পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬১৬-[১] আবূ সা’ঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায় তাকে কালিমায়ে ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) তালকীন দিও। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْتُ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ) তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ করে দাও যারা মুমূর্ষুবস্থায় রয়েছে তাদেরকে মৃত্যু নাম রাখা হয় কেননা মৃত্যু তাদের সামনে উপস্থিত। আর তালকীন হলঃ মৃত শয্যায় শায়িত বক্তির সামনে তাকে স্মরণ করে দেয়া لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ এবং তার নিকট উচ্চারণ করা যাতে সে শুনে এবং অনুধাবন করতে পারে।
নাবাবী বলেন, এ তালকীনের বিষয়টি নুদব তথা ভাল এরই উপর ‘উলামারা ঐকমত্য পোষণ করেছেন আর অধিকবার মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থাপন করাকে তারা অপছন্দ করেছেন যাতে মৃত ব্যক্তির কঠিন অবস্থার কারণে বিষয়টি ঘৃণা করতে পারে আর এমন কিছু বলতে পারে যা শোভনীয় নয়।
তবে হাদীসের ভাষ্যমতে তালকীন করা ওয়াজিব, জমহূর ‘উলামারা এ মতে গেছেন বরং কিছু সংখ্যক মালিকীরা বলেছেন সবাই এ মতের উপর ঐকমত্য হয়েছেন।
لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ কারও মতে কালিমা দ্বারা কালিমায়ে শাহাদাত। তবে জমহূররা শুধুমাত্র لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ এর উপর সীমাবদ্ধ করেছেন। আবার কেউ محمد رسول الله বৃদ্ধি করেছেন তার সাথে। কেননা তাওহীদ স্মরণ করা উদ্দেশ্য আর যদি মুমূর্ষু ব্যক্তি কাফির হয় তাহলে তাকে কালিমায়ে শাহাদাত তালকীন দিতে হবে, কেননা তা ছাড়া সে মুসলিম বলে গণ্য হবে না।
আমি ভাষ্যকার বলি কালিমা لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ ইসলাম ও যিকর এর কালিমা কাফিররা যখন বলে ইসলাম প্রবেশের জন্য তখন তা কালিমা ইসলাম ও কালিমা শাহাদাত সবই উদ্দেশ্য আর যখন মুসলিমরা তা দ্বারা যিকর করে তখন যিকর সকল যিকিরের (জিকিরের) মতো। যেমনটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ সর্বোত্তম যিকর হল لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ আর দৃশ্যত অধ্যায়ের হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য কালেমাতুয্ যিকর তাতে ‘‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’’ শর্ত না।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬১৭-[২] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে কিংবা কোন মৃত্যু পথযাত্রীর কাছে ভাল ভাল কথা বলবে। কারণ তোমরা তখন যা বলো, (তা’ শুনে) মালাকগণ (ফেরেশতারা) ’আমীন’ ’আমীন’ বলেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْتُ
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا حَضَرْتُمُ الْمَرِيضَ أَو الْمَيِّت فَقولُوا خيرا فَإِن الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُونَ عَلَى مَا تَقُولُونَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (فَقولُوا خيرا) তোমরা উত্তম কথা বলবে। সিনদী বলেন, তার জন্য কল্যাণের দু‘আ কর আর না অকল্যাণ চেয়ে দু‘আ কর। অথবা ‘আমভাবে কল্যাণ চেয়ে না খারাপী চেয়ে। মাজহার বলেন, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য আরোগ্য চেয়ে দু‘আ কর এবং বল, হে আল্লাহ! তাকে সুস্থ কর আর মৃত্যু ব্যক্তির জন্য রহমাত ও মাগফিরাত চেয়ে দু‘আ কর এবং বল, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর এবং তার ওপর রহম কর।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬১৮-[৩] উম্মুল মু’মিনীন সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম (কোন ছোট-বড়) বিপদে পতিত হয় এবং আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা হলে এ কথাগুলো বলে, ’’ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-জি’ঊন’’ [অর্থাৎ ’’আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২: ১৫৬)]। ’’আল্ল-হুম্মা আজিরনী ফী মুসীবাতী ওয়া ওয়াখলিফলী খয়রাম মিনহা’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার বিপদের জন্য আমাকে সাওয়াব দাও। আর [এ বিপদে] যা আমি হারিয়েছি তার জন্য উত্তম বিনিময় আমাকে দান করো)। আল্লাহ তা’আলা তাকে এ জিনিসের উত্তম বিনিময় দান করেন।
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, যখন আবূ সালামাহ্ (অর্থাৎ তাঁর স্বামী) মারা গেলেন, আমি বললাম, ’’আবূ সালামাহ্ (রাঃ) হতে উত্তম কোন মুসলিম হতে পারে? এ আবূ সালামাহ্, যিনি সকলের আগে সপরিবারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হিজরত করেছেন। তারপর আমি উপরোক্ত বাক্যগুলো পড়েছিলাম। বস্ত্তত আল্লাহ তা’আলা আমাকে আবূ সালামার স্থলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দান করেছেন (অর্থাৎ তাঁর সাথে উম্মু সালামার বিয়ে হয়েছে)। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْتُ
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مُسْلِمٍ تُصِيبُهُ مُصِيبَةٌ فَيَقُولُ مَا أَمَرَهُ اللَّهُ بِهِ: (إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ)
اللَّهُمَّ أَجِرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَاخْلُفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا إِلَّا أَخْلَفَ اللَّهُ لَهُ خَيْرًا مِنْهَا . فَلَمَّا مَاتَ أَبُو سَلمَة قَالَت: أَيُّ الْمُسْلِمِينَ خَيْرٌ مِنْ أَبِي سَلَمَةَ؟ أَوَّلُ بَيْتِ هَاجَرَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ إِنِّي قُلْتُهَا فَأَخْلَفَ اللَّهُ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (وَاخْلُفْ لِي خَيْرًا مِّنْهَا) আমার এই মুসীবাতে যা ক্ষতি সাধন হয়েছে তার পরিবর্তে উত্তম কিছু দেয়ার ব্যবস্থা কর। ত্বীবী বলেন, উম্মু সালামাহ্ হতবাক হয়েছেন যে, তাঁর ধারণায় আবূ সালামাহ্ হতে উত্তম আর কোন ব্যক্তি নেই আর তার এ ধরনের লোভও ছিল না যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বিবাহ করবেন এ বিষয়টি তাঁর চিন্তার বাইরে ছিল। এজন্য তিনি বলেছিলেন, (أَيُّ الْمُسْلِمِينَ خَيْرٌ مِنْ أَبِي سَلَمَةَ؟) কোন্ মুসলিম আবূ সালামাহ্ হতে ভাল। আর দৃশ্যত উত্তমের বিষয়টি উম্মু সালামার দৃষ্টিকোণ হতে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬১৯-[৪] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামার কাছে আসলেন যখন তাঁর চোখ স্থির হয়ে গিয়েছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চোখগুলো বন্ধ করে দিলেন। তারপর বললেন, যখন রূহ কবয করা হয় তখন তার দৃষ্টিশক্তিও চলে যায়। আবূ সালামার পরিবার (এ কথা শুনে বুঝল, আবূ সালামাহ্ ইন্তিকাল করেছেন) কাঁদতে ও চিল্লাতে লাগল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তোমাদের মাইয়্যিতের জন্য কল্যাণের দু’আ করো। কারণ তোমরা ভাল মন্দ যে দু’আই করো (তা’ শুনে) মালাকগণ (ফেরেশতারা) ’আমীন’ বলে। তারপর তিনি এ দু’আ পাঠ করলেন,
’’আল্ল-হুম্মাগফির লিআবী সালামাহ্, ওয়ারফা’ দারাজাতাহূ ফিল মাহদীয়্যিন, ওয়াখলুফহু ফী ’আক্বিবিহী ফিল গ-বিরীন, ওয়াগফির লানা- ওয়ালাহূ ইয়া- রব্বাল ’আ-লামীন, ওয়া আফসিহ লাহূ ফী কবরিহী, ওয়ানাওয়ির লাহূ ফিহী’’
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আবূ সালামাকে মাফ করে দাও। হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দাও। তার ছেড়ে যাওয়া লোকদের জন্য তুমি সহায় হয়ে যাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দাও। তার কবরকে প্রশস্ত করে দাও। তার জন্য কবরকে নূরের আলোতে আলোকিত করে দাও।)। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْتُ
وَعَن أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: دَخَلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أبي سَلمَة قد شَقَّ بَصَرَهُ فَأَغْمَضَهُ ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الرُّوحَ إِذَا قُبِضَ تَبِعَهُ الْبَصَرُ» فَضَجَّ نَاسٌ مِنْ أَهْلِهِ فَقَالَ: «لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ إِلَّا بِخَير فَإِن الْمَلَائِكَة يُؤمنُونَ على ماتقولون» ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِي سَلَمَةَ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَأَفْسِحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: চোখ বন্ধ করার কারণ হল যখন রূহ শরীর হতে বের হয়ে যায় চক্ষু বের হয়ে যাওয়ার গন্তব্য পথকে অনুসরণ করে। সুতরাং চক্ষু খুলে থাকাতে কোন উপকার নেই। দ্বিতীয় কষ্টের কারণ বর্ণনা তথা মৃত ব্যক্তির নিকট জান কবযকারী মালাক (ফেরেশতা) আকৃতি নিয়ে তার সামনে আসে সে তার দিকে (ফেরেশতার দিকে) তাকিয়ে থাকে এবং চোখের পলকও ফেলে না শেষ পর্যন্ত রূহ পৃথক হয়ে যায় আর চোখের পাওয়ার নিঃশেষ হয়ে যায়। আর এ অবস্থায় চোখ অবশিষ্ট থাকে।
আর হাদীসে দলীল হিসেবে প্রমাণিত হয় যারা বলে যে, নিশ্চয় রূহ এর সূক্ষ্ম আকৃতি রয়েছে যা শরীরে বিশ্লেষিত এবং সে তা শরীক হতে বের হওয়ার ফলে জীবন চলে আয়। আর তা অন্য বস্ত্তর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত না যেমনটি অনেকে মনে করে। আরও দলীল প্রমাণিত হয় যে, মৃতুর সময় মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ ও তার পরিবারের জন্য দুনিয়া আখিরাতের কল্যাণ চেয়ে দু‘আ করা। আর প্রমাণিত যে, ক্ববরে মৃত ব্যক্তি শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়
১৬২০-[৫] উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর তাঁর পবিত্র শরীরের উপর ইয়ামিনী চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে রাখা হয়েছিল।’’ (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْتُ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ تُوُفِّيَ سجي بِبرد حبرَة
ব্যাখ্যা: মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসলের পূর্বে ঢেকে রাখা মুস্তাহাব। আর নাবাবী বলেন, এর উপর সবাই একমত হয়েছেন। আর ঢেকে রাখার হিকমাত হল উলঙ্গ করা হতে হিফাযাত করা এবং বিকৃতির দৃশ্যতাকে ঢেকে রাখা।