমি চাই যে, আমার ‘আমলনামাটা সিয়াম অবস্থায় উঠানো হোক।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৫৭-[২২] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবূ যার! তুমি যখন কোন মাসে তিনদিন সওম পালন করতে চাও, তাহলে তেরো, চৌদ্দ ও পনের তারিখে করবে। (তিরমিযী ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَصُمْ ثَلَاثَ عَشْرَةَ وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ وَخَمْسَ عَشْرَةَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: নাসায়ীর অপর বর্ণনায় রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে প্রতি মাসে তিনদিন আইয়্যামে বীয-এর সিয়াম যথাক্রমে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে আইয়্যামে বীয-এর সিয়াম নির্ধারিত তিনদিন আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল রয়েছে। আর আইয়্যামে বীয-এর তিনটি সিয়াম যে মাসের মাঝামাঝিতে আদায় করা মুস্তাহাব এ মর্মে ‘উলামাগণের ঐকমত্য রয়েছে।
ইমাম নাবাবী যেমনটি বর্ণনা করেছেন। তবে আইয়্যামে বীয-এর সিয়ামের দিন নির্ধারণে মতপার্থক্য রয়েছে। জমহূর ‘উলামাগণের মতে তা ‘আরাবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। আর কারো মতে ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখ। তবে আবূ যার (রাঃ)-এর এ হাদীস দ্বারা তা প্রত্যাখ্যাত।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৫৮-[২৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কখনো) মাসের প্রথম তিনদিন সওম রাখতেন। আর খুব কম দিনই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জুমার দিন সওম ছাড়তেন। (তিরমিযী, নাসায়ী। আর ইমাম আবূ দাঊদ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ অর্থাৎ- ’’তিনদিন’’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ مِنْ غُرَّةِ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَقَلَّمَا كَانَ يفْطر يَوْم الْجُمُعَةَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ إِلَى ثَلَاثَة أَيَّام
ব্যাখ্যা: আল কামূস-এ উল্লেখ রয়েছে যে, غُرَّةِ হলো মাসের প্রথমাংশ। (মাসের প্রথমে তিনদিন সিয়াম পালন প্রসঙ্গে) বলা যায় যে, আলোচ্য হাদীস এবং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসদ্বয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসের যে কোন দিনে সিয়াম পালন করতে কোন দ্বিধা করতেন না। আর এ রাবী অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থায় দেখেছেন, তাই তিনি আর জানা অনুযায়ী বর্ণনা করেছেন। আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস, (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোম ও বৃহস্পতিবারে সিয়াম পালন করতেন) তিনি যা জানতেন তাই বর্ণনা করেছেন। সুতরাং উভয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। ‘আল্লামা আল কারী অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।
আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিনে খুব কমই সওম ভঙ্গ করতেন। বরং এ দিনে বেশি বেশি সিয়াম পালন করতেন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিনের আগে কিংবা পরের একদিন তার সাথে মিলিয়ে নিতেন। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও এককভাবে জুমার দিনে সিয়াম রাখতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৫৯-[২৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসে শনি, রবি, সোমবার, আবার কোন মাসে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দিন সওম রাখতেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ مِنَ الشَّهْرِ السَّبْتَ وَالْأَحَدَ وَالِاثْنَيْنِ وَمِنَ الشَّهْرِ الآخر الثُّلَاثَاء وَالْأَرْبِعَاء وَالْخَمِيس. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, জুমার দিন সিয়াম পালনের হাদীস পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে, সুতরাং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তাহের দিনগুলোকে পূর্ণ করতেন সিয়ামের মাধ্যমে। ‘আল্লামা ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশ্য হলো বছরের সিয়াম হলো পূর্ণ সপ্তাহ অর্থাৎ- সপ্তাহের যে কোন দিন সিয়াম পালন করা যাবে। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছয়দিন লাগাতার সিয়াম পালন করতেন না, যাতে উম্মাতের ইকতিদা করা কঠিন না হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬০-[২৫] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতি মাসে তিনটি সওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (আর এ সওমের) শুরু সোমবার অথবা বৃহস্পতিবার থেকে করতে বলেছেন। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنِي أَنْ أَصُومَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ أَوَّلُهَا الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيس. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: আহমাদ (২/২৮৭, ২৮৮ পৃঃ) নাসায়ী ও বায়হাক্বীর (৪/২৯৫) বর্ণনায় হাফসা (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি মাসের তিনদিন সিয়াম পালন করতেন, যথাক্রমে সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং পরবর্তী সপ্তাহের সোমবার। নাসায়ীতে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬১-[২৬] মুসলিম আল কুরাশী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি অথবা অন্য কোন ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সবসময়ে সওম পালনের বিষয় জিজ্ঞেস করেছে। তখন তিনি বলেছেন, তোমার ওপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক আছে। রমাযান (রমজান) মাসের সওম রাখো। আর রমাযান (রমজান) মাসের সাথের দিনগুলোতে রাখো। অর্থাৎ- ঈদুল ফিতরের পরের দিন থেকে ছয়টি সওম পালন কর। আর প্রত্যেক বুধ, বৃহস্পতিবার রাখতে পার। যদি তুমি এ দিনগুলো সওম রাখো তাহলে মনে করবে যে, তুমি সব সময়ই সিয়াম রেখেছ। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]
وَعَن مُسلم الْقرشِي قَالَ: سَأَلت أَوْ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَن صِيَام الدَّهْر فَقَالَ: «إِنَّ لِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا صُمْ رَمَضَانَ وَالَّذِي يَلِيهِ وَكُلَّ أَرْبِعَاءَ وَخَمِيسٍ فَإِذًا أَنْتَ قَدْ صُمْتَ الدَّهْرَ كُلَّهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: রমাযান (রমজান) মাসের সিয়াম ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট শাওয়াল মাসের ছয়টি সিয়াম পালন করা পূর্ণ বছরের সিয়াম পালনের সমান। যেমন পূর্বে আবূ আইয়ূব (রাঃ) বর্ণিত হাদীস অতিবাহিত হয়েছে। আর প্রতি বুধবার ও বৃহস্পতিবারের সিয়ামও অনুরূপ। বরং এটা পূর্ণ বছরের সিয়ামের উপর অতিরিক্তও বটে। কেননা কোন মাস তো চারটি বুধবার ও চারটি বৃহস্পতিবার হতে মুক্ত নয়। সুতরাং প্রতি মাসে চারটি বুধবার ও চারটি বৃহস্পতিবারে সিয়াম পালন করবে। তখন তো প্রতি মাসে আটটি সিয়াম পালন করা হবে। আর তিনদিন (আইয়্যামে বীয) সিয়াম পালন করা যখন পূর্ণ মাসের সিয়ামের সমান হবে তখন তো আটদিন সিয়াম পালন করা পূর্ণ মাসের সিয়ামেরও বেশি হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬২-[২৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আরাফার দিন ’আরাফার ময়দানে সওম রাখতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَهَى عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ بِعَرَفَةَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (نَهٰى) অর্থাৎ- ‘আরাফায় অবস্থানকালে, তবে অন্যান্যদের জন্য উক্ত দিনে সিয়াম রাখা মুস্তাহাব। যেমন আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে তা অতিবাহিত হয়েছে।
‘আমীর আল ইয়ামামী (রহঃ) বলেন, হাদীসের বাহ্যিক দিক হতে প্রতীয়মান হয় যে, ‘আরাফার ময়দানে উক্ত দিবসে সিয়াম পালন করা হারাম। আর ইয়াহ্ইয়া বিন সা‘ঈদ এ মতই গ্রহণ করেছেন। আর তিনি বলেছেন, হাজীদের ওপর ঐ দিনে সিয়াম পালন না করাই মুস্তাহাব। কেউ কেউ বলেছেন যে, নির্ধারিত দু‘আ পাঠ হতে দুর্বল হওয়ার আশংকা না থাকলে এ দিনে সিয়াম পালনে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে এবং আল খাত্ত্বাবী (রহঃ) তা পছন্দ করেছেন।
আর জমহূর ‘উলামাগণ বলেন, এ দিনে সিয়াম পালন না করাই মুস্তাহাব। এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশুদ্ধ বাণী প্রমাণিত আছে যে, তিনি হাজ্জের সময় ‘আরাফায় সিয়ামবিহীন ছিলেন। যেমন তা পূর্বে আলোচিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬৩-[২৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু বুসর তার বোন সাম্মা হতে বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শনিবার দিন একান্ত প্রয়োজন না হলে সওম রেখ না। যদি কিছু না পাও তাহলে অন্ততঃ গাছের ছাল অথবা ডালপালা চিবিয়ে হলেও ইফতার করবে। (আহমদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُسْرٍ عَنْ أُخْتِهِ الصَّمَّاءِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَصُومُوا يَوْمَ السَّبْتِ إِلَّا فِيمَا افْتُرِضَ عَلَيْكُمْ فَإِنْ لَمْ يَجِدْ أَحَدُكُمْ إِلَّا لِحَاءَ عِنَبَةٍ أَوْ عُودَ شَجَرَةٍ فَلْيَمْضُغْهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা মুনযিরী ‘আত্ তার্গীব’ নামক গ্রন্থে বলেছেন যে, এ নিষেধাজ্ঞা বলতে এককভাবে শনিবারে সিয়াম পালন উদ্দেশ্য। যেমন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস অতিবাহিত হয়েছে যে, তোমাদের কেউ জুমার দিনের আগে কিংবা পরের একদিন সিয়াম পালন ব্যতীত শুধু জুমার দিন সিয়াম পালন করবে না।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এখানে নিষেধ দ্বারা এককভাবে জুমার দিন সিয়াম পালন উদ্দেশ্য। আর মূল উদ্দেশ্য হলো ইয়াহূদীদের বিপরীত করা।
উল্লেখ্য যে, ইয়াহূদীরা একক দিবসে সিয়াম পালন করত তা হলো শনিবার।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬৪-[২৯] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন সওম রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তার ও জাহান্নামের মধ্যে এমন একটা পরিখা আড় হিসেবে বানিয়ে দেবেন যা আসমান ও জমিনের মধ্যে দূরত্বের সমান হবে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ جَعَلَ اللَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ خَنْدَقًا كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ত্ববারানীর বর্ণনায় রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদরত অবস্থায়) সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নাম থেকে ১০০ বছরের দূরত্বে রাখবেন। আর ‘উলামাগণের কয়েকটি দল মতামত ব্যক্ত করেছেন যে, এ হাদীসগুলো জিহাদ অবস্থায় সিয়াম পালনের শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনার জন্য এসেছে। তিরমিযী ও অন্যান্য ইমাম এর উপর অধ্যায় এনেছেন। তবে একদল ‘উলামা বলেন যে, প্রতিটি সিয়ামই আল্লাহর রাস্তায়ই হবে, যদি তা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে।
‘আল্লামা ‘উবায়দুর রহমান মুবারাকপূরী বলেন, আমার নিকট প্রথম মতটি প্রাধান্যযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬৫-[৩০] ’আমির ইবনু মাস্’ঊদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঠাণ্ডা গনীমাত (অর্থাৎ- বিনা কষ্ট-ক্লেশে সাওয়াব পাওয়া) শীতের দিনে সওম পালন করা। [আহমদ ও তিরমিযী;[1] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি মুরসাল।]
وَعَنْ عَامِرِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْغَنِيمَةُ الْبَارِدَةُ الشِّتَاءِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ مُرْسل
ব্যাখ্যা: সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি গরমের তৃষ্ণা এবং বড়দিনের ক্ষুধার যন্ত্রণা ছাড়াই সিয়ামের পূর্ণ প্রতিদানের অধিকারী হবে (অর্থাৎ- গ্রীষ্মকালে সিয়াম পালন করতে অধিক গরমের তৃষ্ণা ও বড়দিনের ক্ষুধার যন্ত্রণা পেতে হয়, কিন্তু শীতকালে পেতে হয় না। যা জটিল কোন যুদ্ধ ছাড়াই গনীমাত পাওয়ার মতই)।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬৬-[৩১] আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস (তিরমিযী’র) কুরবানীর অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এমন কোন দিন নেই যা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।[1]
وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي هُرَيْرَةَ: «مَا مِنْ أَيَّامٍ أحب إِلَى الله» فِي بَاب الْأُضْحِية