পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
’মৃত্যুর গোসল ও কাফন দান’ তথা তার হুকুম আহকাম ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা। জ্ঞাতব্য যে মৃত ব্যক্তি গোসলের হুকুম সম্পর্কে মতানৈক্য রয়েছে।
জমহূরদের মতে মৃত ব্যক্তিকে গোসলদান করা ফারযে কিফায়াহ্ জীবিতদের ওপর। আর এ ব্যাপারে মালিকীদের মাঝে মতভেদ রয়েছে তাদের কেউ বলেছে ওয়াজিব। জমহূরদের মতে আবার কেউ বলেছে সুন্নাতে কিফায়াহ্। এরূপ মতভেদ ইবনু রুশদ বিদায়াতে ও হাফিয ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন।
ওয়াজিব এর স্বপক্ষে দলীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম মৃত্যু ব্যক্তির ব্যাপারে বলেছেন(اغسلوه) তাকে গোসল দান করা আর আগত উম্মু ’আত্বিয়্যার হাদীস (اغسلنها) তোমরা তাকে গোসল করাবে।
আমি (ভাষ্যকার) বলি, মৃতদের গোসলের বিষয়টি এই শারী’আতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় এমনটি শোনা যায়নি যে, শাহীদ ব্যতিরেকে কেউ মৃত্যুবরণ করেছে আর তার গোসল করা হয়নি। বরং এই শারী’আতে মৃত্যুদের গোসল আমাদের পিতা আদম (আঃ) হতে প্রমাণিত।
মুসতাদরাক হাকিম-এর বর্ণনায় উবাই ইবনে কা’ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যখন আদম (আঃ) মারা গেলেন তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) বেজোড়ভাবে গোসল করালেন পানি দ্বারা এবং তার জন্য লাহদ কবরের ব্যবস্থা করলেন এবং মালায়িকাহ্ বললেন, এটা আদম সন্তানদের সুন্নাহ।
আর মতানৈক্য রয়েছে মৃত ব্যক্তির গোসল কি ’ইবাদাত না শুধুমাত্র ময়লা হতে পরিষ্কার। প্রসিদ্ধ মত জমহূরের নিকট গোসল হল এটা ’ইবাদাত। এতে শর্তারোপ করা হয় যা শর্ত করা ওয়াজিব ও মানদুব গোসলে।
১৬৩৪-[১] উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (যায়নাবকে) গোসল করাচ্ছিলাম। এ সময় তিনি আমাদের কাছে এলেন। তিনি বললেন, তোমরা তিনবার, পাঁচবার, প্রয়োজন বোধ করলে এর চেয়ে বেশী বার; পানি ও বরই পাতা দিয়ে তাকে গোসল দাও। আর শেষ বার দিকে ’কাফূর’। অথবা বলেছেন, কাফূরের কিছু অংশ পানিতে ঢেলে দিবে, গোসল করাবার পর আমাকে খবর দিবে। তাঁকে গোসল করাবার পর আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর দিলাম। তিনি এসে তহবন্দ বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, এ তহবন্দটি তাঁর শরীরের সাথে লাগিয়ে দাও। আর এক বর্ণনার ভাষা হলো, তাকে বেজোড় তিন অথবা পাঁচ অথবা সাতবার (পানি ঢেলে) গোসল দাও। আর গোসল ডানদিক থেকে উযূর জায়গাগুলো দিয়ে শুরু করবে। তিনি (উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্) বলেন, আমরা তার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে পেছনের দিকে ছেড়ে দিলাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ غُسْلِ الْمَيِّتِ وَتَكْفِيْنِه
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نُغَسِّلُ ابْنَتَهُ فَقَالَ: اغْسِلْنَهَا ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكِ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَاجْعَلْنَ فِي الْآخِرَةِ كَافُورًا أَوْ شَيْئًا مِنْ كَافُورٍ فَإِذَا فَرَغْتُنَّ فَآذِنَّنِي فَلَمَّا فَرَغْنَا آذناه فَألْقى إِلَيْنَا حقوه وَقَالَ: «أَشْعِرْنَهَا إِيَّاهُ» وَفِي رِوَايَةٍ: اغْسِلْنَهَا وِتْرًا: ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا وَابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا وَمَوَاضِعِ الْوُضُوءِ مِنْهَا . وَقَالَتْ فَضَفَّرْنَا شَعَرَهَا ثَلَاثَةَ قُرُونٍ فألقيناها خلفهَا
ব্যাখ্যা: (دَخَلَ عَلَيْنَا) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মহিলা দলে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় তাঁর কন্যাদের গোসল দিচ্ছিলাম। আর প্রসিদ্ধ হল তার মেয়ে যায়নাব যিনি আবিল ‘আস বিন রবী‘আহ্-এর স্ত্রী ও উমামাহ্-এর মা। যেমন মুসলিমের বর্ণনা উম্মু ‘আত্বিয়াহ্ বলেন, যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ে যায়নাব মারা গেলেন (اغْسِلْنَهَا) তাকে গোসল দান ইবনু বাযীযাহ্ প্রমাণ করেন এতে যে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ওয়াজিব। তবে ইবনু দাকীক বলেন, তিনবার ধৌত করা প্রসিদ্ধ মতে ওয়াজিব না। ‘উলামাদের মতে, তিন বার পাঁচবার ধৌত করা। নাসায়ীর বর্ণনা, (اغْسِلْنَهَا وِتْرًا: ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا) গোসল দান কর বেজোড়ভাবে তিনবার অথবা পাঁচ বার। ইমাম নাবাবী বলেন, গোসল দান কর তাকে বেজোড়ভাবে আর তা যেন তিনবার হয়, এরপরেও যদিও প্রয়োজন হয় তাহলে পাঁচবার। মোদ্দাকথা হল, বেজোড় উদ্দেশ্য আর তিনবার করা মুস্তাহাব। আর যদি তিনবার দিয়ে পরিষ্কার হয় তাহলে অতিরিক্ত করা শারী‘আত অনুমোদন করেননি। আর অতিরিক্ত যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তা যেন বেজোড় হয়।
ইবনে ‘আরাবী বলেন, অথবা পাঁচবার এতে ইঙ্গিত বহন করে শারী‘আত সম্মত হল বেজোড়। কেননা বলা হয়েছে তিন হতে পাঁচ আর চার হতে বিরত থাকা হয়েছে।
(أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذلِكِ) ‘‘এটা অপেক্ষা অধিকবার’’ হাদীস প্রমাণ করে মৃত ব্যক্তিকে গোসলের ব্যাপারে কোন সীমানা নির্ধারণ নেই বরং উদ্দেশ্য পরিষ্কারকরণ তবে অবশ্যই বেজোড়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
বরই দ্বারা বরই পাতা উদ্দেশ্য আর হিকমাহ্ হল বরই পাতা ময়লাকে সমূলে উৎপাটিত করে এবং চামড়াকে পরিচ্ছন্ন করে।
কুরতুবী বলেন, বরই পাতা পানিতে মিশাবে তা যেন ফুটন্ত পর্যন্ত থাকে এবং তা দ্বারা শরীর ঘষবে অতঃপর তার উপর বিশুদ্ধ পানি ঢালবে। এটা প্রথম গোসল বা ধৌত। কারও মতে বরই পাতা পানিতে নিক্ষেপ করবে যাতে পানির সাথে না মিশে যাতে পানির সাধারণ রং পরিবর্তন হয় (আহমাদ বিন হাম্মাল এমনটি অপছন্দ করেছেন)।
কারও মতে প্রথমবার শুধুমাত্র পানি দ্বারা গোসল এবং দ্বিতীয়বার পানি ও বরইপাতাসহ কেননা প্রথম ধৌত ফরয আর তা যেন শুধুমাত্র পানি দ্বারা হয় এর পরে না হয় তা হয় পরিষ্কার করা উদ্দেশ্য সুতরাং অতিরিক্ত যা মিশানো হয় তা ক্ষতি না।
কারও মতেঃ প্রথমবার পানি ও বরই পাতা সহকারে অতঃপর শুধুমাত্র পানি। তবে আমাদের নিকট অধিকতর গ্রহণযোগ্য হল প্রত্যেক বারই পানি ও বরই পাতা সহকারে ধৌত করবে আর পানি যেন বরই পাতাকে নিয়ে ফুটন্ত হয়। কেননা আবূ দাঊদে গৃহীত সানাদে ইবনে সিরীন তিনি উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ হতে বর্ণনা করেন গোসলের বিষয়টি প্রথম দু’বার বরই পাতা সহকারে গোসল দান করবে।
তৃতীয়বার পানি ও কাফুর দিয়ে। শেষবার কাফুর মিশানোর হিকমাহ্ হল কেননা কাফূর স্থানে সুগন্ধি ছড়ায় বিশেষ করে মালায়িকার মধ্যে থেকে যারা যেখানে উপস্থিত থাকে আরও অন্যন্য যারা থাকে তাদের জন্য। তাছাড়া এটা ঠান্ডা ও শুষ্ক রাখতে বাস্তবায়নকারী বিশেষ করে লাশকে মজবুত রাখে এবং বিষাক্ত কীটকে দূরীভূত করে রাখে আর লাশকে দ্রুত নষ্ট হওয়া হতে বাধা দান করে আর এ ব্যাপারে শক্তিশালী সুগন্ধ।
(فَألْقى إِلَيْنَا حقوه) অতঃপর তিনি তার লুঙ্গি ছুঁড়ে দিলেন। হাদীসে পুরুষের কাপড় দিয়ে মহিলাদের কাফন দেয়া বৈধতা প্রমাণ করে। আর ইবনু বাত্তাল বর্ণনা করেছেন এ ব্যাপারে সবাই ঐকমত্য।
(اغْسِلْنَهَا وِتْرًا: ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا) অন্য রিওয়ায়াতে রয়েছে গোসলদান করবে তিনবার অথবা পাঁচবার অথবা সাতবার। হাদীসে দৃশ্যত সাতের অধিকবার করা বৈধ না, কেননা পবিত্রতার গণনার সবশেষ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে তবে বুখারী ও মুসলিমের এবং অন্যান্য বর্ণনায় প্রয়োজনে অতিরিক্ত ধৌতের ব্যাপারে অনুমোদন রয়েছে।
আয়নী বলেন, মৃত ব্যক্তির উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সুন্নাহ যেমন জীবিত অবস্থায় গোসলে, তবে কুলি ও নাকে পানি দেয়া ব্যতিরেকে। কেননা তা কঠিন নাক ও মুখ হতে পানি বের করা। ইবনু কুদামাহ্ মুগনীতে বলেনঃ তাকে (মৃত ব্যক্তিকে) উযূ করানো সালাতের উযূর মতো দু’ হাতের তালু ধৌত করাবে, অতঃপর খসখসে কাপড়ের টুকরো নিবে তা ভিজাবে এবং তা আঙ্গুলে নিয়ে দাঁত ও নাক মাসাহ করবে যাতে তা পরিষ্কার হয় তবে খুব নরমভাবে করবে, অতঃপর তার চেহারা ধৌত করাবে এবং উযূ সম্পূর্ণ করাবে। আর তিনি বলেন, মুখে ও নাকের ছিদ্রতে পানি ঢুকাবে না অধিকাংশ আহলে ‘ইলমের মতে।
আর শাফি‘ঈ বলেন, কুলি ও নাকে পানি দিবে জীবিত ব্যক্তির মতো।
(فَضَفَّرْنَا شَعَرَهَا ثَلَاثَةَ قُرُونٍ) আমরা তার চুলকে তিনটি বেনীতে ভাগ করলাম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, মাথার অগ্রভাগের চুলকে একটি বেনীতে আর মাথার দু’ পাশে চুলকে দু’ বেনীতে করেছি। অপর এক বর্ননায় এসেছে, আমরা তা চুলকে চিরুণি দিয়ে অাঁচড়ালাম, অতঃপর তিনটি বেনীতে ভাগ করলাম। ইমাম শাফি‘ঈ এতে দলীল গ্রহণ করেছেন এবং তার সাথে যারা ঐকমত্য হয়েছেন যে, মৃত মহিলার চুলকে সুবিন্যস্ত করা এবং তিনটি ভাগে বেনী করা এবং পিছনদিকে ছড়িয়ে দেয়া। আর আয়নী বলেন যে, দু’টি বেনী করে বুকের উপর দিয়ে জামার উপর ছড়াবে। আবার কেউ বলেন, চুল ওড়নার নীচে দু’ জনের মাঝ দিয়ে দু’পাশে সকল চুল ছড়াবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৩৫-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিন কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। যা সাহূলিয়্যাহ্ সাদা সূতি কাপড় সাদা ইয়ামানী। এতে কোন সেলাই করা কুর্তা ছিল না, পাগড়ীও ছিল না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ غُسْلِ الْمَيِّتِ وَتَكْفِيْنِه
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُفِّنَ فِي ثَلَاثَةِ أَثْوَابٍ يَمَانِيَّةٍ بِيضٍ سَحُولِيَّةٍ مِنْ كُرْسُفٍ لَيْسَ فِيهَا قَمِيصٌ وَلَا عِمَامَة
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনটি ইয়ামানী সাহূলিয়্যাহ্ সাদা সুতী কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। তিনটি কাপড়ের ব্যাপারে ত্ববাক্বাত ইবনু সা‘দ-এ রয়েছে লুঙ্গি, চাদর এবং লিফাফাহ্। আর যারা বলেন, সাতটি কাপড়ে কাফন দেয়া হবে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তারা আহমাদে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করছেন,
علي بن أبي طالب: أن النبي - ﷺ - كفن في سبعة أثواب.
‘আলী বিন আবী ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাতটি কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছে হাদীসের জবাবে বলা হয়েছে হাদীসের সানাদে খুব দুর্বল রাবী রয়েছেন।
হাকিম বলেন মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত যেমন আলী, ইবনু ‘আব্বাস, ইবনু ‘উমার, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনটি সাদা কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছে আর যেখানে জামা এবং পাগড়ী ছিল না।
সাহূলী একটি গ্রামের নাম। সেই গ্রামের দিকে সম্বোধন করে সাহূলিয়্যাহ্ বলা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৩৬-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন তোমাদের কোন ভাইকে কাফন দিবে তখন উচিত হবে উত্তম কাফন দেয়া। (মুসলিম)[1]
بَابُ غُسْلِ الْمَيِّتِ وَتَكْفِيْنِه
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا كَفَّنَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فليحسن كَفنه» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ইমাম নাবাবী বলেন, উত্তম কাফন বলতে সাদা, কাফন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পুরু কাপড়। তুরবিশতী বলেনঃ হাদীসের অর্থ হল মুসলিম ব্যক্তি তাই মৃত্যু ভাইয়ের জন্য এমন কাফনের কাপড় পছন্দ করবে যা পরিপূর্ণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর উত্তম দ্বারা এমনটি উদ্দেশ্য না যেমনটি অপচয়কারীরা করে থাকে দামী কাপড় যা লোক দেখানো উদ্দেশ্য মূলত শারী‘আত পক্ষ হতে তা নিষিদ্ধ।
জাবির (রাঃ) উপরোল্লিখিত হাদীস মুসলিম ইমাম মুসলিম পূর্ণভাবে উল্লেখ করেছেন,
وَهُوَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ خَطَبَ يَوْمًا، فَذَكَرَ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِه قُبِضَ فَكُفِّنَ فِىْ كَفَنٍ غَيْرِ طَائِلٍ، وَقُبِرَ لَيْلًا، فَزَجَرَ النَّبِيُّ ﷺ أَنْ يُقْبَرَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ حَتّى يُصَلّى عَلَيْهِ، إِلَّا أَنْ يُضْطَرَّ إِنْسَانٌ إِلى ذلِكَ، وَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: إِذَا كَفَّنَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ، فَلْيُحَسِّنْ كَفَنَه. (رواه مسلم)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ্ প্রদান করেছিলেন, অতঃপর সাহাবীদের এক ব্যক্তি মারা গেছেন উল্লেখ করা হল এবং তার কাফনও হয়েছে খুব সাধারণভাবে তথা সাধারণ কাফনে এবং দাফন হয়েছে রাত্রিতে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সংবাদে ধমক দিয়েছেন রাত্রি দাফনের জন্য তবে যদি মানুষেরা অপারগ না হয়। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তেমাদের কেউ যখন তার ভাই কাফন দিবে তা যেন উত্তমভাবে দেয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন
১৬৩৭-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি (হাজ্জের সময়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলেন। তার উটটি (তাকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে) তার ঘাড় ভেঙে দিলো। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও। আর তাকে তার দু’টি কাপড় দিয়ে কাফন দাও। তার গায়ে কোন সুগন্ধি লাগিও না, তার মাথাও ঢেক না। কারণ তাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন ’লাব্বায়ক’ বলা অবস্থায় উঠানো হবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
মুস্’আব ইবনু ’উমায়র (রাঃ)-এর নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কিত খব্বাব (রাঃ)-এর হাদীসটি আমরা অচিরেই ’’সাহাবীগণের মর্যাদা’’ অধ্যায়ে উল্লেখ করব ইনশা-আল্ল-হ।
بَابُ غُسْلِ الْمَيِّتِ وَتَكْفِيْنِه
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا كَانَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَقَصَتْهُ نَاقَتُهُ وَهُوَ مُحْرِمٌ فَمَاتَ ن فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْهِ وَلَا تَمَسُّوهُ بِطِيبٍ وَلَا تُخَمِّرُوا رَأْسَهُ فَإِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْم الْقِيَامَة ملبيا»
وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ خَبَّابٍ: قَتْلُ مُصْعَبِ بْنِ عُمَيْرٍ فِي بَابِ جَامِعِ الْمَنَاقِبِ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
ব্যাখ্যা: (اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ) তাকে গোসল দান কর পানি ও বরই পাতা সহকারে। এতে দলীল প্রমাণ করে মৃত ব্যক্তিকে গোসলদান ওয়াজিব।
(وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْهِ) তাকে কাফন দাও দু’ কাপড়ে তথা তার লুঙ্গি ও চাদর দিয়ে যা সে পরিধান করেছিল ইহরামে। আর এতে তথা কাফনে বেজোড় শর্ত না। আর ইতিপূর্বে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে তিন তা ওয়াজিব না। বরং তা মুস্তাহাব। এটা জমহূরের বক্তব্য তবে এমন একটি কাফন হওয়া প্রয়োজন যা সমস্ত শরীরকে আবৃত করে।
আর হাদীসটিকে দলীল হিসেবে প্রমাণ করেন শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক, সাওরী এবং ‘আত্বা যে যখন মুহরিম ব্যক্তি মারা যান তিনি ইহরামের হুকুমেই থাকেন এজন্য তার মাথা ঢাকা যাবে না এবং সুগন্ধি লাগানো যাবে না এবং ইহরামের দু’ কাপড় দিয়ে কাফন করা হবে।
আর এ ব্যাপারে বিরোধিতা করেছেন মালিক ও আবূ হানীফাহ্ তারা দলীল পেশ করেছেন (إَذَا مَاتَ ابْنُ آدَمَ انْقَطَعَ عَمَلُه) যখন মানুষ মারা যাবে তার ‘আমল বন্ধ হয়ে যায় এর জবাবে বলা হয়েছে তার ইহরামের কাপড় দিলে কাফন করা তা জীবিতাবস্থার ‘আমল মৃত্যুর পরে গোসল ও তার ওপর জানাযাহ্ আদায়ের মতো।
আর হানাফী ও মালিকী বা ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীসের জবাবে বলেছেন, সম্ভবত ঐ মুহরিম ব্যক্তির জন্য খাস যার ব্যাপারে আল্লাহ ওয়াহী করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানিয়েছেন। সুতরাং বিষয়টি নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ‘আমভাবে না।
‘আবদুল হাই কা‘নাবী জবাবে বলেছেন, তালবিয়াহ্ পড়তে পড়তে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে উঠা এটি খাস নয় বরং ‘আম প্রত্যেক মুহরিম ব্যক্তির জন্য এমন কেননা এভাবে হাদীসের শব্দ এসেছে, (يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلى مَا مَاتَ عَلَيْهِ) প্রত্যেক বান্দা এভাবে উঠবে, যে যেভাবে মারা গেছে। (মুসলিম)