পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৩৮-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করবে, কারণ সাদা কাপড়ই সবচেয়ে ভাল। আর মুর্দাকে সাদা কাপড় দিয়েই কাফন দিবে। তোমাদের জন্য সুরমা হলো ’ইসমিদ’ কারণ এ সুরমা ব্যবহারে তোমাদের চোখের পাপড়ি নতুন করে গজায় ও চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাদা রং এর কাপড় সাধারণ পরিধান ও কাফনের জন্য হলো উত্তম ও মুস্তাহাব বা ভালো কাপড়; যেহেতু সাদা রং এর কাপড় অন্য রং এর কাপড় চেয়ে অধিক পবিত্র ও উত্তম। এই জন্য যে তাতে রয়েছে সুন্দরতা ও উৎকৃষ্টতা। এবং এই কাপড়কে অধিক পবিত্র এই জন্য বলা হয় যে, এই কাপড়ে কোন প্রকার মাটি বা ময়লা অথবা কোন প্রকার অপবিত্র বস্তু লাগলে, তা সহজই স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। এবং তা ধৌত করে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করা হয়; তাই সাদা রং এর কাপড় বেশি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকে।
২। এই হাদীসটির দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, সাদা রং এর কাপড়ের বিষয়ে পুরুষের বিধান নারীর বিধানের মতই; তাই এই বিষয়ে পুরুষ ও নারীদের বিধানের মধ্যে কোনো পার্থক্যের কোন সহীহ হাদীস বা দলিল নেই। যে ব্যক্তি পার্থক্যের দাবী করবে, তার জন্য প্রমাণ বা সহীহ হাদীস অথবা দলিল উপস্থাপন করা অপরিহার্য হয়ে যাবে।
আর এই বিধানের ক্ষেত্রে নারীরা হলো পুরুষদের মতই। তাই এই বিষয়ে মহান আল্লাহ পুরুষদের জন্য যে বিধান সাব্যস্ত করেছেন, নারীদের জন্য সেই বিধান প্রযোজ্য। তবে যদি নারীদেরকে সেই সাধারণ বিধান থেকে আলাদা করার কোন দলিল থাকে, তাহলে সেটা হবে স্বতন্ত্র বিষয়।
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْبَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمُ الْبَيَاضَ فَإِنَّهَا مَنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ وَمِنْ خَيْرِ أَكْحَالِكُمُ الْإِثْمِدُ فَإِنَّهُ يُنْبِتُ الشّعْر ويجلوا الْبَصَر» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীস প্রমাণ করে সাদা কাপড় পরিধান করা এবং মৃত ব্যক্তিকে কাফন দেয়া মুস্তাহাব। ইমাম শাওকানী বলেন, হাদীসে সাদা কাপড়ের বিষয়টি ওয়াজিব না বরং ভাল।
ইসমিদঃ প্রসিদ্ধ কালো পাথর যা হতে সুরমা তৈরি করা হয়।
মুল্লা ‘আলী আলী ক্বারী বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে রাত্রিতে ঘুমের সময় সুরমা ব্যবহার করা উত্তম। আমি (ভাষ্যকার) বলি, আহমাদের অন্য বর্ণনায় এ শব্দে এসেছে,
(خَيْرِ أَكْحَالِكُمُ الْإِثْمِدُ فَإِنَّه يُنْبِتُ الشِّعْرَ وَيَجْلُوا الْبَصَرَ)
আর ঘুমের সময় তোমাদের সুরমা জাতীয় জিনিস সমূহের মধ্যে ‘ইসমিদ’ই হল উত্তম। কেননা তা কেশ জন্মায় এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৩৯-[৬] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাফনে খুব বেশী মূল্যবান কাপড় ব্যবহার করবে না। কারণ এ কাপড় খুব তাড়াতাড়ি ছিঁড়ে যায়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَغَالَوْا فِي الْكَفَنِ فَإِنَّهُ يُسْلَبُ سَلْبًا سَرِيعًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, কাফনের মধ্যম পন্থা অবলম্বন করাই মুস্তাহাব এবং উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৪০-[৭] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো তখন তিনি নতুন কাপড় আনালেন এবং তা পরিধান করলেন। তারপর বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মুর্দাকে (হাশ্রের (হাশরের) দিন) সে কাপড়েই উঠানো হবে, যে কাপড়ে সে মৃত্যুবরণ করে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّهُ لَمَّا حَضَرَهُ الْمَوْتُ. دَعَا بِثِيَابٍ جُدُدٍ فَلَبِسَهَا ثُمَّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُولُ: «الْمَيِّتُ يُبْعَثُ فِي ثِيَابِهِ الَّتِي يَمُوتُ فِيهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এ হাদীস অন্য হাদীসের সাথে দ্বন্দ্ব দেখা যায় (يُحْشَرُ النَّاسُ حُفَاةً عُرَاةً) মানুষ হাশরে উঠবে খালি পায়ে এবং উলঙ্গ অবস্থায়। অনেকে জবাব দিয়েছেন পুনঃ উঠার বিষয়টি হাশর ব্যতিরেকে (بَعْثُ) যা উঠার বিষয়টি মৃত্যুকে কবর হতে বের করা আর হাশর হল ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) আঙ্গিনায় একত্রিত করা।
ফলে পুনরুত্থান হবে কাপড় পরিধান অবস্থায় আর হাশর হবে উলঙ্গ অবস্থায় তবে মুহাক্কিক মুহাদ্দিসরা বলেছেন, কাপড় শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ ‘আমল যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ ‘‘তোমার ‘আমলকে পরিশুদ্ধ কর’’- (সূরাহ্ আল মুদ্দাস্সির ৭৪ : ৪)।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৪১-[৮] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেছেনঃ সবচেয়ে উত্তম ’কাফন’ হলো ’’হুল্লাহ্’’, আর সর্বোত্তম কুরবানীর পশু হলো শিংওয়ালা দুম্বা। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خَيْرُ الْكَفَنِ الْحُلَّةُ وَخَيْرُ الْأُضْحِيَةِ الْكَبْشُ الْأَقْرَنُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ‘হুল্লাহ্’ বলতে ইয়ামান দেশীয় জোড়া যাতে একটি লুঙ্গি ও চাদর থাকে এক জাতীয়। মদ্য কথা ‘হুল্লাহ্’ হল দু’কাপড় এক কাপড়ের চেয়ে উত্তম আর তিন কাপড় হল কাফনের জন্য আরও উত্তম ও পরিপূর্ণ।
কারও মতে ইয়ামীন চাদর দ্বারা কাফন দেয়া উচিত, কেননা তাতে লাল অথবা সবুজ ডোরা দাগ রয়েছে। মাজহার বলেন, এ হাদীসের আলোকে কতক ইমাম এ ইয়ামানী চাদরকে পছন্দ করছেন। আর সঠিক কথা হল সাদা কাপড়ই উত্তম। ইতিপূর্বে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের আলোকে।
কুরবানীতে শিংওয়ালা দুম্বা উত্তম। উদ্দেশ্য হল মহিলা দুম্বার চেয়ে পুরুষ দুম্বা উত্তম অথবা শিংওয়ালা দুম্বা কুরবানী করা উত্তম ভাগে কুরবানী করা উট ও গরু হতে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৪২-[৯] তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে।[1]
وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ عَنْ أَبِي أُمَامَةَ
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৪৩-[১০] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের ’শাহীদদের’ শরীর থেকে লোহা, (হাতিয়ার, শিরস্ত্রাণ) চামড়া ইত্যাদি (যা রক্তমাখা নয়) খুলে ফেলার ও তাদেরকে তাদের রক্ত ও রক্তমাখা কাপড়-চোপড়সহ দাফন করতে নির্দেশ দেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَتْلَى أُحُدٍ أَنْ ينْزع عَنْهُم الْحَدِيدُ وَالْجُلُودُ وَأَنْ يُدْفَنُوا بِدِمَائِهِمْ وَثِيَابِهِمْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্য মতে শাহীদ ব্যক্তিদেরকে গোসল দেয়া হবে না। আর শাহীদদেরকে গোসল দেয়া হবে না। এ সংক্রান্ত অনেক হাদীস রয়েছে যা ইবনু তায়মিয়্যাহ্ মুনতাকা কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং শাওকানী নায়লুল আওতারে। হাদীস আরো প্রমাণ করে, শাহীদ ব্যক্তিকে যে কাপড়ে নিহত হয়েছেন ঐ কাপড়েই কাফন সম্পন্ন করতে হবে এবং তার কাছ হতে লৌহ বস্ত্র ও চর্মবস্ত্র ও যুদ্ধের সরঞ্জাম খুলে নিতে হবে। ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন, ‘আবদুল্লাহ বিন সা‘লাবাহ্ হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উহুদের যুদ্ধে তাদেরকে (শাহীদেরকে) তাদের কাপড়েই আবৃত কর।