পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৬-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আসতেন, সেদিন শেষ রাতে উঠে তিনি বাক্বী’তে (মদীনার কবরস্থান) চলে যেতেন। (ও স্থানে) তিনি বলতেন,

’’আস্‌সালা-মু ’আলায়কুম দা-রা ক্বওমিন মু’মিনীন, ওয়া আতা-কুম মা- তূ’ইদূনা গাদান মুআজ্জালূনা, ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লা-হিকূন, আল্ল-হুম্মাগফির লিআহলি বাক্বী’ইল গারক্বদ’’

(অর্থাৎ হে মু’মিনের দল! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদেরকে আগামীকালের (কিয়ামতের (কিয়ামতের)) যে প্রতিশ্রুতি (সাওয়াব অথবা শাস্তি) দেয়া হয়েছিল তা তোমরা কি পেয়ে গেছ? যে ব্যাপারে তোমাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল (ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত)। আর নিশ্চয়ই আমরাও আল্লাহ চাইলে তোমাদের সাথে মিলিত হবই। হে আল্লাহ! বাক্বী’ গারক্বদ্বাসীদেরকে মাফ করে দিন!)। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلَّمَا كَانَ لَيْلَتُهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ إِلَى الْبَقِيعِ فَيَقُولُ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَأَتَاكُمْ مَا تُوعِدُونَ غَدًا مُؤَجَّلُونَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأهل بَقِيع الْغَرْقَد» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم كلما كان ليلتها من رسول الله صلى الله عليه وسلم يخرج من اخر الليل الى البقيع فيقول: «السلام عليكم دار قوم مومنين واتاكم ما توعدون غدا موجلون وانا ان شاء الله بكم لاحقون اللهم اغفر لاهل بقيع الغرقد» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে শেষ রাতে দু‘আর ফাযীলাত ও কবর যিয়ারতের ফাযীলাত সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শেষাংশে বাক্বী‘তে যেতেন।

আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতের উদ্দেশে বাকীতে যেতেন।

কেউ কেউ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল যখন তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে রাত্রি যাপন করতেন, তখন রাতের শেষাংশে বাক্বী‘র উদ্দেশে বের হতেন। আর বাক্বী' হল- মদীনাবাসীদের কবরস্থান, যা অত্যন্ত প্রশস্ত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৭-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কবর যিয়ারতে আমি কি বলব? তিনি বললেন, তুমি বলবে,

’’আস্‌সালা-মু ’আলা- আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইয়ারহামুল্ল-হুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না- ওয়াল মুস্‌তা’খিরীনা, ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূন’’

(অর্থাৎ সালাম বর্ষিত হোক মু’মিন মুসলিমের বাসস্থানের অধিবাসীদের প্রতি! আর আল্লাহ আমাদের রহম করুন যারা প্রথমে চলে গেছে আর যারা পরে আসবে তাদের উপর, ইনশাআল্লাহ আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হব।)। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَيْفَ أَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ تَعْنِي فِي زِيَارَةِ الْقُبُورِ قَالَ: قُولِي: السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ للاحقون . رَوَاهُ مُسلم

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: كيف اقول يا رسول الله؟ تعني في زيارة القبور قال: قولي: السلام على اهل الديار من المومنين والمسلمين ويرحم الله المستقدمين منا والمستاخرين وانا ان شاء الله بكم للاحقون . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে কবরবাসীকে সালাম দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জানতে চাইলেন যে, হে আল্লাহর রসূল! আমি কবরস্থানে গিয়ে কিভাবে কবরবাসীকে সালাম প্রদান করব। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বলবে- اَلسَّلُامَ عَلى اَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُوْمِنِيْنَ অর্থাৎ সমস্ত মু’মিন মুসলিম ঘরবাসীর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এখানে নারীর ওপর পুরুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর যারা মৃত্যু দ্বারা আমাদের আগে কবরবাসী হয়েছে এবং যারা আমাদের পরে হবে তাদের সকলের প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা মৃত এবং যারা জীবিত সকলের ওপর আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক। এ হাদীস ঐ ব্যক্তির স্বপক্ষে দলীল, যে নারীর অধিকার রক্ষার্থে শর্তসাপেক্ষে তাদের কবর যিয়ারতকে বৈধ বলে থাকেন। অর্থাৎ এ হাদীস মহিলাদের কবর যিয়ারতকে জায়িয করেছে। এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে এবং এটা নাসায়ী ও বায়হাক্বীতেও বর্ণিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৮-[৭] মুহাম্মাদ ইবনু নু’মান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এ হাদীসের সানাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমু’আতে নিজ মাতা-পিতা অথবা তাদের দু’জনের বা একজনের কবর যিয়ারত করবে (সেখানে দু’আয়ে মাগফিরাত করবে) তাদের মাফ করে দেয়া হবে। (যিয়ারতকারী মাতা-পিতার সাথে) সদাচরণকারী হিসেবে গণ্য করা হবে। (বায়হাক্বী মুরসাল হাদীস হিসেবে শু’আবুল ঈমানে বর্ণনা করেন।)[1]

وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ النُّعْمَانِ يُرْفَعُ الْحَدِيثَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ زَارَ قَبْرَ أَبَوَيْهِ أَوْ أَحَدِهِمَا فِي كُلِّ جُمُعَةٍ غُفِرَ لَهُ وَكُتِبَ بَرًّا» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان مُرْسلا

وعن محمد بن النعمان يرفع الحديث الى النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من زار قبر ابويه او احدهما في كل جمعة غفر له وكتب برا» . رواه البيهقي في شعب الايمان مرسلا

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে মা-বাবার কবর যিয়ারতের ফাযীলাতের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

মুহাম্মাদ ইবনু নু‘মান ইবনু বাশীর ছিলেন একজন বিশ্বস্ত তাবি‘ঈ। তিনি সাহাবী রাবীকে মাঝখান থেকে বাদ দিয়ে অথবা অন্য কাউকে বাদ দিয়ে তিনি সরাসরি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ জাতীয় হাদীসকে হাদীসে মুরসাল বলা হয়।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রতি জুমু‘আর দিন বা প্রতি সপ্তাহে পিতা-মাতা দু’জনের অথবা এক জনের কবর যিয়ারত করে, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। অর্থাৎ তার সাগীরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। জুমু‘আর দিনের হাদীসকে আবূ বাকর (রাঃ) হতে ইবনু ‘আদী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস শক্তিশালী করেছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, من زار قبر والديه او احدهما يوم الجمعة অর্থাৎ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন মা-বাবা দু’জনের অথবা একজনের কবর যিয়ারত করে।

হাদীসে বলা হয়েছে كتب برا অর্থাৎ নেককার হিসেবে লেখা হয়। অর্থাৎ যে প্রতি জুমু‘আর দিনে মা-বাবার কবর যিয়ারত করে তার নাম নেককারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, প্রত্যেক জুমু‘আর দিন মা-বাবার কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব তথা উত্তম সাওয়াবের কাজ। যদিও হাদীসটি মুরসাল। আর এ ব্যাপারে যা কিছু বর্ণিত আছে, তার সবই দুর্বল।


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৬৯-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (এখন) তোমরা কবর যিয়ারত করবে। কারণ কবর যিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُزَهِّدُ فِي الدُّنْيَا وتذكر الْآخِرَة» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه

وعن ابن مسعود ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «كنت نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها فانها تزهد في الدنيا وتذكر الاخرة» . رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, কবর যিয়ারতের মধ্যে অনেক গুরুত্ব ও ফাযীলাত রয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, كنت نهيتكم عن زيارة القبور অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। অর্থাৎ আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশংকা করেছিলাম যে, তোমরা কবর যিয়ারত করতে গিয়ে জাহিলী যুগের কাজ করে ফেল। আর তা হল- কবরবাসীর কাছে ক্রন্দন করা এবং তার কাছে এমন কিছু উল্লেখ করা যা ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় উচিত নয়, এখন তোমাদের মাঝে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তোমরা আল্লাহভীরু হয়েছ। তাই এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর।

এ হাদীসের মধ্যে ناسخ তথা রহিতকারী ও منسوخ তথা যাকে রহিত করা হয়েছে এক সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ কবর যিয়ারতের আদেশ দ্বারা কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞাকে রহিত করা হয়েছে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কবর যিয়ারতের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া বিমুখ হয়। অর্থাৎ কবর যিয়ারতের মাধ্যমে দুনিয়া ত্যাগী হয়, দুনিয়ার প্রতি কোন লোভ, লালসা ও মোহ থাকে না। আর আখিরাতের কথা মনে করিয়ে দেয়। ক্ববরের পাশে দাঁড়ালে জীবিতদের চিন্তা আসে এক সময় আমার অবস্থাও এমন হবে। অর্থাৎ ক্ববরে চলে যেতে হবে। এ হাদীসটি ইবনু মাজাহতে উল্লেখ করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৭০-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী বেশী কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ। তিনি আরো বলেছেন, কোন কোন ’আলিমের ধারণা এ হাদীসটি কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ সময়ের। কিন্তু কবর যিয়ারতের অনুমতি দেবার পর পুরুষ মহিলা সকলেই এর মধ্যে গণ্য হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে কোন কোন ’আলিমের মতে, মহিলারা অপেক্ষাকৃত অধৈর্য, অসহিষ্ণু ও কোমলমতি বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সেখানে যাওয়া অপছন্দ করেছেন। তাই কবর যিয়ারতে যাওয়া মহিলাদের জন্য এখনো নিষিদ্ধ। ইমাম তিরমিযীর কথা পূর্ণ হলো।)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم لعن زوارات الْقُبُورِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح
وَقَالَ: قَدْ رَأَى بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنَّ هَذَا كَانَ قبل أَن يرخص النَّبِي فِي زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَلَمَّا رَخَّصَ دَخَلَ فِي رُخْصَتِهِ الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّمَا كَرِهَ زِيَارَةَ الْقُبُورِ لِلنِّسَاءِ لِقِلَّةِ صَبْرِهِنَّ وَكَثْرَةِ جَزَعِهِنَّ. تمّ كَلَامه

وعن ابي هريرة: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لعن زوارات القبور. رواه احمد والترمذي وابن ماجه وقال الترمذي هذا حديث حسن صحيح وقال: قد راى بعض اهل العلم ان هذا كان قبل ان يرخص النبي في زيارة القبور فلما رخص دخل في رخصته الرجال والنساء. وقال بعضهم: انما كره زيارة القبور للنساء لقلة صبرهن وكثرة جزعهن. تم كلامه

ব্যাখ্যা: বেশী বেশী কবর যিয়ারতের পরিণতি সম্পর্কে এ হাদীসে আলোকপাত করা হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারীকে লা‘নাত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, সম্ভবত এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, অধিক পরিমাণে কবর যিয়ারত করা।

আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এ লা‘নাত তাদের জন্য যারা বেশী বেশী কবর যিয়ারত করে। কেননা زوارات শব্দটি আধিক্যতার অর্থ প্রদান করে। তাই এ লা‘নাত ঐ সকল নারীর জন্য যারা বেশী বেশী করে কবর যিয়ারত করে। হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাতে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস হাসান ও সহীহ। তিনি আরো বলেন, কতিপয় ‘আলিম বলেন, এ অভিশাপ ছিল ইসলামের প্রথম দিকে। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী-পুরুষ সকলকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। তখন সেটা রহিত হয়ে গেছে।

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, বক্তারা দলীল পেশ করে যে, যিয়ারতের ক্ষেত্রে নারীদের সম্পৃক্ততা পুরুষের সাথে ব্যাপকতার ভিত্তিতে।

ইমাম বুখারী (রহঃ) স্বীয় গ্রন্থ সহীহুল বুখারীতে মহিলাদের কবর যিয়ারত নাজায়িয বলে প্রমাণ করেছেন। এ সংক্রান্ত হাদীস হল, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন এক মহিলার কাছ থেকে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় সে ক্ববরের পাশে বসে ক্রন্দন করছে। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর।

আল্লামা বাদরুদ্দীন আয়নী (রহঃ) বলেন, নারীদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করার কারণ হল, তাদের ধৈর্য শক্তি কম এবং তাদের দুঃখ প্রবণতা বেশী অর্থাৎ অল্পতে তারা ভেঙ্গে পড়ে। সর্বোপরি কথা হল যে, নারীদের জন্য কবর যিয়ারত করা বৈধ নয়। সুতরাং যাবতীয় ফিতনাহ্ (ফিতনা) থেকে ইসলামী সমাজকে রক্ষা করতে হলে এর উপর ‘আমল করতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবর যিয়ারত

১৭৭১-[১০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যখন সেই ঘরে প্রবেশ করতাম যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুয়ে আছেন তখন আমি আমার চাদর খুলে রাখতাম। আমি মনে মনে বলতাম, তিনি তো আমার স্বামী, আর অপরজনও আমার পিতা। কিন্তু যখন ’উমার (রাঃ) কে এখানে তাঁদের সাথে দাফন করা হলো, আল্লাহর কসম, তখন থেকে আমি যখনই ঐ ঘরে প্রবেশ করেছি, ’উমারের কারণে লজ্জায় শরীরে চাদর পেঁচিয়ে রেখেছি। (আহমাদ)[1]

وَعَن عَائِشَة قَالَتْ: كُنْتُ أَدْخُلُ بَيْتِيَ الَّذِي فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنِّي وَاضِعٌ ثَوْبِي وَأَقُولُ: إِنَّمَا هُوَ زَوْجِي وَأَبِي فَلَمَّا دُفِنَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مَعَهُمْ فَوَاللَّهِ مَا دَخَلْتُهُ إِلَّا وَأَنَا مَشْدُودَةٌ عَلَيَّ ثِيَابِي حَيَاء من عمر. رَوَاهُ أَحْمد

وعن عاىشة قالت: كنت ادخل بيتي الذي فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم واني واضع ثوبي واقول: انما هو زوجي وابي فلما دفن عمر رضي الله عنه معهم فوالله ما دخلته الا وانا مشدودة علي ثيابي حياء من عمر. رواه احمد

ব্যাখ্যা: এ হাদীস মহিলাদের কবরস্থানে প্রবেশ করা জায়িযের দলীল। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সেই ঘরে প্রবেশ করলেন যেই ঘরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার পিতা আবূ বাকর (রাঃ)-কে দাফন করা হয়েছিল। প্রবেশ করার পর তিনি উভয় ক্ববরের পাশে আলাদা আলাদাভাবে গেলেন। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরের পাশে গিয়ে বললেন, এটা আমার স্বামীর কবর। আবার আবূ বাকর (রাঃ)-এর ক্ববরের পাশে গিয়ে বললেন, এটা আমার পিতার কবর। এরপর ‘উমার (রাঃ)-কে তাদের দু’জনের সাথে দাফন করা হয়।

এ হাদীসের দাবী হল, কবর যিয়ারতের সময় মৃত ব্যক্তিকে অনুরূপ সম্মান করতে হবে যেমন তাকে তার জীবদ্দশায় সম্মান করা হত।

আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি এ কথার উপর দলীল যে, কবরবাসীকে সম্মান করা ওয়াজিব। প্রত্যেক ক্ববরের কাছে গমন করতে হবে তাদের দুনিয়ায় যে মর্যাদা ছিল তার ধারাবাহিকতার আলোকে। যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আগে গেলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরের পাশে। তারপর আবূ বাকর-এর ক্ববরের পাশে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে