পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫০-[২৮] ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম সকাল বেলায় কোন অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) দু’আ করতে থাকে। যদি সে তাকে সন্ধ্যায় দেখতে যায়, তার জন্য সত্তর হাজার মালাক সকাল পর্যন্ত দু’আ করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরি হয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلَّا صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبِحَ وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنَّةِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (غُدْوَةً) তথা সকাল বেলা দ্বারা উদ্দেশ্য দিনের প্রথম প্রহর সূর্য ঢলার পূর্বে তথা সন্ধ্যা বেলা দ্বারা উদ্দেশ্য সূর্য ঢলার পর বা রাত্রির প্রথম প্রহর।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫১-[২৯] যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমার চোখের অসুখ হলে আমাকে দেখতে আসলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ قَالَ: عَادَنِي النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم من وجع كَانَ يُصِيبنِي. رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ইবনু মালিক বলেন, ব্যথার কারণে যে ব্যক্তি বাড়িতে অবস্থান করে বাইরে বের হতে পারে না তাকে দেখতে যাওয়া সুন্নাহ। আর তিনি আরো বলেন, হাদীসে রোগীকে দেখতে যাওয়া মুস্তাহাব হিসেবে প্রমাণিত হয় যদিও রোগীর অবস্থা ভয়ানক না যেমন সর্দি, দাঁতের ব্যথা ইত্যাদি এরূপ রুগীর খোঁজ-খবর নেয়াতেও প্রতিদান রয়েছে।
কোন কোন হানাফী হতে বর্ণিত, যে চোখ সংক্রামক ব্যাধি ও দাঁতের ব্যথা রোগীকে দেখতে যাওয়া সুন্নাহ বিরোধী। আর হাদীস এটা প্রত্যাখ্যান করে (ভাষ্যকার বলেন) আমি জানি না তাদের এ বক্তব্যটি (خلاف السنة) তথা ‘‘সুন্নাহ বিরোধী’’ ভাষ্য বক্তব্যটি কোথায় হতে গ্রহণ করেছে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি আমাদের আত্মার কুমন্ত্রণা হতে। আর আবূ দাঊদ তার কিতাবে অধ্যায় নিয়ে এসেছেন (باب العيادة من الرمد) চোখ এ সংক্রামক ব্যাধি রোগীকে দেখতে যাওয়ার অধ্যায়। আর যে হাদীসটি বায়হাক্বী ও ত্ববারানী আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিন ধরনের রুগীকে খোঁজ-খবর নিতে হবে না। চোখ সংক্রামক রোগী, দাঁতের ব্যথার রুগী ও ফোঁড়াজনিত রুগী। হাদীসটি অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫২-[৩০] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাওয়াবের নিয়্যাতে ভাল করে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার পর তার কোন অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে যায়, তাকে জাহান্নাম থেকে ষাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ: قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ وَعَادَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ مُحْتَسِبًا بُوعِدَ مِنْ جَهَنَّمَ مسيرَة سِتِّينَ خَرِيفًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ত্বীবী বলেন, রুগীর খোঁজ-খবর নেয়ার সময় উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা সুন্নাহ, কেননা সে দু‘আ করল পবিত্র অবস্থায় যা দু‘আ কবূল হওয়াতে অতি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আর যায়নুল আরব বলেনঃ সম্ভবত উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার হিকমাহ্ হল রুগীর খোঁজ-খবর ও দেখতে যাওয়া একটি ‘ইবাদাত, সুতরাং ‘ইবাদাত পরিপূর্ণ পদ্ধতিতে আদায় করা উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫৩-[৩১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলিম তার এক অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গিয়ে যদি সাতবার বলে, ’’আস্আলুল্ল-হাল ’আযীমা রব্বাল ’আরশিল ’আযীমি আই ইয়াশফিয়াকা’’ (অর্থাৎ আমি মহান আল্লাহর দরবারে দু’আ করছি তিনি যেন আপনাকে আরোগ্য দান করেন, যিনি মহান ’আরশের রব।)। তাহলে তাকে অবশ্যই আরোগ্য দান করা হয় যদি না তার জীবনের শেষ সময় উপস্থিত হয়। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا فَيَقُولُ سَبْعَ مَرَّاتٍ: أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ إِلَّا شُفِيَ إِلَّا أَنْ يَكُونَ قَدْ حَضَرَ أَجَلُهُ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত ‘সাতবার’ সংখ্যাটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গুপ্ত বিষয় কারও জন্য উচিত নয় এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা ও অনুসন্ধান করা। অনুরূপ প্রত্যেক সংখ্যার বিষয়টি শারী‘আত প্রণেতা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫৪-[৩২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জ্বরসহ অসুখ-বিসুখ হতে পরিত্রাণ পাবার জন্য এভাবে দু’আ করতে শিখিয়েছেন, ’’মহান আল্লাহর নামে, মহান আল্লাহর কাছে সব রক্তপূর্ণ শিরার অপকার হতে ও জাহান্নামের গরমের ক্ষতি হতে।’’ (তিরমিযী; তিনি [ইমাম তিরমিযী] বলেছেন, হাদীসটি গরীব। ইব্রাহীম ইবনু ইসমা’ঈল ছাড়া এ হাদীস কেউ বর্ণনা করেননি। আর ইব্রাহীম হলেন দুর্বল বর্ণনাকারী।)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَانَ يعلمهُمْ من الْحمى وم الأوجاع كلهَا أَن يَقُولُوا: «بِسم الله الْكَبِيرِ أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ مِنْ شَرِّ كُلِّ عرق نعار وَمن شَرّ حر النَّارِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لَا يُعْرَفُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِ إِبْرَاهِيمَ بْنِ إِسْمَاعِيلَ وَهُوَ يضعف فِي الحَدِيث
ব্যাখ্যা: হাদীসে ইঙ্গিত বহন করে যে, জ্বর মূলত শরীরে রক্তচাপের কারণে হয় আর তা এক আগুনের গরমের প্রকারভেদ যেমন অন্য হাদীসে আছে যে, (أَنَّ الْحُمّى مِنْ فَيْحِ النَّارِ، وَأَنَّهَا تُبْرَدُ بِالْمَاءِ) জ্বর হল আগুনের উত্তপ্ত হতে আর তা ঠান্ডা করে পানি।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫৫-[৩৩] আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ ব্যথা-বেদনা অনুভব করলে অথবা তার কোন মুসলিম ভাই তার নিকট ব্যথা-বেদনার কথা বললে, সে যেন দু’আ করে, "আমাদের রব আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। হে রব! তোমার নাম পূতঃ-পবিত্র। তোমার নির্দেশ আকাশ ও পৃথিবী উভয় স্থানেই প্রযোজ্য। আকাশে যেভাবে তোমার অগণিত রহমত আছে, ঠিক সেভাবে তুমি পৃথিবীতেও তোমার অগণিত রহমত ছড়িয়ে দাও। তুমি আমাদের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করে দাও। তুমি পূতঃ-পবিত্র লোকদের রব। তুমি তোমার রহমতগুলো হতে বিশেষ রহমত ও তোমার শেফাসমূহ হতে বিশেষ শেফা এ ব্যথা-বেদনার নিরাময়ে পাঠিয়ে দাও।" এ দু’আ তার সকল ব্যথা-বেদনা দূর করে দেবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنِ اشْتَكَى مِنْكُمْ شَيْئًا أَوِ اشْتَكَاهُ أَخٌ لَهُ فَلْيَقُلْ: رَبُّنَا اللَّهُ الَّذِي فِي السَّمَاءِ تَقَدَّسَ اسْمُكَ أَمرك فِي السَّمَاء وَالْأَرْض كَمَا أَن رَحْمَتُكَ فِي السَّمَاءِ فَاجْعَلْ رَحْمَتَكَ فِي الْأَرْضِ اغْفِرْ لَنَا حُوبَنَا وَخَطَايَانَا أَنْتَ رَبُّ الطَّيِبِينَ أَنْزِلْ رَحْمَةً مِنْ رَحْمَتِكَ وَشِفَاءً مِنْ شِفَائِكَ عَلَى هَذَا الْوَجَعِ. فَيَبْرَأُ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (فَاجْعَلْ رَحْمَتَكَ فِي الْأَرْضِ) তোমার রহমাত জমিনে বিস্তার কর তথা জমিনের অধিবাসী প্রত্যেক মু’মিনের ওপর। উদ্দেশ্য হল রহমাত দ্বারা খাসভাবে মু’মিনের ওপর, কারণ তা না হলে রহমাত ব্যাপকভাবে সবার জন্য প্রযোজ্য। (حُوْبَنَا) কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ আর (خَطَايَانَا) দ্বারা উদ্দেশ্য সগীরাহ্ গুনাহ।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫৬-[৩৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় তখন সে যেন বলে, ’’আল্ল-হুম্মাশফি ’আবদাকা ইয়ানকাউ লাকা ’আদ্যুওয়ান আও ইয়ামশী লাকা ইলা- জানা-যাহ্’’ (অর্থা- হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে সুস্থ করে দাও। সে যাতে তোমার জন্য শত্রুকে আঘাত করতে পারে। অথবা তোমার সন্তুষ্টির জন্য জানাযায় অংশ নিতে পারে।)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا جَاءَ الرجل يعود مَرِيضا فَلْيقل ك اللَّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ يَنْكَأُ لَكَ عَدُوًّا أَوْ يَمْشِي لَكَ إِلَى جِنَازَةٍ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (يَنْكَأُ لَكَ) ‘‘তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশে শত্রুকে যেন হত্যা করতে পারে’’ উদ্দেশ্য তোমার রাস্তায় যেন সে যুদ্ধ করে। (إِلى جِنَازَةٍ) দ্বারা উদ্দেশ্য সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যেমন হাকিম-এর বর্ণনায় এসেছে, তবে এটি ব্যাপক অর্থের উপর প্রমাণ বহন করে।
ত্বীবী বলেন, সম্ভবত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও জানাযার সালাতে অংশগ্রহণ মধ্যে একত্রিতকরণের কারণ হল প্রথমটিতে আল্লাহর শত্রুর ওপর প্রতিশোধ নিতে একান্তভাবে মনোনিবেশ করা আর দ্বিতীয়টিতে আল্লাহর বন্ধুদের প্রতি রহমাত পৌঁছাতে প্রচেষ্টা করা বা দ্রুত বাস্তবায়িত করা।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫৭-[৩৫] ’উমাইয়্যাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (’উমাইয়্যাহ্) একদিন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে ’’তোমাদের অন্তরে যা আছে তোমরা যদি তা প্রকাশ করো অথবা গোপন করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে তোমাদের হিসাব নিবেন’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২: ২৮৪) এবং ’’যে অন্যায় কাজ করবে সে তার শাস্তি ভোগ করবে’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১২৩)- এ দু’টি আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলেন। উত্তরে ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবার পর এ পর্যন্ত কেউ আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেনি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ দু’টি আয়াতে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তা হলো দুনিয়ায় বান্দার যে জ্বর ও দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি হয়, তা দিয়ে আল্লাহ যে শাস্তি দেন তাই, এমনকি বান্দা জামার পকেটে যে সম্পদ রাখে, তারপর হারিয়ে ফেলে তার জন্য অস্থির হয়ে যায়- এটাও এ শাস্তির মধ্যে গণ্য। অবশেষে বান্দা তার গুনাহগুলো হতে পবিত্র হয়ে বের হয়। যেভাবে সোনাকে হাপরের আগুনে পরিষ্কার করে বের করা হয়। (তিরমিযী)[1]
عَن عَلِيِّ بْنِ زَيْدٍ عَنْ أُمَيَّةَ أَنَّهَا سَأَلَتْ عَائِشَة عَن قَول الله تبَارك وَتَعَالَى: (إِن تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ الله)
وَعَنْ قَوْلِهِ: (مَنْ يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ)
فَقَالَتْ: مَا سَأَلَنِي عَنْهَا أَحَدٌ مُنْذُ سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «هَذِه معاتبة الله العَبْد فِيمَا يُصِيبُهُ مِنَ الْحُمَّى وَالنَّكْبَةِ حَتَّى الْبِضَاعَةِ يَضَعُهَا فِي يَدِ قَمِيصِهِ فَيَفْقِدُهَا فَيَفْزَعُ لَهَا حَتَّى إِنَّ الْعَبْدَ لَيَخْرُجُ مِنْ ذُنُوبِهِ كَمَا يَخْرُجُ التبر الْأَحْمَر من الْكِير» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: কল্পনাপ্রসূত পাপ, খারাপ চরিত্র শাস্তিযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না যতক্ষণ না তা প্রকাশ্যে বাস্তবায়িত হবে আর এদিকে রসূলের বক্তব্য ইঙ্গিত বহন করে (إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِيْ مَا حَدَثَتْ بِه أَنْفُسُهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ) ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মাতের অনিচ্ছাকৃত কুচিন্তা ত্রুটি-বিচ্যুতি শাস্তির কবল হতে মুক্ত যতক্ষণ না তা বাস্তবে ‘আমল করে এবং বলে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কল্পনাপ্রসূত পাপ কাজের শাস্তি দিবেন না এবং শাস্তি দিবেন বাস্তবে তা করলে।’’ সুতরাং আয়াত ও হাদীসের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব না।
আর না এটাও কোন দ্বন্দ্ব হিসেবে পরিগণিত হবে যে, কল্পনার চিন্তাকে দৃঢ় হিসেবে গ্রহণ করবে যেমন আল্লাহর বাণীঃ
وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ
‘‘কিন্তু যেসব কসমের ব্যাপারে ধরবেন তোমাদের মন যার প্রতিজ্ঞা করেছে।’’ (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ২২৫)
আমরা বলব, বাস্তবে আল্লাহর এই ধরাটা তখনই প্রযোজ্য হবে কখন মনের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে পাপ কাজের সাথে জড়িয়ে নিবে। জ্বরকে খাস করার কারণ হল রোগসমূহের মধ্যে জ্বর হল কঠিন ও ক্ষতিকর।
(عتاب) তথা সাজা শব্দটি ব্যবহার হয় দু’ বন্ধুর মধ্যে এক বন্ধু অপর বন্ধুর ওপর ক্রোধ প্রকাশ করে তার খারাপ আচরণের কারণে এতদসত্ত্বেও তার অন্তরে তার প্রতি ভালবাসা বিদ্যমান। সুতরাং আয়াতের অর্থ এটা না যে, আল্লাহ মু’মিনদেরকে তাদের সকল গুনাহের শাস্তি দিবেন বরং আল্লাহ তাদেরকে ক্ষুধা, পিপাসা, রোগ, চিন্তা ও অন্যান্য অপছন্দনীয় জিনিস দিয়ে পাকড়াও করবেন যাতে তারা দুনিয়াতেই গুনাহ হতে বের হয়ে পবিত্র হতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫৮-[৩৬] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বড় হোক কিংবা ছোট হোক, বান্দা যেসব দুঃখ-কষ্ট পায়, নিশ্চয়ই তা তার অপরাধের কারণে। তবে আল্লাহ যা ক্ষমা করে দেন তা এর চেয়েও অনেক বেশী। এ কথার সমর্থনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন- অর্থাৎ ’’তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়, তা তোমাদের কর্মফলের কারণে। আর আল্লাহ ক্ষমা করে দেন অনেক অনেক বেশি’’- (সূরাহ্ আশ্ শূরা ৪২: ৩০)। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي مُوسَى أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يُصِيبُ عَبْدًا نَكْبَةٌ فَمَا فَوْقَهَا أَوْ دُونَهَا إِلَّا بِذَنَبٍ وَمَا يَعْفُو اللَّهُ عَنْهُ أَكْثَرُ وَقَرَأَ: (وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كثير)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: وَيَعْفُوْ عَنْ كَثِيْر তিনি অনেক গুনাহ ক্ষমা করেন গুনাহের কারণে দ্রুত শাস্তি দেন না। ইবনু কাসীর বলেন, তিনি তোমাদের বন্ধু অপরাধ ক্ষমা করে দেন যদি তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্মের কারণে পাকড়াও করতেন তবে ভূপৃষ্ঠে তোমাদের কেউ চলাফেরা করতে পারত না। আর এটা অপরাধীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অপরাধী তথা গুনাহগার ব্যক্তি ব্যতিরেকে অন্যদের ক্ষেত্রে দুনিয়ায় বিপদাপদ, মুসীবাত পৌঁছলে আখিরাতে তা তাদের উচ্চমর্যাদার কারণ হয়ে যায়। অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্য নিহিত যা আমাদের নিকট গোপন। আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকাও উম্মাদ ব্যক্তিরা তারা এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত না। কারও মতে শিশুদের ওপর মুসীবাত তার মর্যাদা ও তার পিতামাতার মর্যাদার কারণ হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৫৯-[৩৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন ’ইবাদাতের কোন সুন্দর নিয়ম-পদ্ধতি পালন করে চলতে শুরু করে এবং তারপর যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে (’ইবাদাতের ধারা বন্ধ হয়ে যায়), তখন তার ’আমলনামা লিখার জন্য নিযুক্ত মালাককে (ফেরেশতাকে) বলা হয়, এ বান্দা সুস্থ অবস্থায় যে ’আমল করত (অসুস্থ অবস্থাও) তার ’আমলনামায় তা লিখতে থাকো। যে পর্যন্ত না তাকে মুক্ত করে দিই অথবা তাকে আমার কাছে ডেকে আনি।[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: إِن الْعَبْدَ إِذَا كَانَ عَلَى طَرِيقَةٍ حَسَنَةٍ مِنَ الْعِبَادَةِ ثُمَّ مَرِضَ قِيلَ لِلْمَلَكِ الْمُوَكَّلِ بِهِ: اكْتُبْ لَهُ مِثْلَ عَمَلِهِ إِذَا كَانَ طَلِيقًا حَتَّى أطلقهُ أَو أكفته إِلَيّ
ব্যাখ্যা: যখন সে শারী‘আতের পদ্ধতি অনুযায়ী ‘ইবাদাত করে আর ফরযসমূহ পালনের পর নফল আদায় করে, অতঃপর অসুস্থের পর সেই নফল ‘ইবাদাত আদায় করতে পারে না।
(أكفته إِلَيّ) আমি তাকে ক্ববরের দিকে টেনে নেই মূলত মৃত্যু উদ্দেশ্য।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬০-[৩৮] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে শারীরিক বিপদে ফেলা হলে মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাদেরকে) বলা হয়, এ বান্দা নিয়মিত যে নেক কাজ করত, তা-ই তার ’আমলনামায় লিখতে থাকো। এরপর তাকে আল্লাহ আরোগ্য দান করলে গুনাহখাতা হতে ধুয়ে পাকসাফ করে নেন। আর যদি তাকে উঠিয়ে নেন, তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি রহমত দান করেন। এ হাদীস দু’টি শারহুস্ সুন্নাহয় বর্ণিত।[1]
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا ابْتُلِيَ الْمُسْلِمُ بِبَلَاءٍ فِي جَسَدِهِ قِيلَ لِلْمَلَكِ: اكْتُبْ لَهُ صَالِحَ عَمَلِهِ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُ فَإِنْ شَفَاهُ غَسَّلَهُ وَطَهَّرَهُ وَإِنْ قَبَضَهُ غَفَرَ لَهُ وَرَحِمَهُ . رَوَاهُمَا فِي شرح السّنة
ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ আহমাদ-এর বর্ণনা এভাবে এসেছে,
إَذَا ابْتَلَى اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ بِبَلَاءٍ فِىْ جَسَدَه قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِلْمَلَكِ: أَيْ صَاحِبَ يَمِيْنِه، وَهُوَ كَاتِبُ الْحَسَنَاتِ.
যখন কোন মুসলিমকে শারীরিক বিপদে ফেলা হয় তখন আল্লাহ তা‘আলা ডান মালাককে তথা ডানের মালাক (ফেরেশতা) যিনি ভাল ‘আমল লিখেন।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ হাদীসের প্রকাশ্য ভাষ্য হল তার জন্য হুবহু যে ‘আমলেই লেখা হয় অথবা প্রতিদান প্রথমটিই সঠিক।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬১-[৩৯] জাবির ইবনু ’আতীক (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে নিহত শাহীদ ছাড়াও সাত ধরনের শাহীদ রয়েছে। এরা হচ্ছে (১) মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, (২) পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৩) যা-তুল জান্ব রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৪) পেটের রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৬) কোন প্রাচীর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং (৭) প্রসবকালে মৃত্যুবরণকারী মহিলা। (মালিক, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَتِيكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الشَّهَادَةُ سَبْعٌ سِوَى الْقَتْلِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ: الْمَطْعُونُ شَهِيدٌ وَالْغَرِيقُ شَهِيدٌ وَصَاحِبُ ذَاتِ الْجَنْبِ شَهِيدٌ وَالْمَبْطُونُ شَهِيدٌ وَصَاحِبُ الْحَرِيقِ شَهِيدٌ وَالَّذِي يَمُوتُ تَحْتَ الْهَدْمِ شَهِيدٌ وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهِيدٌ . رَوَاهُ مَالك وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (ذَاتُ الْجَنْبِ) ‘যা-তুল জান্ব’ বলতে নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে টিউমার বা বড় ফোঁড়া যা বগলের নীচে প্রকাশ পায় এবং প্রবাহিত হয় ভিতরে কখনো কখনো ব্যক্তি স্বস্তি অনুভব করে।
জামি' উসূলে বলা হয়েছে, ‘যা-তুল জান্ব’ বলতে টিউমার বা বড় ফোঁড়া, যখম মানুষের পেটে প্রকাশ পায় এবং ক্ষত ভিতরে প্রবাহিত হয় যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে কখনও ক্ষত বাইরেই থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬২-[৪০] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর নবী! কোন্ সব লোককে বিপদাপদ দিয়ে সবচেয়ে বেশী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নবীদেরকে। তারপর তাদের পরে যারা উত্তম তাদেরকে। মানুষকে আপন আপন দীনদারীর অনুপাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। দীনদারীতে যে যত বেশী মজবুত হয় তার বিপদ-মুসীবাত তত বেশী কঠিন হয়। দীনের ব্যাপারে যদি মানুষের দুর্বলতা থাকে, তার বিপদও ছোট ও সহজ হয়। এভাবে তার বিপদ হতে থাকে। এ নিয়েই সে মাটিতে চলাফেরা করতে থাকে। তার কোন গুনাহখাতা থাকে না। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী; ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।)[1]
وَعَنْ سَعْدٍ قَالَ: سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً؟ قَالَ: «الْأَنْبِيَاء ثمَّ الْمثل فَالْأَمْثَلُ يُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ فَإِنْ كَانَ صلبا فِي دينه اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ هُوِّنَ عَلَيْهِ فَمَا زَالَ كَذَلِكَ حَتَّى يَمْشِيَ على الأَرْض مَال ذَنْبٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حسن صَحِيح
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রা বিপদ মুসীবাতকে আলিঙ্গন করতে স্বাদ উপভোগ করেন যেমন অন্যরা বিত্ত-বৈভবকে আলিঙ্গন করতে স্বাদ অনুভব করে থাকে। আর যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রা বিপদাপদ দ্বারা পরিক্ষিত না হত তাহলে তাদের ব্যাপারে মানুষের মা‘বূদ হওয়ার কুধারণা থাকত। আর উম্মাতের ওপর ধৈর্য দুর্বল হয়ে পড়ত বালা মুসীবাতের জন্য। কেননা যে যত বেশী কঠিন মুসীবাতের মুখোমুখি সে তত বেশী বিনয়ী ও আল্লাহমুখী হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬৩-[৪১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু কষ্ট দেখেছি। তাই এরপর আর সহজভাবে মৃত্যু হতে দেখলে ঈর্ষা করি না। (তিরমিযী, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَا أَغْبِطُ أَحَدًا بِهَوْنِ مَوْتٍ بَعْدَ الَّذِي رَأَيْتُ مِنْ شِدَّةِ مَوْتِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (بَعْدَ الَّذِي رَأَيْتُ مِنْ شِدَّةِ مَوْتِ رَسُولِ اللّهِ ﷺ) অর্থাৎ আমি যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর কঠিনতা প্রত্যক্ষ করলাম বুঝতে পারলাম, মৃত্যুর কঠিনতা মৃত ব্যক্তির ওপর খারাপ পরিণতির ভয়াবহতা প্রমাণ বহন করে না এবং মৃত্যুর সহজতা বুযুর্গের ওপর প্রমাণ বহন করে না। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বড় বুযুর্গ ব্যক্তি মানুষের মধ্যে অথচ তাঁর মৃত্যু সহজভাবে ছিল না।
সুতরাং আমি আর কারও কঠিন মৃত্যুকে ঘৃণা করি না।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬৪-[৪২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি তাঁর মৃত্যুবরণ করার সময় দেখেছি। তাঁর কাছে একটি পানিভরা বাটি ছিল। এ বাটিতে তিনি বারবার হাত ডুবাতেন। তারপর হাত দিয়ে নিজের চেহারা মুছতেন ও বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মৃত্যু যন্ত্রণায় সাহায্য করো। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ بِالْمَوْتِ وَعِنْدَهُ قَدَحٌ فِيهِ مَاءٌ وَهُوَ يُدْخِلُ يَدَهُ فِي الْقَدَحِ ثُمَّ يَمْسَحُ وَجْهَهُ ثُمَّ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى مُنْكَرَاتِ الْمَوْتِ أَوْ سَكَرَاتِ الْمَوْتِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহায্য চাওয়ার উদ্দেশ্য আল্লাহর নিকট প্রকৃত মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তার রবের ব্যাপারে ভাল ধারণা নিয়ে, কেননা এ সময় শায়ত্বন (শয়তান) কুমন্ত্রণা দেয় আর এটা তাঁর উম্মাতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬৫-[৪৩] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চাইলে আগে-ভাগে দুনিয়াতেই তাকে তার গুনাহখাতার জন্য কিছু শাস্তি দিয়ে দেন। আর কোন বান্দার অকল্যাণ চাইলে দুনিয়ায় তার পাপের শাস্তিদান হতে বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে তার পূর্ণ শাস্তি দিবেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَرَادَ اللَّهُ تَعَالَى بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَهُ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (فِي الدُّنْيَا) যাতে দুনিয়া হতে এমনভাবে বিদায় গ্রহণ করে তার ওপর আর কোন গুনাহ নেই। আর যার সাথে এমনটি করা হয় মূলত তার ওপর এটা একটি বিরাট অনুগ্রহ ও অনুকম্পা (আল্লাহর পক্ষ হতে)।
(حَتّى يُوَافِيَه بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) অবশেষে তাকে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে পূর্ণ শাস্তি দিবেন অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার গুনাহের কারণে দুনিয়াতে শাস্তি দেন না, অবশেষে পাপী ব্যক্তি পরিপূর্ণ গুনাহ নিয়ে আখিরাতে উপস্থিত হয় আর সে শাস্তির প্রাপ্যতাও পরিপূর্ণভাবে পেয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬৬-[৪৪] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বড় বড় বিপদ-মুসীবাতের পরিণাম বড় পুরস্কার। আল্লাহ তা’আলা কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত থাকে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে জাতি এতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্মার্থ হল যে, উৎসাহিত করা হয়েছে বালা মুসীবাতে পতিত হওয়ার পর তার উপর ধৈর্য ধারণ করার। আর বিপদাপদকে টেনে আনার দু‘আ করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এমনকি নিষেধও করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬৭-[৪৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন নারী-পুরুষের বিপদ-মুসীবাত লেগেই থাকে। এ বিপদ-মুসীবাত তার শারীরিক, তার ধন-সম্পদের, তার সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে হতে পারে। আল্লাহর সাথে মিলিত হবার আগ পর্যন্তই তা চলতে থাকে। আর আল্লাহর সাথে তার মিলিত হবার পর তার ওপর গুনাহের কোন বোঝাই থাকে না। (তিরমিযী; মালিক (রহঃ) এরূপ বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَزَالُ الْبَلَاءُ بِالْمُؤْمِنِ أَوِ الْمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ تَعَالَى وَمَا عَلَيْهِ مِنْ خَطِيئَةٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَرَوَى مَالِكٌ نَحْوَهُ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح
ব্যাখ্যা: রাযী বলেনঃ সম্ভবত আল্লাহ ইচ্ছা করেন এর মাধ্যমে (বান্দা) তার গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দিতে যাতে তার আর কোন গুনাহ না থাকে অথবা হতে পারে আল্লাহ ইচ্ছা করেন এর মাধ্যমে তার প্রতিদান অর্জিত হোক তার সকল পাপের পরিমাপের বিনিময় অনুযায়ী। অতঃপর সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এমতাবস্থায় তার কোন গুনাহ থাকবে না আর বৃদ্ধি করা হবে তার পুণ্যের উপর আর এই সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি মুসীবাতে ধৈর্য ধারণ করবে এবং প্রতিদানের প্রত্যাশা করবে। আর যে ব্যক্তি বিরক্ত প্রকাশ করবে এটা আল্লাহর নিয়তির উপর অসন্তোষ প্রকাশ করবে এজন্য সে গুনাহগার হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬৮-[৪৬] মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ আস্ সুলামী তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তাঁর দাদা বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর তরফ হতে কোন মানুষের জন্য যখন কোন মর্যাদা নির্ধারিত হয়, যা সে ’আমল দিয়ে লাভ করতে পারে না, তখন আল্লাহ তাকে তার শরীরে অথবা তার সন্তান-সন্ততির ওপর বিপদ ঘটিয়ে পরীক্ষা করেন। এতে তাকে ধৈর্যধারণ করারও শক্তি দান করেন। যাতে সেরূপ মর্যাদা লাভ করতে পারে, যা আল্লাহর তরফ হতে তার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ خَالِدٍ السُّلَمِيِّ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللَّهِ مَنْزِلَةٌ لَمْ يَبْلُغْهَا بِعَمَلِهِ ابتلاه الله فِي جسده أَفِي مَالِهِ أَوْ فِي وَلَدِهِ ثُمَّ صَبَّرَهُ عَلَى ذَلِكَ يُبَلِّغُهُ الْمَنْزِلَةَ الَّتِي سَبَقَتْ لَهُ مِنَ الله» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (إِذَا سَبَقَتْ لَه مِنَ اللّهِ مَنْزِلَةٌ) যখন আল্লাহর পক্ষ হতে কোন মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। এখানে মর্যাদা বলতে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা।
(لَمْ يَبْلُغْهَا بِعَمَلِه) ‘আমল করার মাধ্যমে সে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছা সম্ভব না। মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ হাদীসে প্রমাণিত হয় আনুগত্য তথা ভাল ‘আমল মর্যাদা অর্জনের কারণ। কারও মতে জান্নাতে প্রবেশ করা আল্লাহর অনুগ্রহ। ত্বীবী বলেনঃ হাদীসে হৃদয়ঙ্গম হয় যে খাস করে বিপদাপদ সাওয়াব অর্জনের কারণ আনুগত্যের জন্য নয়। এজন্য বিপদ দ্বারা সর্বাপেক্ষা পরীক্ষা করা হয় নাবীদের, অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যারা উত্তম তাদের।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৬৯-[৪৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানকে তার চারদিকে নিরানব্বইটি বিপদ পরিবেষ্টিত অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি এ বিপদগুলোর সবগুলোই তার ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে অন্তত বার্ধক্যজনিত বিপদে পতিত হয়। পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব।)[1]
وَعَن عبد الله بن شخير قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُثِّلَ ابْنُ آدَمَ وَإِلَى جَنْبِهِ تِسْعٌ وَتِسْعُونَ مَنِيَّةً إِنْ أَخْطَأَتْهُ الْمَنَايَا وَقَعَ فِي الْهَرَمِ حَتَّى يَمُوتَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: ৯০ সংখ্যা দ্বারা আধিক্য উদ্দেশ্য সীমাবদ্ধ না। (مَنِيَّةً) ধ্বংসযোগ্য মুসীবাত, আবার কেউ কেউ বলেছেন মৃত্যুর কারণ। মৃত্যুর কারণ অনেক যেমন রোগসমূহ ক্ষুধা ডুবা, পোড়া, বিল্ডিং ধ্বসে পড়া ইত্যাদি যদি একটি অতিক্রম করে তাহলে অপরটিতে পতিত হবে আর যদি সব বিপদই অতিক্রম করে তাহলে বার্ধ্যক্যরূপ বিপদে পতিত হবে। কেউ কেউ বলেছেন, মানব সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য হল তার হতে কখন বিপদাপদ মুসীবাত বিচ্ছিন্ন হবে না, যেমন বলা হয় সুস্থতাই মুসীবাতের মূল লক্ষ্য। আরও যেমন হাকাম বিন ‘আত্বা বলেছেন, যতক্ষণ আমি ঘরে থাকি ঘরে অবস্থান আমাকে ব্যাস্ত রাখে যদি আমি মুসীবাতের সেই দুর্লভ পথ পাড়ি দেই তাহলে আমি এমন এক রোগ পেয়ে থাকি যে রোগের কোন চিকিৎসা নেই আর তা হল বার্ধক্য।
মোদ্দা কথা হল দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা স্বরূপ আর কাফিরদের জন্য জান্নাত স্বরূপ আর বিপদাপদ গুনাহের জন্য কাফফারাহ্। সুতরাং মু’মিনের উচিত আল্লাহর ফায়সালা ও সিদ্ধান্তের উপর ধৈর্য ধারণ করা ও সন্তোষ প্রকাশ করা যা তার জন্য আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।