পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬২১-[৬] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির শেষ কথা, ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (دَخَلَ الْجَنَّةَ) জান্নাতে প্রবেশ করবে খাস করে শাস্তির পূর্বে অথবা তাকে তার পাপনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে তার পরে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তবে প্রথমটিই বেশি প্রাধান্য অন্য মু’মিনের সাথে পার্থক্য সৃষ্টির জন্য যাদের শেষ বাক্য এই কালিমা ছিল না যেমনটি মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেছেন।
ইবনে রাসলান বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের বিষয়টি যদি সে পাপী হয় এবং তাওবাকারী না হয় তাহলে প্রথমবারেই (জান্নাতে প্রবেশ) আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন অথবা শাস্তির পরে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। দ্বিতীয়তঃ সম্ভাবনা রয়েছে তার শেষ বাক্য কালিমার জন্য সম্মান স্বরূপ তাকে ক্ষমা করে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যা অন্য মু’মিন ব্যক্তির ক্ষেত্রে শেষ বাক্য কালিমা পড়ার তাওফীক হয়নি। আমি ভাষ্যকার এর নিকট দ্বিতীয় মতটিই গ্রহণযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬২২-[৭] মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মৃত ব্যক্তির সামনে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়ো। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «اقرؤوا سُورَةَ (يس)
عَلَى مَوْتَاكُمْ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: اقرؤوا سُورَةَ (يس) عَلى مَوْتَاكُمْ তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তির সামনে সূরাহ্ ইয়াসীন পড় মৃত ব্যক্তি বলতে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে বা মৃত্যুর সময়, কেননা মৃত ব্যক্তির ওপর কুরআন পড়া হয় না বা বৈধ না। বলা হয়ে থাকে সূরাহ্ ইয়াসীন এজন্য পড়া হয়। কেননা সূরাহ্ ইয়াসীনে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ও পুনরুত্থানের মূল ‘আক্বীদার বিষয়গুলো রয়েছে তা শুনলে ঈমান ও বিশ্বাসের চেতনা আরো বেশী দৃঢ় হয়।
উল্লেখিত মা‘ক্বিল বিন ইয়াসার বর্ণিত হাদীসটি (لقنوا موتاكم لا إله إلا الله) ‘‘তোমরা তোমাদের মৃত্যু আসন্ন ব্যক্তিদেকে তালকীন করবে।’’ হাদীসের মতঃ আর এও সম্ভাবনা রয়েছে কারও মতে ক্ববরের নিকট পড়া প্রথমটিই বেশি গ্রহণযোগ্য কতকগুলো কারণে।
প্রথমতঃ (لقنوا موتاكم لا إله إلا الله) ‘‘তোমরা তোমাদের আসন্ন মৃত্যু ব্যক্তিদের তালকীন করবে (لا إله إلا الله) এর সাদৃশ্যতুল্য।
দ্বিতীয়তঃ মুমূর্ষু ব্যক্তি বা আসন্ন মৃত ব্যক্তি এ সূরার মাধ্যমে উপকৃত হয়, কেননা এতে তাওহীদ আখিরাতে এবং জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে তাওহীদবাদদের জন্য আর ঈর্ষা রয়েছে যে ব্যক্তি এর উপর মৃত্যুবরণ করছে তার বক্তব্য يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُكْرَمِيْنَ হায় আফসোস আমার জাতিরা যদি জানতে পারত যে আমার প্রভু আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সুতরাং রূহ সুসংবাদ পায় তার দ্বারা আল্লাহর সাক্ষাতকে ভালবাসে আর আল্লাহ ও তার সাক্ষাতকে ভালবাসেন আর এ সূরাটি কুরআনের হৃদয়। আসন্ন মৃত ব্যক্তির সামনে এটা পড়া বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
তৃতীয়তঃ আর এ ‘আমলটি অনেক পূর্ব হতে চলে আসছে বর্তমান পর্যন্ত যে মুমূর্ষু ব্যক্তির সামনে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়া।
চতুর্থতঃ যদি সাহাবীরা বুঝতেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী তোমরা সূরাহ্ ইয়াসীন পড় মৃত ব্যক্তির ওপর এর দ্বারা উদ্দেশ্য ক্ববরের নিকট পড়বে। তাহলে তারা তা পড়া হতে বিরত হতেন না। আর এটা প্রসিদ্ধ সাহাবীরা পড়তেন না।
পঞ্চমতঃ উদ্দেশ্য হল দুনিয়া হতে বিদায়ের সময় শেষ মুহূর্তে মনোযোগ সহকারে শোনানোর মাধ্যমে উপকার দেয়া। আর ক্ববরের উপর তা পাঠ করতে এর কোন সাওয়াব আসে না। কেননা সাওয়াব হলে পড়া বা শ্রবণের মাধ্যমে আর তা ‘আমল বলে গণ্য এবং তা মৃত্যুর মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬২৩-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’উসমান ইবনু মায্’ঊন-এর মৃত্যুর পর তাঁকে চুমু দিয়েছেন। এরপর অঝোরে কেঁদেছেন, এমনকি তাঁর চোখের পানি ’উসমানের চেহারায় টপকে পড়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبَّلَ عُثْمَانَ بْنَ مَظْعُونٍ وَهُوَ مَيِّتٌ وَهُوَ يَبْكِي حَتَّى سَالَ دُمُوعُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى وَجْهِ عُثْمَانَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: হাদীস প্রমাণ করে মুসলিম ব্যক্তিকে মারা যাওয়ার পর চুম্বন দেয়া এবং তার জন্য কাঁদা বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬২৪-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটি বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাঃ)নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর তাঁকে (চেহারা মুবারাকে) চুমু খেয়েছিলেন। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ قَبَّلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مَيِّتٌ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনে হাজার বলেন, মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন দেয়া সম্মান ও বারাকাত হিসেবে দেয়া বৈধ। শাওকানী বলেন, সাহাবীদের কেউ অস্বীকার করেনি (চুম্বন করাকে) আবূ বাকর-এর ওপর।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬২৫-[১০] হুসায়ন ইবনু ওয়াহ্ওয়াহ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ত্বলহাহ্ ইবনু বারা অসুস্থ হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনকে বললেন, আমার মনে হচ্ছে ত্বলহার মৃত্যুর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। অতএব তার মৃত্যুর সাথে সাথেই আমাকে খবর দিবে (যাতে আমি জানাযাহ্ আদায়ের জন্য আসতে পারি)। আর তোমরা তার দাফন-কাফনের কাজ তাড়াতাড়ি করবে। কারণ মুসলিমের লাশ তার পরিবারের মধ্যে বেশীক্ষণ ফেলে রাখা ঠিক নয়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ حُصَيْنِ بْنِ وَحْوَحٍ أَنَّ طَلْحَةَ بْنَ الْبَرَاءِ مَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُهُ فَقَالَ: «إِنِّي لَا أَرَى طَلْحَةَ إِلَّا قَدْ حَدَثَ بِهِ الْمَوْتُ فَآذِنُونِي بِهِ وَعَجِّلُوا فَإِنَّهُ لَا يَنْبَغِي لِجِيفَةِ مُسْلِمٍ أَنْ تُحْبَسَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ أَهْلِهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: ত্বীবী বলেন, মু’মিন ব্যক্তি হলেন সম্মানিত। লাশ যখন দীর্ঘক্ষণ হয় তখন তা থেকে মানুষেরা গন্ধ অনুভব করে এবং তা হতে পলায়ন করে তাই উচিত হল লাশকে দ্রুত ঢেকে মাটিতে রাখার ব্যবস্থা করা। এখানে লাশকে কুরআনের ভাষা (سَوْءَةَ) মৃত দেহের মতো, যেমন আল্লাহর বাণীঃ كَيْفَ يُوَارِي سَوْءَةَ أَخِيهِ ‘‘আপন ভ্রাতার মৃত দেহ কিভাবে আবৃত করবে’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৩১)। মীরাক বলেন, মুসলিমের লাশ তার পরিবারের মধ্যে আটক রাখা উচিত না- এ কথার দ্বারা অপবিত্রতা প্রমাণিত হয় না। আর হাদীস প্রমাণ করে দ্রুত লাশের দাফনের ব্যবস্থা শারী‘আত সম্মত।