পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৪৪-[১১] সা’দ ইবনু ইব্রাহীম হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা ইব্রাহীম হতে বর্ণনা করেছেন যে, একবার ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) সওম রেখেছিলেন। (সন্ধ্যায়) তাঁর খাবার আনানো হলো। তিনি বললেন, উহুদ যুদ্ধের শাহীদ মুস্’আব ইবনু ’উমায়র (রাঃ)আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। কিন্তু তাঁকে শুধু একটি চাদর দিয়ে দাফন করা হয়েছিল। এটা এমনই খাটো ছিল যে, যদি মাথা ঢাকা হত পা খুলে যেত আর পা ঢাকা হলে মাথা খুলে যেত। (সর্বশেষে [চাদর দিয়ে] তার মাথা ঢেকে পাগুলোর উপর ’ইযখির’ [ঘাস] দেয়া হয়েছিল।) (হাদীসের রাবী) ইব্রাহীম বলেন, আমার মনে হয় ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ এ কথাও বলেছেন, (উহুদের) আরেক শাহীদ হামযাহ্ও আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। (মুস্’আব-এর মতো) তাঁরও এক চাদরে দাফন নাসীব হয়েছিল। (এখন মুসলিমদের দরিদ্র আল্লাহর ফযলে দূর হয়েছে) আমাদের জন্য এখন দুনিয়া বেশ প্রশস্ত হয়েছে, যা দৃশ্যমান। অথবা তিনি বলেছেন, ’’দুনিয়া এখন আমাদেরকে এতই পর্যাপ্ত পরিমাণে দেয়া হয়েছে যে, আমার ভয় হয় আমাদের নেক কাজের বিনিময় ফল আমরা মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই পেয়ে যাই কিনা। অতঃপর ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ কাঁদতে লাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত সামনের খাবারই ছেড়ে দিলেন। (বুখারী)[1]
عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ أُتِيَ بِطَعَامٍ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ: قُتِلَ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّي كُفِّنَ فِي بُرْدَةٍ إِنْ غُطِّيَ رَأْسُهُ بَدَتْ رِجْلَاهُ وَإِنْ غُطِّيَ رِجْلَاهُ بَدَا رَأْسُهُ وَأَرَاهُ قَالَ: وَقُتِلَ حَمْزَةُ وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّي ثُمَّ بُسِطَ لَنَا مِنَ الدُّنْيَا مَا بُسِطَ أَوْ قَالَ: أُعْطِينَا مِنَ الدُّنْيَا مَا أُعْطِينَا وَلَقَدْ خَشِينَا أَنْ تَكُونَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ لَنَا ثُمَّ جَعَلَ يَبْكِي حَتَّى تَرَكَ الطَّعَامَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, কাফন হবে মূল মালের সকল মাল হতে না এক তৃতীয়াংশ হতে এটা জমহূর ‘উলামার বক্তব্য কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুস্‘আব ও হামযাহ্ (রাঃ)-কে তাদের চাদর দিয়ে কাফনের কাজ সম্পনণ করেছেন আর তিনি জরিমানা বা ওয়াসিয়্যাহ্ বা উত্তরাধিকারের দিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি সকল কিছুর পূর্বে কাফনের কাজ শুরু করেছেন। সুতরাং জানা গেল কাফনের কাজ সর্বাগ্রে প্রাধান্য পাবে এবং তা হবে মূল সম্পদ হতে।
হাদীসে আরও শিক্ষণীয় যে, দুনিয়া বিমুখিতার ফাযীলাত আর দীনের সম্মানিত ব্যক্তির উচিত দুনিয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা হতে নিজেকে বিরত রাখবে যাতে পুণ্যে ঘাটতি না আসে আর এদিকে ‘আবদুর রহমানের বক্তব্য ইঙ্গিত করে, (خَشِينَا أَنْ تَكُونَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ) আমরা ভয় পাচ্ছি যে, আমাদের নেক ‘আমলের প্রতিফল আমাদেরকে আগেভাগে দুনিয়াতে দেয়া গেল নাকি? হাদীসে আরো শিক্ষণীয় যে, নেককার লোকদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করা উচিত বিশেষ করে দুনিয়ার প্রতি তাদের স্বল্প আগ্রহ এবং আখিরাতে ভয়ে তাদের কাঁদা।
হাদীসে আর প্রমাণিত হয় যে, স্বচ্ছলতার উপর দরিদ্রতার প্রাধান্য দেয়া ‘ইবাদাতের জন্য নিঃসঙ্গতাকে প্রাধান্য উপার্জনের উপর, কেননা ‘আবদুর রহমান খাদ্য গ্রহণ করা হতে বিরত থেকেছেন অথচ সওমরত ছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৪৫-[১২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুনাফিক্ব দলপতি ’আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে কবরে নামাবার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি তাকে কবর থেকে উঠাবার নির্দেশ দিলেন। কবর থেকে উঠাবার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে তাঁর দু’হাঁটুর উপর রাখলেন। নিজের মুখের পবিত্র থুথু তার মুখে দিলেন। নিজের জামা তাকে পরালেন। জাবির (রাঃ) বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ’আব্বাস (রাঃ)-কে তার নিজের জামা পরিয়েছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أُبَيٍّ بَعْدَمَا أُدْخِلَ حُفْرَتَهُ فَأَمَرَ بِهِ فَاخْرُج فَوَضعه على رُكْبَتَيْهِ ن فَنَفَثَ فِيهِ مِنْ رِيقِهِ وَأَلْبَسَهُ قَمِيصَهُ قَالَ: وَكَانَ كسا عباسا قَمِيصًا الْمَشْي بالجنازة وَالصَّلَاة عَلَيْهَا
ব্যাখ্যা: উপরে উল্লেখিত হাদীসটি সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থের হাদীসের বিরোধিতা করছে যেমন ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত (لما مات عبد الله بن أبي جاء ابنه فقال: يا رسول الله، أعطني قميصك أكفنه فيه، فأعطاه قميصه) যখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেল তার ছেলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন, বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জামাটি দিন তা দ্বারা আমার পিতার কাফন দিব। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জামা তাকে দিলেন।
জাবির (রাঃ)-এর হাদীস কবর হতে উঠার পর জামা প্রদান আর অন্যান্য হাদীসে যেমন ইবনু ‘উমারের হাদীসে আগেই বর্ণনা। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ইবনে উবাই এই ব্যক্তি মুনাফিক্বের নেতা ছিল জাহিলী যুগে খাযরাজ গোত্রের নেতা ছিল। এই ব্যক্তি ‘আয়িশাহ্ সিদ্দীক্বা (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে ইফকের ঘটনা প্ররোচনাকারী, সে বলেছিল আমরা যদি মদীনায় প্রত্যাবর্তন করি তবে সেখান হতে সবল অবশ্যই দুর্বলকে বহিষ্কৃত করবে। সে আরও বলেছিল لَا تُنْفِقُوا عَلى مَنْ عِنْدَ رَسُولِ اللّهِ حَتّى يَنْفَضُّوْا ‘‘যারা আল্লাহর রসূলের সাহচর্যে আছে তাদের জন্য ব্যয় করো না’’- (সূরাহ্ আল মুনাফিকূন ৬৩ : ৭)।
আর সে উহুদের যুদ্ধে এক তৃতীয়াংশ সৈন্য নিয়ে মদীনায় ফিরেছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হবার পর। ওয়াকিদী বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে উবাই শাও্ওয়ালের শেষের দিকে এসে অসুস্থ হয়েছিল আর যুলক্বাদা মাসের নবম হিজরীতে মৃত্যুবরণ করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধ হতে ফেরার পর তার রোগ ছিল বিশ দিন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে এসেছিলেন তার মু’মিন ছেলে ‘আবদুল্লাহ বিন উবাই-এর আহবানে তার নাম ছিল হুবাব। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখেন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) পিতার নামানুসারে তিনি মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবী ছিলেন অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফাতে ইয়ামামার যুদ্ধে শাহীদ হন। মানুষের মধ্যে সবচেয়ে তিনি পিতার বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন, যদি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিতেন তাহলে তার পিতাকে তিনি হত্যা করতেন।
উপরে উল্লেখিত হাদীসটি সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কামীস তথা জামা ক্ববরে রাখার পর দিয়েছেন। অথচ এর বিপরীত বুখারী মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসে প্রমাণ করে (لَمَّا مَاتَ عَبْدُ اللهِ بْنِ أبَي جَاءَ ابْنُه فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ، أَعْطِنِيْ قَمِيْصك أُكَفِّنُه فِيْهِ، فَأَعْطَاهُ قَمِيْصُه) ইবনে ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস যখন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বিন উবাই মৃত্যুবরণ করল তার ছেলে আসলো (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে)। অতঃপর বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জামাটি দিন তা দিয়ে তার (আমার পিতার) কাফনের ব্যবস্থা করব তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার জামা প্রদান করলেন।
জবাবে বলা হয়েছে, প্রথমে তার জামার মধ্যে হতে কোন জামা দিয়েছেন, পরে দ্বিতীয়বার আবার জামা দেয়েছেন অথবা মৃত্যুর প্রথম সময়ে আবেদন করেছিল কিন্তু তা প্রদান করতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেরী করেছেন এমনকি ক্ববরে তাকে প্রবেশ করা হয়েছিল।
হাদীসে প্রমাণিত হয়, কবর হতে মৃত বক্তিকে প্রয়োজনে উঠা যায় আর কামীসে কাফন বৈধ তথা নিষেধ না চাই তা সেলাইকৃত হোক বা না হোক। বুখারীতে জিহাদ অধ্যায়ে এসেছে, জাবির (রাঃ) হতে বাদ্র (বদর) যুদ্ধে ‘আব্বাস কাফির অবস্থায় মুসলিমদের হাতে বন্দী হয় আর তার শরীরে জামা ছিল না। অতঃপর তার জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা তালাশ করলেন। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই জামা পাওয়া গেল যা তার শরীরের সাথে খাপ খেয়েছে। সুতরাং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বদলা স্বরূপ ‘আবদুল্লাহ বিন উবাইকে জামা দিয়েছিলেন।
ইবনু ‘উআয়নাহ্ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর ‘আবদুল্লাহ বিন উবাই-এর অনুগ্রহ ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চান তা বদলা দিতে যাতে সেই মুনাফিক্বের কোন অনুগ্রহ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবশিষ্ট না থাকে।
কারও মতে তার ছেলের সম্মানার্থে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন, তিনি খাঁটি মুসলিম এবং মুনাফিক্ব হতে মুক্ত ছিলেন। কারও মতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কোন সায়েলকে ফিরিয়ে দেন না।
জ্ঞাতব্যঃ মহিলাদের শারী‘আত সম্মত কাফন হল পাঁচটি লুঙ্গি, চাদর, ওড়না ও দু’টি লিফাফ তথা আবরণ। যা বর্ণিত আহমাদ ও আবূ দাঊদে লায়লা বিনতু কায়ফ আস্ সাকাফী, তিনি বলেন আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ে উমুন কুলসুমকে গোসল দিচ্ছিলাম তার মৃত্যুর পর।
আমাদেরকে প্রথমে লুঙ্গি এরপর চাদর, অতঃপর ওড়না, অতঃপর লিফাফ দিলেন, সবশেষে আমি আরেকটি কাপড় দিয়ে ঢাকলাম। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে দরজায় বললেন, তাকে কাফন দাও আর তিনি একটা একটা করে কাপড় দিলেন। অন্য বর্ণনায় উম্মু ‘আতিয়্যাহ্ বলেন আমরা তাকে পাঁচটি কাপড়ে কাফন দিয়েছি। তাকে ওড়না পেচিয়েছি যেমনিভাবে জীবিতদের দেই।
হাফিয ইবনে হাজার বলেন, এ অতিরিক্ত বাক্য বিশুদ্ধ। ইবনু মুনযির বলেন, অধিকাংশ ‘উলামাদের মতে মহিলাদের কাফন পাঁচটি যেমন শাবী, নাখ্‘ঈ, আওযা‘ঈ, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক আবূ সাওর। ইবনু কুদামাহ্ বলেন, আমাদের অধিকাংশ সাথী ও অন্যান্যদের অভিমত মহিলাদের কাফন পাঁচটি। লুঙ্গি, চাদর ওড়না ও দু’টি লিফাফ আর এটা সহীহ লায়লা বিনতু কায়ফ ও উম্মু ‘আত্বিয়্যার হাদীসের আলোকে।