পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - ফিত্বরার বর্ণনা
সূরাহ্ আল আ’লা- এর ১৪-১৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু ’উমার (রাঃ), ’আমর বিন ’আওফ (রাঃ) বলেছেন যে, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكّى এর زكاة দ্বারা উদ্দেশ্য زكاة الفطر (যাকাতুল ফিতর)। বাক্যাংশটি শুদ্ধরূপ হল صدقة الفطر (সদাক্বাতুল ফিতর)। আর এভাবেই সকল হাদীস সংকলনকারীগণ অধ্যায় রচনা করেছেন। তবে কোন কোন হানাফী লেখক সদাক্বাতুল ফিতর বলেছেন, যা সমাজে فِطْرَةٌ (ফিত্বরাহ্) হিসেবে প্রসিদ্ধ। এটি হয় জনসাধারণের ভুল বা এটি ফকীহদের নতুন একটি পরিভাষা যা তার মূল অর্থ ভিন্ন অন্য অর্থে ব্যবহৃত। কারণ ফিত্বরাহ্ শব্দের অর্থ স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। সদাক্বাতুল ফিতর ফরয হয়েছে ২য় হিজরীর রমাযান মাসে ঈদের ২ দিন পূর্বে। সদাক্বাতুল ফিতরের হুকুম নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম শাফি’ঈ, মালিক এবং আহমাদ (রহঃ)-এর মতে তা ফরয। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে তা ওয়াজিব। আর এক দলের মতে তা সুন্নাত। তবে সঠিক বক্তব্য হল আহলে ’ইলমগণ যার উপর একমত তথা সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। যদিও তারা তার ফরয নামকরণের বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। কিন্তু তা পরিত্যাগ করা অবশ্যই অবৈধ।
১৮১৫-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, ছোট-বড় সকলের জন্য এক সা’ খেজুর’, অথবা এক সা’ যব সদাক্বায়ে ফিত্বর ফরয করে দিয়েছেন। এ ’সদাক্বায়ে ফিত্বর’ ঈদুল ফিত্বরের সালাতে বের হবার আগেই আদায় করতে হুকুম দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَدَقَةِ الْفِطْرِ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ وَالذَّكَرِ وَالْأُنْثَى وَالصَّغِيرِ وَالْكَبِيرِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاس إِلَى الصَّلَاة
ব্যাখ্যা: যাকাতুল ফিত্বর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয করেছেন। এক সা' খেজুর অথবা এক সা‘ যব। গোলাম, আযাদ, নর-নারীর ওপর, ছোট ও বড় সকল মুসলিমদের ওপর।
উক্ত হাদীস হতে বুঝা যায় যে, ফিত্বরাহ্ ফরয ওয়াজিব নয়। ইমাম আবূ হানীফার মতে সেটা ওয়াজিব, ফরয নয়। ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদও আহলে যাহিরীদের নিকট সেটা ফরয। তারা সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্’র ৪৩ নং আয়াতঃ ‘‘তোমরা যাকাত দাও’’ হতে দলীল গ্রহণ করেন। যার পরিমাপ হিজাযী মাপে পাঁচ রিতিল ও এক রিতিলের এক-তৃতীয়াংশ।
আমাদের দেশে বর্তমান পরিমাপ আড়াই কেজি। এ পরিমাপ বর্ণনা করেছেন ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ এবং ইমাম আবূ হানীফার শাগরেদ ইমাম ও আবূ ইউসুফ। আর অর্ধ সা‘র কোন সহীহ হাদীস নেই।
প্রকাশ থাকে যে, গোলামের ওপর ফিত্বরাহ্ ফরয মানে মালিকের ওপর ফরয।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - ফিত্বরার বর্ণনা
১৮১৬-[২] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়) খাবার জিনিসের এক সা’ অথবা এক সা’ যব অথবা খেজুর অথবা এক সা’ পনির অথবা এক সা’ আঙ্গুর ’সদাক্বায়ে ফিতর’ আদায় করতাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَدَقَةِ الْفِطْرِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ أَو صَاعا من شعير أَو صَاعا من تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مَنْ أَقِطٍ أَوْ صَاعًا من زبيب
ব্যাখ্যা: আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) এর হাদীস হতে বুঝা যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগেও এক সা' ফিত্বরাহ্ আদায় করা হত খাদ্যদ্রব্য হতে। সহীহুল বুখারীর বর্ণনায় আছে, আমরা সেটা আদায় করতাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায়। বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে যে, আমরা সেটা বের করতাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কালে। আমরা যাকাতুল ফিত্বর বের করতাম আর আমাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন। আর এ কথা অসম্ভব যে, মু‘আবিয়ার কথায় লোকেরা আধা সা' গম ফিত্বরাহ্ দিতো। তাহলে আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী ও অন্যান্যরা মু‘আবিয়ার বিরোধিতা করতো। ক্বিয়াস করে অর্ধ সা' মেনে নিয়েছেন এ কথা ঠিক নয়।