পরিচ্ছেদঃ ৫৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
ঝড় তুফানের অধ্যায় ইসতিসক্বার অধ্যায়ের পরে আনার কারণ হল ইসতিসক্বা দ্বারা বৃষ্টি বর্ষণের চাওয়া উদ্দেশ্য আর ঝড় তুফান অধিকাংশ সময় ’আযাব হিসেবে পতিত হয়।
১৫১১-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি পূরবী বাতাস দিয়ে উপকৃত হয়েছি। আর ’আদ জাতি পশ্চিমা বাতাস দিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ فِي الرِّيَاحِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نُصِرْتُ بِالصَّبَا وَأُهْلِكَتْ عَاد بالدبور»
ব্যাখ্যা: খন্দাকের যুদ্ধে আমি সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। হাদীসে হাওয়া দ্বারা বর্ণনার উদ্দেশ্য যে সবকিছু এবং উপাদানসমূহ পরিচালিত হয় আল্লাহর আদেশে এবং ইচ্ছায় এবং প্রকৃতবাদীদের ও ফিলোসোফার (philosopher) ও জ্ঞানীদের বিরুদ্ধে। বাতাস তার আদেশেই পরিচালিত হয় কখনও এ বাতাস তার আদেশ কোন জাতির ওপর সাহায্যে আবার কোন জাতির ওপর ‘আযাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাদীসে আরও বর্ণনা করা হয়, ব্যক্তির ওপর আল্লাহ যে অনুগ্রহ করেছেন কৃতজ্ঞতার মন নিয়ে তা অন্যকে সংবাদ দেয়া অহংকারের মানসিকতা নিয়ে না।
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫১২-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কখনো এতটা হাসতে দেখনি যাতে তাঁর আলা জিহ্বা দেখতে পেরেছি। তিনি মুচকী হাসতেন শুধু। তবে তিনি যখন ঝড়-তুফান দেখতেন তখন তার প্রভাব তাঁর চেহারায় উদ্ভাসিত হয়েছে বলে বুঝা যেত। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ فِي الرِّيَاحِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَاحِكًا حَتَّى أَرَى مِنْهُ لَهَوَاتِهِ إِنَّمَا كَانَ يتبسم فَكَانَ إِذَا رَأَى غَيْمًا أَوْ رِيحًا عُرِفَ فِي وَجهه
ব্যাখ্যা: ত্বীবী বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারায় ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছিল এই ভয়ে যে, এই মেঘমালায় বা বাতাসে মানুষের ক্ষতি হবে। আর প্রমাণ করে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক হাসতেন না আর তিনি অহংকারী, অমনোযোগী ও অধিক আনন্দকারী ছিলেন না আর তাঁর মুচকী হাসি প্রমাণ করে হাসোজ্জ্বল চেহারা আর মেঘমালা দেখলে তাঁর ভীতির ছাপ অথবা বাতাস দেখলে সৃষ্টির উপর দয়া ও মহানুভবতা উদ্রেক হওয়া প্রমাণ করে যে, তিনি উন্নত চরিত্রের অধিকারী।
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫১৩-[৩] উল্লেখিত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রহা- ওয়া খয়রা মা- ফীহা- ওয়া খয়রা মা- উরসিলাত বিহী ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন শাররিহা- ওয়া শাররি মা- ফীহা- ওয়া শাররি মা- উরসিলাত বিহী’’
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এ ঝড়ো হাওয়ার কল্যাণের দিক কামনা করছি। কামনা করছি এর মধ্যে যা কিছু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যে কারণে এ ঝড়ো হাওয়া পাঠানো হয়েছে সে কল্যাণ চাই। আমি আশ্রয় চাই তোমার নিকট এর ক্ষতির দিক থেকে এবং এতে যা কিছু ক্ষতি নিহিত আছে এবং যে ক্ষতির জন্য তা পাঠানো হয়েছে তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।)।
(’আয়িশাহ্ বলেন) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে যেত। তিনি বিপদের ভয়ে একবার বের হয়ে যেতেন। আবার প্রবেশ করতেন। কখনো সামনে আসতেন। কখনো পেছনে সরতেন। বৃষ্টি শুরু হলে তার উৎকণ্ঠা কমে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, একবার ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ উৎকণ্ঠা অনুভূত হলে তিনি তাঁর নিকট এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, হে ’আয়িশাহ্! এ ঝড়ো হাওয়া এমনতো হতে পারে যা ’আদ জাতি ভেবে ছিল। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেন, ’’তারা যখন একে তাদের মাঠের দিকে আসতে দেখল, বললো, এটা তো মেঘ। আমাদের ওপর পানি বর্ষণ করবে’’- (সূরাহ্ আল আহক্বাফ ৪৬: ২৪)। অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাভাবিক বৃষ্টি দেখলে বলতেন, এটা আল্লাহর রহমত। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ فِي الرِّيَاحِ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا عَصَفَتِ الرِّيحُ قَالَ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ» وَإِذَا تَخَيَّلَتِ السَّمَاءُ تَغَيَّرَ لَونه وحرج وَدَخَلَ وَأَقْبَلَ وَأَدْبَرَ فَإِذَا مَطَرَتْ سُرِّيَ عَنْهُ فَعَرَفَتْ ذَلِكَ عَائِشَةُ فَسَأَلَتْهُ فَقَالَ: لَعَلَّهُ يَا عَائِشَةُ كَمَا قَالَ قَوْمُ عَادٍ: (فَلَمَّا رَأَوْهُ عَارِضًا مُسْتَقْبِلَ أَوْدِيَتِهِمْ قَالُوا: هَذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا)
وَفِي رِوَايَةٍ: وَيَقُولُ إِذَا رَأَى الْمَطَرَ «رَحْمَةً»
ব্যাখ্যা: هذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا এটাতো মেঘ এটা আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে। আল্লাহ তা‘আলার তাদের দাবী খন্ডন করে বলেন, বরং এটা সে মেঘ যে ‘আযাবের ব্যাপারে তোমরা তাড়াহুড়া করছিলে তাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
تُدَمِّرُ كُلَّ شَيْءٍ بِأَمْرِ رَبِّهَا فَأَصْبَحُوْا لَا يُرى إِلَّا مَسَاكِنُهُمْ كَذلِكَ نَجْزِي الْقَوْمَ الْمُجْرِمِيْنَ
‘‘তার পালনকর্তার আদেশ সেসব কিছুকে ধ্বংস করে দিবে। অতঃপর তারা ভোর বেলায় এমন হয়ে গেল যে, তাদের বসতিগুলো ছাড়া কিছুই দৃষ্টিগোচর হয় না।’’ (সূরাহ্ আল আহ্ক্বাফ ৪৬ : ২৫)
আর হাদীসে ভয়ানক পরিবেশের সময় আল্লাহকে ভয় ও তাঁরই কাছে আশ্রয় গ্রহণ করার প্রস্ত্ততির কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভয় ছিল কোন পাপকারীর পাপের কারণে ‘আযাবের সম্মুখীন হতে পারে। আরও হাদীসে স্মরণ করে দেয়া হয়েছে ইতিপূর্বের জাতিরা পতিত ‘আযাবের বিষয়ে বেখেয়াল ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫১৪-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেনঃ গায়বের চাবি পাঁচটি। তারপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন, ’’নিশ্চয়ই আল্লাহ, যাঁর নিকট রয়েছে কিয়ামতের (কিয়ামতের) জ্ঞান। আর তিনিই পাঠান মেঘমালা-বৃষ্টিধারা’’- (সূরাহ্ লুক্বমান ৩১: ৩৪)। (বুখারী)[1]
بَابٌ فِي الرِّيَاحِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَفَاتِيحُ الْغَيْبِ خَمْسٌ ثُمَّ قَرَأَ: (إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ)
الْآيَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: বায়যাবী বলেনঃ গায়েব তথা অদৃশ্য এমন বিষয় যা ইন্দ্রিয়শক্তি তাকে জানতে পারে না এবং বুদ্ধির স্বাভাবিকতাও অনুভব করতে পারে না। আর এটা দু’প্রকার এক প্রকারের ক্ষেত্রে কোন দলীল নেই আর এটা আল্লাহর তা‘আলার এ বক্তব্যের অর্থ-
وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ
‘‘তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এগুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না।’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ৫৯)
আর দ্বিতীয় প্রকার হল যার স্বপক্ষে আকলী ও নাকলী দলীল রয়েছে যেমন প্রস্ত্ততকারী তার বৈশিষ্ট্য। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবস ও তাঁর চিত্র ইত্যাদি আর এটা এ আয়াত يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْب অর্থাৎ অদৃশ্য বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ৩)
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - ঝড় তুফানের সময়
১৫১৫-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বৃষ্টি না হওয়া প্রকৃত দুর্ভিক্ষ নয়। বরং প্রকৃত দুর্ভিক্ষ হলো, তোমরা বৃষ্টির পর বৃষ্টি লাভ করতে থাকবে অথচ মাটি ফসল উৎপাদন করবে না। (মুসলিম)[1]
بَابٌ فِي الرِّيَاحِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَتِ السَّنَةُ بِأَنْ لَا تُمْطَرُوا وَلَكِنِ السَّنَةُ أَنْ تُمْطَرُوا وَتُمْطَرُوا وَلَا تُنْبِتُ الْأَرْضُ شَيْئًا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (أن تمطروا وتمطروا، ولا تنبت الأرض شيئًا) তোমাদের প্রতি প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষিত হবে আর তোমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হবে অথচ জমিন কোন কিছুর উৎপাদান করবে না। তথা তোমরা ধারণা কর না যে রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) ও বারাকাত শুধুমাত্র বৃষ্টিতে বরং রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) আল্লাহর পক্ষ হতে এবং এমন বৃষ্টি রয়েছে যাতে কোন উৎপাদিত হয় না।