পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৬৭-[২২] মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী চলবে জানাযার পশ্চাতে এবং পায়ে হাঁটা ব্যক্তিরা চলবে জানাযার সামনে পেছনে ডানে-বামে জানাযার কাছ ঘেষে। আর অকালে ভূমিষ্ট বাচ্চার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে, তাদের মাতা-পিতার জন্য মাগফিরাত ও রহমতের দু’আ করবে। (আবূ দাঊদ)[1]
ইমাম আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ-এর এক বর্ণনায় রাবী বলেছেন, আরোহীরা জানাযার পেছনে থাকবে। আর পায়ে চলা ব্যক্তিরা আগেপিছে যেভাবে পারে হাঁটবে। মৃত ছোট বাচ্চাদের জন্যও জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে হবে। মাসাবীহ হতে এ বর্ণনাটি মুগীরাহ্ ইবনু যিয়াদ বর্ণনা করেছেন।
وَعَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الرَّاكِبُ يَسِيرُ خَلْفَ الْجَنَازَةِ والماشي يمشي خلفهَا وأمامها وَعَن يَمِينهَا وَعَن يسارها قَرِيبا مِنْهَا وَالسَّقْطُ يُصَلَّى عَلَيْهِ وَيُدْعَى لِوَالِدَيْهِ بِالْمَغْفِرَةِ وَالرَّحْمَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَفِي رِوَايَةِ أَحْمَدَ وَالتِّرْمِذِيِّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه قَالَ: «الرَّاكِب خلف الْجِنَازَة وَالْمَاشِي حَيْثُ شَاءَ مِنْهَا وَالطِّفْلُ يُصَلَّى عَلَيْهِ» وَفِي المصابيح عَن الْمُغيرَة بن زِيَاد
ব্যাখ্যা: এ হাদীস প্রমাণ করে যে, বাহনের উপর সওয়ার হয়ে জানাযার সাথে চলা জায়িয, পক্ষান্তরে ১৬৮৬ নং হাদীসের সাথে এটা সাংঘর্ষিক। পরস্পর বিরোধী এ দু’ হাদীসের সমন্বয় সাধনে শায়খুল হাদীস ‘আল্লামা ‘আবদুর রহমান মুবারাকপূরী (রহঃ) বলেনঃ মুগীরাহ্ কর্তৃক বর্ণিত বাহনে চলা সংক্রান্ত হাদীসটি অসুস্থ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, লেংড়া, অন্ধ, প্রতিবন্ধী, মাজুর লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে সাওবান কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি সর্বসাধারণের জন্য প্রযোজ্য। অথবা সাওবানের হাদীস দ্বারা জানাযার ডানে বামে এবং আগে বা সামনে চলা বুঝানো হয়েছে যা নিষিদ্ধ, আর মুগীরার হাদীস দ্বারা পিছনে বা দূরে চলা বুঝানো হয়েছে যা বৈধ। অথবা মুগীরার হাদীস জায়িয মা‘আল কিরাহাত বুঝানোর জন্য বলা হয়েছে।
অত্র হাদীস থেকে আরো জানা যায় যে, পদব্রজে গমনকারী জানাযার সামনে পিছনে ডানে বামে চতুর্দিক দিয়ে চলতে পারে। কেউ যদি একান্তই বাহনে চলতে বাধ্য হয় তবে সে যেন বেশখানিক পিছনে চলে।
অকালপ্রসূত সন্তানের জানাযাহ্ আদায়ের বিষয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। জমহূরের মত হলো ভূমিষ্ট সন্তানের মধ্যে যদি (কান্না অথবা নড়াচড়ার মাধ্যমে) প্রাণের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার জানাযাহ্ আদায় করবে অন্যথায় নয়। (এর প্রমাণে তৃতীয় পরিচ্ছেদে ১৬৯১ হাদীসে বর্ণনা আসছে)।
পক্ষান্তরে ইমাম আহমাদ (রহঃ) অত্র মুত্বলাক্ব হাদীসের ভিত্তিতে বিনা শর্তে অকালপ্রসূত সন্তানের জানাযাহ্ বৈধ মনে করেন। চার মাস দশদিনে গর্ভস্থিত সন্তানের ভিতর রূহ্ প্রবিষ্ঠ করানো হয়। সুতরাং অকালে ভূমিষ্ট এ বয়সের সকল মৃত সন্তানেরই জানাযাহ্ আদায় করবে, চাই প্রাণের স্পন্দন প্রত্যক্ষ করুক অথবা না করুক।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৬৮-[২৩] যুহরী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেছেন সালিম (রহঃ) থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বকর, ’উমার (রাঃ) কে জানাযার আগে আগে হেঁটে চলতে দেখেছি। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেনঃ আহলুল হাদীসগণ যেন হাদীসটি মুরসাল মনে করেছেন [কিন্তু হাদীসটি সহীহ])[1]
وَعَنِ الزُّهْرِيِّ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ يَمْشُونَ أَمَامَ الْجَنَازَةِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ وَأَهْلُ الْحَدِيثِ كَأَنَّهُمْ يَرَوْنَهُ مُرْسَلًا
ব্যাখ্যা: পদব্রজে জানাযার আগে, পিছে, ডানে, বামে, সর্বদিক দিয়ে চলা বৈধ হলেও উত্তমের ব্যাপার নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। একদল বলেন- জানাযার আগে চলাই উত্তম, এ হাদীস তাদের দলীল। ইবনু কুদামাহ্ বলেন, অধিকাংশ আহলে ‘ইলম এ মতেরই অনুসারী ছিলেন। আবূ বকর, ‘উমার, ‘উসমান, আবূ হুরায়রাহ্, হাসান ইবনু ‘আলী, ইবনু যুবায়র, আবূ ক্বাতাদাহ্, আবূ উসায়দ প্রমুখ সহাবা (সাহাবা) ও তাবি‘ঈ এবং ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ থেকে এ সংক্রান্ত বর্ণনা রয়েছে। ইমাম বায়হাক্বী যিয়াদ ইবনু ক্বায়স থেকে মদীনার আনসার এবং মুহাজির সাহাবীদেরকে জানাযার সামনে চলতে দেখার প্রত্যক্ষ সাক্ষী পেশ করেছেন।
অন্য আরেকদলের বক্তব্য হলোঃ জানাযার পিছনে চলাই উত্তম। ইমাম আবূ হানীফাহ্ এবং আহলে জাহির এ মতের অনুসারী। সাহাবী ‘আলী, ইবনু মাস‘ঊদ, আবূ দারদাহ, ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) প্রমুখ এ বিষয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম আওযা‘ঈ এবং ইব্রা-হীম নাখ্‘ঈ এ মতেরই অনুসারী ছিলেন। এদের বলিষ্ঠ দলীল হলো এ হাদীসঃ ‘‘মুসলিমের হক হলো জানাযার ইত্তেবা করা’’। অর্থাৎ জানাযার পিছনে চলা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘‘সে (মুসলিম) যখন মারা যায় তুমি তার জানাযার অনুসরণ করো। অর্থাৎ পিছে চলো’’। সুতরাং এদের মতে পিছে চলাই উত্তম।
তৃতীয় মত হলোঃ আগে পিছে চলা উভয়-ই প্রশস্ততা রয়েছে। গমনকারী যেখান দিয়ে ইচ্ছা চলবে। ইমাম সাওরী এ মতের প্রবক্তা। ‘আবদুর রাযযাক ইবনু আবী শায়বাহ্ আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে এ সংক্রান্ত রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন। আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারাকপূরী (রহঃ) বলেন, ইমাম বুখারীর ঝোক এদিকেই।
চতুর্থ দলের মতেঃ পদব্রজে গমনকারীর আগে চলাই উত্তম আর আরোহীর জন্য পিছনে চলা উত্তম। ইমাম আহমাদ এ মত অবলম্বন করেছেন।
পঞ্চম মতঃ পঞ্চম মত অনেকটা চতুর্থ মতের মতই।
ষষ্ঠ মত হলোঃ জানাযার সন্নিকটে হলে আগে চলাই উত্তম অন্যথায় পিছনে চলবে। মিশকাতের ভাষ্যকার আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারাকপূরী (রহঃ) বলেন, আমার নিকট দ্বিতীয় মতটি গ্রহণযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৬৯-[২৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাশের অনুসরণ করতে হয়। লাশ কারো অনুসরণ করে না। যে ব্যক্তি জানাযায় লাশের আগে যাবে সে জানাযার সাথের লোক নয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, বর্ণনাকারী আবূ মাজিদ মাজহূল [অজ্ঞাত লোক]।)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْجَنَازَةُ مَتْبُوعَةٌ وَلَا تَتْبَعُ لَيْسَ مَعَهَا مَنْ تَقَدَّمَهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو ماجد الرَّاوِي رجل مَجْهُول
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে বুঝা যায় জানাযার আগে চলার নয় বরং পিছনে চলবে। যারা জানাযার পিছে চলার পক্ষপাতি তারা এ হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু মুহাদ্দিসীনদের বক্তব্য হলো এ হাদীসে নির্দেশ নেই। এটা স্বাভাবিক অবস্থা বা প্রচলিত নিয়মের কথা বলা হয়েছে যা মানুষ সচরাচর করে থাকে। জানাযাহ্ নিয়ে রওনা হলে সচরাচার মানুষ তার পিছনেই চলে থাকে। এ সম্পর্কে পূর্বের হাদীসে কিঞ্চিত আলোচনা হয়ে গেছে। উপরন্তু হাদীসটি সহীহ নয়, বিধায় তা দলীলের যোগ্য নয়। ইমাম বুখারী, ইমাম আত্ তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু ‘আদী, বায়হাক্বী প্রমুখ মুহাদ্দিস ও হাদীসের ভাষ্যকারগণ এ হাদীসটিকে য‘ঈফ বলেছেন।
এ হাদীসের অন্যতম রাবী আবূ মাজিদ আল হানাফী তিনি মুহাদ্দিসগণের নিকট মাজহূল, মুনকার ও মাতরূক ব্যক্তি, সুতরাং তার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭০-[২৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জানাযার অনুসরণ করেছে এবং জীবনে তিনবার জানাযার লাশ বহন করেছে সে এ ব্যাপারে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন করেছে। (তিরমিযী; তিনি [তিরমিযী] বলেছেন, হাদীসটি গরীব।)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: من تبع جَنَازَة وحلمها ثَلَاثَ مَرَّاتٍ: فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ مِنْ حَقِّهَا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: ‘সে তার হক আদায় করল’ বলতে জানাযার হক আদায় করল। তার অর্থনৈতিক কোন ঋণের হক নয়। এমনকি কোন গীবত করে কারো হক নষ্ট করলে সে হকও আদায় হবে না। বরং মু’মিন মু’মিনের প্রতি যে হক ছিল। যেমন- দেখা হলে সালাম করা, অসুস্থ হলে রোগ সেবা করা, মৃত্যু হলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা; সেই মৃত্যুউত্তর জানাযার হক সে আদায় করল।
এ হাদীসের রাবী আবূ মিহযাম-এর আসল নাম হলো ইয়াযীদ ইবনু সুফ্ইয়ান; শু‘বাহ্ তাকে দুর্বল বলেছেন। সে এমন তাকে দু’টো টাকা দিলে সত্তরটি হাদীস শুনাবে। ইমাম বুখারী তাকে দুর্বল জানেন। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেছেনঃ তিনি মুনকার হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম নাসায়ী বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস। ইবনু মু‘ঈনও তাকে য‘ঈফ বলেছেন, আরেকবার বলেছেন, তিনি কিছুই না। ইমাম দারাকুত্বনী বলেন, তিনি দুর্বল ও মাতরূক বা বর্জিত ব্যক্তি।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭১-[২৬] আর শারহুস্ সুন্নাহ্’য় বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর লাশ দু’ কাঠের মাঝে ধরে বহন করেছেন।[1]
وَقَدْ رَوَى فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ» : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَمَلَ جَنَازَةَ سَعْدِ ابْن معَاذ بَين العمودين
ব্যাখ্যা: জানাযার খাটিয়া বহন মুসলিমের হক বা অবশ্য করণীয় দায়িত্ব।
ইমাম শাফি‘ঈ খাটিয়ার সামনে পিছনে এবং মাঝ বরাবর স্থানে কাঁধ লাগিয়ে বহন করাকে সুন্নাত মনে করেন।
ইমাম মালিক বলেন, লোকেরা যেভাবে সুবিধা ও ভাল মনে করে সেভাবেই বহন করবে।
ইবনু কুদামাহ্ চার পায়া বিশিষ্ট খাটিয়ার চার কোনায় চারজন ধরা বা বহন করাই সুন্নাত মনে করেন। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এরও এটাই মত।
এরপর খটিয়া কয় পায়া বিশিষ্ট হবে কে ডান কাঁধে নিবে কে বাম কাঁধে এর বিস্তারিত বর্ণনা দেখতে চাইলে আল মুগনী কিতাব দেখুন।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭২-[২৭] সাওবান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একদিন) এক ব্যক্তির জানাযাহ্ সালাতের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম। তিনি কিছু লোককে আরোহী অবস্থায় দেখে বললেন, তোমাদের কি লজ্জাবোধ হচ্ছে না? আল্লাহর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) নিজেদের পায়ে হেঁটে চলেছেন, আর তোমরা পশুর পিঠে বসে যাচ্ছ? (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম আবূ দাঊদ ও ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি সাওবান থেকে মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।)[1]
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ فَرَأَى نَاسًا رُكْبَانًا فَقَالَ: «أَلَا تَسْتَحْيُونَ؟ إِنَّ مَلَائِكَةَ اللَّهِ عَلَى أَقْدَامِهِمْ وَأَنْتُمْ عَلَى ظُهُورِ الدَّوَابِّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَرَوَى أَبُو دَاوُدَ نَحْوَهُ وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: وَقد روى عَن ثَوْبَان مَوْقُوفا
ব্যাখ্যা: জানাযার খাটিয়ার সাথে শব যাত্রায় মালায়িকাহ্ পদব্রজে চলে থাকে, সুতরাং মানুষের উচিত বাহনে চড়ে না চলা। ইতিপূর্বে এতদসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়ে গেছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭৩-[২৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পাঠ করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ عَلَى الْجَنَازَةِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: জানাযার সালাতে (প্রথম তাকবীর দিয়েই) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে। এ হাদীসটিতে সানাদ দুর্বলতা রয়েছে, কিন্তু এ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে সহীহুল বুখারীতে বিশুদ্ধ সানাদে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীস বিদ্যমান থাকায় ঐ দুর্বলতা দূর হয়ে গেছে। এছাড়াও বহু রকমের হাসান সহীহ রিওয়ায়াতে জানাযায় সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের কথা বলা হয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে ১৬৩৯ নং হাদীসে হয়ে গেছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭৪-[২৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের সময় মৃত ব্যক্তির জন্য খালেস অন্তরে দু’আ করবে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: সালাতুল জানাযার উদ্দেশ্য যেহেতু মাইয়্যিতের জন্য সুপারিশ এবং মাগফিরাত কামনা, সুতরাং তা পূর্ণমাত্রায় ইখলাসের সাথে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইখলাস পূর্ণ দু‘আ-ই কবূল হয়। ইমাম শাওকানী বলেনঃ এ হাদীস প্রমাণ করে যে, প্রচলিত যে দু‘আ আছে এর দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং নির্দিষ্ট করবে না বরং অনেক দু‘আ পড়বে। মুসল্লীগণ নেক্কার বদকার সকলের জন্যই খালেস অন্তরে দু‘আ করবে। যারা পাপী তারা তো আরো অধিক দু‘আর এবং শাফা‘আতের মুহতাজ।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭৫-[৩০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তখন বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মাগ ফিরলি হাইয়্যিনা-, ওয়া মাইয়্যিতিনা-, ওয়া শা-হিদিনা-, ওয়া গ-য়িবিনা-, ওয়া সগীরিনা-, ওয়া কাবীরিনা-, ওয়া যাকারিনা-, ওয়া উনসা-না-, আল্ল-হুম্মা মান আহ্ ইয়াইতাহু মিন্না- ফা আহয়িহী ’আলাল ইসলা-ম, ওয়ামান তাওয়াফ্ ফায়তাহূ মিন্না- ফাতা ওয়াফফাহূ ’আলাল ঈ-মান, আল্ল-হুম্মা লা- তাহরিমনা- আজরাহূ, ওয়ালা- তাফতিন্না বা’দাহ্’’
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত-অনুপস্থিত, ছোট-বড়, নর-নারীগণকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাদেরকে তুমি জীবিত রাখবে তাদেরকে তুমি ইসলাম ধর্মের উপর জীবিত রাখ। আর যাদের মৃত্যুদান করবে তাদের ঈমানের উপর মৃত্যুদান করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে মৃত ব্যক্তির সাওয়াব হতে বঞ্চিত করো না এবং এরপর আমাদেরকে বিপদাপন্ন করো না।)। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى عَلَى الْجَنَازَةِ قَالَ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا. اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِيمَانِ. اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلَا تَفْتِنَّا بَعْدَهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু‘আ ‘‘হে আল্লাহ! আমাদের ছোটদের ক্ষমা করো’’। প্রশ্ন হলো ক্ষমা প্রার্থনা তো অপরাধের পর। ছোটদের তো কোন অপরাধ-ই নেই, তাহলে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কিসের এবং কেন? এর উত্তরে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, শিশুর জন্য মাগফিরাতের দু‘আ তাদের মর্যাদা সমুন্নত করার জন্য বিবেচিত হবে। ইমাম ত্বহাবী (রহঃ) বলেন; লাওহে মাহফূজে তাদের ভাগ্যলিপির ভিত্তিতে তাদের জন্য মাগফিরাত কার্যকর হবে।
لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَه ‘‘তার আজুরা বা সাওয়াব থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না’’, এর ব্যাখ্যা হলোঃ মু’মিন মু’মিনের ভাই, ভাইয়ের মৃত্যুতে অপর ভাই ব্যথাতুর ও মুসীবাতগ্রস্ত হয়। এ সময় তাকে ধৈর্য ধারণ করতে হয় যার বিনিময়ে রয়েছে সাওয়াব ও আজুরা।
সুতরাং হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এ সাওয়াব ও আজুরা দান থেকে বঞ্চিত করো না। আর মৃত্যুর পর আমরা ধৈর্যহীন হয়ে, ঈমানহীন হয়ে যেন ফিৎনার মধ্যেও নিপতিত না হই।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭৬-[৩১] ইমাম নাসায়ী, ইব্রাহীম আল আশহালী হতে, তিনি তার পিতা হতে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি, ’’ওয়া উনসা-না-’’ পর্যন্ত তার কথা শেষ করেছেন- আর আবূ দাঊদের বর্ণনায়, ’’ফাআহয়িহী ’আলাল ঈমা-ন ওয়াতা ওয়াফফাহূ ’আলাল ইসলা-ম, ওয়ালা- তুযিল্লানা- বা’দাহু’’ উল্লেখ আছে।[1]
وَرَوَاهُ النَّسَائِيُّ عَنْ إِبْرَاهِيمَ الْأَشْهَلِيِّ عَنْ أَبِيهِ وانتهت رِوَايَته عِنْد قَوْله: و «أنثانا» . وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ: «فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِيمَانِ وَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِسْلَامِ» . وَفِي آخِرِهِ: «وَلَا تُضِلَّنَا بعده»
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের অন্যতম রাবী আবূ ইব্রা-হীম আল আশহাল তার নাম পরিচয় সম্পর্কে ইমাম আত্ তিরমিযী তার উস্তায ইমাম বুখারীকে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে চেনেননি।
এতদবর্ণনা সম্বলিত হাদীস সুনানে নাসায়ী ও আবূ দাঊদে বিদ্যমান, কিন্তু এতে শব্দের অগ্রপশ্চাৎ এবং শব্দ পার্থক্য রয়েছে। এ বর্ণনায় অর্থাৎ নাসায়ীর বর্ণনায় أنثانا শব্দ ব্যবহার হয়েছে। আর আবূ দাঊদের বর্ণনায় فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِيمَانِ وَتَوَفَّه عَلَى الْإِسْلَامِ ব্যবহার হয়েছে। ফাতহুল অদূদ গ্রন্থে আত্ তিরমিযীর বর্ণনাটি অধিক প্রসিদ্ধ, আর তা হলোঃ
فَأَحْيِه عَلَى الْإِسْلَامِ وَتَوَفَّه عَلَى الْإِيمَانِ তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো এবং ঈমানের উপর মৃত দিও। এটাই যথার্থ ও বাস্তব সম্মত, কেননা ইসলাম হলো প্রকাশ্য আরকানসমূহকে ধারণ করার নাম আর এটা হায়াতের জীবনেই পালন করতে হয়। আর ঈমানটা হলো বাতিনীয় বা গোপনীয় বিষয় যা বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত যা মৃতকালে কাম্য।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেনঃ উভয়ভাবেই পড়া যায় তবে প্রসিদ্ধ পদ্ধতিতে পড়াই উত্তম। কেউ কেউ বলেছেন, যারা ঈমান আর ইসলামের মধ্যে কোন পার্থক্য মনে করেন না তাদের দিকে খেয়াল রেখেই বলা হয়েছে। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, فَأَحْيِه عَلَى الْإِسْلَامِ বাক্যটিই সুসাব্যস্ত এবং অধিকাংশের মতও এটাই।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭৭-[৩২] ওয়াসিলাহ্ ইবনুল আসক্বা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে একজন মুসলিম ব্যক্তির জানাযাহ্ সালাতে ইমামাত করলেন। আমরা তাঁকে (এ সালাতে) পড়তে শুনেছি,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্না ফুলা-ন ইবনু ফুলা-ন ফী যিম্মাতিকা, ওয়া হাবলি জাওয়া-রিকা ফাক্বিহী মিন ফিতনাতিল কবরি ওয়া ’আযা-বিন্না-র, ওয়া আনতা আহলুল ওফা-য়ি ওয়াল হাক্কি, আল্ল-হুম্মাগফির লাহূ ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আনতাল গফূরুর রহীম’’
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! অমুকের ছেলে অমুককে তোমার যিম্মায় ও তোমার প্রতিবেশীসুলভ নিরাপত্তায় সোপর্দ করলাম। অতএব তুমি তাকে কবরের ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও জাহান্নামের ’আযাব থেকে রক্ষা করো। তুমি ওয়া’দা রক্ষাকারী ও সত্যের অধিকারী। হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও, তার উপর রহমত বর্ষণ করো, তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াময়।)। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنَّ فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ فِي ذِمَّتِكَ وَحَبْلِ جِوَارِكَ فَقِهِ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ وَأَنْتَ أَهْلُ الْوَفَاءِ وَالْحَقِّ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: মাইয়্যিতের জন্য দু‘আর সময় তার নাম এবং তার পিতার নাম ধরে দু‘আ করা বৈধ। তবে এ কাজ প্রসিদ্ধ ব্যক্তির জন্যই কেবল প্রযোজ্য।
নাম বলতে গিয়ে অমুকের পুত্র তোমার যিম্মায় এর অর্থ হলো তোমার হিফাযাত ও তোমার প্রতিশ্রুত নিরাপত্তায়। حَبْلِ অর্থ العهد মানে হিফাযাত, তোমার হিফাযাতের স্কন্ধে পেশ করলাম। জমহূর মুফাস্সিরীন এর দ্বারা কিতাবুল্লাহকে বুঝিয়েছেন। কেউ কেউ নৈকট্যের পথও বুঝিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭৮-[৩৩] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের ভাল গুণগুলোই আলোচনা করো, তাদের খারাপ গুণ বা কাজগুলোর আলোচনা হতে বিরত থাকো। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اذْكُرُوا مَحَاسِنَ مَوْتَاكُمْ وَكُفُّوا عَنْ مُسَاوِيهِمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: মৃত ব্যক্তির খারাপ গুণগুলো আলোচনা করা জায়িয নয়, কেবল ভাল গুণগুলোই আলোচনা করতে হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ- ‘‘তোমরা মৃত ব্যক্তির ভাল গুণগুলো আলোচনা করো’’, এ ‘আমর’ বা নির্দেশ মুস্তাহাব অর্থে, আর খারাপ গুণ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার নির্দেশটি ওয়াজিব অর্থে ব্যবহার হবে।
রাবীদের দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা সকল ‘আলিমের ঐকমত্যে জায়িয। কাফির ফাসিকদের দোষ-ত্রুটিও তাদের অনিষ্টতা থেকে সতর্ক থাকার লক্ষ্যে আলোচনা করা বৈধ। ফাসিক্ব বলতে যে বিদ্‘আতে লিপ্ত থাকে এবং (তাওবাহ্ না করে) ঐ অবস্থায় মারা যায়। তবে যে ব্যক্তি বিদ্‘আত ব্যতীত অন্যান্য ফাসিক্বী কাজ পুনঃপুন করে এ রকম ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি আলোচনায় যদি মুসলেহাত বা কল্যাণ থাকে তাহলে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা বৈধ।
জীবন্ত ব্যক্তির গীবত করার চেয়ে মৃত ব্যক্তির গীবত করা গুরুতর অপরাধ। কারণ জীবিত ব্যক্তির নিকট থেকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ থাকে, কিন্তু মৃত ব্যক্তির নিকট থেকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ নেই।
‘আলিমগণ বলেছেন, মৃতকে গোসলদানকারী যদি এমন কিছু দেখে যা তাকে অভিভূত করেছে, যেমন তার মুখ উজ্জ্বল হওয়া, তার শরীর থেকে সুগন্ধি বের হওয়া ইত্যাদি তবে তা অন্যের নিকট প্রকাশ করা মুস্তাহাব। পক্ষান্তরে খারাপ কিছু দেখলে তা প্রকাশ করা হারাম।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৭৯-[৩৪] নাফি’ আবূ গালিব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সাথে এক জানাযায় (’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর) সালাত আদায় করেছি। তিনি [আনাস (রাঃ)] (জানাযার) মাথার বরাবর দাঁড়ালেন। এরপর লোকেরা কুরায়শ বংশের এক মহিলার লাশ নিয়ে এলেন এবং বললেন, হে আবূ হামযাহ্ (এটা আনাসের ডাক নাম) এর জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে দিন। (এ কথা শুনে) আনাস (রাঃ) খাটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে জানাযার সালাত আদায় করে দিলেন। এটা দেখে ’আলা ইবনু যিয়াদ বললেন, আপনি কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবে দাঁড়িয়ে সালাতে জানাযাহ্ আদায় করতে দেখেছেন, যেভাবে আপনি এ মহিলার সালাত মাঝখানে দাঁড়িয়ে ও পুরুষটির জানাযাহ্ মাথার কাছে দাঁড়িয়ে পড়ালেন? আনাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ দেখেছি। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম আবূ দাঊদ এ হাদীসটিকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে, ’’মহিলার জানাযায় তার খাটের মধ্যভাগে দাঁড়িয়েছিলেন’’ উল্লেখ করেছেন।)[1]
وَعَنْ نَافِعٍ أَبِي غَالِبٍ قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَلَى جَنَازَةِ رَجُلٍ فَقَامَ حِيَال رَأسه ثمَّ جاؤوا بِجَنَازَةِ امْرَأَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَقَالُوا: يَا أَبَا حَمْزَةَ صَلِّ عَلَيْهَا فَقَامَ حِيَالَ وَسَطِ السَّرِيرِ فَقَالَ لَهُ الْعَلَاءُ بْنُ زِيَادٍ: هَكَذَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ على الْجِنَازَة مَقَامَكَ مِنْهَا؟ وَمِنَ الرَّجُلِ مَقَامَكَ مِنْهُ؟ قَالَ: نَعَمْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ نَحْوُهُ مَعَ زِيَادَةٍ وَفِيهِ: فَقَامَ عِنْد عجيزة الْمَرْأَة
ব্যাখ্যা: মহিলার জানাযায় ইমাম সাহেব লাশের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে, আর পুরুষের মাথা বরাবর। এ বিষয়ে ১৬৪৩ নং হাদীসে আলোচনা হয়ে গেছে।